সামী অভেদানন্দের অপতল্প বাংল। গ্রস্থাবলী হিন্ছুনারী . ( ভারতীয় সংস্কৃতি আত্মবিকাশ ভালবাস ও ভগ্বৎপ্রেম কাশ্মীর ও তিব্বতে শিক্ষা, সমাজ ও ধর্ম স্তোজ-রতাকর ; পুনর্জন্মবাদ যোগ্শিক্ষা। ? কর্মবিজ্ঞান স্বামী শঙ্করানন্দ প্রণীত জীবন-কথ। (হ্বামী অভেদানন্দের জীবন-কাহিনী ১ প্রীরামকুঝ-চরিত প্রকাশক £ আ্বামী প্রভ্ভানানন্ন ভরা মকুষ্ত বেদাস্ত মঠ ১৯বি, বাজ বাজকুক্ স্ত্রী, কলিকাত! শ্রথয সংস্করণ কাজ্তন ১৬৬১ দ্বিতীয় সংস্করণ আাবশ ১৬৫০ তৃতীয় সংস্করণ কার্তিক ১৩৫৩ সর্ববত্মত সংরক্ষিত প্রিন্টার শ্রাদেবেক্দ্রনাথ শীল শ্রীকষ্প্প্রিন্টিং ওয্সার্কস্‌ ২৭বি, গ্রে প্রীট, কলিকাত? উৎসর্গ ধাহার করুণাবলে আত্মজ্ঞান ও ব্রহ্মানন্দ লাভ করিয়াছি আমার সেই পরমারাধ্য গুরুদেব যুগাবতার ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের শ্রীচরণকমলে ভক্তির সহিত এই গ্রন্থ উৎসর্গ করিলাম। তৃতীয় সংস্করণের ভূমিকা আত্মজ্ঞান লাভ করাই মানব-জীবনের উদ্দেস্ত। আত্মী-ুষিনি জন্ম-মৃত্যু, ক্ষয়-বৃন্ধি বা সমস্ত-কিছু পরিবর্তন ও দ্বৈত বস্তর সংস্পর্শ হইতে নিমুক্ত সেই পূর্ণ ও অখণ্ড চৈতন্তসতার উপলব্ধির নামই “আত্মজ্ঞান”। আত্মজ্ঞান উপলব্ধিরই স্বরূপ-_ 556101000%15055 15 ?62/452/20% আমি সাধারণ হত্ত-পদযুক্ত মরণশীল মানুষ নই, কিন্তু অর অমর বঙ্গত্বপ ; আমি সকল বন্ধন ও সংশয়ের অতীত একমাত্র সচ্চ্দানন্দ স্বর্নপ আত্ম!, এইরূপ স্থিরতা বা স্থিরবুদ্ধির নামই “উপলব্ধি । উপলদ্ধি বা আত্মজ্ঞান লাভ হইলে শারীরিক কোন অঙ্গের পরিবর্তন ৰা পরিবর্ধন হয় না, সংসার বা! সৃষ্টি যাহ প্রত্যক্ষ করিতেছি তাহারও নাশ, বিলুপ্তি বা বৈলক্ষণ্য হয় না, যেমন আছে তেমনই থাকে, কেবল পরিবর্তন হয় প্রত্যয়, জ্ঞান ব৷ দৃষ্টিভঙ্গীর ৷ দৃ্টিতঙ্গীর এইরূপ দিব্য পরিবর্তন সাধিত হইলেই বুঝিতে হইবে “আত্মজ্ঞান” অধিগত হইয়াছে এবং যিনি আত্মজ্ঞান লাঁভ করিয়াছেন তিনি বর্তমান শরীরে বিদ্যমান থাকিলেও অশরীরির মতনই বিচরণ করেন। এই অশরীরি অবস্থা বাহার লাভ হুইয়াছে তিনিই জীবদুক্ত অর্থাৎ এই বর্তমান রক্ত- মাংসের শরীর লইয়া জীবিত থাকিলেও তিনি মুক্ত ও জ্ঞানী । আত্মজ্ঞান বা ব্রন্ধজ্ঞান “সাধিত হওয়া, লাভ করা” বা প্্রাপ্ধি' এই সমস্ত কথা দার্শনিক যুক্তির নজ্িরে সম্পূর্ণ অসঙ্গত, ৭ আত্মুজান কারণ যাহা পুর্বে কখনও কর! হয় নাই তাহাকে রূপায়িত করার নামই "পাধন করা” বা! তাহাকে নিজের আয়ত্বে আনার নামই “লাভ” বা প্প্রাপ্তি। প্রকৃতপক্ষে আত্মজ্ঞান বা ব্রঙ্গজ্ঞান এমন কোন-কিছু নূতন বস্ত বলিয়া ন্ট ছয় না যাহার সম্বন্ধে আমর! এ “সাধিত হওয়1১ “ল/ত করা” ঝ৷ প্প্রাপ্তি” শব্বগুলি ব্যবহার করিতে পারি। আত্মা আজও যেমন, কাঁলও ঠিক তেমনই থাকিবেন ; অতীতে তিনি একই রূপে বর্তমান ছিলেন, আবার তবিষ্যতে তিনি সমাঁনভাবেই থাঁকিবেন, বিন্দুমাত্রও কোন পরিবর্তন বা বিকার তীহাতে আসিবে না। সুতরাং এই যে অবিকারী নিরবচ্ছিন্ন এক ও অদ্বিতীয় সন্তারূপ জ্ঞান বা প্রকাশস্বরূপ চৈতন্ত ইনিই প্রকৃতপক্ষে “আত্মা” বলিয়৷ পরিচিত। এই আত্মা চৈতন্তর্ূপে যেমন আমাদের শরীরে আছেন তেমন সমস্ত জীব, জন্ত, বৃক্ষ-লতা, চন্দ্র-হ্ধ্য এবং গ্রহ-উপগ্রহেও বর্তমান। আত্মা ঠৈতন্তসত্তায় আমাদের সকলের শরীরে নিয়স্তারূপে আছেন বলিয়াই আমরা যাবতীয় কার্য সম্পাদন করি; যেমন আমরা বলি “আমরা “আছি “আমর করিতেছি? ইত্যাদি। এই যে আমাদের কাধ্য-সন্বন্ধে আমরা জানি এবং তাহার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের সম্বদ্ধেও আমাদের জ্ঞান থাকে- ইহা! হইতেই প্রমাণ হয় যে, আমিরপ কর্তা ও ক্রিয়া এই উভয়কেই যিনি জানিতেছেন বা দেখিতেছেন তিনিই চৈতন্থময় আত্মা; তিনি এই ছুইটী হইতে পৃথক হইলেও আবার দুইটীতেই সর্বদ। অনুন্াত হইয়া আছেন। তথাপি প্রশ্ন হইতে পারে যে, আত্মা চেতন ব! ৮৮ ভূমিকা চৈতন্তশ্বরূপ হইলেও আমরা মান্্রষেই মাত্র তাহার প্রকাশ ও অস্তিত্ব স্বাকার কারতে পাব, কিন্তু বৃক্ষ-লতা, গ্রহ-উপগ্রহ অথবা জড় বস্তুত তাহার সত স্বীকার করিব কেন? আমরা চেতনধরন্মী তাহাকেই খাল যাহা কথা কহিতে পারে, সুখ-ছুঃখ অনুভব কারণে পারে অথব৷ প্রশ্ন করিলে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। বুক্ষঃ লতা বা জড় পদার্থে ইহার কোনটার লক্ষণ বা প্রকাশহ তো দেখতে পাওয়৷! যায় না, শ্থুতরাং ইহার্দিগকে প্রাণহান, অচেতনই বলিতে হইবে। কিন্তু তত্বঞ্ঞানী বলিবেন না, তাহ! কেন? এই বিশ্বচরাচরে অচেতন বলিয়া কোন জি'নগই থাকিতে পারে না। বৃক্ষ লতা প্রভৃতিকে আমর] চেতণ বাঁল কেননা! তাহারাও বীচিবার জন্য জীবন- সংগ্রাম (5000619 6)" 9301509109) করিয়া থাকে ? তাহাদেরও ক্ষয় বৃদ্ধি আছে তাহারাও মুখ ছুঃখ অনুভব করে, সুতরাং আত্মচেতনা বা প্রাণের লক্ষণ হইতে তাহারাও বঞ্চিত নয়। ত্বগীয় শ্তার জগদীশচন্দ্র বন্ধ গাছের যে প্রাণ আছে একথা প্রমাণ কারয়ােন উপনিষদে ও আমুর্ধেদশাস্ত্রেও বুক্ষ-লতার গ্রাণের পরিচয় দেওয়া হইয়াছে । মোটকথ! যে বস্তরই ক্ষয় ও বৃদ্ধি আছে, যে বস্তু প্ররুতির পারিপাশ্থিক অবস্থার সহিত সংগ্রাম ক'রয়া বাঁচয়া থাকিবার চেষ্টা ও শক্তি প্রদর্শন করে সেই বস্তই চেতন ও প্রাপবান । আমরা একটা প্রস্তর বা টেবিলকেও হয়তো অচেতন বলিয়াই অবজ্ঞা করিয়] থাকি, কিন্ত বিচার করিয়া দেখিলে দেখি একটি প্রস্তরে বা টেবিলে আঘাত করিলে তাহাও কিন্তু সেই আঘাত সহা করিয়! আবার প্রতিধাত আমাদের ৯ আত্মজ্ঞান ফিরাইয়া দেয়; তাছার পরমাণুগুলির ভিতরও যথেষ্ট একতা বা সঙ্ঘবদ্ধতা আছে কেননা আঘাত করিলেও তাহা কিন্তু বিচ্ছিন্ন বা শিথিল হইয়! ঝরিয়া পড়ে না, একই ভাবে আবদ্ধ থাকিয়! তাহার প্রাণের পরিচয় আমাদের নিকট জ্ঞাপন করিয়া! থাকে। তাহা ছাড়া তাহার পরমাধুগুলির সংহত অথব! একত্র হইয়া থাকিবার প্রচেষ্টা ও লক্ষণ হইতে প্রমাণ হয় যে, তাহাদেরও সংজ্ঞা আছে, তাহারাও চৈতন্বান্‌ এবং জীবিত। সকল জিনিসের ভিতর এই যে সংগ্রাম করিয়া সহা করিবার বা বাচিয়া থাকিবার প্রবৃত্তি ও আকুলতা ইহাই হইল চেতন! ব| প্রাণের লক্ষণ। এই প্রাণকেই উপনিদে 'প্রজ্ঞা+ বলা হইয়াছে । এই প্রজ্ঞাই বোধি বা জ্ঞান (1012761 100911125170৩ 0৫ :0025010090699) | সমস্ত আপেক্ষিক জ্ঞানের অধিষ্ঠানই প্রজ্ঞা । আত্মা বা প্রজ্ঞা হইতে জ্ঞান উৎপন্ন হয় ন| কিন্ত আত্মা বা প্রজ্ঞা স্বয়ং ভ্ঞানখ্বরূপই। আচার্য্যপাদ স্বামী অতেদানন তাহার 'আত্মজ্ঞান” পুস্তকে এই তত্বসমূহ লগ্বন্ধেই কুল বিচার করিয়া প্রমাণ করিয়াছেন যে, সমস্ত জিনিসেরই পপ্রাণ, এবং প্রজ্ঞা” আছে, আর সকলেই আত্মা বাব্রক্ষ হইতে অভিন্ন। সংসারের বিচিত্র প্রবৃত্তি ও মোহরূপ অজ্ঞানের জন্যই আত্মচেতন৷ আমাদের আবৃত হুইয়া আছে, আর সেজন্যই আমরা যে শুদ্ধ-বুদ্ধ-মুক্তত্ভাব অপাপবিদ্ধ আত্মন্বরূপ এই জ্ঞান বা আত্মজ্ঞান সম্বন্ধে আমর! মোটেই সচেতন নই। কিন্তু মোহরপ অজ্ঞান কি? আত্মার শ্বরূপ সম্বন্ধে নাজানার নামই ১৩ ভূমিকা “অজ্ঞান । এই অজ্ঞানের সম্বন্ধে আচার্য্য শঙ্কর বিচিত্র বিচারই ্রহ্মস্ছত্রের অধ্যাসভাষ্যে করিয়াছেন। অজ্ঞানকে তিনি বলিয়াছেন “অধ্যাস”। একটি জিনিস যা_তাহাকে তাই বলিয়া দেখা বা জ্ঞান না করার নামই অধ্যাস। অধ্যাস ও অজ্ঞান একই। এই অজ্ঞান--অবিগ্ঠ!, মায়া, পরমেশশক্তি। প্রকৃতি ইত্যার্দি নামেও কখিত। কেহ কেহ আবার অজ্ঞানের তের শ্বীকাঁর করিয়া বলিয়াছেন অবিস্তা ও মায়া পরম্পর ভিন্ন। তাহার! বলেন ঈশ্বরে যে অজ্ঞান তাহার নাম “মায়া, আর জীবাশ্রিত যে অজ্ঞান তাহার নাম “অবিদ্যা”। বাচম্পতি মিশ্র প্রভৃতি ভাষ্যকারের] অজ্ঞানের এই ভেদ স্বীকার করিয়াছেন। বিবরণপ্রস্থান ও আচার্য শঙ্কর নিজে অজ্ঞানের ভেদ স্বীকার করেন নাই। শঙ্কর বলিয়াছেন বিগ্কা ও অবিদ্যা অজ্ঞানেরই 'নামাস্তর। মোটকথা আত্মবিস্বতির নামই অজ্ঞান। স্বার্থ- পরতাকেও অজ্ঞান বলে। যেইদ্দিন আমরা উপলব্ধি করিব যে; আমরা দেহ নই, মন নই, বুদ্ধি নই, ইন্জরিয় নই, কিন্ত দেহ যন বুদ্ধি ও ইন্দ্রিয়গণের স্থাক্ষীত্বরূপ আত্মা ও একমাত্র প্রজ্ঞানঘন ব্রহ্ম সেইদিনই আমাদের দিব্য প্রত্যভিজ্ঞার উদয় হইবে, সেইদ্দিনই আমর] আত্মজ্ঞান লাভ ফরিয়! ধন্ত হইব। কিন্তু মনের চিরচঞ্চল বিচিপ্রমুখী গতি বা প্রবৃত্তিই আমাদের আত্ম- জ্রানলাভের পথে একমাত্র অন্তরায়। আমরা পাধিব সুখরূপ আলেয়ার পশ্চাতেই ক্রমাগত ছুটিয়। চলিয়াছি। পৃথিবীর সম্পদ, বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্ধ্কেই কেবল উপভোগ করিয়া মুখী হইব, আত্ম। রলিয়া কোন বসব আছে কিন! জানিবার আমাদের আবশ্তকত৷ ১১ আত্মজ্ঞান নাই--এই যে অচল মনোবুত্তি ইহাই আমাদিগকে সর্বদ প্রবঞ্চিত করিতেছে । এই প্রবঞ্চণাই আসলে “মায়!” । মায়ার অপর একটি নাম 'মন”। শ্বামী অভেদানন্দ মহারাজ তাহার 0%% 72/779% 29 2% 44559 পুস্তকেও (পৃঃ ১৯৩) উল্লেখ করিয়াছেন 2 ৭621 72112511259 2 221%529%.? প্রকৃতপক্ষে বাসনাই সংসার-বন্ধনের কারণ ; কিন্তু এই বাসনার কারণই আবার মন। মন আকাঙ্ষা করে বলিয়াই বাসনার উৎপত্তি হইয়া থাকে; মনস্থির হইলে আর বাসনার স্ষ্টি হয় না। এজন্য যোগী ও শান্তিকামী সাধকগণ মনকেই সংযত করিতে প্রথমে যত্ব করেন। এই যত্বকেই পাত্জলদর্শনে "অভ্যাস” বলা হইয়াছে, _-“তত্র স্থিতৌ যত্বোইভ্যাসঃ (১/৯৩)। মন যখন পৃথিবীর নশ্বব্ন ভোগকেই ইহসর্ধস্ব না ভাবিয়া আত্মচেতনাকেই: কেবল ফিরাইয়া পাইতে চায় তখন সেই আস্তর প্রবৃত্তি বা প্রচেষ্টার নামই ভোগের বিপরীত তাবনা। এইরূপ বিপরীত ভাবনার নামই আবার বিষয়-বিতৃষ্ণা অথবা বৈরাগ্য । মনকে আত্মজ্ঞান লাভ করিবার জন্য সাধনায় নিয়োজিত করিতে হুয়। মন একবার আত্মান্থসন্ধানে মগ্র হইলে বাহিরের তুচ্ছ বস্তর প্রলোভন ও চাকচিক্য তাহাকে আর মৃগ্ধ করিতে পারে না; তখন আত্মোপলব্ধি বা আত্মাকে জানিবার জন্তই মন যথার্থ আকুল হইয়া পুনঃ পুনঃ চেষ্টা করে। মনের এই আকুলতা ও পুনঃ পুনঃ চেষ্টার নামই “সাধনা” । দুতরাং দেখা যাইতেছে যে অনস্তকাল ধরিয়া কামনার চিতার্থরপ ভোগে ডুবিয়া থাকিলে প্রকৃত ' শাস্তির পথ, ১২ ভুমিকা কণ্টকাঁকীর্ণই হুইয়া। উঠে; সুতরাং শাশ্বতী শাস্তির একমাত্র প্রশ্রবনই আত্মজ্ঞান। মন শীস্ত ও স্থির হইলেই আত্মগ্রসাদ লাঁত হয়। শ্রীরামকুষ্চদেব বলিয়াছেন £ “ব্রক্গ বাক্য-মনের অগোঁচর, কিন্ত তিনি শুদ্ধ মনের গোচর |” এই শুদ্ধ মন ও মনোনাশরূপ শান্তি একই কথ1। মন পরিশুদ্ধ হইলে আর মন থাকে না) মনের বৃত্তি লইয়াই তে] মনের সার্থকতা ? ুতরাং মন উপশাস্ত হইলে আত্মচৈতন্তের দিব্যস্বর্ূপ সাধকের নিকট আত্মপ্রকাশ করে। সাধকের জীবন তখনই ঠিক ঠিক কৃতককৃতার্থতা লাত করিয়া ধন্ত হয়; আর এই কৃতকৃতার্ঘতা লাভের নামই “আত্মজ্ঞান* | শ্বামী অতেদানন্দ মহারাজ আত্মজ্ঞানরূপ দার্শনিক তত্বের হুঙ্ষ বিচার এমনই সহজ সরল ভাষায় প্রাঞ্জল করিয়া এই পুস্তকে লিপিবন্ধ করিয়াছেন যে, বুঝিবার বিষয়-বন্ত প্রকৃত ছুরধিগম্য হইলেও সাধারণের নিকট ইহ1 সরস ও মুখবোধ্য হুইয়াই উঠিয়াছে। আত্মজ্ঞানকে যে বাক্য ও মন দ্বারা প্রকাশ করা যায় না, দেহ ইন্দ্রিয় মন বুদ্ধি ও অহং যে যথার্থ আত্মার স্বরূপ নয় এ সমস্ত জটিল রহগ্ত তিনি স্মন্ত দর্শন ও উপনিষদ্দের__বিশেষ করিয়া ঈশঃ কেন, কঠ, কৌবীতকি, ছান্দোগ্য ও বৃহদারণ্যক উপনিষদের আসল তত্ব বিচার ও আখ্যানসমূহকে অবলম্বন করিয়া বিবৃত করিয়াছেন। এই বর্তমান তৃতীয় সংস্করণের অন্বাদ স্থানে স্থানে পরিবন্তিত ও বিশেষভাবে মার্জিত কর! হইয়াছে । পাঠক পাঠিকাদের ম্ুবিধার জন্য এবারে একটা বিস্তৃত সথচীপত্রও দেওয়! হইল। সত্যান্বেষী পাঠক ১৩ আত্মজ্ঞান পাঠিকাগণের নিকট ই] পূর্বের স্তায় সমাদর লাত করিবে ইহা আমর! আশা! করি। ইতি কলিকাত। প্রকাশক. জীরামকুফ বেদান্ত মঠ ৪ঠ1 কাত্তিক ১৩৫৩ ১৪ প্রথম সংস্করণের ভূমিকা! বর্তমান ধুগে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে জড়বাদ ও আত্মার অন্তিত্বে অনাস্থা জনসাধারণের মনোরাজ্যে এইরূপ প্রভাব বিস্তার করিয়াছে যে, শিক্ষিত সমাজের অতি অল্পসংখ্যক লোকই অমর আত্মার সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করিতে যত্ববান হইয়া থাকেন। কিন্তু হিন্দুদিগের সনাতন ধরবে ও বেদাত্ত- দর্শনশান্ে আত্মজ্ঞান লাত করাই জীবনের প্রধান উদ্দেস্তী বলিয়া বগিত হইয়াছে। বেদের অন্তর্গত উপনিষদ্সমূহে আত্মজ্ঞানের ভূয়সী প্রশংসা কর। হইয়াছে। বৈদিক খবিগণ আত্মজ্ঞান লাভ করিয়! প্রচার করিয়াছেন যে, উহ দর্শনশাস্র, বিজ্ঞান ও ধর্মের মূল ভিত্তিত্বরূপ। তজ্জন্ত আত্মজ্ঞানানুসন্ধিৎগ ব্যক্তিমাত্রেরই আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভ করিবার প্রথম সোপানগ্বরূপ আত্মানাত্ম-বিবেক এবং জড় ও চৈতন্যের পার্থক্য অনুভব করিতে চেষ্টা কর! কর্তব্য। পরিব্রা্জকাচার্য্য শ্রীমৎ শ্বামী অতেদানন্দজী মহারাজ আমেরিকা মহাপ্রদেশের নিউ ইয়র্ক নগরীতে বেদাস্ত প্রতিষ্ঠিত করিয়া আত্মজ্ঞান বিষয়ে প্রাঞ্জল ইংরাজী ভাষায় যে সকল বক্তৃতা দিয়াছিলেন তাহা পুস্তকাকারে 52%%922 নামে উক্ত সমিতি হইতে ১৯০৫ খুষ্টার্ষে প্রকাশিত হইয়াছে। এই পুস্তকখানি আমেরিকা মহাপ্রদেশে বিশেষ সমাদর লাভ করিয়াছে। ১৫ আত্মজ্ঞান ক্বামিজী মহারাজ পাশ্চ'ত্য বিজ্ঞানে সহায়ে ওপনিষ্দিক সত্যগুলি কিরূপ হৃদয়গ্রার্গী ও সহজবোধাভাবে ব্যাখ্যা করিয়াছেন তাহা তাহার পস্তক প'ঠক মান্ছেই অবগত আছেন । বাহারা ইংধাজী ভাবা অন্ভিচ্ক ত'হাদিগের হ্ুবিধার জন্ঠ উক্ত 52-%%9275 পুস্তকর বঙ্গানুবাদ স্বামিজী মহারাজের নিজ তত্ববাধানে এক্ষণে প্রকাশিত হইল। আশা করি পাঠকবর্গ এই অমুল্যরত্বপ্কূপ “'আত্মজ্ঞানঃ লাভ করিয়! নিজ অমর আত্মার পরিচয় পাইবেন এবং দেহাত্মববোধ হইতে মুক্ত হইয়া শান্তি ও আনন্দ লভ করিতে সক্ষম হইবেন। ২২শে ফ'স্ভুন সন ১৩৪১ ইং ৬ই ম চ্চ ১৯৩৫ প্রকাশক বুধবা, শুক্লা দ্বিতীয়! দ্বিতীয় সংস্করণের ভূমিক! “তমেবৈকং জানথ আত্মানং অন্তা বাচো বিমুঞ্চখ অমূতস্তৈষ 'সেতুঃ ৮-একমাত্র সেই আত্মাকেই উপলব্ধি কর এবং অন্য সব বৃথা অসার বাক্য পরিত্যাগ কর, মৃত্যুকে অতিক্রম করিবার ইহাই একমাত্র সেতু--এই বাণীর দ্বারাই বহু সহঅ বৎসর পূর্বেবে একদা প্রাচীন ভারতের দিব্য্রষ্টা৷ আধ্যধাষিবৃন্দ মহামুক্তির ও অমৃতত্বলাভের পথে সমগ্র মানবজাতিকে উদাত্ত গম্ভীর কঠ্ঠে আহ্বান করিয়াছিলেন । মানুষ অমৃতের সন্তান; সচ্চিদানন্দই তাহার প্রকৃত ম্বরূপ। অবিদ্ভার আবরণে দেহাসক্তি ও ইন্দ্রিয়পরবশতার জন্তই সে নিজেকে পাঞ্চভৌতিক নশ্বর দেহমাত্র মনে করে। কিন্তু সে যে স্বরূপতঃ জন্মহীন মৃত্যুহীন শাশ্বত অব্যয় আত্মা-_ইহা কিছুতেই উপলব্ধি করিতে পারে ন1। এইজন্যই রূপ-রস-গন্ধের পরিপূর্ণ প্রপঞ্চময় বহির্জগতের প্রতি তাহার চিত্ত সর্বদাই আকৃষ্ট ও অতিভূত। আনন্দ নিত্য অসীম ও অনন্ত সত্তা যে তাহার মধ্যেই নিহিত, সে ষে ম্বয়ংই তাহা, শ্বরূপ-বিশ্বৃতির জন্য ইহ1 জানে না বলিয়াই সে আপাতরম্য ক্ষণিক ন্ুখপ্রদ ও মহাছুঃখদায়ক ন্জিয়িক বিষয়কে ভোগ করিয়া সুখী ও আননিতি হইতে চায়। কিন্তু বারবার সংসারের নানা ঘাত-প্রতিঘাতে অবশেষে সে বুঝিতে পারে ইন্দ্রিয়পরবশতায় বা বিষয় উপভোগে শাস্তি নাই, আনন্দ নাই, আছে শুধু ছঃখ ক্লেশ ও বন্ত্রণা। তাই মা, আত্মজ্ঞান আর বিষয়-ভোগের আপাতরম্য চাকচিক্যে সে ভুলিতে চায় না, কোথায় যথার্থ শাস্তি--কোথায় মুক্তি এই আকুঙতা, এই অধীরত, এই অন্বেষণেই তাহার শ্বরূপকে জানিবার আগ্রহে সে উদ্ধদ্ধ হুইয়া উঠে। কিন্ত এই মহামুক্তি ও শাশ্বতী শান্তির সন্ধান সে এই সংসারে কোথায় কাহার কাছে আর পাইবে? যাছারা তাহারই মতন বিষয়ের নাগপাশে বদ্ধ, বাসনার বিষে জর্জরিত তাহার কি করিয়! তাঁহাকে মহামুক্তির সুনিশ্চিত সন্ধান দিবে? এই মহামুক্তির--এই চিরশাস্তির সম্যক সন্ধান একমাত্র সেই লোঁকোত্তর দেবমানবের নিকটই পাওয়! যায় যিনি সংসারের সকল বন্ধন হইতে বিমুক্ত এবং সাধনার সর্বশেষ শিখরে উঠিয়! সমাধিসপাত প্রজ্ঞানেজ্রে দেশ কাল নিমিত্তের পরপারে নিষ্প্রপঞ্চ পরম পরিপূর্ণ সত্যকে আত্মন্বরূপে সাক্ষাৎকারের দ্বারা পরমকল্যাণ ও আনন্দসত্তায় গ্রতিষিত। একমাত্র সেই আত্মক্রীড় আত্মরতি জ্ঞানমুর্তি লোৌকগুরুরই সান্নিধ্য স্নেহ, করুণা, আশীর্বাদ, শিক্ষা ও সহায়তাঁয়ই শ্রদ্ধাবান মুমুক্ষু মানব আত্মসাক্ষাৎকার দ্বারা মহাঁমুক্তি ও চিরশাস্তিলাতে ধন ও কৃতরুতার্থ হয়। তগবান্‌ শ্রীরামরঞ্জদেবের অভ্যুদয়ে ভারতবর্ষের সুমহান আধ্যাত্মিক তত্বের সত্যতা আধুনিক যুগে জগতের সত্যান্বেষী মানবমাত্রেরই নিকট অক্রাস্তভাবে প্রমাণিত হুইয়াছে। স্বামী অভেদানন্দ মহারাজ এই বিশ্বধর্্মুত্তি যুগগুরুর লীলাসহচর এবং তীছার অপরিমেয় আধ্যাত্মিক ভাব-সম্পদের অন্যতম উত্তরাধিকারী । বথার্থ জীবনুক্ত মহাযোগীর সমাধিলক আত্মজ্ঞান তাহার ১৮ ভূমিক। স্বতাবসম্পদ ছিল বলিয়াই তিনি “আত্মজ্ঞান,। নামক গ্রন্থে আপনার অনুভূতির ছুরধিগম্য তত্বকে এমন অপূর্ববভাবে প্রকাশ করিতে সক্ষম হইয়াছেন। আর সেইজন্ই তিনি এই 'আত্মজ্ঞান” গ্রন্থ পরমারাধ্য শুরুদেবকে উৎসর্থ করিতে গিয়া নির্ভীক ও অকুন্ঠিতচিত্তে স্বীকার করিয়াছেন আপনার অপূর্ব অনুভূতির কথা--ণ্]০ 0)6 [1,0৮5 656 ০6 1311229%8 911 1২8102/0171510095 00 1015105 20100) 109 11055 21805 016 73155 ০1 56111020515059 2 72527 যাহার করুণাবলে আত্মজ্ঞানের অদীম আনন্দ অনুভব করিয়াছি আমার সেই দিব্যতাবময় গুরুদেব ভগবান্‌ শ্রীরামকৃষ্ণের পাদপন্পে এই প্রস্থ উৎসর্গ করিলাম ।” সত্যই এই ন্ুছুল্পভি আত্মস্তঞানের--এই অমিত আধ্যাত্মিক অনুভূতির সমুন্নত গিরিশিখরে সর্বদা শ্বগৌরবে সমাসীন ছিলেন বলিয়াই স্বামী অভেদানন্দের যুখনিঃস্থত বাণী এত শক্তিগ্রদ, প্রাণপ্রদ ও অগ্নিগর্ভ। এই আক্মজ্ঞানের দিব্যসম্পদে সমৃদ্ধ ছিলেন বলিয়াই তিনি ভারতবর্ষ, ইউরোপ ও আমেরিকায় বনু সত্যান্বেবী ধর্মরপিপান্থ নর-নারীর ধর্মসন্বন্ধীয় নান। সমন্তার সমাধান, ভ্রান্তি দুর, সংশয়-নিরসনের দ্বারা পরম সত্যলাভের পথপ্রদর্শক ও বরেণ্য ধর্মগুরুনূপে তাহাদের চিরনমন্ত | প্রাচীন ভারতের সত্যত্রষ্টা খবিবুন্দ আত্মতত্ব উপলব্ধির বে সাধনপঞ্থ। নির্ণয় করিয়াছিলেন তাহা! কোন দেশগত, জাতিগত ও সম্প্রদায়গত গৌড়ামী, অন্ধবিশ্বাস, আচার ও অনুষ্ঠানের উপর প্রতিষিত নয়। যুক্তি, বিচার ও বিশ্লেষণ দ্বারাই তাহারা ১৯ আত্মজ্ঞান সত্যলাভের পথ নির্দেশ করিয়া গিয়াছেন। খধিদের প্রদশিত আত্মতত্ব সাধনার যে বিচিত্র শিক্ষা ও পদ্ধতি তাহা পূর্বাপর অকাট্য যুক্তির--অচল অটল ভিত্তির উপর স্থাপিত । স্বামী অভেদানন্দ আর্ধখবিবৃন্দবের আধ্যাত্মিক ভাবসম্পদের অগ্ঠতম প্রতিনিধিরপে ও ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণের দিব্যজীবনের উদর উদ্ভি্ন আলোকে বেদাস্তের এই সুমহান তত্বকে আধুনিক বিজ্ঞানের সমপ্ররুতি বলিয়াই সমগ্র সভ্যসমাজের নিকট সগোৌরবে ও মহাসাফল্যের সহিত প্রচার ও প্রমাণ করিয়াছেন। বর্তমান গ্রন্থ তাহার সেই অপুর্ব মনীষ। ও অমিত অধ্যাত্ম সম্পদেরই অগ্ততম নিদর্শন । র “আত্ুজ্ঞান” পুস্তকটি তীহার 19552257426 নামক ইংরাজী গ্রন্থেরই বঙ্গানুবাদ। এই গ্রন্থের বাঙলায় অনুবাদের সময়ে স্বামিজী মহারাজ স্বয়ং যে সমস্ত মন্তব্য ও ফুটনোট দিয়াছিলেন সেগুলি পূর্ব সংস্করণের সায় এবারেও অবিকল রাখা হইল। প্রথম সংস্করণে এই গ্রন্থ ধর্মজিজ্ঞান্থু ও চিন্তাশীল পাঠকদের নিকট যে বিশেষভাবে সমাদৃত হইয়াছিল তাহা! সত্যই আনন্দের বিষয়। বর্তমানে সুদৃস্ত প্রচ্ছদপট সমন্বিত ইহার দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হইল। আশ! করি ধন্দান্বেধী ও সত্যনিষ্ঠ পাঠকদিগের নিকট ইহা পূর্বের মতই সমাদ্দর লাত করিবে। ইতি রামু বেদাস্ত মঠ কলিকাতা! প্রকাশক ২৪ শবণ ১৩৫* সূচীপত্র প্রথম অধ্যায় বিবয় জীব ও জগৎ ৮৮, জীব ও জগতের ভিন্ন ভিন্ন সংজ্ঞা--বিজ্ঞানবাদীদের মতে জগৎ-- পদার্থবিজ্ঞানবিত ও ক্রমবিকাঁশবাদী--জড়বাদিগণের অভিমত-- শব ও তাহার প্রত্যক্ষ_নন ও প্রত্যক্ষ সম্বন্ধে জন্‌ ই্য়ার্ট মিল্‌_- ম্যাটার (01906) বলিতে কি বুঝায়- দেশ ও কাল--দেশ ও কাল সম্থ্ধে হার্বাট্‌ ম্পেন্সার-জগৎ ব1 জড়পদার্থ কাহারও দ্বার! সষট নয়--জ্ঞেয় ও জ্ঞাতা-__পৃষ্ীয় ধর্বিজ্ঞানের অভিমত --“সৎ' সম্বদ্ধে শ্পিনোৌজা, কাণ্ট, প্লোটো, ইমাসন প্রভৃতি-উপনিষদে "সৎ ও আত্মা--পরমাণু সম্বন্ধে জে. জে. টম্সন্-ৃষ্টি অনাদি-ব্রক্গ ব1 আস্মাই নিত্য বন্ত--বিষয়ী। দ্রষ্ঠা ও জ্ঞাতা- আত্মার মৃত্যু নাই-- আত্মা বন্ছ নয়, এক-_সগুণ ব্রহ্ম দ্বিতীয় অধ্যায় আত্মানুভূতি আত্মা “অহং' নয়--গীতায় আত্মা--আত্ম। অন্তর্ধযামী--আত্মজ্ঞান ও সক্রেটিস্‌- বেদান্ত কাহাকে বলে--মাস্ম! ও বেদীন্ত-_-ঈশ উপনিষদে আত্মা--বিষয়ানুদ্ভূতি ও সার উইলিয়াম ক্রুক্স্‌--শব-ম্পন্দন ও ঈশোপনিষৎ--কাল ( 61796 ) কাহাকে বলে--ইন্দ্িয়াদি আত্মাকে জানিতে পারে না জীবনের সমস্ত ব্যাপার রহস্তপূর্ণ-_দেশ (52০6) কাহাকে বলে--ঘৃণ! আপেক্ষিক জ্ঞানের পরিণতি--একত্ব ভাবের নামই "€প্রম'__ঘৈতজ্ঞানই শোক ও ছুঃখের মূল--*বিরাটু অহং” ১ পৃষ্ঠা ৩--২৭ ২৮৫৯ আত্মজ্ঞান ব্ষিয় পৃষ্ঠা ও পরমাত্ম।-মন ও আত্মার নিত্য সম্ন্ধ-_আত্মা অশরীরী--অহং- জ্ঞান ও আত্মচৈতন্ত--ঈশ্বরই প্রকৃত 'কবি'-জ্ঞাত। জ্ঞেয় নন আত্মা সর্ধবদ্ঞ --ম্বার্থপরত। ও অন্ঞান--আত্মামুভূতিই সুখের কারণ। তৃতীয় অধ্যায় প্রাণ ও আত্ম! ৮** প্রাচীনকালে ব্রাঙ্মণগণও যুদ্ধবিগ্ঠা জানিতেন-_বারাণসীর রাজ দিবোদাদ-+রাজ। দিবোদাসের পুত্র প্রতর্দন-দেবরাজ ইন্ত্র ও প্রতর্দন-ইন্দ্রের আত্মজ্ঞানের প্রশংসা--প্রাণ কাহাঁকে বলে মুখ; ও গৌণ প্রাণ_প্রাণ ও প্রজ্ঞা মৃথ্য প্রাণ ও ইন্জরিয়শকি-_ ঈশ্বর কাহাকে বলে-ন্প্র ও হুযুত্তির অবস্থায় প্রাণ প্রা ও পজ্ঞ। একস সর্ব জ্ঞানের কেন্দ্র প্রজ্ঞ।- “চিন্তা” কাহাকে বলে। ৬০--৯৯ চতুর্থ অধ্যায় আত্মানুসন্ধান ১০০-- ১৩২ প্রজাপতি, দেবগণ ও অহ্রগণ--বেদ' বলিলে কি বুঝায়--সামগান ও সহ্গীত-_অহ্রগণণ ভূত প্রেত নয়- দেবরাজ ইন্্র ও অস্থরপতি বিয়োচনের প্রজাপতির নিকট গমন--চক্ষুতে যাহাকে দেখা যায় তিনিই আত্মা--নথ ও কেশই আত্মা--স্বলদেহই আক্মা-প্রতিবিদ্বই আত্মা--হ্বপ্ন ভোগ করেন যিনি তিনিই আত্মা--নযুপ্তিকে ধিনি ভোগ করেন তিনিই আত্মা--বায়ু, বান্প ও তড়িচ্ছক্তি আত্মার দ্বার! পরিচালিত হয়-_মার্কণি ও তড়িচ্ছকি--নাত্বাই নিখিল বিশ্বে শ্রেষ্ঠ বন্ত-- প্রজ্ঞা ও বাসনা--ইন্্রিয়ের নিয়ন্রা আত্।--ইন্ত্রের আত্মজ্ঞান পাভ। ২ সুচীপত্র পঞ্চম অধ্যায় বিষয় পৃষ্ঠা আত্মসাক্ষাগুকার *** ১৩৩--১৭৮ পুপ্তক ও ধর্মগ্রন্থ পাঠেই কেবল আত্মসাক্ষাৎকার হয় না--কেনোপ- নিষদে আয্মতত্ব-মন ও আত্মা--ইন্ত্িয়গণ ও আত্মা--বেদাস্ত ও মন- মন হইতে প্রজ্ঞা! উৎপন্ন হয় না-_-আত্মপাক্ষাৎকারই অমৃতত্ব -আত্মজ্ঞান ও শ্বাধীনত1--চিস্তাদমুহের যিনি চিস্তা করেন তিনই আত্ম--আপেক্ষিক জ্ঞান ও আত্মজ্ঞান-- ঈশ্বর ও তাহার গুণ- নাম, ও কাপ- উখবর---আত্ম! ইন্ট্িয়াতীত--ব্রঙ্গকে ধিনি বলেন জ।নিয়াছি তিনি ব্রহ্মকে জানেন ন1--আত্ম! অপরিচ্ছিন্ন--নির্বিবিকল্প মমাধি ও মন--মন ও ইথার--অহংও বিষয়-জ্ঞন---ঘআত্ম। হইতে জ্ঞান উৎপন্ন হয় না--আক্মা ও জ্ঞান অভিন্ন-সর্বজ্ঞতাই আত্মার ধর্ম --আত্তা হয়ংপ্রকাশ--সমাধি ও অনুভূতি-ঈশ্বর ধারণার বহিস্তি-আত্মাই মহান্‌--আপেক্ষিক ও শির্বিবশেষ রাজ্য-_দেহাত্মবোধ “ভ্রম'--সঙ, চিৎ ও আনন্দসত্1--আস্মা সর্বববস্তরও মুল ও কেন্ত্র--আত্মা প্রেতাত! নয়--আত্মপাক্ষাৎকার হইলে জন্ম-মৃত্যুকে জয় করা যায়। ব্ঠ অধ্যায় আত্মা ও অমরত্ব ১৭৯--২০৪. বৃহদারণ্যক উপনিষৎ ও যাজ্ঞবন্ধ্য-_গৃহস্থাশ্রম ও সন্গ্যাস-যাজ্ঞবন্ধ্ ও মৈত্রেরী-_পাঞ্চভৌতিক শরীর ও আত্ম।--ভালবাদার কেন্দ্রই আত্মা--দেহ ও অহং-এর ভালবাস প্রেম নয়--প্রেমাম্পদ একমাত্র আল্মাই--ভ্ঞান ও বিজ্ঞান--প্রজ্ঞানথন ও অনরাত্মা--বিশ্বন্ষ্টি স্বতঃ- ুরতব্র্দই সকল বস্তর আদি ও অস্ত-ব্রঙ্গের ব্যস ও সমষ্টি ভাব-- দ্ৈতভূুমিই আপেক্ষিক রাজ্য-নবধুপ্তির উপলন্ধি-_আত্মাই সকলের জ্ঞাত।--মাস্মজ্ঞানের জন্ত বিচার ও বিবেক চাই--আত্ম। বুদ্ধির অগ্রোচর-_-আত্মজ্ঞান লাভই মানব-জীবনের চরম আদর্শ। ২৩ “এত! দশৈব ভূতমাত্রা! অধিপ্রঙ্ঞ দশ প্রজ্ঞামাত্রা অধিভূতং। যদ্ধি ভূতমাত্রা ন স্যর্ন প্রজ্ঞামাত্রাঃ স্থ্, ধর্ধা প্রজ্ঞামাত্রা ন স্থ্যর্ন ভূতমাত্রাঃ স্থ্াঃ ॥ ন হ্যন্ততরতো রূপং কিঞ্চন সিধ্যেৎ।” --কৌধীতকী উপনিষৎ ৩।৮ ভে অথব। ইঙ্জরিযগ্রাহ বিষগুলির সহিত বিষরীর (জ্ঞাতার ব। আত্মার) সম্বন্ধ আছে এবং বিষয়ীরও (জ্ঞাতার বা আত্মারও) জের ইন্জরিয়গ্রাহ বিষয়ের সহিত সম্বন্ধ আছে। জ্ঞেয় বিষয় না থাকিলে জ্ঞাত! বিষনী থাকিত না! এবং জ্ঞাত বিষয়ী ( আত্মা ) না থাকিলে জ্রেয় বিষয়ও থাকিত না। এই ছুইটির মধ্যে একটি ন| থাকিলে কেবল অপরটির দ্বার। কিছুই সম্পন্ন হয় না। আল্ডাভভান্ন প্রথম অধ্যায় জীব ও জগৎ জীব ও জগৎ সম্বন্ধে বিচার সমগ্র সভ্য জগতেরই বিজ্ঞান, দরশনিশান্ত্র এবং ধর্মশান্ত্ে মুখ্য আলোচনার বিষয়। বিভিন্ন দেশের মনীষিগণ এই ছুই শব্দের প্রকৃত অর্থ এবং উহাদের পরস্পরের সম্বন্ধ নির্ণয় করিতে যথাসাধ্য চেষ্ট। করিয়াছেন। এ ছুইটি নামের বিবিধ সংজ্ঞা প্রচলিত আছে, যথা! জীব ও জগৎ (66০0 800 17002-9£0 )১ জ্ঞাতা ও জ্েয় (900190% 8700 ০019190$), পুরুষ ও প্রকৃতি (8001 0: 10100 ৪100 20869] )) চেতন ও অচেতন ইত্যাদি। যুগে যুগে সমস্ত বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক পণ্ডিতগণই এই সম্বন্ধে তাহাদের নিজ নিজ ভাব ও ধারণার অনুকূলে নানাবিধ যুক্তি ও তর্কের অবতাঁরণ। করিয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছেন। ইহাদের মধ্যে কেহ কেহ বলেন যে, আত্মা, মন বা পুরুষ হইতেই অনাত্মা, জড় বা অচেতন পদার্থসমূহ উদ্ভূত হইয়াছে। ঙ আত্মজ্ঞান আবার জড়বাদীরা বলিয়া থাকেন যে, অনাত্ম জড়পদার্থ হইতেই আত্মা, মন বা পুরুষের উৎপত্তি হইয়াছে । এই প্রকার বিভিন্ন সিদ্ধান্ত হইতে এই নিখিল বিশ্বন্িসন্বন্থো নানাবিধ মতবাদের উদ্ভব হইয়াছে। এ মতগুলি সংখ্যায় অধিক হইলেও সাধারণতঃ তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা! যাইতে পারে। যথা, অধ্যাত্মবাদ বা বিজ্ঞানবাদ, জড়বাদ এবং অদ্বৈতবাদ। অধ্যাত্ববাদী বা! বিজ্ঞানবাদিগণ বলেন যে, আত্মা বা মন জড়ঞ্জগতের ও অচেতন শক্তির অঙ্টা |; সুতরাং আত্মাই ইন্িয়গ্রাহা সর্বপ্রকার পদার্থেরও সৃষ্টিকর্তা । ইহাদের মতে অনাত্মা বা জড়জগৎ আত্মা ব৷ চৈতন্যের একটি অবস্থাস্তর ভিন্ন আর কিছুই নহে। পক্ষান্তরে, জড়বাদিগণ বলেন যে, অচেতন, অনাত্বা বা! জড় হইতেই চৈতন্তের বা আত্মার উদ্ভব হইয়াছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সময়ে সময়ে বহু অধ্যাত্ববাদী বা! বিজ্ঞানবাদী দার্শনিক পগ্ডিতগণের আবির্ভাব হইয়াছে। ভারতবর্ষে, গ্রীসে, জার্মানীতে এবং ইংলগ্ডে বিশপ. বার্কলিরং ন্যায় বহু বিজ্ঞীনবাদী দার্শনিক জন্মগ্রহণ করিয়াছেন । বিজ্ঞানবাদিগণ এই প্রতীয়মান বাহ ৯। “মনো হি জগতাং কর্তৃ মনে হি পুরুষঃ শ্বৃতঃ 1, যোগবা শিষ্ট । ২ বিশপ. বার্কলি ইংলণ্ডের একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানবাদী (10651151) দার্শনিক ছিলেন । তাঁহার মতে বাহক জগতের ঘাহ! কিছু মবই মন বা ষটারই হাটি---4$52 19 ০৮০০ পি & ৃ জীব ও জগৎ জগতের এবং জড়ের সত্ব স্বীকার করেন না । তাহাদের মতে এই জড়জগৎ সমস্তই মনের স্ট্টি রা বিকাশমাত্র । আমেরিকার আধুনিক বিজ্ঞানবাদ্দিরা বলেন যে, জগতে জড়- পদার্থ বলিয়া! কোনও বস্তু নাই; সমস্তই মনের কার্য্য। ইহার! বিশপ: বালি এবং তাহার সমশ্রেণীভূক্ত অন্যান্ত বিজ্ঞানবাদী দার্শনিক পণ্ডিতের ধারণার অনুবর্তী হইয়। এইরূপ সিদ্ধান্তেই উপনীত হইয়াছেন। আমেরিকা মহাদেশে এই বিজ্ঞানবাদীদের সিদ্ধান্ত আবার সম্পূর্ণ নৃতন্; কারণ আমেরিকাবা সিগণ জগতের অপর জাতি অপেক্ষা আধুনিক কালের জাতি । আমেরিকাতে এপধ্যস্ত কোনও প্রতিভাশালী বিজ্ঞানবাদী দার্শনিক পণ্ডিতের আবির্ভাব হয় নাই। অপরপক্ষে আজকাল অধিকাংশ, বৈজ্ঞানিক, শরীরতত্ববিৎ, পদার্থ- বিজ্ঞানবিৎ (010য810186), রসায়নশাস্ত্রবিং, চিকিৎসা- ব্যবসায়ী এবং ক্রমবিকাশবাদী এই বিশ্বসন্বন্ধে জড়বাদেরই সমর্থন করিয়া থাকেন। সমস্ত পদার্থের উপাদানকারণ 'জড়পদার্থ--ইহাই তাহায়।. দেখাইতে প্রয়াস পান। তাহারা আরও বলেন যে, জড়ুপদার্থ হইতে মন ও আত্মার উৎপত্তি হইয়াছে । যদিও জগতে অধিকাংশ লোকই এই সিদ্ধান্তের অনুমোদন করেন এবং জড়বাদী বলিয়। আপনাদের পরিচয় দিয়! থাকেন তথাপি তাহাদের ভিতর বোধ হুয় অতি অল্লসংখ্যক লোকেই জড় অথব! অনাত্মার ৫ আত্মজ্ঞান স্বরূপ কি, কিনব! অনাত্ধ! বা জড় বলিতে কি বুঝায় তাহা পরিস্ষুটভাবে প্রকাশ করিতে পারেন ন। অনাত্ম৷ বা জড়পদার্ঘটির স্বরূপ কি1-_-তাহ। কেহ কি কখন প্রত্যক্ষ করিয়াছেন ? জড়বাদিগণকে জিজ্ঞাসা করা যাইতে পারে যে, আমরা কি জড় পদার্থ দেখিতে পাই? উত্তরে তাহারা বলিবেন--“না” * কারণ চক্ষুদ্বার৷ আমরা সাধারণতঃ যাহা দেখি তাহা 'বর্ণ; ভিন্ন অন্ত কিছুই নহে। এই বণ এবং জড় কি একই পদার্থ? না, তাহাও নয়; কারণ বর্ণ একটি গুপবিশেষ। কিন্তু উহা কোথায় থাকে? সাধারণ অজ্ঞ লোকের বিশ্বাস যে, পুষ্পের থে বর্ণ আমর! প্রত্যক্ষ করি, তাহা! পুষ্পের মধ্যেই নিহিত থাকে। শরীরতত্ববিদ্গণ কিন্তু বলিবেন যে, আমরা যেব্্ণ দেখিতে পাই, তাহ। পুম্পে দেখা গেলেও পুম্পে থাকে না।. তাহাদের মতে উহা (বর্ণ) একটি অনুতবমাত্র। আমাদের চাক্ষুষ নায়ুবাহী চৈতন্তের সঙ্গে কোন বিশেষ একপ্রকার পরিস্পন্দনের সংস্পর্শ ঘটিলেই এ প্রকার অনুভব বা সংবেদনার সঞ্চার হইয়া থাকে । ইহা আশ্চর্য্য বলিয়া! প্রতীয়মান হইলেও সত্য। বর্ণামুভূতি একটি যৌগিক ক্রিয়ার ফল। ব্যোম-পদার্থে (০0৩) - প্রথমে কম্পন হয়, পরে এ কম্পন চক্ষুদর্ণর 'দিয়া মস্তিকষে প্রবেশ করে এবং দেখানে যাইয়া এস্থানে কোষসমূহের মধ আর এক্‌ নর | জীব ও জগৎ প্রকার কম্পনের সৃষ্টি করিয়া থাকে। বর্ণ এই উভয় প্রকার কম্পনের ফল। মস্তিষককোষের এই কম্পন চৈতন্তের আলোকে আলোকিত হইলেই অনুভব বা সংবেদন আখ্যা প্রাপ্ত হয় । অতএব, জড় ও চৈতন্তের সংমিশ্রণের ফলই বর্ণ। ইহা বাহা (০১]9০৪৩) ও আস্তর (৪00190659 ) উভয় জগতের প্রদত্ত বস্তর সমাবেশের ফল। সুতরাং দেখা গেল যে, বর্ণ পুষ্প থাকে নাঃ উহা অক্ষিগোলকের পশ্চাঘ্তী বিল্লী, চাক্ষুষ স্নায়ু ও মস্তিফকোষের উপর নির্ভর করে; অতএব এ বর্ণ এবং জড় এক হইতে পারে না। আমরা এরূপ জিজ্ঞাসা করিতে পারি যে, আমরা যে-শব্দ শ্রবণ করিয়া থাকি তাহাও কি জড়বস্ত ? না, প্রকৃত উহ! জড়বন্তু নয়; উহা! কোন এক বিশেষ প্রকার কম্পন ও মনের সঙ্ঞান-ত্রিয়াশীলতার ফল। নিদ্রিতাবস্থায় শব্-কম্পন আমাদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করে। সেখান হইতে শ্রবণকুশল স্সায়ূদ্বারা উহ! মস্তি্ককোষে উপনীত হয়। কিন্ত তখনও আমরা শুনিতে পাই না), কেনন! উপলব্িকরণক্ষম মন সেখানে না থাকায় কম্পন তখনও অব্বামুভবে পরিবত্তিত হইতে পারে না। অতএব শব এবং জড়বন্তও এক নহে । এইরূপে দেখান যাইতে পারে ষে, আমরা যাহাকে জড় বলিয়া থাকি, অন্যান্ত ইন্জিয় ণ আত্মজান দ্বারাও তাহার কোন পরিচয় ঘটে না। আর সেজন্যই আমর! জিজ্ঞাস! করি যে, জড় কি? জন্‌ ঈয়া্ট মিল্‌ জড়ের এইরূপ সংজ্ঞা দিয়াছেন £ “অনুভবের স্থায়ী সম্ভাবনাই জড় বা জগৎ ৮১ মনসম্বন্ধেও তিনি বলিয়াছেন £ “স্থায়ী বোধশক্তিই মন 1৮২ এক্ষণে এই সংজ্ঞা! দ্বারা আমর। বেশী কিছু বুঝিলাম কি? বরং বলিতে গেলে আরও গোলে পড়িলাম। যত কিছু গোল এ *সম্ভাবন।”(60088)%80 শব্দটিকে লইয়া । যাহা হউক উহার দ্বারা বুঝিতে হইবে যে, যাহাতে অন্ুভব-ব্যাপারটি স্থায়িরপে সম্ভব হয় তাহাই মন বা চৈতন্তা। অথবা এরপও বলা যাইতে পারে যে, যাহা স্থায়িভাবে ইন্দরিয়গ্রাহা ও যাহ! অনুভূতি বা! সংবদনের বিষয় তাহাই জড় বা জগৎ এবং যাহ। স্থায়ীভাবে অনুভব করে বা অনুভবের কর্তা, তাহাই 'জীবঃ | যাহাতে অনুভব-ব্যাপারটি স্থায়িৰপে সম্ভব হয় তাহা ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত হইতে পারে না; কেনন! ইন্জিয়গুলি অনুভবের দ্বার মাত্র, প্রকাশক নহে। জড় শুধু অনুভব-কার্ধ্যের সংঘটন করিয়! থাকে এবং উহাই জড়ের ১ 71001) 5091 71111 0651065 7%2//67 95 029 *10611708179106 7035101115০ 56175800105 ই 15117091767 70959101110 01 06118. ৮ | জীব ও জগৎ একমাত্র কার্য । যখন আমরা জড়জগৎকে পৃথকরূপে বুঝিতে চেষ্টা করি, কিন্বা যখন উহার কোন বিশেষ ব্যাপার আমরা অনুভব করিতে চাই তখন আমাদের ইন্দ্রিয়গুলি আমাদিগকে কোন সাহাযা করে না। বর্ণান্ুভৃতির পক্ষে চক্ষুরিক্দ্িয় যন্ত্রত্বরূপ মাত্র। শব্দানুভূতির পক্ষে সেরূপ শ্রবণেন্দ্িয় ও আন্রাণের পক্ষে নাসারন্ধ, যন্ত্রক্বরূপ ৷ আমাদের যতটুকু ইন্দরিয়শক্তি, বাহাজগতের অনুভূতিও আমাঁদিগের নিকট ততটুকু হইয়। থাকে । সাক্ষাৎসন্বন্বেই হউক আর পরোক্ষভাবেই হউক, যাবতীয় অনুভূতি আমাদের ইন্দ্রিয়গুলির ক্রিয়াশীলতার ফল। আমরা জানি যে, দেশ ও কালকে অবলম্বন করিয়াই জড় বিদ্কমান থাকে । আবার ইহাও জানি যে, জড়জগৎ নানাবিধ অনুভবের সংঘটন করে; কিন্ত তথাপি আমরা উহা! দেখিতে বা স্পর্শ করিতে পারি না। প্রকৃতপক্ষে যাহাকে আমরা 'জড়' বলি তাহ! চিরকালই অতীন্দ্িয় অবস্থায় থাকিবে । একখানি চেয়ার, একখণ্ড কাষ্ঠ অথবা ন্বর্ণ আমরা স্পর্শ করিতে পারি, কিন্তু স্বরূপতঃ জড়- বস্তটাকে আমরা স্পর্শ করিতে পারি না। ইহা বড়ই বিচিত্র ব্যাপার । প্রকৃতপক্ষে হ্বর্ণ বা প্রস্তর কিন্তু জড়- পদার্থ নহে, উহা! জড় হইতে উৎপন্ন মাত্র ) কান্ঠ ব! প্রস্তর ও জড়ের বিকার । জাত্জ্ঞান “জড় শব্দের তথ্যটি চিত্াকর্ষক হইতে পারে। “ম্যাটার অর্থাৎ জড়? শব্দটি লাটিন ভাষার “ম্যাটারিজ * (%/%/%19) শব হইতে উৎপন্ন । 'ম্যাটারিজ+ অর্থে উপাদান । প্রথমে এই শব্দটি বৃক্ষের কাণ্ড বা গৃহাদি নিম্াণ- কার্যের উপযোগী কড়িকাঠ, বরগা। ইত্যাদি বস্তুর পরিবর্তে ব্যবন্থত হইত। ক্রমে ক্রমে ইহার অর্থের বিস্তৃতি ঘটিল এবং উহাতে লোকে কোন কিছুর উপাদানভূত দ্রব্যকেই বুঝিতে লাগিল। যখন একটি কাণ্ঠনির্শিত মৃত্তি গঠিত হইল তখন কাষ্ঠের উপাদান হইতে সেই মূর্ডিটির একটু প্রভেদ করিয়। ফেলা হইল। কিন্তু তাহা হইলেও মৃদ্ডিটি প্রকতপক্ষে কাষ্ঠ ব্যতীত আর কিছু নহে। প্রস্তর বা ধাতুময়ী মৃত্তির সন্বদ্ধেও এরূপ। সুতরাং দেখা যাইতেছে যে, উপাদান বলিতে সেই দ্রব্য বুঝিতে হইবে যাহা হইতে কোন- কিছু গঠিত বা আকারিত হইতে পারে। ক্রমে এইরূপ প্রশ্ন হইতে লাগিল যে, কোন্‌ দ্রব্যের দ্বার এই পৃথিবী গঠিত হইয়াছে? উত্তর হইবে-_ম্যাটারিজ, বা জড়ের দ্বারা । অতএব এই “জড় শব্দটিতে কোন নির্দিষ্ট বস্তুকে বুঝায় নাঃ তবে যে অজ্ঞাত ভ্রব্যে ইন্দরিয়গ্রাহা জ্ঞাত বস্তগুলি গঠিত হইয়াছে, জড় বলিতে আমরা তাহাই বুঝিয়া থাকি এবং ইহাই এ শবের মূল ও প্রকৃত অর্থ। কোন বন্ত বা 'আকারবিশিষ্ট পদার্থের মূলে যে অজ্ঞাত, উপাদান ৃ 2 ও | | জীব ও জগৎ বিদ্যমান থাকে, জড় অর্থে তাহাই নির্দেশ করে। উ্বাহরণ- স্বরূপ দেখা হায়, কথোপকথনের সময় আমরা! ইংরাজীতে সচরাচর বলিয়। থাকি “হোয়াটিজ, দি ম্যাটার ?” “ইট্‌ ভাজ, নট ম্যাটার” *ইম্পর্টান্ট, ম্যাটার,” “ডিকেয়িং ম্যাটার" ইুত্যাদি। এ কথাগুলির গ্রত্যেকটিতেই অনির্দিষ্টকোন বস্তুকে লক্ষ্য করিয়। ইংরাজী ভাষায় “ম্যাটার, শব্দ ব্যবহৃত হইয়! থাকে। অতএব "ম্যাটার বা 'জড়' অর্থে কোন অজ্ঞাত বন্তই বুঝিতে হইবে । 'বিজ্ঞান ও দর্শন বলেন, যে অজ্ঞাত উপাদান হইতে যাবতীয় ব্যবহার্য ভ্রব্যের উত্তব হইয়াছে, জড় বলিতে তাহাই বুঝিতে হইবে। ইহা! অতীল্ত্রিয় বস্তু হইলেও বিশ্বত্রক্মাণ্ডের যাবতীয় পদার্থেই ইহা অনুস্যাত হইয়! রহিয়াছে। ইহা স্বয়ং দেশ কিম্বা! কাল নহে, অথচ ইহা দেশকে ব্যাপিয়া আছে। কালেও ইহা অভিব্যক্ত হইতেছে এবং কাধ্য- কারণসজ্ে ইহা শৃঙ্খলিত নহে। যাহা হউক এতগুলি ভাব এ জড় শব্দটির অর্থে নিহিত আছে। যে উপাঁদানটি হইতে এই বিশ্বত্রন্মাণ্ড রূপাঁধ়িত হইয়াছে, যখন আমর! তাহার চিন্তা করি তখন আমাদের মনে হয় যে, উহ বিরাট, মহান) অপরপ ও অন্ভুত শক্তিশ্রালী। সেই শক্তিই সবীসর্ববদ। নানাভাবে প্রকাশিত হইতেছে ] কিন্তু জড়পদার্থটি কি? সেটি এক, না বছ? উত্তরে বলিতে ১১ + আত্মজ্ঞান হয়--উহা! একই, উহা! কখনও বছ হইতে পারে ন|।' হ্বাটা প্পেন্সার্‌ বলেনঃ ০্গুদ্ধ জড়ের ধারণা করিতে হইলে আমাদিগকে একটি তুলন! দ্বারা উহা করিতে হইবে। মনে করিতে হইবে, জড় ও দেশ (8809 ) একই সময়ে অবস্থিত ছুইটি ব্যাপার । জড় বাধা প্রদান করে, দেশ কোন বাধা প্রদান করে না।৮৩ এক্ষণে দেশ ও জড়ের পার্থক্য কি? তাহা দেখা যাক। দেশ একটি বিস্তার, ইহ! কোন প্রকার বাধ! প্রদান করে না। কিন্ত যাহা বাধ! দেয়" ও দেশের ভিতর অবস্থান করে তাহাই জড় । হর্ববার্ট স্পেন্সার আরও বলিয়াছেন £ প্জড় ও দেশ এই ছুইটি বিশ্লেষণের অতীত মূলতত্বের মধ্যে প্রতিরোধ বা বাধা দেওয়ার কার্ধ্যই জড়ের মুখ্যগুণ এবং ব্যাপকত্ব গৌণগুণ। দৃষ্টান্তত্বরূপ বল! যাইতে পারে যে যখন আমরা কোনও বস্ত স্পর্শ করি তখন উহা আমাদের বাধা দেয় এবং হস্তের গতির প্রতিরোধক এমন কিছু আছে ইহা আমাদের উপলব্ধি হয়। কিন্তু যখন, আমর! সেই বস্তু স্পর্শ করিয়া হস্তপ্রসারণ করি তখন এই বাধা ঝা! প্রতিরোধের ভাব দ্বেশের মধ্যে সম্প্রসারিত হয়।” তিনি পুনরায় বলেন £ প্যাহা হইতে জড়ের ৩। 71757 4212722/25) 0,140. | ্ ৯ 'জীব ও জগৎ খ্অন্তিত্বের সম্বন্ধে আমাদের ধারণ হয় তাহা এক প্রকার শক্ভির কার্ধ্য বলিয়া! আমাদের উপলব্ধি হইয়! থাকে ; অর্থাং যাহ! আমাদের মাংসপেশী সঞ্চালনের সময় তাহাতে অবস্থিত স্প্তশক্তির প্রতিরোধ করে, মেই প্রতিরোধক শক্তির কথা স্বতঃই মনে জাগ্রত হয়। যে সুপ্তশক্তি এরূপ প্রতিরোধ করে তাহাকেই প্রকাশিত বা ব্যক্তশক্তি (10:০9) বল! হয়। সুতরাং “ম্যাটার, জড় বা অনাত্মা যাহাকে বল! যায় তাহা কেবল এই ব্যক্তশক্তিগুলি দেশের সহিত একপ্রকার ঘনিষ্টসন্বন্ধে আবদ্ধগাত্র-ইহাই বুঝিতে হইবে।” তিনি আরও বলিয়াছিলেন £ “ম্যাটার ও তাহার গতি এ শক্তিগুলিরই বিভিন্নপ্রকার অভিব্যক্তি মাত্র। জড় ও অনাত্মারূপ স্থূল পদার্ঘগুলি বাহক শক্তিসম্টি ও আমাদের মানসিক উপলব্বিসমূহ একত্রে মিশ্রিত হইয়া ইন্জ্রিয়গ্রাহা হইয়। থাকে ।” প্রতিরোধ বা বাধা অনুভব করিবার জন্য একজন সচেতন অস্থভবকারী কর্তা থাকা আবশ্তক। এই অন্ুভবকারী জ্ঞাত। বিদ্যমান থাকিলেই প্রতিরোধকারী শক্তিটি অনুভব করিতে পারা যায় এবং সেই শক্তি হইতেই জড় বা অনাত্বা সনবন্ধীয় ধারণা আমাদের উৎপন্ন হইয়! থাকে। জড় কাহারও দ্বার! হ্থষ্ট হয় নাই। উহার স্ষ্টি কেহ কখনও দেখে নাই। কিছুই ছিল না, অকন্মাৎ জড়ের ১৩ আত্মজ্ঞান সৃষ্টি হইল অথব] জড় ধ্বংস হইয়া যাইবে, ভাহার কিছুই থাকিবে না, এরূপ কল্পনাও কেহ কখন করিতে পারে না। আধুনিক বিজ্ঞীনের মতে জড়জগৎ উৎপত্তি ও বিনাশশীল নহে। ইহা কখনও স্থষ্ট হয় নাই এবং কখনও ইহার ধ্বংস হইবে না। জড়ের আরও অনেক প্রকার সংজ্ঞা আছে। কোন কোন পদার্থবিজ্ঞানবিদ্‌ ( 71781018৮) বলেন £ “যাহারই কেন্দ্রাভিমুখে প্রেরণ করিবার শক্তি আছে তাহাকেই জড় বলা যায়।” কিন্তু ইহাতেও আমর জড়ের যথার্থ প্রকৃতি অবগত হইতে পারিলাম না। ইহাতে এইটুকু মাত্র বল! হইল যে, এমন একটি পদার্থ আছে যাহা আকর্ষণে সাড়! দিয়া থাকে । আর্ণ্, হেকেল বলেন £ «অসীম বিস্তৃত পদার্থই জড়জগৎ আর সর্ধগ্রাহিণী চিন্তাশক্তিই জীব ।” এইরূপ বহ্ুপ্রকার সংজ্ঞা আলোচনা করিয়া আমরা দেখিতে পাই যে, যে মূল উপাদানে এই জগৎ গঠিত তাহাই জড় ; অর্থাৎ যাহা ইন্দ্রিয়গ্রাহা ও মনের গোচর তাহাই জড়। এই জড় নিত্য জ্ঞেয়ন্বরপ এবং জীব বা! মন সর্বদাই চেতন্যন্বরপ জড়জগতের দ্রষ্টা বা! জ্ঞাতারপে বিদ্কমান । সুতরাং এখন আমরা এইরূপে উভয়ের পার্থক্য বুঝিতে পারি যে, জীব ভ্রষ্টা ও জ্ঞাতা, আর যাহা উপলব্ধি করিতে হয়, ইন্দ্রিয় দ্বারা বুঝিতে হুয়, জামিতে ১৪ জীব ও জগৎ হয়, তাহাই জড়। একটি বিষয়ীঃ আর অপরটি বিষয়। এই ছুইটি পরম্পরে সর্বদাই সংবদ্ধ থাকে। বাহাজগৎ বা জড় এক অদ্ধাংশ, অপর অদ্ধাংশ আধ্যাত্মিক জগৎ বা জীব। অতএব জড়বাদিদিগের অভিমত একদেশদর্শা ও অসম্পূর্ণ কেননা উহার! বিষয়ের বিদ্ভমানতা স্বীকার করেন বটে কিন্তু বিষয়ীর অর্থাৎ জীবের বা মনের অস্তিত্ব অস্বীকার করেন। বিষয়ীকে অবলম্বন করিয়াই বিষয় বর্তমান থাকিতে পারে, অন্যথা পারে না--এ কথাটি জড়বাদিগণ অন্বীকার করেন। জড়বাদীদের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণরূপে যুক্তিবিরুদ্ধ, কারণ বিষয় ও বিষয়ী, জ্রেয় ও জ্ঞাতা এই উভয়ের শ্বরূপ- বিভরমের উপরই জড়বাদের ভিত্তি । জড়বাদ বলে যে, জড় জগৎ বা অনাত্বা হইতেছে জেরয় বা জ্ঞানের বিষয়, কিন্ত সেইসঙ্গে আবার ইহাও প্রমাণ করিতে চেষ্টা করে যে, এই জ্ঞেয় বিষয় হইতেই সেই জ্ঞাতা৷ বিষয়ী উৎপন্ন হইয়াছে । কিন্তু ইহা কখনই হইতে পারে না। কারণ “ক কখনও “ক'"এর অভাব হইতে পারে না। জড় বা অনাত্বা জ্ঞেয় পদার্থ বা জ্ঞানের বিষয় ( ০19০৮%9 )--এই ধারণা হইতে জড়বাদের আরম্ত। কিন্ত জড়বাদ পরিশেষে সিন্ধান্ত করিয়া থাকে যে, এই জ্ঞেয় জড় জগৎ বা অনাত্মা বিষয় হইতেই বিষয়ী বা জ্ঞাতাম্বরূপ আত্মার উৎপত্তি হইয়া থাকে । | এই মতে প্রথমেই স্বীকার করিয়া লওয়া হয় যে, ১৫ 'আতাজ্ঞান যাহাকে উপলব্ধি করিতে হয় অথব! যাহা অনুভবের বিষয় তাহাকেই জড় বলে। ক্রমে এ কথাও স্বীকৃত হইয়াছে যে, এই জড় হইতে এমন কিছু উৎপন্ন হয়__যাহা অনুভবের জ্ঞাতা। কিন্তু এই কথা স্ববিরোধী ও অসঙ্গত। জড়বাদ (118971911970) যেমন একদেশদর্শী ও অসম্পুর্ণ আদর্শবাদ (19681187) অথবা৷ বিজ্ঞানবাদও সেইরূপ | ইহাতে জড় বা বিষয়ের অস্তিত্ব অন্বীকৃত হইয়াছে । ইহার মতে সবই “মনঃ। বর্তমান কালে খুষ্টান সায়েন্দ বলেন যে, "সবই মন, জড় বা জগং ধলিয়৷ কোন কিছু নাই। এ মতটিও জড়বাদের স্যায় ত্রম- পূর্ণ। জীব, মন বা অহং (9৪০) চিরকালই বিষয়ী;) ইহ! অনুভবের বর্ত। বা জ্ঞাতা। অনুভব-কার্ষ্ের অথবা জ্ঞানের বিষয় যতক্ষণ আছে ততক্ষণই উহার কর্তাও থাকিতে পারে । একটির অস্তিত্ব স্বীকার করিলে তাহা হইতে অপরটির অস্তিত্বও অনুমিত হইয়া থাকে। এইজন্য মনীষী কবি গ্যটে (9০999) যথার্থ ই বলিয়াছেনঃ “জীব ব্যতীত জড় থাকিতে ব৷ কার্য করতে পারে না; আবার জড় না থাকিলে জীবের অস্তিত্ব এবং কার্যকারিতাও সম্ভব হইত না । অতএব স্পষ্ট বুঝা যাইতেছে যে, বিষয়ী ও বিষয় এ ছুইটি একই সর্বব্যাপী সত্বার (ব্রন্মের ) দুইটি ভাব। উনারা যেন এ সন্ধার ছুইটি বিভাগ । এ সত্ব অজ্ঞাত ও: ১৬ | জীব ও জগৎ অন্দ্েয। স্পিনোজা৷ উহ্াকেই ন্দাব ষ্ট্যান্শিয়া” ব। মূলতত্ব বলিয়াছেন। হাব্বাট স্পেন্সার উহাকে “অজ্ঞেয়” আখ্যা দিয়াছেন। উহাই ক্যান্টের অজ্ঞাত ও বিশ্বোত্বীর্ণ সত্ব (17102-10-365911) | প্রাচীন গ্রীক-দার্শনিক প্লেটে! ইহাকেই “সব্রোত্তম” (০9০০৭) আখখ্য। দিয়াছেন এবং আমেরিকান দার্শনিক এমার্সন ইহাকেই “'পরমাত্মা” (0০:৮৪০01) বলিয়াছেন; আর বেদাস্তের মতে ইনিই “ত্রক্গ” ; ইনিই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সেই সনাতন সত্যন্বরূপ যাহা হইতে স্থুল, সুক্ষ, জড় বা অনাত্মা, আত্মা সমস্তেরই উৎপত্তি হইয়াছে। ইহা “একমেবাদ্বিতীয়ং; অর্থাৎ এক ও অদ্বিতীয়; বনু নহে। বিশ্বচরাচর স্ষ্টির প্রারস্তে সর্বপ্রকার জাগতিক ইন্দরিয়গ্রাহ্া বিষয় এই এক ব্রহ্মসত্তা হইতেই উদ্ভূত হয় এবং প্রলয়কালে তাহারা সকলে সেই ত্রন্মেই বিলীন হইয়া ায়। এই অনস্ত আধারম্বরূপ ত্রন্গে মায়। বা প্রকৃতি অভিন্নরূণে অবস্থিত ছিল এবং সেই প্রকৃতি হইতেই প্রকাশমান যাবতীয় শক্তির উৎপত্তি হইয়াছে। এই প্রকৃতিকেই আগ্ঠাশক্তি, মহামায়া, জগন্মাত৷ ইত্যাদি নাম দেওয়া হইয়াছে । পাশ্চাত্য বিজ্ঞানের প্রমাণিত মত হইতে আমরা জানিয়াছি যে, জগতের দৃশ্যমান যাবতীয় শক্তি একটি অন্যের সহিত আপেক্ষিকভাবে সংশ্লিষ্ট এবং ইহারা সেই নিত্য ব্রহ্ম ও তাহার নিত্যা প্রকৃতিরই অভিব্যক্তি মাত্র। ১৭ উপনিষৎ বঙ্গেন £ “এতম্মাজ্জায়তে প্রাণে মনঃ সর্ঝেক্দিয়াণি চ। খং বায়ুর্জ্যোতিরাপঃ পৃথিবী বিশ্বস্ত ধারিণী 1৮ এই মুলসত্তা হইতে প্রাণ, সর্ধপ্রকার মানসিক ক্রিয়া, ইন্দ্রিয়, ইন্জিয়গ্রাহ পদার্থসকল এবং ভৌতিক শক্তিসমূহ উদ্ভূত হইয়াছে ও নানাভাবে ও নানা আকারে পরিবতিত হইয়! প্রকাশ পাইতেছে। ইহাই একত্ববাদ। বর্তমানকালে জাম্মাণ বৈজ্ঞানিক আর্ণেষ্ট হেকেল্‌ প্রমুখ একত্ববাদ্দিগণ স্বীকার করেন যে, এ নিত্য বস্তই জড় চেতন এবং সর্বপ্রকার শক্তিসমূহের উত্ভবের হেতু। তাহার। বেদাস্তের মহান্‌ সত্য “এতস্মাজ্জায়তে” ইত্যাদি বাক্যও স্বীকার করিয়াছেন । সেই এক অনার্দি অনন্ত ব্রহ্ম হইতে এক দিকে জীবনীশক্তি অর্থাৎ প্রাণ, মন, মানসিক ক্রিয়াসমূহ এবং যাবতীয় ইন্দ্রিয়শক্তিসমন্থিত জীব উৎপন্ন হুইয়াছে, অপর দিকে জড়রাজ্যের অন্তর্গত দেশ, আকাশ, বায়ু, অগ্নি আপঃ (তরল) ও পৃথিবী অর্থাৎ কঠিন পদার্থ (3০110) প্রভৃতি স্থুল পদার্থের উদ্ভব হইয়াছে । এক কথায়, সেই অনাদি ব্রহ্ম হইতেই একদিকে জীবাত্মার ও অপরদিকে অনাত্ম! বা জড় জগতের বিকাশ হইয়াছে । বেদান্তের এই অদ্বৈততত্ব। পাশ্চাত্য দেশের রা ১। মুগডকোপনিষৎ ২1১1৩ ১৮ জীব ও জগৎ বিজ্ঞানবাদী পণ্ডিতগণও সমর্থন করিতেছেন। “ম্যাটার' অথব। জড় জগংকে অতি ্ৃগ্মাবস্থায় বিশ্লেষণ করিলে দেখা যায় যে, তাহা সর্ধবাধার ব আধারভূত সেই অসীম ব্রহ্মসত্বাতেই পরিণত হইয়। থাকে । সেইজন্য বেদাস্ত বলিয়াছে যে, এই অসীম অনন্ত ব্রহ্মনত্বাই নিখিল বিশ্বের অনাত্বা এবং আত্মা, অচেতন ও চেতন এই ছুই ভাবের মূলে বিষ্কামান । সেই ত্রহ্মই বিশ্বের উপাদান ও নিমিত্তকারণ। যদিও ইহা এক ও অদ্বিতীয় তথাপি ইহা! অনির্চনীয় মায়াশক্তির প্রভাবে বন্ছবূপে প্রতীয়মান হইয়া থাকে । আর ইহাই বেদাস্তের “মায়” | এই জগৎ কেবলমাত্র অচেতন কি, রচিত নহে অথব! উহা পরমাঁণুসম্টির সমবায়ের ফলও নহে। এযাবং কাল পাশ্চাত্যদেশীয় পদার্থবিজ্ঞীনবিৎ রাসায়নিক এবং অপরাপর জড়বাদিগণ বিশ্বাস করিতেন যে, পরমাণুগুলির প্রত্যেকটি অবিভাজ্য পদার্থ এবং উহারা অনম্ত অমীম আকাশে ভাসিতেছে। উহারা পরস্পরের আকর্ষণ ও বিকর্ষণ শক্তির অধীন হইয়। ঘুরিতেছে £ উহারা স্বতঃই যাবতীয় নৈসগি ক বস্তু উৎপাদন করিতেছে এবং উহাদিগের দ্বারাই এই পরিদৃশ্যমান জগতের স্ষ্টি হইয়াছে । কিন্তু এক্ষণে সুবিখ্যাত ইংরাজ বৈজ্ঞানিক জে. জে, টম্সন্‌ বিহ্যৎপ্রবাহের প্রয়োগ-পদ্ধতির লাহায্যে প্রমাণ করিয়াছেন যে, তথাকথিত অবিভাঙ্ ১৯ | আত্ুজান পরমাণুকেও সুঙ্স্মতর অংশে বিভক্ত করা যাইতে পারে। এই- রূপ নুক্্তর অংশকেই “ইলেক্ট,ন ও “প্রোটন” বিছ্যুতিন্‌ অথবা বিছ্যুৎস্মাত্রা বলে ; এবং ইহ! প্রাচীন হিন্দু বৈজ্ঞানিকর্দিগের তম্মাত্রা অথবা শক্তিকেন্দ্র ভিন্ন অপর কিছুই নহে। যদি পরমাণুগুলি 'ইলেক্ট ন-এরই সমষ্টি হয় এবং 'ইলেক্ট,ন'গুলিই তন্মাত্র! অথব। শত্তিকেন্দ্র হয় তাহা হইলে উহার! কোথায় থাকে ? এই প্রশ্নের উত্তরে বেদান্ত বলে যে, তাহারা অনাদি ও সর্ধবশক্তিন্বরূপিণী অব্যক্ত প্রকৃতির আধার সেই ্রন্মস্বরূপ অনাদি অনস্ত কারণসমুদ্রের মধ্যেই অবস্থিত রহিয়াছে । এক্ষণে আমরা বুঝিতে পারিতেছি যে, “ম্যাটার, জড় বা জগৎ এবং শক্তি বা মায় সেই এক অদ্বিতীয় ্রন্মা্ববূপ মহাকারণের সহিত কিরূপ অভিন্নভাবে সন্বদ্ধ। ইহার এক অংশ ব'বাহা দিক হইতেছে ম্যাটার, অথবা জড়জগৎ, জেয বা বিষয় এবং অপর অংশ আন্তর দিক যাহাকে আমর জ্ঞীতা ও বিষয়ী আত্মা বলিয়া থাকি। ইতিপূর্বে আমি বলিয়াছি বর্তমান বিজ্ঞানের ছারা প্রকাশ পাইয়াছে যে, জড়ের স্ৃষ্টিও নাই আর বিনাশও নাই। শক্তিও সেইপ্রকার উৎপত্তি ও ধ্বংসহীন। জড় ও শক্তিকে নানাবিধ আকারে পরিবন্তিত কর যাইতে পারে, কিন্তু কখমই উহাদিগের ধ্বংসসাধন করা যায় না। এখন প্রশ্ন হইতে পারে যে, যদি জগতের এক অর্ধাংশ অর্থাৎ জড় বা জাগতিক ষ্ঠ ০ জীব ও জগৎ শক্তি উৎপত্তি ও বিনাশশৃন্ত হয় তবে জীবের প্রকৃতি কিরূপ হইবে? উহাও কি উৎপত্তি ও বিনাশশীল হইবে? যদি বিশ্বের বহিবিকাশের উৎপত্তি ও বিনাশ না থাকে তবে অপর অধ্ধাংশ অর্থাৎ মন বা জীবই কেমন করিয়া জীবন ও মরণের অধীন হইতে পারে? না, উহা অসম্ভব । স্বরূপতঃ জীব অথব! মনেরও উৎপত্তি ও বিনাশ নাই। জড়ক্গৎ বা বিষয় যদি অনাদি, শাশ্বত ও অবিনাশী হয় তবে জীব অথবা বিষয়ীও অনাদি ও অবিনশ্বর হইবে। জীব নিত্য ও অবিনশ্বর না হইলে জড়ের নিত্যত্বও তাহ। হইলে অপস্তব হইয়া! পড়ে । জীব বা বিষয়ী নিত্য না হইলে জড়শক্তি যে অবিনশ্বর তাহার সন্ধান অথবা পরিচয়ই বকে লইবে? বিভিন্ন দেশের অধিকাংশ বিখ্যাত মনীষী ও বৈজ্ঞানিকই এই বিচার্য্য বিষয়টুকু যেন উপেক্ষা করিয়া গিয়াছেন। জড়জগৎ ও তাহার শক্তি বা বিকাশের চির- স্থায়িত্ব ভাবিতে গেলেই জীব বা! মনের চিরস্থায়িত্বের কথাই আগে মনে আসিয়া পড়ে । একটির নিত্যত্ব বা চিরস্থায়িত্ব অস্িদ্ধ হইলে একটির সঙ্গে সঙ্গে অপরটির নিত্যত্বও নষ্ট হইয়া যাইবে । তাই জীব ও জড়ের চরম বিশ্লেষণ করিয়া জানা গিয়াছে যে, উভয়েই উৎপত্তি ও বিনাশশুন্ এবং উভয়েই শাশ্বত ও সনাতন। যদি আকর্ষণ ও বিকর্ষণ- শক্তিযুক্ত একটি চুম্বকের এক প্রান্ত অপরিবর্তনশীল ২১ হয়, তবে অপর প্রান্তেরও এরূপ হওয়া আবশ্তক। আবার উহার যে স্থলে উভয়বিধ শক্তি মিলিত হইয়াছে সে মধ্যবস্তী ও নিরপেক্ষ কেন্দ্রটিরও (06068 00100) অপরিবর্তন- শীলত ব্বীকার করিতে হইবে। এই বিশ্ব যেন একটি প্রকাণ্ড চুম্বক পাথরের ন্যায়। উহার একটি দিক যেন জড়জগৎ বা বিশ্ব ও অপর দিক জীব এবং ব্রহ্ম যেন ইহাদের উভয়ের মিলনস্থল। স্থৃতরাং বলিতে গেলে এই তিনটিই অর্থাৎ জড়জগৎ, জীব ও ব্রহ্ম অপরিবর্তনশীল। বেদান্তে চৈতন্তময় বিষয়ী, দ্রষ্টা ও জ্ঞাতার ন্বরূপকে 'আত।' বল! হয়। এই আত্মাই আমাদের সকলের যথার্থ স্বরূপ । এই আত্ম অনাদিকাল হইতে আছেন এবং ভবিষ্যতে অনস্তকাল পধ্যন্তও থাকিবেন ; কেহই ইহার ধ্বংস বা! বিনাশ সাধন করিতে পারে না। ইন্দরিয়গ্রাহ্য বাহাজগতের আকারসমূহ পরিবত্রিত হইতে পারে, কিন্তু শাশ্বত আত্মার কোনপ্রকার কোনদিন পরিবর্তন ঘটিবে না। ইহা সম্পূর্ণরূপে নিত্য ও অপরিবর্তনীয়। সেই কারণ গীতায়( ২২৩) উক্ত হইয়াছে £ পনৈনং ছিন্রন্তি শত্ত্রাণি নৈনং দহতি পাবকঃ। ন চৈনং ক্লেদয়ন্ত্যাপো ন শোষয়তি মারুতঃ ॥৮ 'অন্ত্র এই আত্মাকে ছেদন করিতে পারে না, অগ্নি ইহাকে দগ্ধ করিতে পারে না, জল ইহাকে বিগলিত করিতে পারে ন! এবং বায়ু ইহাকে শুক করিতে পারে না।. ইনি অচ্ছে্, ২২ জীব ও জগৎ অদাগ্, অর্েগ্, অশোধ্য, নিত্য, অবিকারী এবং অবিনশ্বর ; দেহের মৃত্যু হইলেও আত্মার কখনও নাশ হয় না। যাহা” কিছু দেশ ও কালের অধীন তাহাই ধ্বংসশীল অর্থাৎ মৃত্যুর অধীন ও নশ্বর। যেসকল বস্তুর আকার আছে তাহার মৃত্যুও আছে; কেননা! “জাতন্ত হি ঞুবে মৃত্যুঃ গ্রবং জন্ম মৃতন্ত চ৮ (২২৭); জন্ম হইলে মৃত্যু অবশ্থস্তাবী, অর্থাৎ যাহার উৎপত্তি আছে তাহারই ধ্বংস আছে। আমাদের শরীরের জন্ম হইয়াছে, সেজন্যই ইহার মৃত্যু হইবে। দেহের আকার সর্বদা দেশ ও কালের অধীন। কিন্তু আত্মার কখনও মৃত্যু হইতে পারে না, কারণ ইনি অজ অর্থাৎ জন্ম- রহিত এবং দেশ ও কালের অতীত। আত্মা কখনও দেশ ও কালের অধীন নহেন। যদি আমার্দের আত্মার উৎপত্তি ব। জন্মের বিষয় অনুসন্ধান করিতে চেষ্ট। কর! যায় তাহা- হইলে আমরা কখনও উহার উৎপত্তির সন্ধান পাইব ন! সুতরাং ইহা সত্য যে, আত্মা আদিরহিত এবং অন্তহীন । যে সমস্ত পদার্থ আমাদের ইন্জ্রিয়গ্রাহা তাহাদেরই কেবল পরিবর্তন হইবে এবং কালে তাহাদেরই নাশ হইবে, কিন্ত আত্মা চিরকাল একভাবেই থাকিবে, কারণ আত্মা অজর, অমর ও শাশ্বত । এখন জিজ্ঞান্ত হুইতে পারে যে, এই চৈতন্তময় আত্মা এক কি ব্ছ? এই এক রকমেরই প্রশ্ন জড় বা অনাত্মা খত খআক্মজ্ঞান সম্বন্ধেও আবার জিজ্ঞাসা করা যাইতে পারে । কিন্তু আমরা পুর্ধেই দেখিয়াছি যে, জ্ঞ্বেয় বিষয়, জড়জগৎ বা অনাত্ম! যদিও দেশ এবং কালের অধীন থাকিয়া নানাভাবে প্রতীয়মান হইয়। থাকে তথাপি উহা! পরমার্থতঃ একই বস্তু ও নিত্য । বেদান্তের মতে জ্ঞেয় বিষয় ব| জগত বিচিত্র ও নানা, কিন্ত জগতের জ্ঞাতা, বিষয়ী বা আত্মা এক ও অদ্বিতীয় । সেই সর্বব্যাপী জ্ঞাতা পরমাত্া আবার এই নিখিল বিশ্বের প্রাণ ব আত্মারূপে বিদ্যমান রহিয়াছেন এবং ক্ষুত্র 'জীবাত্মাসমূহ তাহারই ক্ষুন্প অংশরূপে, প্রকাশিত হইতেছে ।, যে পরমাত্মা, পরমেশ্বর ব। বিরাটপুরুষ জীবাত্মারূপ অংশ- সমূহের পূর্ণ সমষ্টি্ঘরপ। সেই বিরাট-পুরুষই অনাদি- কাল হইতে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের একমাত্র বিষয়ী এবং জ্ঞাতা । তিনিই একমাত্র বিশ্বাঝা! এবং তাহাতেই সমস্ত জীবাত্ম। ংশরূপে অবস্থান করিতেছে । তিনিই এক, অদ্বিতীয় ও অনস্তসত্বারপ অখণ্ড চৈতন্য সমুদ্র; তাহাতেই অসংখ্য আবর্তের স্টায় এই ব্যষ্টি জীবাত্মাসমূহ অবস্থিত রহিয়াছে। সেই বিরাটপুরুষই আবার প্রথমজ হিরণাগর্ভ বলিয়া খথেদে বর্ণিত হইয়াছেন ; যেমন “হিরণ্যগর্ভঃ সমবর্তৃতাগ্রে, ভূতন্ত জাত পতিরেক- আসীং;” অর্থাৎ ইনি বিশ্বের বিধাতা ও পতিরূপে ব্রহ্ম হইতে প্রথমে আবিভূ ত হইয়াছিলেন। ইনিই ১ “মমৈবাংশো জীবলোকে জীবসভূতঃ সনাতনঃ1”--গীতা। ১৫৭ ২৪ 4 টি... ও ঠাস ৭ ৭ ৯৯ এটি ও এটি ভীব ও জগৎ নিঙ্চণ পরব্রন্মের সর্ধ্বপ্রথম এবং সর্বোত্তম বিকাশ ; আবার ইনিই সগুণ-ত্রহ্ষ । এই ব্রহ্ম বিশ্বব্রক্মাণ্ডের উপাদান ও নিমিত্তকারণ। ইহাকে আশ্রয় করিয়াই প্রকৃতি ক্রম-. বিকাশের অগণিত স্তর দিয়! এই পরিদৃশ্যমান জগৎ স্পট করিয়াছেন। এই ভাবটি গীতায় আরও পরিষ্কার করিয়া বলা হইয়াছে, যেমন £ “মম যোনি্মহদ্বন্গ তশ্মিন্‌ গর্ভং দধামাহম্” (১9৩১ )। ইনি জ্ঞাতা, বিষয়ী, আত্মা এবং চৈতন্যকে জ্েয়, বিষয়, অনাত্বা ও জড়জগৎ হইতে পৃথক করিয়াছেন। উপনিষদে পুনরায় বল! হইয়াছে £ “যতো বা ইমানি ভূতানি জায়ন্তে, যেন জাতানি জীবন্তি। যৎ প্রযস্তযভিসংবিশস্তি তদ্বিজিজ্ঞাসম্ব, তদ্,ন্মোতি ।৮২ ব্রহ্মা হইতেই সমস্ত জগৎ উৎপন্ন হইয়াছে, তাহাতেই অবস্থান করিতেছে এবং অবশেষে তাহাতেই লীন হবে । ্রহ্মই সর্ধবশক্কিমান। সমস্ত জীবসমষ্তি অপেক্ষাও ইনি অধিকতর শক্তিশালী । কিন্তু আমাদের শক্তি অতম্ত ক্ষুদ্র । আমাদের জ্ঞান যেরূপ সীমাবদ্ধ, আমাদের শক্তিও তদ্রেপ আবার সীমাবদ্ধ; কিন্তু পরমেশ্বরের মহতী শক্তির কোন আদি ও অন্ত নাই। ঈশ্বরের এই মহাশক্তির বিকাশ সর্বত্রই বিরাজিত এবং আমাদের প্রতোকের মধোই সেই ২। ট্ত্ান্তরীয় উপনিষতৎ ৩।১ ২৫ আত্মজ্ঞান শক্তি নিহিত ও ক্রিয়াশীল। এই ব্রহ্মই অনস্ত ভ্ঞাঙ্গো আধার এবং ইনিই স্বরূপতঃ আমাদের আত্মার আত্ম! । সকলেরই এই সর্বশক্তিমান পরমেশ্বরের পূজ! ও ধ্যান কর! আমাদের একাস্ত কর্তব্য । এই ধ্যানের সহায়তাই আমরা জীব ও জগতের এবং পরমেশ্বরের সহিত কি সম্বন্ধ তাহা বুঝিতে পারিব। এই পরমেশ্বরই নিত্য ও সকলের আধার। যেমন, “তমাত্স্থং যেহনুপস্থুস্তি ধীরা- স্তেষাং সুখং শাশ্বতং নেতরেষাম্‌ ॥ “নিত্যে। নিত্যানাং চেতনশ্চেতানাং একে বহুনাং যে। বিদধা(ত কামান্‌ ৮১ অর্থাৎ ইনি সমস্ত চলমান এবং অনিত্য নাম ও রূপাদির মধ্যে একমাত্র নিত্যবস্ত। ইনিই সমস্ত চেতন পদার্থের একমাত্র আকরম্বরূপ। ইনিই সেই একই বস্তকে বহুভাবে প্রতিভাত করান এবং বিশ্বের সকল জীবের অন্তরস্থিত সমস্ত কামনাকে পুর্ণ করিয়া থাকেন। ইহাকে হাদয়াকাশে উপলব্ধি করিতে পারেন যে সমস্ত জ্ঞানী ব্যক্তি তাহারাই একমাত্র এই জীবনেই শাশ্বতী শাস্তি লাভ করেন । ১। শ্বেতা তরোপনিষৎ ৬।১২-১৩ ২৬ “ও পুর্ণমদঃ পুর্ণ মিদং পুর্ণাৎ পুণমুদচ্যতে | ূর্ণন্ত পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে 1” ও শাস্তিঃ শান্তিঃ শাস্তিঃ অনাদি অনন্ত ব্রহ্ম ইন্দ্রিয়গোচর স্থুল এবং ইন্ড্রিয়ের অগোঁচর সুক্ষ জগতের সমস্ত পদার্থতেই পরিব্যাপ্ত আছেন। সেই পূর্ণস্ভাব অনাদি অনন্ত ব্রহ্ম হইতে এই পরিদৃশ্টমান অনস্ত জগৎ বাদ দিলেও যাহ! অবশিষ্ট থাকে তাঁহাও সেই অনন্ত ব্রহ্ম। ইহাতে ব্রন্ষের পূর্ণতার কোন হাঁনি হয় না। ও শান্তি, শান্তি, শান্তি ! ২৭ দ্বিতীয় অধ্যায় আত্মানুভূতি ঈশ্বর-বিষয়ক উপলব্ধি বা জ্ঞান অপেক্ষা আত্ম-বিষয়ক জ্ঞানের কথাই সচরাচর ও বনুলভাবে ভারতবর্ষের সমগ্র জন- সমাজে আলোচিত হইয়া থাকে । আতজ্ঞানই সেই নির্বিব- শেষ ব্রন্ষের বা পরম পুরুষের যথার্থ স্বরূপ প্রকাশ করিয়া দেয়। সাধারণতঃ “আত্ম” বলিতে আমরা আমাদের ক্ষুদ্র “অহং বা “আমি,-কেই বুঝিয্া থাকি, কিন্তু “আত্মানুভূতি, বলিতে কেবল আমাদের এই “অহং, বা 'আমি-'র জ্ঞানকে বুঝায় না। আমাদের ইহা অবশ্য সত্য যে, শরীরস্থিত “অহং ব। জীবাত্মাই এই সকল কাধ্যের কর্তা, সকল চিন্তার মননকর্তী এবং জ্ঞাতারপেই রহিয়াছেন। যিনি শরীর এবং মনের যাবতীয় কাধ্য সম্পাদন করেন তিনিও 'অহং' ব1 “জীবাত্ম” বলিয়াই পরিচিত; কিন্ত এই জীবাত্মা সর্বজ্ঞানের একমাত্র আকরম্বরূপ পরব্রন্মেরই প্রতিবিস্ব মাত্র। এই পরমাত্মার চিৎ-শক্তি বুদ্ধিরপ দর্গণে প্রতিবিহ্বিত হওয়াতে জীবাত্বা শক্তিমান্‌ হইয়া উঠে এবং শারীরিক ও মানিক যাবতীয় কার্য্য করিতে সক্ষম হয়। সুতরাং আত্মজ্ঞান বলিতে কেবল ২৮ আত্মানুভৃতি দেহাত্মাভিমানী “অহং-জ্ঞানকে ন! বুঝিয়া সেই মহান্‌ আত্মার বা ব্রনের সম্বন্ধে জ্ঞানকেই বুঝিতে হইবে। জীবের যথার্থ স্বরূপই পরমাজ্মা, তবে সাধারণতঃ জীবাত্মাকে পরমাত্মার অংশ বলা যাইতে পারে । ভগবদগীতায় শ্রীকৃ্ণও বলিয়াছেন £ “মমৈবাংশে! জীবলোকে জীবভূতঃ সনাতনঃ 1৮, সুতরাং জীবাত্মা এই পরিদৃশ্ঠমান জগতের অধিষ্ঠানত্বরূপ বিশ্বাত্মার সহিত অভিন্ন। সেই মহান্‌ আত্মাই ব্রহ্মাণ্ডের পারমাথিক সত্বা এবং দেশ ও কালের অতীত “পরমাআঃ নামে অভিহিত হন। ইনি প্রকৃত নিরাকার এবং অপরিবর্তন- শীল পরব্রহ্ম । পরমাত্ম] যখন ব্যষ্টিভাবে বা “অহমস্মি ইত্যাকার ক্ষুত্র 'আমি”-জ্ঞানবিশিষ্ট জ্ঞাতারপে প্রকাশিত হন তখন ইহীকে 'জীবাত্ম' বল! হয়। ইনিই যখন আবার ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞেয় পদীর্থরূপে প্রতিভাত হইয়া থাকেন তখন তাহাকে জড় পদার্থ” বল হয়। কিন্তু নিগু৭ ব্রহ্ম জড় পদার্থ ও জীবাত্মা এই দুই হইতেই অতীত। ইনিই অন্তর্ধ্যামীরূপে জীবাত্মার অন্তরে সব্র্দা বিষ্ঠমান আছেন এবং ইনিই আমাদের অস্তি- ত্বের প্রকৃত স্বরূপ এবং আত্মা । যখনই আমাদের এইরূপ আত্মানুভূতিলাভ হইবে তখনই আমাদের ঈশ্বরের সাক্ষাৎকার হইবে এবং তখনই এই বহির্জগতের সহিত আমাদের কি ১1 শীতা১৭ ৯ আত্মজ্ঞান সম্বন্ধ তাহাও বুঝিতে আমর সক্ষম হইব। স্বরূপ সম্বন্ধে আত্মাকে সাক্ষাৎকার টা ্রহ্ষজ্ঞান লাভের প্রকৃষ্ট উপায়। কেহ কেহ মনে করেন যে, আত্মার বিনুপ্তিসাধনই বেদান্ত- দর্শনের মুখ্য উদ্দেপ্ঠ $ কিন্তু এই ধারণ! ঠিক নহে। বেদাস্তের মতে আত্মার কখনও ধ্বংস নাই ; আত্ম! অবিনাণী । যদি আত্মার বিনাশমাধনই বেদান্তের মুখ্য উদ্দেশ্য হইত তাহা হইলে আত্ম! পরিবর্তনশীল ও বিনাশী হইতেন এবং আত্মা ও দ্ধ কখনও অভিন্ন হইতেন না। পক্ষান্তরে বেদাস্তদর্শন এই কথাই বলে যে, আত্ম সর্বতোভাবে অপরিবর্তনশীল ও অবিনাশী। সুতরাং ইহা! সত্য হইলে কি প্রকারে আত্মার আত্যন্তিক অভাব ব! বিনাশের কথ! উঠিতে পারে ? ব্রন্মের বিনাশসাধন যেরূপ অসম্ভব, আত্মার বিনাশসাধনও সেরপ অসম্ভব; সুতরাং আত্মার বিনাশসাধন কখনও জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য হইতে পারে ন1। একমাত্র আত্মানুভূতি বা আত্মঙ্জানের সাহাযোই আমর! চরম সত্যের উপলব্ধি করিয়া পূর্ণতা লাভ করিতে পারি। বেদে ইহা! সর্বোচ্চ জ্ঞান বলিয়া! বিদিত। গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিস্‌ যখন ডেলফি নগরের মন্দিরে জিজ্ঞাসা করিয়া- ছিলেন £ পপর্ধ্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কি? তখন প্ররত্যুত্তরে তিনি দৈববাণীতে শুনিতে পাইয়াছিলেন £ «তোমার আত্মাকে ৩৪ আত্মানুভৃতি জান ।» সুপ্রাচীন বৈদিকষুগ হইতে ভারতে এই আত্মানুভূতি বা আত্াঙ্ঞানের মহিম। বর্ণিত হইয়া অল্গিতেছে। বেদান্ত অর্থাৎ বেদের জ্ঞানকাণ্ডের কথাও এই যে, আত্মজ্ঞানই জীবনের চরম লক্ষ্য । আমরা যদি ঈশ্বরলাভ করিতে বা তাহাকে জানিতে ইচ্ছ। করি তাহা হইলে সর্বাগ্রে আমাদের আত্মাকে জানিতে বা উপলব্ধি করিতে হইবে । আমাদের অন্তরের অন্তরতম প্রদেশে এই প্রশ্ন জাগাইতে হইবে যে, আমাদের প্রকৃত স্বরূপ কি? আমরা কোথা হইতে 'আলি- য়াছি? মৃত্যুর পরেই বা আমাদের কি হইবে? এই প্রশ্নগুলির একান্ত প্রয়োজনীয়তা আছে। সাধারণ লোক কিন্ত এই সকল প্রশ্নের সমাধান করিতে পারে না, কারণ তাহাদের মন জাগতিক ব্যাপারেই লিপ্ত হইয়া! থাকে। প্রকৃত সত্যানুসন্ষিস্থব ব্ক্তিগণের কথা ন্বতন্্ব ; কারণ তাহারা বাস্তবিকই অত্যন্বরূপ ভগবানকে লাভ করিবার অন্য ব্যাকুল হন। জাগতিক পদার্থ-বিষয়ে তাহারা বিতৃষ্ এবং যতক্ষণ বিশ্বের. প্রকৃত রহস্য জানিতে ন৷ পারেন ততক্ষণ তাহারা চেষ্টা করেন। আত্মার যথার্থ স্বরূপ উপলব্ধি করিয়৷ এ সমস্ত প্রশ্নগুলির সমাধান করাই তাহাদের জীবনের উদ্দেশ্য । এই জড়জগৎ হইতে আরম্ভ করিয়। যতই স্তরে স্তরে তাহারা আত্মজ্ঞানের পথে অগ্রনর হইতে থাকেন ততই তাহার! পরমার্থ সত্যের নিকটবর্তী হন এবং পরিশেষে সেই ৩১ আত্মজান সত্যকে উপলব্ধি করিয়! বুঝিতে পারেন যে, সেই সত্য বন্ধ তাহাদের আত্মা হইতে অভিন্ন । আত্মাই বিশ্বের একমাত্র কারণ ও কেন্দ্রস্বপ। দৃষ্টান্তব্বরূপে এই পরিদৃশ্বামান ইন্দরিয়গ্রাহা বিষয় বা বাহজগৎকে একটি স্ুবৃহৎ বৃত্তের সহিত তুলনা কর! যাইতে পারে । এই বৃত্তের পরিধি যেন স্থুল জড় পদার্থসমূহ এবং ইহার কেন্দ্র অবিনশ্বর আত্মা । বেদান্ত বলেন এই আত্মা কখনও কাহারও অথবা কোন পদার্থের দ্বার! সীমাবদ্ধ হন না; ইনি অসীম। আত্মা অনস্ত ও অবিচ্ছিন্ন, কারণ ইনি দেশ ও কালের অতীত ; কালের দ্বার আত্মাকে নিরূপণ করিতে পারা যায় না বা দেশের দ্বারা আত্মাকে পরিচ্ছন্ন কর। যায় না । জগতের ভিন্ন ভিন্ন সমস্ত শাস্ত্রের মতে ঈশ্বরই এই নিখিল বিশ্বের একমাত্র অধিষ্ঠান। কিন্তু বেদান্তের মতে আত্মা নিজেই এই সমগ্র বিশ্বের কেন্রন্বরূপ। প্রকৃতপক্ষে আত্মা ও ঈশ্বর অভিন্ন। যে মুহুর্তে আমাদের আত্মান্ুভূতি ব! ঈশ্বরানুভূতির প্রকাশ হইবে সেই মুহুর্তেই আমরা বুঝিতে পারিব যে, সূর্য্য, চন্দ্র, নক্ষত্র এবং বনু দূরবর্তী গ্রহ-উপগ্রহ-_যেসমস্ত জ্যোতিক্ষ হইতে আলোকরশ্মি পৃথিবীতে আসিতে শতসহত্র বংমরেরও অধিক সময় লাগে এই আত্মা সে সমস্ত বস্তুতেই ব্যাপ্ত হইয়া রহিয়াছেন। তাহারপর পাঞ্চভৌতিক ভুল জগতে অথব। সুঙ্্ মনোরাজোোও যেখানেই যে কোন প্রকারের সত্বা বা অস্তিত্ব বর্তমান সেখানৈই আত্মার ৩২ আত্মানুতূতি প্রকাশ আছে বুঝিতে হইবে। যে চৈতন্যের দ্বারা আমর! বহির্জগতের অস্তিত্ব অনুভব করি এবং যাহার দ্বারা আমাদের দেহ, ইঞ্রিয় ও মনের শক্কিসমূহকে অনুভব করিতে পারি তাহাই প্রকৃত আত্মা। ইনি আমাদের নিকট হইতে দূরে অবস্থিত না থাকিলেও আমাদের মন ও বুদ্ধি তাঁহাকে ধরিতে পারে না। শুরুষজুব্বেদীয় ঈশোপনিষদে উক্ত হইয়াছে £ আত্ম সর্ধসময়েই একরপ ও সর্বপ্রকার স্পন্দনের অতীত অর্থাৎ নিশ্চল। ইনি মন অপেক্ষাও অধিক বেগবান্। ইন্দ্রিয়াদি সেই আত্মাকে প্রাপ্ত হইতে সমর্থ হয় না। সেই আত্মা নিশ্চল হইলেও অতি দ্রুতগামী মন ও ইন্দ্রিয়াদ্দিকে অতিক্রম করিয়া অবস্থান করেন।১ এই আত্মাই যাবতীয় চিত্তবৃত্তি ইল্জিয়- শক্তি এবং প্রাকৃতিক শক্তিসমূহের মূল কারণ । আধুনিক বিজ্ঞানের সাহায্যে আমরা জানিতে পারিয়াছি যে, সমগ্র জগৎটী জড় ও প্রকৃতির শক্তির সমবায়ে উৎপন্ন হইয়াছে । আমরা পুর্রবেই বলিয়াছি যে, জড় জগৎ কতকগুলি পদার্থের স্পন্দন ব্যতীত আর কিছুই ১। অনেজদেকং মনসে। জবীয়ো, নৈনন্ধেব আপ্প,বন্‌ পূর্ববমনর্ধৎ। তন্জাবতেবষ্ঠানভ্যেতি তিষ্টৎ, তশ্মিপে| যাতরিশ্বা দধাঁতি ॥ ৪ --ঈশোপনিষৎ, ৪ ৩৩ নয়। এই পদার্ঘগুলির প্রকৃতি সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ও অজ্ঞেয়। এই বিশ্বের প্রত্যেক পরমাণুর কম্পন ব! স্পন্দন নিরবচ্ছিন্নভাবে চলিতেছে । যাহা হউক আমাদের নিকট উত্তাপ, আলোক, শব্দ, গন্ধ, স্পর্শ, রস বা ইন্ডরিয়াম্ুভৃতির যোগ্য কোনও বিষয় বলিয়! পরিচিত তাহা সেই অজ্ঞাত পদার্থের স্পন্দনাবস্থা ভিন্ন আর কিছুই নহে। স্যার উইলিয়ম্‌ ক্ুক্স, বলেন £ “এক সেকেণ্ডে বত্রিশটি বায়ুর কম্পন হইতে শব্দ প্রথম কর্ণগোচর হয় এবং যখন এই কম্পনৈর হার প্রতি সেকেগ্ডে তেত্রিশ হাজারের কিছু কম হয় কখন আর শব কর্ণগোচর হয় না। উত্তাপ ও আলোকরশ্মির কম্পন এত দ্রেত হয় যে, উহা৷ প্রায় ধারণার মধ্যেই আসে না। পনেরটা রাশির দ্বারা তাহাদের কম্পনের হার (প্রতি সেকেগ্ডে ) নিরূপিত হয়। আবার সম্প্রতি 'রেডিয়ম? (8:00. ) নামক একটি মৌলিক ধাতু আবিষ্কৃত হইয়াছে এবং তাহার কম্পনের সংখ্যা প্রতি সেকেণ্ডে নব্বই লক্ষের দশ লক্ষ গুণের দশ লক্ষ লক্ষ (0106 1011110203 01 20111101)9 ০0: 201111008 ) অপেক্ষাও অধিক ধার্য হইয়াছে।৮ সমস্ত জগংটাই পরমাণুর কম্পূনবিশেষ। কিন্তু এই কম্পন- রাজ্যের বাহিরে এবং প্রজ্ঞা, বুদ্ধি ও বোধির মূলে সেই একই পরমসত্য বা আত্ম! বিরাজ করিতেছেন। এই ৩৪ আত্মান্ভূতি আত্মচৈতন্তের সাহায্যেই আমরা কম্পন বা স্পন্দনের অস্তিত্ব জানিতে পারি। এক্ষণে প্রন্ম হইতে পারে যে, এই জগৎ যে স্পন্দনরাঁশি ভিন্ন কিছুই নহে, তাহা কে জানিতে পারিল !? স্পন্দন কি আপনাকেই আপনি জানিতে পারিল ? না, তাহ! হইতেই পারে না। গতি হইতে গতিই উৎপন্ন হয়, গতি ভিন্ন অন্য আর কিছু উৎপন্ন হইতে পারে না এবং ইহাই প্রকৃতির নিয়ম। প্রকৃতির এই চিরন্তন নিয়ম আধুনিক বৈজ্ঞানিকগণও সমর্থন করেন। সুতরাং গতি হইতে গতি ভিন্ন জ্ঞান কখনও উৎপন্ন হইতে পারে না; গতি বা স্পন্দনের ফলও জ্ঞান নহে; জ্ঞান স্পন্দন ব্যতীত অন্য পদার্থ। ইহা আমাদের বুদ্ধিকে আলোকিত করিয়। গতি ব৷ স্পন্দনের অস্তিত্বকেই জানাইয়া দেয় । ঈশোপনিষৎ বলে £ “অনেজদেকং* অর্থাৎ যাহা স্পন্দন- রহিত তাহাই আত্মা। নিজের অভ্যন্তরে অনু- সন্ধান কর এবং দেখ কোথায় সেই স্পন্দনের ও কার্য্যের জ্ঞাতা অথচ স্বয়ং স্পন্দনরহিত বস্তু রহিয়াছেন। এই বস্তু মন অপেক্ষাও বেগবান্ঃ “মনসো জবীয়ো” | আমর জানি যে, জগতের মধ্যে মনই সর্বপেক্ষা দ্রুতগামী । আমাদের চিন্তাশক্তি বিছ্যৎ অথবা অন্ত কোন পার্থিব শক্তি অপেক্ষাও ভ্রুতগামী। স্যার উইলিয়ম ৩৫ আত্মজান ক্রুজ বলেন: “মস্তিষ্ক হইতে চিন্তার কম্পনগুলি ষে. কেন্দ্র হইতে বাহির হয় সেই স্থানে এ কম্পনের কোনও প্রকার সংখ্যা নির্ণয় করা সম্ভবপর নহে; কারণ উহা অতি সুক্ষ প্রাকৃতিক শক্তিপুর্ধের দ্বারা উৎপন্ন হয়।” তিনি আরও বলেন £ “যদি আমরা এমন কোনও শক্তির ধারণা করিতে পারি যে, এ শক্তি প্রতি সেকেগ্ডে ইংরাজী সংখ্যা হিসাবে সহস্র সহস্র টি.লিয়ন বার, স্পন্দন উৎপন্ন করিতে পারে এবং ইহার উপর আমরা যদি আরও এই ধারণা করি যে, এই. কম্পনগুলির বেগ তাহাদের গতির ক্ষিপ্রতার সহিত সমানভাবে চলে তাহ! হইলে এইটি চিন্তাপ্রবাহ সময়ের অতি ক্ষুদ্রতম অংশের মধ্যেই পৃথিবীর চতুদ্দিক বেষ্টন করিয়া আসিতে পারে ।” আমরা এখান হইতে ইংল্যাগ্ড কিংবা পৃথিবীর অন্য কোনও দেশের সহিত বেতারবার্তা অবলম্বনে অল্প সময়ের মধ্যেই সংবাদ আদান-প্রদান করিতে পারি; কিন্তু এই বেতারবার্তার গতি অপেক্ষ। চিস্তাপ্রবাহের গতি কিন্ত আরও দ্রেত। এইস্থানে উপবিষ্ট যে কোন ব্যক্তির মন বরাবর সূর্য্য ব! সূর্য্যমণ্ডল ছড়াইয়। যেখানে বিছ্যুৎ- প্রবাহ যাইতে পারে না এইরূপ অসীমের দেশে যাইতে ১। একের ডাইনে ১২টী শৃন্ঠ বসাইলে যে সংখ্যা হয় তাহাকে টিলিয়ন (111102) বলে। ৩৬ আত্মানভৃতি পারে এবং এই কার্য একটি পলকের মধ্যেই নিষ্পন্ন হইতে পারে। “সময় বা কাল বন্তটি মনের মধ্যেই বর্তমান। সময় বা “কাল; বলিতে চিন্তাধারার ক্রগকেই বুঝায়। একটি চিন্তার পর আর একটি চিন্তার উদয় হইলে প্রথম ও দ্বিতীয় চিন্তার অবকাশকেই “সময়? বা “কাল' বলে। সুতরাং সময় বা কাল মনোরাজ্যেরই অধীন । এই মন অপেক্ষাও যাহা দ্রুতগামী তাহাই প্রকৃত আত্মা । আমাদের চিন্তাপ্রবাহ অপেক্ষাও আত্মা দ্রুতগতিশীল। মন অর্থাৎ চিন্তাধারা যেখানে যাইতে পারে না, আত্ম! সেখানেও যাইতে পারেন: আত্ম! সর্বত্রই পরিব্যাপ্ত। এই মনের পশ্চাতেই আত্মা অবস্থান করিতেছেন, স্থতরাং মনের সমস্ত ক্রিয়াশক্তি অপেক্ষা আত্মার গতি ক্ষিপ্রতর ও দ্রুততর । জ্ঞাতারপ আত্মার সাহাষ্য বাতীত মন কোথাও যাইতে পারে না। আত্মার সহিত বিচ্ছিন্ন হইলেই মন একেবারে নিক্ষিয় হইয়া যায়। “নৈনন্দেবা৷ আধুুবন্‌ পূর্বমর্ষং ₹৮ অর্থাৎ ইন্দ্রিয়াদি সেই আত্মাকে প্রাপ্ত হইতে সমর্থ হয় না, কেননা! আত্ম। অতীন্জিয় বস্তু আর সেজন্য ইন্ড্রিয়মূহকে অতিক্রম করিয়াই তিনি বিরাজ করেন।- ইক্জ্রিয়গণ আত্মার রহস্য ভেদ করিতে পারে না বা উহাদের শক্তিসমূহ আত্মার প্রকৃত ন্বরূপকে প্রকাশ করিতে অক্ষম ; কারণ উহারা দেশ ও কালের দ্বারা আবন্ধ। ৩৭ আত্মজ্ঞান সেজন্য দেশ ও কালের যিনি জ্ঞাতা তিনিই প্রকৃতপক্ষে ইন্ড্রিয়রাজ্যের বাহিরে অবস্থান করেন। যেমন, যখন অমরা সূর্যকে দেখি তখন এ দৃষ্টি আমাদের 'অহং- জ্ঞানের বা আত্মচৈতন্তের উপর নির্ভর করে, অর্থাৎ কিছু দেখিতে হইলে “আমর! কিছু দেখিতেছি' এই ব্যাপারটি আমাদের মনে প্রথমে জাগরূক হওয়া গ্রয়োজন। আবার এই জ্ঞান হওয়াও আত্মার উপরেই সম্পূর্ণ নির্ভর করে। প্রজ্ঞা, বুদ্ধি ও বৌধির মূলকারণ আত্মা, এই আত্ম হইতে মন ও চক্ষু বিচ্ছিন্ন হইলে ঃমাবার নুর্ধ্যকে দেখা যাইবে না। এ জ্ঞান ও চৈতন্যের কারণ যে আত্মা তাহারই শক্তিতে আমাদের মন ক্রিয়াশীল হয়, ইন্দ্রিয়গণ নিজ নিজ কার্ধ্য সম্পাদন করে এবং দেহ ইতস্তত; সঞ্চরণ করিয়া থাকে। সেজন্য ঈশোপনিষদে আমর দেখিঃ “আত্মা সচলও বটে, আবার নিশ্চলও বটে; অতি দূরবর্তা হইয়াও অত্যন্ত সন্নিকটে আছেন। তিনি নিখিল জগতের অন্তরে ও বহিাগে বিদ্কমান আছেন।৮* যখন দেহ একস্থান হইতে অন্স্থানে বিচরণ করে, তখন আমাদের চৈতন্তরূপ আত্মাকে চলনশীল বলিয়া বোধ হয়; কিন্ত প্রকৃতপক্ষে তিনি নিশ্চলই, কারণ আত্ম! যাইবেনই বা কোথায়? আত্মা ১। “তদেজতি তয্লৈজতি তদ্দ,রে তত্বস্তিকে। ত্র সর্যস্ত তছু সর্বসতান্ত বাহৃতঃ ॥*--ঈশোপনিষৎ ৯1৫ ৩৮ | আত্মানভূতি কোথাও তো যাইতে পারেন না? যখন আমরা একটি ঘটকে এক স্থান হইতে অপর স্থানে লইয়া যাই তখন ঘটের অভ্যন্তরস্থ আকাশ বা দেশকে সচল বলিয়াই বোধ হয়। কিন্তু বাস্তবিক এ ঘটাকাশ কি চলিতেছে? না, তাহা সম্ভব? তাহ! হইলে যে বস্তুটি স্থানান্তরিত হইতেছে তাহা কি? আমরা! বলিব তাহ! আমরা জানি না। ঘটের আকৃতিটি স্থানান্তরিত হইতেছে বলিয়াই অনুমিত হইবে, কিন্তু সেই আকৃতিটিও আবার সীমাবন্ধ আকাশ বা! দেশ ব্যতীত তো আর কিছুই নহে? সুতরাং ইহাও বল যাইতে পারে যে, যদি আকাশ বা দেশ অচল হয় তবে কোন আকৃতিবিশেষেরও গতি হইতে পারে না। সুতরাং ইহা প্রহেলিকা ব! রহস্তপুর্ণ বলিয়াই মনে হয় এবং যখনই আমরা ইহার উত্তর দিতে চেষ্টা করি তখনই প্রতি পদে সমস্তা আরও জটিল হইয়া পড়ে। সমগ্র মনুষ্য-জীবনটিই একটি রহস্য । আমরা প্রকৃতির অবস্থা আলোচন। করিয়৷ এই র্হস্তের উদ্ঘাটন করিবার চেষ্ট৷ করি; কিন্তু তাহাতে আমর আরও বিভ্রান্ত হই। বিজ্ঞানও আমাদিগকে এদিকে কোনপ্রকারে সাহায্য করে ন!। বিজ্ঞানের পথে কিছু অগ্রসর হইয়াই বরং আমরা পথহার। হইয়৷ পড়ি। তখন কি করিতে হইবে, বা কোথায় যাহিতে হইবে, তাহা! আমর! কিছুই বুঝিতে পারি না। ৩৪৯ আত্মজ্ঞান বাস্তবিক আমাদিগের আপেক্ষিক জ্ঞানের এইরপই দশা হয়। জীবনের রহস্যটিকে যথার্থরপে বিশ্লেষণ করিলে দেখা যায় যে, উহা ব্রহ্মজ্ঞানেরই আংশিক বিকাশ মাত্র। এ জ্ঞান প্রকৃত আত্মারই যথার্থ স্বরূপ । যাহা হউক আপেক্ষিক বা জাগতিক জ্ঞানের দ্বারা এই বিশ্বজগতের রহস্য ভেদ করিতে পারা যায় না। জগন্ের অধিষ্ঠানন্বরূপ সেই সত্যবস্তকে জানিতে বা উপলব্ধি করিতে হইলে বাহ প্রকৃতির রাজ্য ছাড়াইয়া আমাদের অনন্ত জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশ করিয়া রহ্স্তোদঘাটন করিতে হইবে । এই প্রকৃতিকেই সংস্কৃত ভাষায় “মায়া বল হয়। এই মায়ার জন্যই আমাদের যত ভ্রম হয়, অথচ এই মায়ার রাজ্যেই আমাদিগকে বাস করিতে হয় এবং আমাদের দেহ, ইন্দ্রিয় ও মন এ মায়া বা প্রকৃতিরই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। বাহ্য প্রকৃতিতে যতই আমরা আকৃষ্ট হইয়া পড়িব ততই আমাদের জুম হইবে এবং সেজন্ত আমর সত্যকার মীমাংসায় উপনীত হইতে পারিব না। বৈজ্ঞানিকগণ কতকগুলি সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছেন বটে, কিন্তু সেই সিদ্ধান্তগুলির দ্বারা আসঙ্গ সমস্তার কোনই মীমাংসা করা হয় নাই। বিজ্ঞানের মতে প্রত্যেক বন্তর চরম গম্তব্যস্থান অভ্গীত ও অজ্দেয়। বেদাস্ত এখানে বলেন যে, কেবল বহিঃপ্রকৃতির আলোচন! না করিয়া আত্মার ৪৪ আত্মানুভূতি সম্বন্ধে আলোচনা কর, তাহা হইলেই সমস্ত অজ্ঞানাদ্ধকার দূরীভূত হইবে এবং পরমসত্যকে লাভ করিতে পারিবে । আমাদের দেহ যখন গতিশীল হয় তখন মায়ার আবেশে আমাদের মনে হয় যে, আত্মাও গতিশীল, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আত্ম! কুটস্থ ও স্থির। আবার মায়া” দ্বারা ইহাও প্রতীয়মান হয় যে, আমাদের আত্মা বহুদূরে অবস্থিত, কিন্তু বস্তুতঃ আমাদের কাছে যাহা কিছু আছে তাহাদের অপেক্ষা আত্মাই সর্বাপেক্ষা নিকটে । আমাদের শরীর ও মন সর্বাপেক্ষা নিকটবর্তী বলিয়া বোধ হয়, কিন্তু আত্ম! উহাদের অপেক্ষাও নিকটতর । এক কথায় আত্ম! বিশ্বের সর্বববন্র অপেক্ষাও আমাদের সমীপবস্তী। ঈশোপনিষদেও আছে ঃ “তদস্তরস্য সর্বন্ত তু সবস্তান্ত বাহ্যাত১*১ অর্থাৎ এই আত্মা প্রত্যেক বস্ত্বর অন্তরে ও বাহিরে পরিবাপ্ত আছেন। কিন্তু উহা কেমন করিয়া সম্ভবপর হইতে পারে? যদি আত্ম। কোন বস্তুর অন্তরে থাকেন তাহ! হইলে আবার সেই বস্তুর বাহিরে তাহার থাকা কিরূপে সম্ভবপর হইতে পারে? কিন্তু ইহা! হওয়া সম্ভব; কারণ আমরা দেখি যে, দেশ বা আকাশ সকল জিনিসের ভিতরে ও বাহিরে উভয় দিকেই বর্তমান থাকিতে পারে। দৃষ্টাস্তম্বরূপে ধরুন, যেমন একটি ঘর চতুদ্ধিকে প্রাটীর দ্বারা বেষ্টিত। দেশ ব! ১1 ঈশোঁপনিষৎ্, ১1৫ ৪১ আকাশ-বস্তটি ঘরের মধ্যেও আছে আবার বাহিরেও আছে। কিন্তু তাহ! হইলে প্রাচীরগুলি কি? উহার! কি দেশ বা আকাশ হইতে বিচ্ছিন্ন বা বিভিন্ন? উত্তরে বলিতে হইবে, মা, প্রাচীরগুলি সীমাবদ্ধ আকাশ ভিন্ন আর কিছুই নহে; আকাশের সাহায্যেই উহার বিষ্কমান আছে; সুতরাং এ প্রাচীরগুলিকেও আকাশই বলিতে হইবে। প্রাচীরে স্থিত আকাশখণ্ড ঘরের মধ্যস্থিত আকাশটিকে সীমীবন্ধ করিয়াছে মাত্র । কিন্ত বাস্তবিক কি প্রাচীর এরপে আকাশকে আবদ্ধ রাখিতে পারিয়াছে? উত্তরে বলিতে হয়না; কারণ গৃহমধ্যস্থ দেশ বা আকাশ বাহিরেও ব্যাপ্ড আছে। আমর! কি এই অনন্ত আকাশকে সীমাবদ্ধ করিতে পারি? না, পারি না। এইরপে মনের দ্বারাও আমাদের আত্মাকে সীমাবদ্ধ করিতে চেষ্টা করিলে আমরা অকুতকার্ধ্যই হইব, কারণ মন এত বড় নহে বা এত শর্তিশালী নহে যে, উহ! জর্ধব্যাগী আত্মাকে সীমাবদ্ধ করিয়া রাখিতে পারে। ইন্দ্রিয়ের শক্তিসমূহও এই আত্মাকে সীমাবদ্ধ করিতে পারে না। তাহা ছাড়া পাঞ্চভৌতিক আকারবিশিষ্ট কোন পদার্থের দ্বারাই আত্মাকে ভাগ কর। যায় না; কারণ ইহারা প্রত্যেকেই আত্মার সব্বাতেই সত্বাবান। অতএব এই আত্মাকে যখনই আমরা যথাযথ- ভাবে উপলব্ধি করিতে পারিব তখনই ইহাকে অসীম ও ৪২ আত্মানুভৃতি অনস্ত বলিয়! বোধ হইবে । আমর! বলিয়। থাকি যে, আমরা সসীম জীব, কিন্তু বাস্তবিক আমরা তাহা নহি। একই অসীম ও অনস্ত সত্তা বিচিত্র সাস্ত ও সসীম আকারের মধ্য দিয়! প্রকাশমান হইতেছেন। এই সসীম আকারগুলি আবার দেশ বা আকাশেই অবস্থান করিয়া থাকে; আকাশের বাহিরে ইহারা অবস্থান করিতে পারে না। সেরূপ সমস্ত ভিন্ন ভিন্ন বা ব্যগ্টি জীব সেই অনন্ত আকাশসদৃশ নির্ববশেষ আত্মার মহান্‌ সত্বাতেই বিরাজিত আছে । উপনিষদে আছে ঃ “যে ব্যক্তি আত্মাতে সর্বভূতকে দর্শন করেন এবং সব্বভূতে আত্মাকে দর্শন করেন তিনি কাহারও প্রতি ঘৃণ! প্রদর্শন করেন না।৮* অর্থাৎ যিনি আত্রন্গস্তম্ব পধ্যন্ত সমস্ত বস্তুকে আত্মা হইতে অভিন্ন জ্তান করেন, যিনি সব্ধত্র সকল পদীর্থেই চিরপবিভ্র আত্মার অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ করেন, তাহার নিকট আর কিছুই উপেক্ষণীয় বস্তু থাকে না। অসম্পুর্ণ আপেক্ষিক জ্ঞান হইতেই দ্বণার উদ্ভব হয় এবং আপেক্ষিক জ্ঞানই আমাদিগকে এক বস্তুকে অন্য বন্ত হইতে পৃথক বলিয়! বুঝাইয়া দেয়। কিন্ত যখন আমরা অপরের মধ্যে আমাদেরই আত্মার ১। প্যস্ত সর্ববাণি ভূতানি আত্মন্তেবান্পস্তি | সর্বভূতেযু চাত্মানং ততো ন বিজুগুগ্দতে ॥” _-ঈশোৌপনিষৎ ৬. ৪৩ 'আত্মজ্ঞান অস্তিত্বকে উপলব্ধি করিতে পারিব তখন আর কিরূপে অপরকে ঘ্বণা করিতে পারি? আত্মা আত্মাকে ঘ্বগ। করিবে ইহা! কি সম্ভবপর? আমার্দের নিজের আত্মাকে বা নিজেকে ঘ্বণা করা যেরূপ অসন্তব, অপরের আত্মাকে বা অপরকে ঘৃণা করাও সেইরূপ অসম্ভব । আতজ্ঞান- জনিত বিভিন্ন ফলের মধো এই ঘ্বণা না করাও একটি ফলম্বরূপ। আত্মজ্ঞানের অবস্থায় ঘ্ণার ভাব একেবারেই থাকিতে পারে না; আর ঘ্বণার ভাব চলিয়া! গেলে হিংসা, দ্বেষ প্রভৃতি স্বার্থজনিত কুপ্রবৃত্তিগুলিও সম্পূর্ণরূপে দূর হইয়। যাইবে। সুতরাং তখন অবশিষ্ট থাকিবে কি?. আত্মজ্ঞানের উদয় হইলে দ্বণার প্রতিদ্বন্ছিম্বরূপ স্বার্থজড়িত মানবীয় ভালবাসাও অন্তহিত হইবে এবং তাহার পরিবর্তে আত্মজ্ঞানীর হৃদয়ে নিঃম্বার্থ ভগবতপ্রেম ও সর্ববজীবে ভালবাসাই স্ষুরিত হইবে। যথার্থ প্রেম একত্বভাবের প্রকাশক । যেমন দেহের উপর ভালবাসার জন্য আমরা দেহকে আত্মার সহিত অভিন্ন বলিয়া মনে করি তেমনি পরমাত্বার উপর ভালবাসার জন্য আমরা নিজেকে পরমাত্মার সহিতই অভিন্ন বোধ করিয়া থাকি । যদি সেই পরমাতআ্সাকে আমরা অপরের মধ্যেও দর্শন করি তাহা হইলে তাহাকেও নিজের আত্মার ম্যায়ই ন1. ভালবাসিয়৷ থাকিতে পারিব না। এইরূপে আত্মজ্ঞান লাভ করিলে ৪৪ আত্মান্ুভৃতি আমরা তোমাকে তুমি যেরূপ ভাঙ্গবাস, তোমার প্রতিবেশীকেও সেরূপ ভালবাসিও*--যীশুখুষ্টের এই পবিত্র বাণী বা উপদেশের অর্থ সম্পূর্ণরূপে হাদয়ঙ্গম করিতে পারিব। যীনশুথুষ্টের এই উপদেশ যে একেবারে অনন্যসাধারণ তাহাও নহে। বেদান্ত অতি প্রাচীন কাল হইতেই এই শিক্ষা আমাদের দিয়া আসিয়াছে । তবে ইউরোপ ও আ'মেরিকাবাসী খুষ্টানগণ নাকি বলেন যে, যীশুখুষ্টই কেবল এই শিক্ষা দিয়াছিলেন। কিন্তু তাহারা জানেন না-_-এঁ সত্যই বেদাস্তের মূল নীতি এবং ভিত্তিম্বরূপ। কায়, মন ও বাক্যে একত্বভাব প্রকাশের নামই “প্রেম”। উপনিষদে আছে £ “যে সময় সর্বভূতই আত্মার সঙ্গে এক হইয়৷ যায় অর্থাৎ আত্মার সহিত সকল ভূতকে যখন অভিন্ন বলিয়া বোধ করা যায় তখন সেই একত্বদর্শী জ্ঞানীর পক্ষে মোহই বা কি, শোকই বাকি? অর্থাৎ তাহার শোক ও মোহ কিছুই থাকে না।* আত্মজ্ঞান লাভ হইলে সর্ববভূতের সহিত একত্বানুভূতির উদয় হইয়া থাকে । যখন সর্ধভূতকেই এক মহান্‌ বিশ্বাত্মার অংশবিশেষ বলিয়া বোধ হয় তখন আর কোন “যম্মিন্‌ সর্বাণি ভূতানি আত্মৈবাভূদ বিজানতঃ | তত্র কে। মোহঃ কঃ শোক একত্বমন্ুপশ্তঃ ॥” -_-ছঈীশোপনিষৎ ৭ ৪৫ আতমজ্ঞান ভয়ও থাকে না বা শোকও থাকিতে পারে না; কারণ আত্মা ব্যতিরেকে তখন এমন কোনও পদার্থ ই আর অবশিষ্ট থাকে না যাহার জন্য শোক করিতে হইবে ব! দুখভোগ করিতে হুইবে। যতক্ষণ ছৈতজ্ঞান ব! বন্ুত্বজ্ঞান থাকে ততক্ষণই শোক, হৃঃখ ও ভয় ইত্যাদির উদয় হয়। যদি ভয় বা দৃঃখোতৎপাদক বিষয়গুলি সেই সর্ববামুস্যত পরমাতআ্বার সহিত এক হইয়া যায় তাহা হইলে শোক ও ভয় কিছুই থাকে না। কিন্তু যতক্ষণ আত্মার বাহিরে অন্ত কোন বস্ত বা বিষয় আছে" এই জ্ঞান আমাদের থাকিবে ততক্ষণ শোক, ছুঃখ বা ভয়ের কবল হইতে আমরা মুক্ত হইতে পারিব না সুতরাং এক ও অদ্বিতীয় আত্মার জ্ঞান লাভ হইলে শোক, ছুঃখ, ভয়, মোহ ও বিচ্ছেদ সমস্তই চিরদিনের জন্য অন্তুহিত হইয়া যায় এবং ইহাই আত্মাজ্ঞানের অন্যতম ফল। কেহ কেহ মনে করেন যে, বেদান্ত আমাদিগকে স্বার্থপর হইতে শিক্ষা দেয়; কিন্তু ইহ ঠিক নয়। বেদাস্তের মতে আত্মানুভূতি লাভ হইলে আমাদের ক্ষুদ্র 'অহং-জ্ঞানটির বিনাশ হয় এবং এই ক্ষুত্ব “অহং বা দেহাত্ম-বুদ্ধির লোপের সঙ্গে সঙ্গে অহঙ্কারপ্রস্ৃত স্বার্থপরতাও দূরীভূত হইয়! যায়। “বিরাট অহং বা সমগ্র ব্রঙ্গাণ্ই আমার, এই বোধ এবং ক্ষুদ্র অহং বা দেহাত্মবোধ, এই ছুইটির অর্থ বাস্তবিক এক ৪৬ আত্মানুত্কৃতি নহে । “বিরাট অহং বলিলে আমরা প্রকৃতপক্ষে পরমাত্মাকেই বুঝি এবং এ পরমাত্মাই আমাদের বথার্থ স্বরূপ। সুতরাং আমাদের আত্মার যথার্থ স্বরূপ এঁশী শক্তিতেই পরিপূর্ণ । অতএব “আত্মা এই সংস্কৃত শব বাবহার করিলে আমরা স্বরূপতঃ যাহা সেই এশীশক্তিসম্পন্ন পরমেশ্বর তাহাকেই বুঝিয়া থাকি এবং তাহা হইলেই *আত্মা-র কথা বলিলে আর জীবের স্বার্থপরতার ভাব উদ্দিত হইবে না। এই আত্মা সম্বন্ধে ঈশোপনিষৎ আরও বলিয়াছেন “স পর্্যগাচ্ছুক্রমকায়মব্রণমন্সাবিরং শুদ্ধমপাপবিদ্ধমূ। কবির্মানীষী পরিভূঃ স্বয়ভূর্যাথাতথ্যতোহর্থান্‌ ব্যদধাৎ শাশ্বতীভ্যঃ সমাভ্যঃ 1৮; অর্থাৎ জ্যোতির্ময়, স্থল ও সুক্ষ শরীররহিত, অক্ষত, ন্নায়কেন্ত্র অথবা! মন্তিফ দ্বারা অস্পুষ্ট, নিম্মল নিষ্পাপ, ধর্মাধন্মবিবর্জিত, কবি ( ভূত-ভবিষ্যদ্র্তমানদর্শী ), মনীষী ( মনের প্রভূ বা সর্বজ্ঞ ), পরিভূ ( সব্বোপরি বিরাজ- মান) স্বয়স্তু (উৎপত্তি বা হেতুরহিত, স্বয়ং প্রকাশ ) সেই পরমাত্মা সমস্ত পদার্থ ব্যাপিয়। আছেন এবং সংবৎসরাধিপতি চিরস্তন প্রজাপতিগণকে কর্তব্য বিষয়- সমূহ যথাযথরূপে প্রদান করিয়াছেন।” এই পরমাত্মা ১। ঈশোপনিষৎ ৮ ৪৭ আত্ুজ্ঞান নিখিল বিশ্বব্রক্মাণ্ডের কে্দ্রন্বরূপ হইয়া ওতঃপ্রোতভাবে সর্বববস্তর অস্তরে ও বাহিরে অনুস্থুত হইয়া রহিয়াছেন। আমাদের মন যেখানে যাইবে আত্মাও সেইখানেই যাইবে, কারণ আত্মাকে ছাড়িয়া মন কখনই থাকিতে পারে না। বুদ্ধিকেও এই আত্মাই আলোক প্রদান করিতেছেন। এই আত্মা পবিত্র, নিষ্ষলঙ্ক এবং সর্বব- পাপরহিত । এইখানেই কিন্তু আমরা খৃষ্টান মত হইতে বেদাস্ত মতের পার্থক্য স্পষ্টরূপে দেখিতে পাই। খৃষ্টানগণ বলেন যে, মানবের আত্ম জন্ম হইতেই পাগী ; কিন্তু বেদান্ত বলিয়া থাকে, আমাদের আত্মা সর্বব- পাপবজ্জিত ও চিরপবিত্র। বাস্তবিক এই শিক্ষা আমর! বেদাস্ত হইতেই লাভ করিয়া থাকি। তবে ইহার দ্বারা আমাদের এরূপ মনে করা উচিত নহে যে, বেদাস্ত তাহা হইলে মানুষকে পাপকর্্ করিতেই উৎসাহ দান করিতেছে । কিন্তু বাস্তবিক তাহা নহে। বেদাস্তই মানুষকে শিক্ষা দিতেছে যে, যে মুহুর্তে আত্মজ্ঞান লাভ হইবে সেই মুহুর্তেই সমস্ত অসৎ প্রবৃত্তি দুর হইয়! যাইবে এবং পাপকন্ম হইতে বিরত হইয়া মানুষ চির- পবিত্র হইবে । আত্মা এই মানবশরীরের মধ্যে থাকিলেও প্রকৃত- পক্ষে অশরীরী । আত্মার কোন আকার নাই অর্থাং ৪৮ আত্মানভভূতি তিমি স্থূল ও ন্ুক্ষ্ম এই উভয় প্রকার আকারই রহিত। জগতে যে সকল নুক্ম আকার আছে এবং এমন কি সব্রবোৎকৃষ্ট অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহাষ্য দ্বারাও দৃষ্ট হয় না|! এই প্রকার সুম্ম আকারও আত্মাকে স্পর্শ করিতে পারে না। আত্ম সর্বপ্রকার আকার বিবর্জিত। কিন্ত এই আত্মাহ আবার যে কোনও রূপ বা আকার ধারণ করিতে পারেন ; সর্বপ্রকার রূপই আবার এই আত্মাতেই বিদ্কমান। এই আত্মা শরীরস্থ স্রাযুকেন্দ্রের এবং মস্তিষ্কের যাবতীয় ক্রিয়ারও বহিঃপ্রদেশে অধিষ্টিত। জড়বাদীরা বলেন যে, মস্তি ও স্সায়ুরাজ্যস্থ শক্তিকেন্দ্রসমূহের স্পন্দনের ফলে “অহংজ্ঞান” বা “আত্মচৈতন্ঠ উৎপন্ন হয়। কিন্তু বেদাস্ত সেই কথ! সমর্থন করে না। বেদাস্তের মতে স্নায়বিক শক্তিকেন্দ্রসমূহ বা মস্তিকষপ্রস্ত শক্তিরাশি এই আত্মাকে স্পর্শই করিতে পারেন না। দেহের পরিবর্তনে এই শাশ্বত আত্মার কোনও পরিবর্তন হয় না। স্থুল দেহের বর্ণের বা আকৃতির বৈলক্ষণা বা ভাবাস্তর ঘটিতে পারে, এ দেহ রোগগ্রস্ত হইতে পারে ব! উহা! বিকলাঙ্গ হইতে পারে, কিস্ত এ রোগ বা অঙ্গহীনতা আত্মার কিছুই পরিবর্তন সাধন করিতে , পারে না। সুতরাং আত্মজ্ঞান মনুষ্যকে স্বায়ুদৌব্বল্য ব। ৪৯ প্দাস্ু্ঞান অপরাপর দেহাদি নিমিত্ত ুঃখ ও ব্যাধি হইতে মুক্ত করে, অর্থাৎ আত্মজ্ছানী ব্যক্তির ্ায়ুদৌর্বল্য, ব্যাধি বা দেহজনিত কোনও ছুঃখ থাকে না।১ “কবি” শব্ধ কাব্য-রচয়িতাকে বুঝায়; কিন্তু ইহার অপর একটি অর্থ হইতেছে দ্সর্ধবদর্শ? । আত্মাই এই নিখিলবিশ্বের মহান্‌ «কবি” বলিয়া বণিত হইয়াছেন। প্রচলিত অর্থ অনুযায়ী তিনি “কবি” এবং তাহার কাব্য হইতেছে এই বিশ্বত্রক্ষাণ্ড । ঈশ্বরের মহিম। সুন্দররূপে বর্ণনা করিতে হইলে তাহাকে “কবি” এবং বিশ্বরাজ্যটিকে তাহার রচিত “কাব্য বলিলেই সম্পূর্ণ ভাবটি প্রকাশিত হয়। তাহাকে আবার সব্ববাপেক্ষা নিপুণ চিত্রশিল্পী বলিয়াও অর্থ করা হুইয়াছে। নুর্য্যোদয় এবং হূর্ধ্যাস্তকালে তাহার শিল্প- নৈপুণা আমরা প্রত্যক্ষ করি। এই অসীম আকাশে ষে আমরা! হৃর্ধ্য, চন্দ্র, নক্ষত্র ও গ্রহ-উপগ্রহ ইত্যাদি দেখি তাহা সেই অনন্ত শক্তিমান শিল্পী বিশ্বনিয়স্তার অদৃশ্য হস্তরচিত চিত্র ব্যতীত আর কিছুই নহে। আত্মার বথার্থ স্বরূপ কোন-কিছু ভাল মন্দের বা ধন্ধাধর্থের উপরে অবস্থান করে না। কেহ কেহ প্রশ্ন করেনষে, ১। আত্মজ্ঞান লাভ করিয়াও ধাহারা পৃথিবীতে শরীর ধারণ করিয়া বাচিয়া আছেন তাহাদিগের নিকট ছুঃখ, ব্যাধি" প্রভৃতি উপস্থিত হইলেও ইহার। তীঁহাদিগকে বিচলিত করিতে পারে না। €০৩ আত্মনিভূতি আত্মা ভাল ও মন্দের অতীত কিরূপে হইতে পারেন ? আবার কেহ কেহ বলেন যে, আত্মা কেবলই ভাল, মন্দের সহিত তাহার কোন সম্বন্ধ নাই। প্রকুতপক্ষে ভাল এবং মন্দ এই তুইটি আপেক্ষিক শব্দ ; ভাল-র অস্তিত্ব মন্দের অস্তিত্বের উপর নির্ভর করে। আমরা একটিকে অপরটি হইতে বিচ্ছিন্ন ভাবে রাখিতে পারি না । যদি "মন্দ' শবকটি. জগতে না থাকে তাহ! হইলে "ভাল" শব্দটিও থাকিবে না । একটিকে সরাইয়া লইলে অপরটিও অন্তহিত হইবে । ধর্ম ও অধশ্্ব এবং পুণ্য ও পাপ সম্বন্ধে এইরূপ। ইহারা পরম্পর আপেক্ষিক শব্দ মাত্র; একটির অস্তিত্ব ভাবিলে অপরটির অস্তিত্বও ভাবিতে হয়। কিন্তু নিবিবশেষ পরমাত্ম। সমস্ত আপেক্ষিক রাজ্যের বাহিরে ; সুতরাং ভাল: ও মন্ন, পাপ ও পুণ্য এবং ধর্ম ও অধর্্ম ইহাকে স্পর্শ করিতে পারে না। উপনিষৎ বলেন যে, এই পরমাত্মা ভিন্ন অন্য কোন দ্রষ্ট বাঁ অন্ত কোনও জ্ঞাত নাই। এই নিখিলবিশ্বের জ্ঞাতা আর কে হইতে পারেন ? একমাত্র সর্বজ্ঞ আত্মাই জ্ঞতারূপে আছেন এবং তিনিই সমস্ত জগতের সমস্ত বস্তু জানেন। আমাদের অন্তরে জ্ঞাতারূপে বিরাজমান আত্মাই আবার সেই সর্বজ্ঞ ঈশ্বরের অংশ বা প্রতীকমাত্র। জগতের অধিকাংশ লোকই কিন্তু এই পরমসত্যকে অবগত নহেন। ৫১ আত্মাজ্ঞান ধর্ম গ্রচারকগণও ইহ! শিক্ষা দেন না। কারণ তাহারা নিজেরাই এই সত্য উপলব্ধি করিতে পারেন যে, ঈশ্বর যদি সর্ধ্বভূতের জ্ঞাতা হন তাহা হইলে আমাদের অস্তরস্থ জ্ঞাতা ও সেই বিরাট জ্ঞাত পরমাত্বারই অংশমাত্র। বেদাস্তও এই কথা বলে যে, প্রথমে আমাদের ব্যক্তিগত শরীরস্থ জ্বাতাকে উপলব্ধি করিতে পারিলেই সর্বজ্ঞ বিরাট পুরুষরূগী বিশ্বের জ্ঞাতাকে জানিতে পার! যাইবে । আমাদের আত্মা কখনও জ্ঞেয় অর্থাৎ জ্ঞানের বিষয় হইতে পারেন না; তিনি সকল সময়েই বিষয়ী ব৷ জ্ঞাতা। লোকে যে ঈশ্বরের উপামনা করে সেই ঈশ্বরকেই সকলের অন্তর্য্যামী ও বিরাট জ্ঞাতা বলিয়া বুঝিতে হইবে। সুতরাং বেদান্তের আলোকে ঈশ্বর ও আত্মা অভেদ ; অর্থাৎ ঈশ্বর আমাদের অন্তর হইতেও অন্তরতম ; উভয়ের নিকট বা অভেদ সম্বন্ধই আমরা উপলব্ধি করি। কিন্তু খৃষ্টান প্রভৃতি বিশেষ বিশেষ ধন্মসন্প্রদায়ের শান্ত্রান্ুলারে ঈশ্বর মানুষের নিকট হইতে বনু দূরে অবস্থান করেন। তাহাকে এতদুরে স্থান দেওয়া হইয়াছে যে, তাহার নিকটে উপস্থিত হওয়। জীবের পক্ষে ছুরাশ! মাজ। কিন্তু বেদাস্ত আমাদের সর্বাপেক্ষা নিকট- বর্তী যাহ! কিছু আছে তাহা অপেক্ষাও সন্গিকটে ঈশ্বরকে আনিয়। দিয়াছেন। যদিও এই আত্ম। “পরিভূ* বা সর্ধব্যাপী তথাপি তিনি প্রকৃতির বাহিরেও সর্বত্র আছেন। তবে ৫২ আত্মান্রভূতি আত্মা সর্ববভূতে অবস্থান করিলেও সকল ভূত ও আত্মা কিন্ত এক বস্তু নহে। জড় জগতের পরিবর্তনশীল অবস্থা সমূহ এই আত্মাকে বিকৃত বা! পরিবন্তিত করিতে পারে না। পরমাত্ম। প্রকৃতির সকল বিকার হইতে অতীত হইলেও আবার প্রকৃতির প্রত্যেক অণু ও পরমাণুতে অন্ন প্রবিষ্ট হইয়া আছেন। ইনি “য় অর্থাৎ ইহার কোনও কারণ নাই সুতরাং কোন কাধ্যও নাই। পরমাত্ম! প্রকৃতপক্ষে কার্যা- কারণস্থত্রের সম্পূর্ণ অতীত; অর্থাৎ পরমাত্মার কার্ধ্য ও কারণে কোনও ভেদ নাই। তবে ইহার কোনও কারণ না থাকিলেও ইনি সকল বস্তুর কিন্ত কারণম্বরপ ৷ প্রকৃত কথ এই যে, পরমাত্মা কার্ধ্য-কারণ নিয়মের অধীন নহেন। পরমাত্মা অনাদিকাল হইতে স্বয়ন্ভূ অবস্থায় বিরাজিত আছেন এবং ভবিষ্যতেও অনন্তকাল পর্য্যন্ত এইরূপই থাকিবেন। ইহার আরম্ভ ও শেষ কেহ দেখিতে পায় না, কারণ, আরম্ভ ও শেষ কালের অধীন এবং ইহাকে বিচার করিয়া অনুসন্ধান করাও মনোরাজ্যের ব্যাপার । এই বাহ জগতের আরম্ভ ও শেষ সম্বন্ধে আমরা অবশ্য অনুসন্ধান করিতে পারি, কিন্ত আত্ম! সম্বন্ধে তাহ! করা চলে না; কারণ আত্ম দেশ, কাল, নিমিত্ত, চিন্তা, মনন প্রভৃতি কার্য্যের সম্পূর্ণ অতীত। ন্মৃতরাং আত্মার আদিও নাই, অন্তও নাই। ৫৩ আত্মজ্ঞান আত্ম সর্বজ্ঞ । আত্ম! জ্ঞানসমুদ্র বিশেষ। যাবতীয় আপেক্ষিক জ্ঞান এ সমুদ্রেরই আংশিক বিকাশ। সুতরাং আমরা বুঝিলাম যে, লোকে ঈশ্বরকে যে সমুদয় বিশেষণে বিশেষিত করিয়া থাকে সে সমুদয় বিশেষণ আত্মা সম্বন্ধেও বেদান্ত প্রয়োগ করিয়াছে । লোকে বলে- ঈশ্বর সর্ধ্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান, সর্বব্যাপী, নিত্য ও অসীম। বেদাস্তেও আত্মাকে এরূপ বল। হইয়াছে। পরমাত্মা আমাদিগেরও আত্মাম্বরূপ। আত্মজ্বান হইলেই জান যায় যে, যেগুলি ঈশ্বরের বিশেষণ সেইগুলিই আবার আত্মারও বিশেষণ যদিও তাহারা আরোপিত । যাহারা এই পরমাত্বার উপলব্ধি করিতে পারে না, তাহারা অজ্ঞানান্ধকারে বাস করে এবং তাহাদিগকে অজ্ঞানজনিত ছঃখ ও র্লেশ ভোগ করিতে হয়।” তাহাদের সর্বদাই ভীত ও অন্ুখীই থাকিতে হয় মৃত্যুর নামেও তাহারা ভয় পায়। তাহার এই পার্থিব জীবন-ধারণের অস্তরায়- গুলিকে এবং দেহের নাশ বা মৃত্যুকে ভয় করে। তাহার। দেহাত্ববুদ্ধিবশতঃ জড়দেহে এবূপ দৃঢ়ভাবে আসক্ত হইয়া থাকে যে, উহা! হইতে বঞ্চিত হইবার আশঙ্কা সর্ধবদ৷ হৃদয়ে পোষণ করিয়া নিজ জীবনকে হুঃখময় করিয়। তুলে। তাহার! ইন্দ্রিয়-সুখ এবং পাথিব ভোগ-বিঙগাস ভালবাসে এবং যখনই উহাদের অভাব হয় তখনই মিয়আ্রাণ ও হতাশ হইয়া পড়ে। তাহাদের বিবেচনায় এই পার্থিব জীবনে এ সমস্ত ৫৪ আত্মান্ভূতি , স্ুখভোগ ভিন্ন অন্ত কোনও উচ্চতর লক্ষ্য ব৷ উদ্দেশ্য থাকিতে পারে না। এইপ্রকার ব্যক্তিগণের জীবন নিরবচ্ছিন্ন ভয় ও অশান্তিপূর্ণ ই হইয়। থাকে। ধাহার। ধনবান তাহাদের চিত্তে ধনসম্পত্তি নাশের ভয় থাকে এবং ধাহাদের সুনাম ও উচ্চপদ আছে তাহাদেরও এ সকঙ্গ নাশের ভয় আছে। সাধারণ লোকের জরা, রোগ ও মৃত্যুভয়জনিত দুংখভোগ তে! আছেই । বাস্তবিক এই শ্রেণীর লোক কি কখনও জগতে যথার্থ স্থখ ও শাস্তি ভোগ করিতে সক্ষম হইতে পারে? কখনই না। বাহার! ভয়মুক্ত হইয়াছেন তাহারাই জগতে একমাত্র সুখী । আত্মজ্ঞান লাভ হইলেই ভয়কে জয় করা যায় এবং তখন হৃদয়ে অনাবিল আনন্দের প্রবাহ বহিতে থাকে ।১ সুতরাং যাহাতে এই জীবনেই আমর! আত্মজ্জান লাভ করিতে পারি তাহার জন্য আমাদের সম্যক্রূপে যত্ববান হওয়া উচিত। আত্মজ্ঞানের আলোক আমাদের অজ্ঞানান্ধকার দূরীভূত করে ও তৎসঙ্গে অজ্ঞান জন্য ভয়, শোক, ছুঃখ, জন্ম, মৃত্যু ও এমন কি পরাধীনতা, সর্বপ্রকার বন্ধনাদি ও মোহাদি হইতে আমাদিগকে মুক্ত করিয়া থাকে। আমাদের 'ন্বার্থপরতা? অজ্ঞান ( অবিষ্তা! ) হইতেই প্রত । ১। “আনন্দং ক্ষণে! বিদ্বান ন বিভেতি কুতশ্চন।"- তৈত্তিনীয়োপনিষৎ ২।৯ ৫৫ ক্াতুন্ঞান এই অঞ্ঞানই ' আমাদের এশ্বরীক ভাবকে বা আত্মাকে আবরণী শক্তি ছারা আচ্ছাদিত করিয়া! রাখে এবং বিক্ষেপশক্তি দ্বার জড় দেহই যে আমাদের প্রকৃত স্বরূপ এই “মিথ্যাজ্ঞান জাগাইয়৷ দেয়। এই অবিষ্ঠার অিস্ত্য শক্তিদ্বারা৷ অভিভূত হইয়া আমরা আমাদের প্রকৃত আত্মন্বরূপ ভুলিয়া যাই এবং আমরা আমাদিগকে মরণশীল মানবের পুত্র বা কন্যা ইত্যাদি বলিয়া ভাবিয়া থাকি। এইগ্রকারে আমরা সীমাবদ্ধ হইয়। পড়ি এবং “আমি, আমার' ইত্যাকার স্বার্থপরতার পাশে আবদ্ধ হইয়া.যাই। আত্মজ্ঞান অবিদ্ধা নাশ করে এবং সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবের উদয় করে। তিনিই ধন্য ধাহার চিত্ত অজ্ঞানরূপ অন্ধকারের ভয় এবং স্বার্থপরতারপ কৃ্ণ-মেঘ-জাল মুক্ত হইয়। জ্ঞান-ন্ুর্য্যের আলোকে উদ্ভাসিত হইয়াছে । ভাবিয়া দেখুন এই জগৎটা কি? ইহা অজ্ঞানপ্রস্থত ও ভীতিসমাচ্ছন্ন। আত্মজ্ঞান সব্ধপ্রকার সাংসারিকভাব হ। “অন্ঞানস্তবরণবিক্ষেপনামকমস্তি শক্তিছুয়ম। আবরণশক্তিস্তাবৎ ৯ * অজ্ঞানং পরিচ্ছিন্রমপ্যাআ্ানমপরিচ্ছিন্নমনংসারিণম্‌ অবলোক- রিতৃবুদ্ধিপিধায়কতয়াচ্ছদয়তীব | অনয়ৈবাবরণশক্াবচ্ছি্রন্তাতবনঃ কতৃ ত্বভোভৃত্বস্খহুংখমোহাত্মকতুচ্ছপংসারভাবনাপি সংভাব্যতে যখ। শ্বাজ্তাীলেনাবুতীয়াং রজ্জাঁং সর্পত্বপংভাবনা। বিক্ষেপশক্তিত্ত বথা রজ্ছান্ঞানং ম্বাবৃতরজ্ঞোৌ শ্বপক্তা! সর্পাদিকমুস্তীবয়ত্যেবমন্তানমপি স্বাবৃতাত্বনি বিক্ষেপশক্ত্যাকা শাদিপ্রপঞ্চমুস্তীবয়তি |” --বেদীস্তসার ৫৬ আস্মাস্ভৃতি বিনষ্ট করিয়া আমাদিগকে আধ্যাত্মিক শাক্ত দান করে এবং ঈশ্বর যেরূপ ভয়শৃম্ত আমাদিগকেও সেইরূপ ভয়শুন্ঠ করে। ঈশ্বর কি কোনও কিছুকে ভষষ করেন? না, তাহা কিরূপেই বা সম্ভবপর হইতে পারে? যে মুহুর্তে আমাদের অনুভূতি হইবে যে, ঈশ্বর আমাদের অস্তরে অবস্থান করিতেছেন সেই মুহুর্তেই আমাদের সমস্ত ভয় অন্তহিত হইয়! যাইবে । যখন আমরা জানিতে পারিব যে, মৃত্যু দেহের ভাবান্তর মাত্র, অর্থাৎ এক দেহ ত্যাগ করিয়৷ অন্য দেহ গ্রহণ ভিন্ন মৃত্যু আর কিছুই নহে, এবং যখন ইহাও জানিব যে, আমাদের বধথার্থ স্বরূপ বা আত্মা অপরিবর্তনশীল তখন আর আমাদের মৃত্যুভয় কি করিয়া থাকিবে ? যাহাদের আত্মজ্ঞান লাভ হয় নাই তাহারা সত্যই ছুর্ভাগ |! যেপব্যন্ত না তাহারা তাহাদের যথার্থ স্বরূপ আত্মাকে উপলব্ধি করিতে পারিবে সেপধ্যস্ত তাহাদের এই অজ্ঞানের সংসারে পুনঃপুনঃ জন্মগ্রহণ করিতেই হইবে । আত্মজ্ঞানই অনস্ভ সুখের একমাত্র কারণ। ইহাই আত্ম-স্বাধীনতা ও মোক্ষের পথে লইয়া যায়। আপনি মুক্তির অন্েষণ করিতেছেন সত্য, কিন্তু যতক্ষণ শৃত্যুভয়ের দাস অথব! সাংসারিক অবস্থানিচয়ের অধীন থাকিবেন, ততক্ষণ আপনি উহা লাভ করিতে পারিবেন না। ৫৭ আত্মজান আপনি ঈশ্বরের অন্শ--ইহা চিস্তা করুন, ধ্যান করুন এবং তাহা হইলেই সমস্ত বন্ধন ছিন্ন হইয়! যাইবে ও আপনি মুক্ত হইবেন । আত্মজ্ঞানের দ্বারা এই প্রকার মোক্ষ লাভ হইলে তবেই আপনার “অহং ব্রহ্ম” বা! “সাইহংঃ ভাব এবং ঈশ্বরের সহিত একত্বানুভূতির উদয় হইবে। তখনই আপনি বলিতে সক্ষম হবেন “যোইসাবসৌ পুরুষঃ সোহমন্রি”১ অর্থাৎ সুর্যের মধ্যে যে জ্যোতি; দেখতেছি তাহা! আমার মধোও আছে এবং আমার মধ্যে যে জ্যাতিঃ প্রকাশিত তাহাই ন্ুুধ্যের মধ্যে দেদীপ্যমান। আমিই দেহ, ইন্দ্রিয় ও মনের প্রভু এবং জাগতিক বাহ্াবস্তরও আমি প্রভু। তখনই আপনি বুঝিবেন যে, “আমিই এই বিশ্বত্রক্মাণ্ডের আলোক স্বরূপ । আমারই আলোকে শশী, শ্মুর্যয, নক্ষত্র ও বিদ্যুৎ প্রকাশমান। আমি আমার নিজের স্বরূপ উপলব্ধি করিয়াছি, নিখিল বিশ্বের যথার্থ স্বরূপ কি তাহাও আমি উপলব্ধি করিয়াছি । ব্ুুতরাং আমি সেই 'একমেবা- দ্বিতীয়ম' বিরাট পুরুষের সহিত এক এবং রস বিষয়ে আর কোন সন্দেহ নাই ।, ১। ইঈশোপনিষৎ ১৬ ৫৮ বাজ্মে মনসি প্রতিষিতা, মনো মে বাটি প্রতিষ্িত- মাবিরাবির্ময়োহভূব্বদসা মংসাহ্ণীখতং মা মা হিংসী- রনেনাঁধীতেনাহোরাত্রাৎ সংবসাম্যগ্ন ইড়া নম ইড়। নম খষিভ্যো মন্ত্রকুদূভ্যো মন্ত্রপতিভ্যো নমো বোহস্ত দেবেভ্যঃ শিবা নঃ শংতম! ভব স্ুমূড়ীক! সরন্বতী মা তে ব্যোম সাদৃশি। অদধবং মন ইষিরং চক্ষুঃ সৃধ্যে। জ্যোতিষাং শ্রেষ্ঠে! দীক্ষে মা মা হিংসীঃ। ও শাস্তিঃ শাস্তি; শাস্তিঃ। ৃ _কৌষীতক্যুপনিষং । হে বাগ্দেবি, আমার বাক্য মনে প্রতিষ্টিত হউক এবং মন: বাক্যে প্রতিষ্ঠিত হুউক। তুমি মৃত্তিমতী জ্ঞানব্বরূপিণী- রূপে আবিভূর্তী। আমার নিকট হইতে তুমি শব্দরূপে দিগ্যাপিনী হইয়াছ ; অতএব সত্য নষ্ট করিও না। বর্তমান অধ্যয়নেই যেন দিন রাত্রি গ্রকই ভাবে অবস্থান করিতে পারি। হে অগ্নি তোমাকে সর্বতোভাবে নমস্কার । মন্ত্রপ্রযোজক খধিগণকে সর্ববতোভাবে নমস্কার । মন্ত্রপতি দেবগণ, তোমাদিগকেও নমস্কার। সরম্বতী আমাদিগের প্রতি বিশুদ্ধা কল্যাণময়ী এবং স্ুখদায়িণী হউন। আমি যেন শৃন্তময় না দেখি । স্ূ্্য যেরূপ জ্যোতির্ময় পদাথ- সমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, কখনও ইহার অন্থথ! হয় না৷ সেইরূপ আমাদের মন নির্মল এবং চক্ষু ইঞ্টদর্শী হউক। ইহার অন্যথা করিও না। ও শাস্তি; শাস্তি: শাস্তি; । ৫৯ তৃতীয় অধ্যায় প্রাণও আত! ষীশুধৃষ্টের আবির্ভাবের অন্ততঃ ছুই সহস্র বৎসর পুর্বে বৈদিক যুগের সময় হইতে ভারতবর্ষে আত্মঙ্ঞানের চর্চা কেবল যে দার্শনিক পণ্ডিতগণের বা খষিদিগের মধ্যেই নিবন্ধ ছিল তাহা নহে, তৎকালীন রাজন্যবর্গও আত্মজ্ঞান লাভকেই জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্ট বলিয়। জানিতেন। প্রাচীন ভারতে অধিকাংশ ক্ষত্রিয় রাজা ব্রাহ্মণ না৷ হইয়াও আধ্যাত্মিক বিষয়ে হিন্দুদিগের আচার্ধ্যরূপে ছিলেন। সাধারণের একটা ধারণ। আছে যে, পুরাকালে কেবলমাত্র ব্রাহ্মণগণই আধ্যাত্মিক তত্ব শিক্ষা দিতেন এবং রাজ্যশ।সনাদি ও যুদ্ধাদি কাধ্য ক্ষত্রিয়- গণেরই কর্তব্য ছিল; কিন্তু মহাভারতে বণিত আছে যে, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ব্রাহ্মণদিগের মধ্যে কেহ কেহ যুদ্ধ করিয়া- ছিলেন, সেনাপতি হইয়াছিলেন এবং সংগ্রামের সময় তাহারা যথেষ্ট শৌর্ধ্য, বীর্ধ্য ও সাহসের পরিচয় দিয়াছিলেন। কিন্তু তাহাদের মধ্যে কেহই কখনও দেশের রাজা ব৷ সম্রাট হইতেন না। শ্রীমপ্তগবদগীতাতেও দেখিতে পাওয়া যায়, ভ্রোণাচাধ্য ও কৃপাচার্ধ্ ব্রাহ্মণবংশে জন্মগ্রহণ করিয়াও প্রসিদ্ধ ৬৬ প্রাণ ও আত! সেনাপতি হইয়াছিলেন এবং যুদ্ধ করিয়াছিলেন । ইহারাই আবার তৎকালীন ক্ষত্রিয়গণকে ধন্ুবিবন্া ও অস্ত্রবিচ্ভাদি শিক্ষা দিয়াছিলেন। পক্ষান্তরে উপনিষৎ এবং পুরাঁণসমূহে বণিত আছে যে, ক্ষত্রিয়গণই প্রথমে ব্রহ্মবিষ্তা, আত্মতত্ব ও পরলোকতত্ব প্রভৃতি উচ্চতর আধ্যাত্মিক বিষয়ে ব্রাহ্মণগণের আচার্য্য বা উপদেষ্টা ছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ রামচন্দ্র এবং বুদ্ধ ইহারা সকলেই ক্ষত্রিয় ছিলেন। ক্ষত্রিয়গণ যুদ্ধ-ব্যবসায়ী জাতি বলিয়া পরিগণিত হওয়ায় তাহারা দেশ রক্ষা করিতে, রাজ্যশাসন করিতে) শক্রর সহিত যুদ্ধ করিতে এবং রাজ্যে শান্তি, স্থবিচার ও ধন্ম স্থাপন করিতে বাধ্য ছিলেন। যদিও এই সকল কাধ্য ক্ষত্রিয়ের ধন্ম ছিল তথাপি তাহারা প্রকৃত শিক্ষাভিলাষা অনুসন্ধিৎস্ুগণকে আত্মজ্ঞান সম্বন্ধে শিক্ষাদান করিতেও অধিকারী ও সমর্থ ছিলেন। প্রাচীনকালে হিন্দু শাসনকর্তাগণ আধুনিক রাজাদিগের মত ছিলেন না। তাহাদের ধারণা ছিল যে, মানব-জীবনের একটি গৃট় তাৎপর্য আছে এবং যতদিন উহ! উপলব্ধি করিতে না পার! যায় ততদিন জীবনের সার্থকতা পূর্ণ হয় না। এমন কি সেই প্রাচীন যুগেও সত্যান্ু- সন্ধিস্থ নৃপতিগণ ভাবিতেন যে, যাহারা আমি কে' এবং “আমার ব্বরূপই বা কি,” এই তত্বসমূহের মীমাংস। ৬১ আত্মজ্ঞান না করিয়। জীবন যাপন করে তাহার। গভীর অন্ধকারেই পড়িয়া আছে। এই সমস্ত কারণে তাহার! ক্ষাত্রধশ্মবিহিত রাজাশাসন প্রভৃতি কর্মাদি সম্পাদন করিয়াও আত্মজ্ঞান সাধনার জগ্ঠ যথেষ্ট অবসর পাইতেন। পুরাকালে এই ভারতবর্ষে বারাণসী নগরীতে দিবোদাস মামে এক পরাক্রান্ত নরপতি ছিলেন। বারাণসী তখন পাশ্চাত্য জগতের এথেন্স* নগরীর ম্যায় ভারতের সর্বপ্রকার বিষ্ভাশিক্ষার স্থান ও ধর্্ন, বিজ্ঞান এবং দর্শনশান্ত্র চ্চারও কেন্দ্রস্থল ছিল। প্রাগৈতিহাসিক যুগ হইতে এই বারাণসী প্রাচ্য সভ্যতার উৎপত্তি-স্থান বলিয়।৷ পরিগণিত। যীশুধুষ্টের জন্মগ্রহণের পাঁচশত বৎসর পুর্বে বুদ্ধদেবের সময়ও এই স্থান হিন্দু দর্শনশান্ত্রের এবং ধরন্মের প্রধানকেন্দ্র ও অন্থুশীলনক্ষেত্র ছিল। বুদ্ধদেব যদি: এই বারাণসীর পগ্ডিতগণকে বিচারে পরাজিত করিয়া নিজপক্ষ অবলম্বন করাইতে না পারিতেন তাহা হইলে সমগ্র ভারতে তিনি ধর্মপ্রচার ও নিজ মত স্থাপন করিতে সমর্থ হইতেন না। বারাণসীরাজ দিবোদাসের প্রতর্দন নামক এক শৌর্ধ্যবীর্যযশালী পুত্র ছিলেন। তিনি তাহার হু্ধর্ধ শত্রগণকে পরাজিত করিয়া যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করিয়াছিলেন। কথিত আছে যে, ১ ইউরোপের অন্তর্গত গ্রীস দেশের রাজধানী ছিল । ৬২ প্রাণ ও আত্মা তিনি দেবতাগণকেও যুদ্ধে জয় করিয়াছিলেন। রাজকুমার প্রতার্দন অসীম সাহম ও অলোকসামান্য শক্তিসম্পন্ন ছিলেন। তিনি পৃথিবীর সমস্ত প্রবল নরপতিগণকে পরাজিত করিয়া দেবতাগণকে জয় করিবার মানসে পরিশেষে দেবলোকে উপস্থিত হইলেন। কৌধীতকী উপনিষদের তৃতীয় অধ্যায়ে এই অভিযানের বর্ণনা দেখিতে পাওয়। যায়। পুরাণের মতে বজ্রধারী ইন্দ্র বহু যাগ, যজ্ঞ, তপস্তা৷ এবং জ্ঞানার্জন করিয়া দেবতাদিগের অধিপতি হইয়াছিলেন। দিবোদাসের পুত্র প্রতর্দন অন্ান্য দেবতা- দিগকে পরাজিত করিয়। ইন্দ্রকে পরাভূত করিবার জন্ আবার ইন্দ্রলোকে উপস্থিত হইলেন। তিনি কিরূপে প্রবল শক্রগণকে ধ্বংস করিয়। দেবতার্দিগকেও পরাজিত করিয়া- ছিলেন তাহা সমস্তই দেবরাজ ইন্দ্রের নিকট বর্ণনা করিলেন। এইরূপ অসাধারণ বীরপুরুষকে সমাগত দেখিয়া দেবরাজ ইন্্রও কিংকর্তৃব্যবিমূঢ় হইয়া পড়িলেন। তাহাকে কিরূপ অভ্যর্থনা কর! কর্তব্য এবং কি প্রকারেই বা! সেই অতিথি সন্তষ্ট হইবেন তাহা চিন্তা করিয়া স্থির করিতে পারিলেন না। তাহার অসীম ক্ষমতা ও বিজয়ের বার্তা শ্রবণ করিয়া ইন্দ্র প্রতর্দিনকে বলিলেন £ “আমি তোমার প্রতি অত্যন্ত সন্ত হইয়াছি। আমি তোমাকে বর দিতে ইচ্ছা! করি। তোমার যাহ! অভিলাষ তাহা! প্রার্থনা কর, আমি তাহ! পূরণ করিব।” ৬৩ আত্মজ্ঞান রাজপুত্র প্রতর্দন উত্তর করিলেন; “হে দেবরাজ, যাহ। লোকের সর্ববপেক্ষা শ্রেয়স্কর সেইরূপ বরই আপনি বিবেচনা করিয়া আমায় প্রদান করুন” লোকের পক্ষে সর্বাপেক্ষা ঈপ্সিত বস্তু কি তাহ প্রতদ্দিন জানিতেন না, কিন্তু ইহা! বুঝিয়াছিলেন যে, এমন কিছু নিশ্চয়ই আছে যাহার দ্বারা সকলেই কৃত- কৃতার্থ হইতে পারে। যে সকল মায়াবদ্ধ ব্যক্তি আপনার স্বরূপ অবগত ন! হুইয়া অজ্ঞানান্ধকারে বাস করিতেছে তাহাদের এইরূপ কিছু প্রয়োজন যাহা দ্বারা তাহার! তাহাদের জীবনের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্ট অবধারণ করিতে সক্ষম হইবে। এইরূপ চিন্তা করিয়া গ্রত্দীন পুনরায় বলিলেন £ “মন্ুষ্যের পক্ষে সর্ববাপেক্ষ! যাহা! শ্রেয়স্কর বলিয়। আপনি মনে করেন তাহাই আমায় দান করুন।” দেবরাজ ইন্দ্র উত্তর করিলেন £ “উহ! ঠিক নহে, তুমি তোমার অভিপ্রেত বর নিজ্ে প্রার্থনা কর। নিজের অভিপ্রেত বন্তকে অপরে তাহার হইয়া কি প্রকারে মনোনীত করিরা দিবে 1” রাজপুত্র তাহাতে সন্তুষ্ট হইলেন না। তিনি পুনরায় বলিলেন £ “আমি আপনার নিকট আমার নিজের জন্য বর প্রার্থনা করিতে চাহি না” মনুষ্যের পক্ষে কি শ্রেয়স্কর বস্তু হইতে পারে তাহার ধারণা না! থাকায় প্রতর্দীন নির্দিষ্ট কোন বরই প্রার্থনা করিতি পাঁরিলেন ন। ; সুতরাং তিনি সমস্ত ভার ইন্দ্রের উপর অর্পণ করিলেন। তখন ইন্দ্র তাহাকে বলিলেন £ “আমি ৬৪ গ্রাণ ও আত্মা তোমার নিকট প্রতিজ্ঞাপাশে আবদ্ধ এবং আমার প্রতিজ্ঞা কখনও ভঙ্গ হইবে নাঃ সেইজন্য আমি তোমাকে এইরূপ বর প্রদান করিব যাহা অপেক্ষা মনুষ্য- জাতির আর অন্ত কোনও শুভকর ও আবশ্যকীয় বস্ত্র হইতে পারে না 1৮১ ইন্দ্র প্রতর্দনকে বলিলেন £ “আমাকে জান। আমার স্বরূপকে বিদ্িত হওয়াই মানবের পক্ষে সর্বাপেক্ষা কল্যাণকর--ইহ! আমি মনে করি ।৮ দেবরাজ ইন্দ্র যে বলিলেন ঃ "আমাকে বিদিত হও” ইহার অর্থ এরূপ নহে যে, “আমার ( ইন্দ্রের) শক্তি ও আমার যশৃকে বিদিত হও ।১ ইহার তাৎপর্য্য এই যে, “আমি, আমাকে, আমার' বা “তুমি, তোমাকে, তোমার” এই শব্দগুলির দ্বারা যাহাকে নির্দেশ করা হয় তাহারই যথার্থ স্বরূপ সেই আত্মাকে বিদিত হও। যিনি এই ন্বব্ূপকে অবগত হইতে পারিবেন, তিনি অসীম দিব্যশক্তি লাভ করিবেন । এই অবস্থায় তিনি যদি কায়িক কোনও অন্তায় ক্লা্য করেন তাহা হইলে পাপ তাহাকে স্পর্শ করিতে পারিবে না । যেব্যক্তি আত্মাকে জানিতে পারিয়াছেন তিনি সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাশালী; ১। “স হোবাচ. মামেৰ ০০০০৮০৪ ছিততম্ং মন্টে।” _ কৌবীতক্যুপনিষৎ ৩১ ৩১ ৬৫ আত্মজ্ঞান সামান্য রাজ! হইতে প্রবল পরাক্রাস্ত সম্াটও তাহার নিকট কিছুই নহে। তিনি শাস্ত্রে উল্লিখিত সর্বপ্রকার সদৃগুণের অধিকারী হন এবং কিছুতেই তাহার আত্মজ্ঞানলব্ধ মহিমা মান হয় না। পরে ইন্দ্র পুনরায় বিশুদ্ধ আত্মজ্ঞানের মহিম। বর্ণনা! করিবার জন্য ধলিলেন £ “আমি সমস্ত দৈত্যগণকে যুদ্ধে জয় করিয়াছি, আমি ত্রিশীর্ষ দৈত্যকে ও তুষ্টুতনয় বিশ্বরূপকে নিহত করিয়াছি, যে সকল যতি মুখে বেদোচ্চারণ করে না তাহাদিগকে ব্ন্ কুকুরের মুখে নিক্ষেপ করিয়াছি, স্বর্গে প্রহ্লাদের অনুবস্তাঁ অস্থুরদিগকে, ভূবলেণকে (পাতালে ) পুলোমবংশীয় অস্থুরগণকে এবং পৃথিবীতে কালখঞ্জের অধীন অনুরদের বিনাশ করিয়াছি। আমি এইরূপ অনেক নিষ্ঠুর কন্ম করিয়াছি কিন্তু আমার আত্মজ্ঞান আঁছে বলিয়া এই সমস্ত নৃশংস কার্ধ্য করিলেও আমার যশ, শক্তি ও প্রভাবের কিছুমাত্র হাস হয় নাই ; এমন কি আমার একটি কেশেরও কোনও ক্ষতি হয় নাই। যেব্ক্তি আমার আত্মার স্বরূপ জানেন, তিনি জীবনে যত পাপকার্ধ্যই করুন না কেন-_ এমন কে চৌধ্য, পিতৃহত্যা, মাতৃহত্যা অথবা বেদপাঠনিরত শ্রেষ্ঠ ব্রাঙ্গণকে হত্যা প্রভৃতি পাপকর্্ম দ্বারাও তাহার সুকৃতের ফল বিনষ্ট হয় না; সেই ব্যক্তি কোন পাঁপকার্ধ্য করিতে ইচ্ছা করিলেও তাহার মুখকানস্তি কখনও ম্নান ৬৬ প্রাণ ও আত্ম! হয় না”।, এইরপে ইন্দ্র আত্মজ্ঞানের কি মহিম। তাহা প্রতর্দনকে বর্ণন৷ করিলেন। ইহা! সত্য যে, এই প্রকার বর্ণনার দ্বার! ইন্দ্র ইহা বুঝাইতে চাহেন নাই যে, আত্মজ্ঞানে বলীয়ান্‌ হইয়া সাধকেরা এইরূপ নিষ্ঠুর ও পৈশাচিক নানাবিধ পাপকর্্ম করিবেন, অথচ তাহাদের কোন পাপ হইবে না । কিন্ত এ প্রকার বর্ণনার দ্বারা দেবরাজ ইহাই দেখাইতে চাহিয়াছেন যে, আত্মজ্ঞানের শক্তি পৃথিবীর যাবতীয় অন্যান্য শক্তি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ; কারণ আত্মঙ্ঞান সব্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট মহাপাপীরও হৃদয়কে নিষ্মল করে এবং মন্ুুষ্যের অতি ভয়ানক মহাপাপও ইহা দ্বার ধৌত হইয়া যায়। পিতামাতার হত্যাকারীর বা গুরু হত্যাকারীর পাপ যাহা কখনই ক্ষমার যোগ্য বলিয়া মনে হয় না, কেননা তাহাও আত্মজ্ঞানলক্ধ ও চিত্তশুদ্ধিকারী পবিত্র শক্তিকে মলিন করিতে পারে না। দেবরাজ ইন্দ্র এইরূপে আত্মজ্ঞানের প্রশংসা করিয়। প্রতর্নিনকে পুনরায় বলিলেন £ “আমিই জীবনীশক্তি প্রাণ এবং আমিই প্রজ্ঞাত্মা। আমাকে আয়ুঃ অর্থাৎ প্রাণিগণের জীবনের কারণ এবং অমৃতত্বর্ূপ জানিয়া আমার উপাসনা ১। “স যে। মাং বিজানীয়ান্নাস্ত কেন চ কর্মণ। লোকে মীয়তে । ন মাতৃবধেন ন পিতৃবধেন ন শ্ডেয়েন ন ভ্রণহত্যয়। নাস্তা পাঁপং চ ন চকষে।| মুখামীলং বেতীতি।৮ --কৌধীতক্যুপনিষৎ ৩1১ ৬৭ আত্মজ্ঞান কর। আয়ুই প্রাণ এবং প্রাণই আযুঃ এবং প্রাণই অমৃত ।৮২ সংস্কৃত ভাষায় জীবনীশক্তিকে প্রাণ বলে। প্রাণ এবং চৈতন্য অভিন্ন। যেখানেই প্রাণ আছে সেখানেই চৈতন্য কোন-না-কোন আকারে থাকিবেই। ইন্জ সেজন্য আবার বলিলেনঃ প্রাণ ও প্রজ্ঞাকে আমারই রূপ মনে করিয়া ধ্যানকর। জীবনই প্রাণ এবং প্রাণই জীবন। জীবনই অমরত্ব এবং অমরত্বই জীবন।* এই স্থলে আমাদের বুঝিতে হইবে যে, জীবন ব৷ প্রাণের কখনও মৃত্যু নাই। প্রাণ শাশ্বত ও অবিনাশী, ইহার কোনও পরিবর্তন হইতে পারে না। .প্রাণকে আমরা সমষ্টি প্রাণ হইতে বধ্ধিত বা পরিবন্তিত হইতে দেখি ন!। বাহাজগতে স্ুলভাবে প্রকাশমান হউক অথবা না হউক, প্রাণ সুক্প্রভাবে সর্ধবসময়ে একই প্রকার থাকে। ইহার স্থলবিকাশ বিচিত্র প্রকারে হইতে পারে, কিন্তু জীবনীশক্তি বলিতে যাহ। বুঝিতে পার! যায় তাহা অপরিবর্তনীয্ এবং সর্ববদ। একই ভাবেই থাকে । স্থুলদেহে জীবনীশক্তি বিকাশের অভাবকেই আমর! মৃত্যু বলিয়া থাকি; কিন্ত বাস্তবিক প্রাণ বা জীবনীশক্তির যে মৃত্যু নাই ইহা! অগ্লপসংখ্যক ২। "ল ছোবাচ প্রাণোহম্সি প্রজ্ঞাত্স! ; তং মামাযুরমূতসিত্যুপান্থ | আফ্ু প্রাণ: । প্রাণে। বা আযু$। প্রাণ উবাচামৃতস্।” -_কৌধীতক্যুপনিষৎ ৩২ ৬৮ প্রাণ ও আত্ম। লোকই ধারণ করিতে পারেন। যেখানে প্রাণ আছে সেখানে মৃত্যু থাকিতে পারে না। আমরা বলিয়। থাকি যে, একটি শিশু জন্মগ্রহণ করিয়াছে এবং সে দিন দিন বদ্ধিত হইতেছে। কিন্ত জিজ্ঞাসা করি--এ শিশুটির প্রাণ বা জীবনীশক্তি কি বধ্ধিত হয়? যদি জীবনীশক্তি বা প্রাণ জন্ম ও বৃদ্ধির অধীন হইত তাহা হইলে উহা! পরিবর্তনশীল ও নশ্বর হইত। যাহাকে আমরা জীবনীশক্তি বা প্রাণ বলিয়া থাকি তাহার জন্ম, বৃদ্ধি, ক্ষয় ও মৃত্যু কোন দিনই হইতে পারে না। আমরা শুধু স্থল আকারেরই পরিবর্তন হইতে দেখি, কিন্তু এ সমস্ত পরিবর্তনের সহিত আমার অবিনাশী প্রাণ বা জীবনীশক্তির কোনই হাস বা বৃদ্ধি হয় না। জীবনীশক্তির বিকাশ যে সমস্ত আধারের মধ্য দিয়া হইয়া থাকে সেই আধারগুলিরই কেবল হাস ব! বৃদ্ধিরপ পরিবর্তন হইয়া থাকে । যেমন আমর! বলি যে, একটি শিশু বা একটি চারাগাছ ক্রমে ক্রমে বদ্ধিত হইতেছে। এক্ষণে দেখা যায়, যাহা! কিছু পরিবস্তিত হইতেছে তাহা উহাদের কেবল স্ুল আকারের মধ্যেই ঘটিতেছে ; উহাদের যে জীবনীশক্তি বা -প্রাণ তাহা সদাসর্্বদা কিন্ত সমভাবেই বর্তমান আছে। প্রাণ অন্যান্য ভৌতিক শক্তির বিকাশের সহিত সংশ্লিষ্ট থাকায় প্রাণীজগতের ৬৯ আত্মজ্ঞান বা উত্ভিদ-জগতের ক্রমবিকাশ বা ভ্রমবন্ধীনের বিচিত্র অবস্থার ভিতর দিয়া ভিন্ন ভিন্ন আকারে প্রকাশ পাইয়। থাঁকে মাত্র। প্যাহা “প্রাণ” তাহাই 'জীবন' এবং যাহ! 'জীবন+ তাহাই "অমরত্ব । যতক্ষণ দেহের মধ্যে প্রাণ আছে ততক্ষণ উহার জীবনও আছে। এই প্রাণের সাহায্যেই স্বর্গাদি লোকে গতি হইয়া অমরত্ব লাভ করিতে পারা যায় বলিয়া প্রাণই 'অমৃতঃ |, যদি আমর! প্রাণের বা জীবনের যথার্থ স্বরূপকে জানিতে পারি এবং যদি প্রাণের সহিত জীবন অবিচ্ছিন্নরূপে সংগ্লিষ্ট এই ভাবটিও অনুভব করিতে পারি তাহা হইলে আমাদের যে মৃত্যু নাই, আমরা অবিনাশী ইহা নিশ্চয়ই অনুভূত হইবে । কারণ, প্রাণ ব৷ জীবনের মৃত্যু হইতে পারে না এবং প্রাণহীন কোন জড় পদার্থ হইতে প্রাণ কখনও উৎপন্ন হয় নাই। যদি আমরা আমাদের প্রাণের উৎপত্তি কোথায় তাহা। কল্পনা করিতেও চেষ্টা করি তাহ! হইলে প্রাণ কোনও প্রাণহীন ( অচেতন ) পদার্থ বা মুত পদার্থ হইতে আসিয়াছে এরূপ সিদ্ধান্তে উপনীত হইতে কখনও পারিব ন1। যদি প্রাণের উৎপত্তিই হ্বীকার করিতে হয়' তবে বলিতে ১। “যাবৎ হি অস্থিন্‌ শরীরে প্রাণো বসতি তাবদাযুঃ। প্রাণেন হোবামুনিল্লেধকেহমূতত্বমাপ্রোতি ।৮- কৌধীতক্যুপনিষৎ ৩২ লও প্রাণ ও আত্ম হইবে যে, প্রাণ উৎপন্ন হয় প্রাণ হইতেই। এই প্রাণ সেই অনাদিকাল হইতেই ' আছে এবং ইহার যে কখনও মৃত্যু বা ধ্বংস হইতে পাঁরে তাহ! আমর! ধারণ! কিম্বা কল্পনাই করিতে পারি না; সুতরাং প্রাণ নিত্য পদার্ঘ। এই প্রাণ যখনই কোনও স্মুলদেহের মধ্য দিয়! প্রকাশিত হয় তখনই দেহটিকে জীবিত বলিয়া অনুমিত হয় । ইহাকেই প্রাণশক্তির গৌণ বিকাশ বলিতে হয়। এখানে আমরা জীবনীশক্তির বা প্রাণের বিষয় ভাবি না, কিন্তু প্রাণের সাহায্য ফে দেহটি গতিশীল ও কার্যাক্ষম তাহারই বিষয় ভাবিয়। থাকি। যখন আমরা দেখি যে, কোনও একটি জীব বা প্রাণী কাধ্য করিতেছে তখন আমর কারণরগী প্রাণশক্তির কথা ভুলিয়! গিয়া উক্ত জীব বা প্রাণীর কথাই মাত্র মনে করিয়া থাকি ; যেমন বলি “অমুক ব্যক্তি এতদিন জীবিত ছিলেন বা অমুক ব্যক্তি ষাট অথব! আশী বৎসর বাঁচিয়া ছিলেন এই সমস্ত উক্তির দ্বারা আমর! আয়ুঃ বা প্রীণের গৌণ বিকাশমাজ্রেরই বাস্তবিক উল্লেখ করিয়। থাকি; মুখ্যভাবে কিন্ত প্রাণ সমস্ত গতির অতীত ও অমর অর্থাৎ মৃত্যুহীন। যখন কোন শরীরে এই প্রাণের বা জীবনীশক্তির অভিব্যক্তি হয় তখনই শরীরের অংশগুলি ক্রিয়াশীল হয়, সেই সঙ্গে ইন্দ্রিয় সকল নিজ নিজ কার্য করে, মন চিন্তা করে এবং বুদ্ধিও কাধ্যকরী হয়। ৭১ আত্মজ্ঞান আবার এই প্রাণ “প্রজ্ঞা' হইতে অবিচ্ছেগ্ধ । যে শক্তি এই বিশ্বজগতের সমস্ত বস্তকে গতিশীল করে সেই শক্তিকে আমর! “প্রজ্ঞা” হইতে বিচ্ছিন্ন করিতে পারি না। আত্মার মধ্যে ছুইপ্রকার শক্তি নিহিত আছে, একটি চিৎ-শক্তি বা প্রজ্ঞারপে প্রকাশ পায় এবং অপরটি জীবনীশক্তি বা প্রাণের ক্রিয়ারপে প্রকাশ পায়। যাহা দ্বারা কোনও বিবয় জ্ঞাত হওয়া যায় তাহাই “প্রজ্ঞা” । ইহা চৈতন্ন্বরূপ | ইহাকে “বিষয়জ্ঞান বল! যাইতে পারে না, কারণ ইন্দ্িয়ের বিষয়গুলির জ্ঞান কেবল বুদ্ধির ক্রিয়া মাত্র; কিন্তু এই এন্দিয়িক জ্ঞান যাহা দ্বারা উদ্ভুত হয় তাহাকেই প্রজ্ঞা; বলে। ্প্রজ্ঞয়া সত্যং সম্কল্প,৮ এই প্রজ্ঞা বা জ্ঞানশক্তি দ্বারাই অভিলষিত সত্যন্বরাপ ব্রহ্মকে প্রাপ্ত হওয়! যায়। তাহার পর দেবরাজ ইন্দ্র প্রতর্্দনকে বলিতে লাগিলেন “যে ব্যক্তি আমীকে অবিনশ্বর, ধ্বংসাতীত এবং অপরি- বর্তদণীল প্রাণ ও প্রজ্ঞারূপে জানে সেই ব্যক্তি দীর্ঘকাল এই পৃথিবীতে বাস করিয়া মৃত্যুর পরে ম্বর্গধামে গমন করে এবং সেখানে অনস্ত ও শাশ্বত জীবন উপভোগ' করে ।৮১ এখানে ইন্দ্র জীবনীশক্তির পরিবর্তে প্রাণ শব্দটি ১। পপ যেো ম আফুরমূতমিত্যুপান্তে সর্বমাযুরম্মিল্লেক এবাপ্রোত্য- সৃতত্থমক্ষিতিং দ্বর্গে লৌকে ।”--কৌষীতকুযুপনিষৎ ৩২ ৭২ গ্রাণ ও আত্মা ব্যবহার করিয়াছিলেন বলিয়া রাজপুত্র প্রতদ্দিন ভাবিলেন ইন্দ্র বোধ হয় ইক্দ্িয়শক্তি অর্থাৎ “প্রাণ শব্দটি উল্লেখ করিতেছেন ; কারণ “প্রাণ” শব্দটি দর্শনশক্তি, শ্রবণশক্তি, ভ্রাণশক্ভি, মলমুত্রাদিত্যাগের শক্তি, প্রজননশক্তি, আব্বাদন- শক্তি, স্পর্শশক্তি, বাকৃশক্তি, ধারণাশক্তি এবং দেহের অন্যান্য অঙ্গপ্রতাঙ্গের যাবতীয় শক্তি বুঝাইতেই ব্যবহৃত হইয়া থাকে । সেইজন্য ইন্দ্র বলিলেন ১ “কেহ কেহ বলেন যে, সমস্ত প্রাণ বা ইন্দ্রিয়শক্তিগুলি একীভূত হইয়া যাঁয়, কারণ তাহা না হইলে একই সময়ে কেহ দর্শন, শ্রবণ, বাক্য উচ্চারণ এবং চিন্তাও করিতে পারিবে না। সমস্ত ইন্দ্রিয়শক্তিগুলি এক হইয়া পরে প্রত্যেক ইন্দ্রিয় পৃথকৃভাবে তাহার শক্তির পরিচয় দেয়।”২ বিভিন্ন ইক্দ্রিয়গুলির কার্যযাবলীকে ইন্দ্র প্রাণের কাধ্য বলিতেছেন মনে করিয়া রাজপুত্র জানিতে চাহিলেন যে, তিনি কোন্‌ ইন্দ্রিয়ের কারধ্যকে উদ্দেশ করিয়া তাহাকে উপরি উক্ত উপদেশ দিয়াছেন। অবশ্য জীবনীশক্তি বা প্রাণ যে একই তাহ রাজপুত্র সম্পূর্ণ অনুমোদন করিলেন, কিন্ত তথাপি তাহার ২। “্তদ্ধৈক আহ্ছরেকভূয়ং বৈ প্রাণ গচ্ছস্তীতি। নহি কশ্চন শরুয়াৎ সক্ৃঘ্বাচা নাম প্রজ্ঞাপরিতুং চক্ষুষা! রূপং শ্রোত্রেণ শব্খং মনস। ধ্যানমিত্যেকভূয়ং বৈ প্রীণ। 1” কৌধীতক্যুপনিষৎ ৩২ * ৭৩ আত্মজ্ঞান ধারণা ছিল যে, বিভিন্ন ইন্দ্রিয়গণ যুগপৎ কার্য না করিয়া পৃথকভাবে একটির পর একটি করিয়া তাহাদের নির্দিষ্ট কার্য সম্পন্ন করিয়। থাকে ।৩ বাস্তবিক, ছুইটি ইন্জরিয়ের অনুভূতি কখনও একই সময়ে হয় না, এ দুইটি অনুভূতির অন্তরালে সামান্য অবকাশ থাকিবেই থাকিবে । কখনও কখনও আমাদের মনে হয় যে, একই সময়ে একটি শব্দ আমাদের কর্ণগোচর হইল ও একটি দৃশ্য আমাদের নয়নগোচর হইল, কিন্তু বস্ততঃ এ দুইটি ইন্দ্রিয়ের কার্যা একই সময়ে সম্পন্ন হয় নাই এবং ইহার সত্যতাও যথাযথ বিশ্লেষণ বা বিচার করিলে উপলব্ধি হইবে। সুতরাং বিভিন্ন প্রকার ইন্দ্রিয়ানুভৃতি কখনও একই সময়ে এবং একই সঙ্গে হইতে পারে না। ভারতবর্ষের প্রাচীন মনোবিজ্ঞানবিৎ পগ্ডিতগণের অভিমতে মন ইব্ধিয়েরনুভূতিযোগ্য বন্তসকলকে একটির পর একটি করিয়া গ্রহণ করে, অর্থাৎ মন একটি বস্তুতে যুক্ত হইবার পরে তবে অপর একটি বস্তুতে যুক্ত হয়। যখন একটি: ইন্দ্রিয় তাহার কার্য্যে রত হয় তখন অপর ইন্দ্রিযগুলি ৩। “একৈকং সবাণ্যেবৈতানি প্রজ্ঞাপয়স্তি বাচং বদতীং সর্বে প্রাণ অনুবদত্তি। চক্ষুঃ পত্ৎ সর্বে প্রাণ। অন্পত্তান্তি ; শ্রোত্তং শৃন্বৎ সর্বে প্রাণ! অন্থশূত্স্তি ; মনে। ধ্যায়ৎ সর্বে প্রাণ। অচ্ধ্যাযন্তি। প্রাণং প্রাণস্তংসর্বে প্রাণ। অনুপ্রীণস্তীতি ।৮--কৌষীতক্যুপনিবৎ ৩1২ ৭৪ প্রাণ ও আত্মা নিশ্টেষ্ট ব। শাস্তভাবে তাহাকে অনুমোদন করে। ছুইটি ইন্দ্রয়ের কাধ্যের মধ্যে ক্রমবিচ্ছেদ বা অবকাশ এত অন্ন যে, যদিও আমরা মনোযোগ করিয়াও উহার বিষয় অবগত হইতে ন৷ পারি তথাপি ইহ! সত্য যে, ইন্দ্রিয় গুলি একটির পর একটি করিয়া পৃথকৃভাবে তাহাদের কার্ধ্য করিয়া যাইতেছে । এই সমস্ত কারণে রাজপুত্র প্রতর্দদিন বুঝিতে পারেন নাই যে, দেবরাজ ইন্দ্র প্রাণকে উদ্দেশ করিয়া কোন্‌ ইন্দড্রিয়শক্তির ক্রিয়ার বিষয় উল্লেখ করিতে- ছিলেন। সুতরাং এ জটিল প্রশ্নটি করিয়া তিনি: নীরবে উত্তরের প্রতীক্ষায় রহিলেন। তাহার পর ইন্দ্র বলিলেন 2 “ইহ! সত্য বটে যে, ইন্দ্িয়গুলি পর্য্যায়ক্রমে তাহাদের নির্দিষ্ট কার্ধ্যগুলি সম্পাদন করে এবং প্রত্যেক ইক্দ্রিয়ই শক্তিশালী ; কিন্তু ইহাও জানিও যে, এই ইন্ড্িয়শক্তিসমূহ ব্যতীত আর একটি জীবনীশক্তি আছে যাহার তুলনায় অন্ত যে কোন প্রকার ইন্দ্রিয়শক্তিই তুচ্ছ; অর্থাং সকলপ্রকার শক্তি অপেক্ষ। এ জীবনীশক্তিই শ্রেষ্ঠ ।”5 ০০০ ৪1 ণএবমুহৈবৈতদ্দিতি হেন্দ্র উবাচ, অভ্তীত্যেব প্রাণানাং নিঃশরেয়সাদানমিতি । জীবতি বাগপেতো, মুকাদ্বিপস্তামে। জীবতি চক্ষুরপেতো হস্কাদ্বিপস্তাঁমে! জীবতি শ্রোত্রাপেতে। বধিবান্ধি পন্ঠামঃ।” -_-কৌধষীতকুাপনিষৎ ৩২ ৭৫ |] 'আত্ুজ্ঞান যে শক্তি আমাদের দর্শন করায় বা শ্রবণ করায় সেই শক্তি কিন্তু আমাদের জীবন ধারণ করিতে সাহাষ্য করে না। যেমন অন্ধ দেখিতে পায় না অথবা বধির শুনিতে পায় না, কিন্তু তথাপি তাহাদের জীবিত থাকিতে দেখা যায়। মূক ( বোবা ) ব্যক্তির মধ্যে বাকৃশক্তি থাকে না কিন্তু সেই মৃুকও আবার বাঁচিয়া থাকে । এইরূপ যে সকল ব্যক্তির ভ্রাণশক্তি ও আস্বাদনশক্তি বা স্পর্শশক্তি নষ্ট হইয়াছে তাহাদিগকেও জীবিত থাকিতে দেখ! যায়। শিশু এবং জন্মমূঢ ব্যক্তিগণের চিন্ত! করিবার শক্তি থাকে না, কিন্তু তাহার! বাঁচিয়। থাকে ।, আবার ইহাও দেখ! যায় যে, স্মৃতিশক্তির লোপ হইয়াছে এইরূপ ব্যক্তিও জীবিত থাকে । এই সমস্ত দৃষ্টান্ত হইতে আমরা বুঝিতে পারি যে, যে শক্তিদ্বারা আমরা জীবিত থাকি সেই শক্তি এবং দর্শন, স্পর্শন, ভ্রাণ, আন্বাদন, বাক ও চিন্তাশক্তি ঠিক এক নহে। আবার কোনও ব্যক্তি হস্তবিহীন হইয়া কিছু ধরিতে সক্ষম না হইলেও আমরা তাহাকে শ্বৃত নামে অভিহিত করিতে পারি না। এইরূপ যদি কাহারও পদ বা অন্ত কোনও অঙ্গ বিকল হয় তাহ হইলে বিকলাঙ্গ হওয়ার জন্য সেই ব্যক্তির ১। “জীবতি শ্রোত্রাপেতে। বধিরাদ্বিপশ্তামেো ; জীবতি বাহুচ্ছিন্নো! জীবতি উরুচ্ছিন্ন ইতি। এবং হি পশ্তাম ইতি |” --কৌধীতক্ুপনিষৎ ৩২ ৭৬ প্রাণ ও আত্ম! জীবনীশক্তি বা মুখ্যপ্রাণ তিরোহিত হইবে না। সুতরাং এখন আমরা বলিতে পারি ষে, এই জীবনীশক্তি বা “মুখ্য প্রাণ, ইন্দ্রিয়ের কার্য্য অথবা ইন্দ্িয়ান্ুভৃতি হইতে সম্পূর্ণ পৃথকী। আবার ইহাও সত্য যে, জীবনীশক্তি বিচ্যুত হইলে দেহের বহি্যন্বত্বরূপ ইন্দ্রিয়গুলিও কোন কার্য্য করিতে পারে না--অচল হইয়া যায় । জীবনীশক্তি বা মমুখ্য প্রাণ ইন্দ্রিয়শক্তির উপর নির্ভরশীল নহে; কিন্তু ইন্ড্রিয়শক্তিগুলি জীবনীশক্তির উপর সম্পূর্ণ- রূপে নির্ভর করে। যেখানে জীবনীশক্তির বহিবিকাশ ন! থাকে সেখানে ইন্দ্রিয়গুলি নিখুৎ থাকিলেও উহাদের ক্রিয়াসমূহ এবং দর্শন ও শ্রবণাদ্দি অনুভূতির কোনও অভিব্যক্তি দ্রেখা যাইবে না। একটি মৃত ব্যক্তির চক্ষু অবিকৃত থাকিতে পারে, চক্ষুর সমস্ত স্ায়ুও ঠিক্‌ থাকিতে পারে, মস্তিষ্বের ক্ষুদ্র কোষগুলিও ব্বাভাবিক অবস্থায় থাকিতে পারে কিন্তু এ মৃত ব্যক্তির দেহের মধ্যে জীবনীশক্তি বিলুপ্ত থাকায় ইন্দ্রিয়গুলি নিশ্চেষ্ট থাকে, তাহারা নিজ নিজ ক্রিয়া করিতে অক্ষম হয় এবং কোনপ্রকার অনুভূতি উৎপন্ন করিতেও পারে না, সুতরাং সমস্ত ইন্দ্রিয় একেবারে প্রাণহীন অবস্থাতেই থাকে । এইরূপে আমরা, দেখিতে পাই যে, সমস্ত ক্রিয়ার মূল এই 'মুখ্যপ্রাণ ইন্দ্িয়গুলিতে বিদ্কমান থাকিলেই তবে উহার ক্রিয়াশীল, ৭৭ আত্মজ্ঞান হয়। কারণ 'মুখ্যপ্রাণই ইন্ড্রিয়গুলির অধিপতি ও নিয়ামক । বেদেও দেখা যায় ঃ “নিখিল বিশ্বের জীবনদাতা সেই জীবনীশক্তি বা 'মুখ্যপ্রাণ-কে সকলেরই উপাসন। করা উচিত।” যদি কেহ জীবনীশক্ত বা “্ুখ্যপ্রাণ, কি তাহ। বুঝিতে পারেন তাহা হইলে তিনি কি উপায়ে জীবিত আছেন বা এই বিশ্বগৎ কিরূপে সজীব আছে সেই রহস্যও তিনি ভেদ করিতে পারেন। পাশ্চাত্য দেশের বৈজ্ঞানিকগণ, শরীরতত্ববিদ্গণ এবং ব্রমবিকাশবাদিগণ সকলেই এই জীবনীশক্তিটি কিরূপ তাহা জানিতে চেষ্টা করিতেছেন । কিন্তু তাহারা কি এই বিষয়ে কৃতকাধ্য হইয়াছেন? না, তাহারা এখনও পধ্যস্ত এই বিষয়ে সফলকাম হন নাই । উহাদের মধ্যে কেহ কেহ বলেন যে, ইহা আণবিক আকর্ষণশক্তি ; আবার কেহ কেহ বলেন যে ইহ। ভৌতিক ও রাসায়নিক শক্তির সংমিশ্রণের ফল। কিন্তু জিজ্ঞাস্য এই যে, ইহাদের মধ্যে কি কেহ নিশ্চয় করিয়। বলিতে পারেন যে, তাহার মতটিই অত্রান্ত সত্য? জীবনীশক্তির মূল কোথায় এই বিষয় অন্বেষণ করিতে পাশ্চাত্য বিজ্ঞীন কতদূর অগ্রসর হইয়াছে? জীবনী- শক্তি প্রকৃতিরাজ্যের জড়শক্তিসমূহ হইতে স্বতন্ত্র এই ধারণ! পাশ্চাত্য বৈজ্ঞানিকগণ পরিত্যাগ করিয়াছেন। কিন্তু জীবনী- শক্তির ব। প্রাণের অনাদি উৎস কোথায় তাহা তাহার! স্পষ্ট ৭৮ | প্রাণ ও আত্ম! করিয়া বলিতে পারেন না। বিভিন্ন দেশের বৈজ্ঞানিকগণ এই বিষয় লইয়া বনু বাদ-প্রতিবাদ এবং গবেষণ! করিয়াছেন, কিন্তু উহা পূর্বে যেমন জটিল ছিল এখনও উহাদের নিকট ঠিক সেই প্রকারই জটিল রহিয়। গিয়াছে, উহ্ারা এ পর্য্য্ত কোন স্থির সিদ্ধান্তেও উপনীত হইতে পাঁরেন নাই। যে মুহুর্তে আমরা এই সমগ্র বিশ্বের জীবনীশক্তি কি তাহা ধারণ করিতে পারিব সেই মুহুর্তে সেই চৈতগন্তময় ঈশ্বরেরও ধারণ আমাদের হইবে! কারণ বেদান্ত বলে যে, যিনি ঈশ্বরবূপে পুজিত, তাহার বিরাট সত্বা হইতে এই জীবনীশক্তি বা “প্রাণ” অভিন্ন । এক্ষণে প্রশ্ন, ঈশ্বর বলিতে আমরা কি বুঝি? যিনি সমস্ত বস্তুকে সচেতন রাখেন এবং যাহার উপর সমস্ত ইীন্দ্রয়শত্তি, বাহক ও আভ্যন্তরিক যাবতীয় ক্রিয়া ও দেহধন্মাদি নির্ভর করে তিনিই ঈশ্বর । দেবরাজ ইন্দ্র বলিলেন £ “এই দেহ প্রাণের দ্বারা সজীব হওয়াতেই ক্রিয়াশীল হয়। এই প্রাণই সেই চেতনাসংযুক্ত 'অহং, | যাহা প্রাণ” তাহাই প্রজ্ঞা” এবং যাহ প্রজ্ঞা তাহাই প্রাণ; এই ছুইটিই দেহের মধ্যে এক সঙ্গে থাকে এবং এক সঙ্গে চলিয়া! বায়।”১ যেখানে ১। "অথ খলু প্রাণ এব প্রজ্ঞাত্েদং শরীরং পরিগৃন্োথাপয়তি | তম্মাদেতদেবোক্থমুপাসীত। যে! বৈ প্রাণ সা! প্রজ্ঞা, যা বা প্রস্তা স প্রাণ ।*-_কৌধীতক্যুপনিষৎ ৩।৩ ৭৯ আত্মজ্ঞান জীবন নাই সেখানে কি কেহ প্রজ্ঞার সন্ধান পাইয়াছে? উহা! একেবারে অসম্ভব। যেখানে প্রজ্ঞা আছে, সেখানে নিশ্চয়ই জীবন আছে। জীবন বা প্রাণ এবং প্রজ্ঞা এই ছুইটিই অবিচ্ছে্ত। এক্ষণে বলিতে পারা যায় যে, বৃক্ষ-লতাদিতে প্রজ্ঞার অস্তিত্ব প্রতিভাত হইতে দেখ। যায় না, সুতরাং তাহাদের প্রজ্ঞ। নাই। কিন্তু এই সামান্ত যুক্তির দ্বারাই কি উহাদের মধ্যে প্প্রজ্ঞা” নাই তাহ! স্বীকার করা সঙ্গত হইবে? মন্ুপ্তের হ্যায় বুক্ষার্দির মস্তিফ নাই বলিয়াই কি উহাদের মধ্যে “প্রজ্ঞা নাই এই মত পোঁষধণ করিতে হইবে ? বাস্তবিক মস্তিক্ষযুক্ত প্রাণীদের যেরূপ প্রজ্ঞা আছে, পা আপ আকাশ | শা পপ কষ অর্থাৎ যেহেতু প্র্ঞাম্বরূপ প্রাণই এই প্রত্যক্ষ শরীরকে “ইহাই আমি” অথব। “ইহা আমার”এইরপ জ্ঞান করিয়া! আদন ওশয্যাদি হইতে উত্থাপিত করান সেইজন্য তাহাকেই “উক্থ” € উত্থাপত্রিতা ) বলিয়! উপাসনা করা কর্তব্য। যিনি প্রাণ তিনিই প্রজ্ঞ]; যিনি প্রজ্ঞ। তিনিই প্রাণ, অর্থাৎ প্রাণোপাধিযুক্ত পরমাত্মা। । পল হ হোতাবন্মিন্‌ শরীরে বসতঃ সহোৎক্রামতন্তন্তিষৈ দৃষ্টিঃ |” _কৌষীতক্যুপন্ষৎ ৩৩ এই প্রজ্ঞা ও প্রাণ সম্মিলিত হুইপ এই শরীরে বাস করেন এবং মিলিত হইয়াই শরীর হইতে নির্গত হন; এই প্রাপোপাধিবুক্ত পরমাত্মীকে ( হিরণ্যগর্ভকে ) এইক্ধপেই অবগত হইতে হয়। ৮ প্রাণ ও আত্ম উদ্ভিদেরও ঠিক্‌ সেইরূপ প্রজ্ঞা না থাকিতে পারে, কিন্তু মস্তিক্ষের পরিবর্তে বৃক্ষাদির মধ্যে প্রাণ” ও তহুপযুক্ত স্ায়ূ আছে এবং তাহার জন্যই তাহাদের “প্রজ্ঞা” বিভিন্ন প্রকার হইতে পারে। যে সকল উত্ভিদ্‌ স্পর্শমাত্রেই আকুঞ্চিত হয়, যেমন লজ্জাবতী লতা-_তাহার্দের যে অন্ুভবশক্তি নাই তাহা কেমন করিয়া বলা যায় ?১ ঈশ্বর যে তাহার মহিমা প্রচারের জন্য কেবল মন্ুষ্যকেই জীবন দান করিয়াছেন, খৃষ্টান ধর্মযাজকদিগের এবন্প্রকার গৌঁড়ামীপুর্ণ বাক্যসমূহ অধুনা আর আমাদের মনকে আকৃষ্ট করে না। এমন কি, আর্ণেষ্ট হেকেলের স্তায় আধুনিক বৈজ্ঞানিকগণও সম্যকৃ- রূপে এই ধারণা করিতে আরম্ভ করিয়াছেন যে, প্রত্যেক লতাগুল্মের মধ্যেই আত্মা আছে এবং প্রত্যেক ক্ষুদ্র জীবকোষের মধ্যেই প্রাণ আছে। প্রত্যেক কোষই সজীব ; এমন কি প্রত্যেকটি পরমাণুর ভিতরও আত্মা আছে । আবার যেখানে আত্মা আছে সেখানে অহং-জ্ঞানের মূলন্বরূপ প্রজ্ঞা - রূপ চৈতন্তও আছে। তবে কোনও ক্ষেত্রে এই প্রজ্ঞার ১। জ্বর্গীয় স্যার জগদীশচন্দ্র বনু মহাশয় 70650%56 2% 42026" 2%2 2/7%-2525 নামক পুস্তকে বনু গবেষণা ও ৃষ্টাস্ত দ্বার] প্রমাণ করিয়াছেন যে, বৃক্ষ ও লতাসমূহের, এমন কি জড় বলিয়া যে সমস্ত পদর্থকে আমরা অভিহিত করি তাহাদেরও প্রাণ ইজ্ত। ও অনুভূতি আছে + প্রাণহীন বস্ক বলিয়া! জগতে এমন কোন পদার্থ ই নাই। ৮১ আত্মজ্ঞান প্রকাশ অল্পমাত্রায় থাকে ও কোনও স্থলে বা ইহা সুঙ্ষ্মভাবে থাকে এবং কোথাও বা ইহ! স্ুপ্তভাবে থাকিয়া বহিঃ- প্রকাশের উপযুক্ত সময়ের জন্তা অপেক্ষা করে। কিন্তু যাহাই হউক না৷ কেন, ইহা নিশ্চিত যে, যেখানেই জীবন আছে সেখানেই চৈতন্যের ব৷ প্রজ্ঞার কোন-না-কোন প্রকার অস্তিত্ব আছেই এবং যেখানেই প্রজ্ঞার প্রকাশ দেখা যায় সেইখানে প্রাণও আছে ইহা বুঝিতে হইবে । ূ আমরা প্রাণীক্গতে দেখিয়া থাকি যে, প্রাণ যখন শরীর হইতে বহির্গত হইয়! যায় তখন প্রজ্ঞাও সঙ্গে সঙ্গে চলিয়া যায়। এইরূপ যখন কেহ নিজীব অবস্থায় অর্থাৎ মুচ্ছাবস্থায় অথব। অচৈতন্যাবস্থায় থাকে তখন তাহার দেহ ব। ইক্দ্রিয়াদির মধ্যে জীবনীশক্তির কোনওপ্রকার বহিঃপ্রকাশের চিহ্ন থাকে না এবং এই সময়ে তাহার প্রজ্ঞাও অন্তহিত না হইয়া বাস্তবিক স্ুপ্তভাবেই থাকে। তাহার পর দেবরাজ ইন্দ্র প্রতর্দনকে আবার বলিলেন £ “যখন কেহ গাঢ় নিদ্রায় অভিভূত থাকে এবং কোনও প্রকার স্বপ্রাদি দর্শন না করে তখন তাহার মন নিক্ষিয় অবস্থায় থাকে এবং সেই সময় এ ব্যক্তি অজ্ঞানর্ূপ আবরণের দ্বারা আচ্ছন্ন থাকে *১ কখন কখনও আপনারা দেখিয়াছেন ১। “এতঘিজ্ঞানম্‌ যত্রৈতৎ পুরুষ; নুণুঃ ম্বপ্রং ন কঞ্চন পশ্তত্যথান্রিন্‌ প্রাণ এটবৈকধা ভবতি।”--কৌধীতক্যুপনিষৎ ৩৩ ৮২ প্রাণ ও আত্ম যে, ন্বপ্নশূন্য গভীর নিপ্র! অর্থাৎ সুযুন্তি হইতে উত্থিত হইয়! মনে হয়, যেন আমরা এক অজ্ঞানের রাজ্য হইতে ফিরিয়া আনিলাম। কিন্তু এইরূপ নিদ্রাবস্থায় আপনাদের ইন্ডরিয়াদির ক্রিয়াসমূহেরও দর্শন, শ্রবণ ও আত্রাণ ইত্যাদি ইন্দিয়ের শক্তির কি অবস্থা হয় তাহা কি আপনারা জানেন? তাহারা তখন প্রাণের মধ্যে সুপ্তভাবে থাকে, অর্থাৎ তাহারা চেতন স্তর হইতে ফিরিয়া যাইয়া জীবনী- শক্তির (প্রাণের) মধ্যে তখন আশ্রয় লয়।১ যখন জীবনীশক্তি নিক্ষিম থাকে তখন অন্যান্য শক্তিগুলিও নিক্ক্িয় হইয়া পড়ে। গভীর নিদ্রাবস্থায় বা সুধুপ্তিতে আমরা কথাও বলি না, দর্শনও করি না বা কোনও কিছুর আত্রাণও পাই না। যদি আমাদের শ্রবণেক্দিয়েরে অতি নিকটে কামানের শব হয় তাহাও আমরা তখন শুনিতে পাই না। আমাদের মন তখন বাস্তবিক কোন বাহা বিষয়ের চিন্তা বা কল্পনা করে না। সমস্ত দৈহিক ও মানসিক অর্থাৎ সে অবস্থায় পুরুষ গাড় নিদ্রায় সুপ্ত হইয়া! অন্ত বিষয়ে জ্ঞানশৃন্ হন এবং কোন স্বপ্ন দর্শন করেন না। তখন সেই পুরুষের যাবতীয় শক্তি এই প্রাণেই একত্ব প্রাপ্ত হয় এবং ইহাই প্রাণবিজ্ঞান। ১। শ্তদৈনং বাকু সর্বৈর্নামভিঃ সহাপ্যেতি, চক্ষুঃ সর্বৈঃ রূপৈঃ সহাপ্যেতি, শ্রোত্রং সর্বেঃ শকবৈঃ সহাপ্যেতি, মনঃ সর্বৈরধ্যাতৈঃ সহাপ্যেতি।” -_কৌধীতক্যুপনিষৎ ৩১৩ ৮৩ আত্মুজ্ঞান শক্তিসমূহ তখন সুপ্তাবস্থায় থাকে এবং আমরা জাগরিত হইলেই উহারা যেন সেই সঙ্গে আবার বাহির হইয়৷ আসে। নিদ্রিতাবস্থা হইতে জাগরণের প্রথম লক্ষণ দৈহিক ক্রিয়ার দ্বারা পরিলক্ষিত হয়। স্বপ্নশুগ্ত নিদ্রাবস্থা বা সুষুপ্তি অবস্থায় জীবনীশক্তি দেহের কেন্দ্রস্থান হইতে সম্পূর্ণপে বিচ্যুত হয় না; কারণ সেই সময়ে হৃংপিগ্ের স্পন্দন, রক্ত-সঞ্চালন, পরিপাককরণ,' পাকস্থলীর ক্রিয়া ও শ্বাস-প্রশ্বাসা্দির ব্যাপারে বুঝিতে পারা যায় যে, মনের অবচেতন স্তরে প্রাণশক্তি আমাদের অচেতন অবস্থাতেও এই সমস্ত কাধ্য করিয়া থাকে। যে শক্তির দ্বারা হ্ৃদ্যস্ত্র ও ফুস্ফুসের ক্রিয়া চলিতে থাকে সেই প্রাণ- শক্তি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হইলে শরীরের আর কোন ক্রিয়াই থাকে না। এইরূপে সমস্ত ইন্দ্রিয় হইতে প্রাণ বিচ্ছিন্ন হইলে কেহই আর জাগ্রত অবস্থায় ফিরিয়া আসে না। ইহাকেই মৃত্যু বলে। কিন্তু গভীর নিদ্রাবস্থায় অর্থাৎ সুষুণ্তিতে আমরা প্রাণের সহিত এক হইয়৷ যাই। তখন এই প্রাণ? আমাদের সচেতন দৈহিক ক্রিয়াসমূহকে আকর্ষণ করিয়! লয়, কিন্তু জাগ্রত অবস্থায় পুনরায় এগুলি নিজ নিজ ইন্দ্রিয়ে ফিরিয়া আসে। তখনই ইন্দ্রিযগুলি আবার সচেতন হয় ও আপনার কাধ্য করিতে আরম্ভ করে। এই ব্যাপার বা তথ্যটি ভালভাবে বুঝাইবার জন্য একটি ৮৪ প্রাণ ও আত্ম! দৃষ্টান্তের অবতারণ। করিয়। ইন্দ্র পুনরায় বলিলেন ; “যখন প্রাণোপাধিক পুরুষ সুষুপ্ত . অবস্থা হইতে ফিরিয়া জাগ্রত অবস্থায় উপনীত হন তখন প্রজ্ঞলিত অগ্নি হইতে যেমন কষত্র ক্ষুদ্র স্ফুলিঙ্গসমূহ চতুর্দিকে নির্গত হয় সেইরূপ এই প্রাণোপাধিক আত্মা হইতে বাক্‌ প্রভৃতি ইন্দ্রিয়শক্তিসমূহ ভিন্ন ভিন্ন স্ষুলিঙ্গের মত নির্গত হইয়! নিজ নিজ স্থানে উপস্থিত হয় এবং পরে বাহ্াবস্তর সংস্পর্শে আসে ।”১ যখন এইরূপ একটি প্রাণের প্রেরণা বা স্পন্দন চক্ষুকে আশ্রয় করে তখন উহ! দৃশ্ঠ বস্তটিকে, তাহার আকারকে ও বর্ণকে উদ্ভাসিত করে। এইরূপে অপর একটি প্রাণস্পন্দন শ্রবণেক্দ্রি়কে আশ্রয় করিলে শব্দের শ্রবণ হয়। ঠিক একই প্রকারে অগ্তান্ ইন্দ্রিয়শক্তিসকল প্রাণরূপ প্রজ্ছলিত অগ্নি হইতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণারপে নির্গত হইয়া আপনাপন ইন্দ্িয়নাভিমুখে যাইতে থাকে । মনও এইরূপ একটি প্রাণেরই স্পন্দন মাত্র এবং উহার দ্বারাই মনের চিন্তা প্রভৃতি নানাবিধ মানসিক কাধ্য সম্পাদিত হইয়া থাকে। কিন্তু “যখন কেহ রোগ, শোক, জর! প্রভৃতির বশীভূত হইয়! ছর্ব্বলতা- বশতঃ হস্তপদার্দি অত্যন্ত অবশ হইয়া অজ্ঞানাবস্থায় ১। “দ যদ! প্রতিবুধ্যতে। বথাগ্নেক্খলতো। বিস্ফুলিঙগ। বিপ্রতিষ্ঠেরন্‌ এবমেব্তম্মাদাত্বনঃ প্রাণ। বথায়তনং বিপ্রতিষ্ঠস্তে প্রাণেভ্যো দেব দেবেভো। লোকাঃ।*-_কৌধীতক্যুপনিষৎ ৩/৩ ৮৫ আত্মজ্ঞান মৃত্যুমুখে পতিত হয় তখন তাহার সমস্ত ইন্দ্িয়শক্তি তাহাদের কেন্দ্রে ( প্রাণে ) প্রত্যাগত হয়; তখন সকলে বলে যে, লোকটির মন দেহ হইতে নির্গত হইয়াছে । এ সময়ে সে আর দেখিতে, শুনিতে, কথ! বলিতে, আতীয়- স্বজনকে চিনিতে বা চিন্তা করিতে পারে না। সেই ব্যক্তি সেই সময়ে প্রাণের সহিত এক হইয়। যায় ।৮১ দেহ ত্যাগ করিবার সময় “প্রাণ, ইন্ড্িয়শক্তিগুলিকে সঙ্গে লইয়া যায়। মরণাপন্ন ব্যক্তির মহাপ্রস্থানের সময় দেহী বা জীবাত্ম। উহার দর্শন, স্পর্শন, শ্রাণ, আস্বাদন, ধারণ, বাক ও প্রজনন্‌ ইত্যাদি শক্তিসমূহকে ও “অহমন্মি, “আমি ও “আমার, ইত্যাকার জ্ঞানগুলিকেও সঙ্গে লইয়া! চলিয়া যায়। যখন প্রাণ” দেহ ছাড়িয়া চলিয়া যায় তখন দেহযস্ত্রের চেতন, অবচেতন এক্ড্িয়িক ক্রিয়াগুলি এবং যাবতীয় ইন্দ্রিয়শক্তিও প্রাণের সহিত একীভূত হইয়া যায়। এই সমস্ত শক্তির সহিত ইন্দরিয়গ্রাহ্য বিষয়গুলি যেমন রূপ, শব্দ ও গন্ধ ইত্যাদিও প্রত্যাহত হয়। যখন দর্শনশক্তিটি চলিয়া যায় তখন যন্ত্রন্ঘরূপ চক্ষু দ্বারা! যাহা! দেখা যায় তাহ! অর্থাৎ “রূপ বা 'আবকার?-ও মৃতব্যক্তির নিকট প্রতিভাত হয় না । ১। ঘত্রৈতৎ পুরুষঃ আর্তো মরিষ্যান্‌ আবল্যং গ্চেত্য মোহং স্ৈতি তদাছঃ উদক্রমীচ্চিত্ম। ন শুণোতি ন পশ্তাতি ন বাঁচা ব্তিন যথান্সিন্‌ প্রাণ এবৈকধা৷ ভবতি।৮-_কৌধীক্যুপনিষৎ ৩৩ ৮৬ প্রাণ ও আত্মা ইন্জিয়গ্রীহা বিষয়গুলি এবং ইন্দ্িয়শক্তিসমৃহ পরস্পর অবিচ্ছেগ্ত ৷ খন কোন ইন্জরিয়শক্তি প্রত্যাহ্হত হয় তখন ইক্জরিয়গ্রাহ্য বিষয়টিও উহার সহিত প্রত্যান্ৃত হয়। যদি শ্রবণেন্দ্িয় না থাকে তাহ! হইলে সর্বপ্রকার শব বন্ধ হইয়! যায়; অর্থাৎ শ্রবণেন্দ্রিয় প্রত্যাহত হইলে শব্সমৃহও প্রত্যাহ্থত হয়। এক্ষণে আমর! যে সমস্ত বাক্য উচ্চারণ করিয়া থাকি তাহা রুদ্ধ হইলে বাকৃশক্তি তখন কিভাবে থাকে? উহা এ সময়ে স্ুপ্তভাবে থাকে এবং এ বাকৃশক্তির দ্বারা যাহা প্রকাশিত হয় সেই 'নাম'-গুলিরও অর্থাৎ বস্তবাচক নামগুলিরও অস্তিত্ব চলিয়া যায়। এ একই প্রকার কারণে ভ্রাণশক্তিটি প্রত্যান্ত হইলে উহার সহিত গন্ধাদি আঘ্রাণরূপ ক্রিয়াও চলিয়া! যায়। আবার এইরূপ মন ও বুদ্ধি যখন নিক্কিয় হইয়া যায় তখন চিন্তাশক্তি, স্মৃতি, ইচ্ছা প্রত্যক্ষ, অনুমানযোগ্য বিষয়সমূহ ও মানসিক ভাবরাশি সমস্তই অন্তহিত হয়। মৃত্যুকালে দৈহিক ও মানসিক শক্তিসমূহ এইরূপ নির্রিশেষভাবৈ আত্ম বা প্রাণে একীভূত হইয়। থাকে । পুর্বেই আমরা জানিয়াছি যে, পপ্রাণ' ও 'প্রজ্ঞা' এই ছুইটি অবিচ্ছেষ্ঠ ; একটির অভাব হইলে সঙ্গে সঙ্গে অপরটিরও অভাব হইবে। সুতরাং (প্রাণ চলিয়। গেলে তৎসঙ্গে প্রজ্ঞাও চলিয়া যাইবে । যখন কাহারও এইরূপ অবস্থা ঘটে তখন বুঝিতে হইবে তাহার মৃত্যু হইয়াছে । ৮৭ আতুজ্ঞান মৃত্যুর পরে ইন্দ্িয়শক্তিসমূহ প্রাণের সহিত একীভূত হইয়া জীবাত্মার সহিত থাকে এবং এ জীবাত্বা আবার অন্ত এক শরীর ধারণ করিয়া উহাদিগকে প্রকাশ করে। গভীর নিদ্রা বা স্থুযুপ্তির পরে জাগরণের সময় যেমন মানমিক ও দৈহিক শক্তিসমূহ প্রজ্মলিত অগ্নি হইতে স্ফুলিঙ্গের ম্যায় বিক্ষিপ্ত হইতে থাকে সেইরূপ চিরনিদ্রা বা মৃত্যুর পরে পুনর্জন্ম গ্রহণের সময় নুপ্তশক্তিসমূহ প্রাণরূপ আধার হইতে বিক্ষিপ্ত হইয়া নৃতন নৃতন ইন্দ্রিয়মূহ স্জন করে এবং উহার্দিগকে আশ্রয় করিয়া নিজ নিজ কাধ্য করিতে থাকে ।১ ১ “ন শৃণোতি ন পশ্ততি ন বাচা ব্দতি ন যথান্মিন্‌ প্রাণ এবৈকধা ভবতি, তৈনং বাব সববৈর্নামভিঃ সহাপ্যেতি, চক্ষুঃ সর্বে রূপৈঃ সহাপ্যেতি, শ্রোন্রং সর্বেঃ শব্ধ: সহাপ্যেতি, মনঃ সর্বে ধ্যানৈঃ সহাপ্যেতি। যদ! প্রতিবুধ্যতে যথাগ্নের্লতো বিস্ফুলিগ1 বিপ্রতিষ্ঠে- রক্লেবমেবৈতশ্মাাত্বনঃ প্রাণ। বথায়তনং বিপ্রতিষ্ঠন্তে প্রাণেভ্যো দেব দেবভো। লোকাঃ /”-কৌবীতক্যুপনিষ ৩৩ *স যদীহন্মাচ্ছরীরাদুৎক্রামতি সছৈ বৈতৈঃ সর্বেরুৎক্রামতি বাগন্মাৎ সর্বাণি নামান্তভিবিশ্ছজতে ৷ বাচা সর্বাণি নামান্তাপ্রোতি। ***সৈহা প্রাণে সর্বাপ্তিঃ।৮- কৌধীতক্যুপনিষৎ ৩৪ “যে। বে প্রাণ সা প্রজ্ঞা, যা ব। প্রজ্ঞা সঃ প্রাণঃ। সহ হেতাবম্রিন্‌ শরীরে বসতঃ 'সহোৎক্রামতঃ ।”-_কৌধীতক্যুপনিষৎ ৩1৪ অর্থাৎ যাহ! প্রাণ তাহাই গ্ররন্ঞা, যাহ! প্রজ্ঞা তাহাই প্রাণ। ৮৮ প্রাণ ও আত্ম! কিন্তু এই সমস্ত ইন্দ্রিয়কে স্যট্টি করে সেই শক্তিটি কি? উহাই প্প্রাণ বা জীবনীশক্তি এবং এই শক্তির মধ্যেই পূর্বজন্মার্জিত বাসনা, প্রবৃত্তি ও সংস্কারসমূহ ম্ুগ্তভাবে অবস্থান করে। যখন ইন্দ্রিয়সমূহ নিক্ষিয় থাকে, অর্থাৎ প্রত্যেক ইব্দ্বিয়ই যখন তাহার নিজ নিজ কার্ধ্য করিতে বিরত থাকে তখন এ সমস্ত ইন্দ্রিয়ের ক্রিয়া একেবারে লুপ্ত না হইয়া সুগ্ুভাবেই থাকে; সুতরাং এইরূপ অবস্থায় কোন ইন্দ্রিয় কিছুই অনুভব করে না এবং ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়সকলের আপেক্ষিক সত্বাও এ সময় অস্তহিত হয়। জ্ঞান এবং চৈতন্তের কেন্দ্র দেহী বা জীবাত্মা । এই দেহী “প্রাণ বা! জীবনীশক্তির ছার! আচ্ছাদিত। এই প্রাণেরই এক অংশ ইন্দ্িয়শক্তিবপে এবং অপর অংশ গন্ধাদি ইন্দরিয়গ্রাহা বিষয়রূপে প্রতিভাত হয়। যেমন ইন্ড্রিয়শক্তিসমূহের সহিত ইন্ড্রিয়গ্রাহ বিষয়- গুলির কোন সম্পর্ক ন। থাকিলে এ বিষয়গুলির অস্তিত্ব থাকিতে পারে না, সেইরূপ ইন্দ্রিয়গ্রান্ বিষয় যতক্ষণ আছে ততক্ষণ বিষয়ীও আছে । আমর! পুর্বে যে সমস্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছি এই প্রাণ এবং প্রজ্ঞা মিলিত হইয়া শরীরে বাস করেন এবং মিলিত হইয়া শরীর হইতে নির্গত হন। ৮৯ আত্মজ্ঞান সেইগুলির পুনরায় আলোচনা করা প্রয়োজন । আমরা জানিয়াছি যে, ইন্দ্রিয়শক্তিসমৃহ “প্রাণ, বা জীবনীশক্তির সম্পূর্ণ অধীন। “প্রাণ” ও প্পরজ্ঞা” এই ছইটি এক সঙ্গে বাস করে। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়গুলির অস্তিত্ব প্রত্যক্ষাপেক্ষ, কারণ এ বিষয়গুলির আস্তিত্ব উপলন্ধিকরণক্ষম শক্তিসমূহের উপরই নির্ভর করে; অর্থাৎ যাহা দ্বারা এ বিষয়গুলি প্রত্যক্ষ হইবে সেই শক্তির অভাব হইলে এ বিষয়গুলির অস্তিত্ব থাক ব! না-থাকা উভয়ই সমান । যদি আমাদের দর্শনশক্তি লোপ পায় তাহা হইলে কোন প্রকার বর্ণ ই আমাদের চক্ষে প্রতিভাত হইবে না। আমাদের শ্রবণশক্তি কাধ্যক্ষম না থাকিলে কোন প্রকার শব্দই আমরা শ্রবণ করিতে পারি না। এইরূপে প্রমাণ করিতে পারা যায় যে, প্রত্যক্ষের বিষয়গুলির সহিত সংবেদন বা জ্ঞানের অবিচ্ছেষ্ সম্বন্ধ আছে। প্রত্যক্ষরূপ ক্রিয়াটিও আবার ইন্দ্রিয়” শক্তির উপরে নির্ভর করে। প্রত্যক্ষের একটি বিষয়কে এক- খণ্ড বস্ত্রের সহিত তুলন। করা যাইতে পারে । যেরূপ বন্ত্রখণ্ড ও বস্ত্রখণুস্থিত স্থত্রগুলির মধ্যে কোনও প্রভেদ নাই সেরূপ প্রত্যক্ষের একটি বিষয়ের সহিত সংবেদন-ত্রিয়। ও অন্ুভব- শক্তিসমূহেরও কোন প্রভেদ নাই । অর্থাৎ যেমন বস্ত্রথও বলিলে বন্ত্রখণ্ডের স্ুত্রগলিকেই বুঝায়, কারণ এঁ স্ুত্রগুলি ব্যতীত বস্ত্রেরে আর অন্য কোন উপাদান নাই সেরূপ ৪৩ প্রাণ ও আত্ম প্রত্যক্ষের বিষয় বলিলে উহা প্রত্যক্ষীকরণ ও অন্ুভব- শক্তির সমষ্টিকেই বুঝায়। আবার' প্রতাক্ষীকরণ ও অনুভব-শক্তিরূপ শ্ুত্রগুলি প্রাণশক্তি হইতে আবর্তিত হইয়াই যেন নির্মিত হইয়াছে । বস্তুতঃ এই বিশ্বজগতের সব বা অস্তিত্ব প্রাণ ও প্রজ্ঞ৷ ভিন্ন থাকিতে পারে না। আত্মাই বিশ্বজগতের কেন্দ্র বা অধিষ্ঠান। আত্মা আমাদের প্রত্যেকেরও কেন্দ্র্রূপ। আত্মা প্রীণের সহিত অবিচ্ছেষ্ত- ভাবে জড়িত। আত্মা হইতেই এই জীবনের এবং যাবতীয় ইন্দ্রিয়শক্তির উৎপত্তি। বন্ততঃ এই দৃশ্যমান বাহাজগতের মূলই হইতেছেন একমাত্র আত্মা । পৃর্বেই কথিত হইয়াছে যে, প্রাণ বা প্রজ্ঞার সংখ্যা বন্থ নহে, উহা “একমেবাদ্িতীয়ম্ঠ। যে জীবনীশক্তি আপনার ভিতর আছে সেই জীবনীশক্তিই আমার এবং অপরের ভিতরেও আছে। জীবনীশক্তি যেরূপ বহু নহে কিন্তু এক, প্রজ্ঞাও সেইরূপ এক; সুতরাং আপনার মধ্যে যে প্রজ্ঞা বর্তমান সেই প্রজ্ঞাই আমার এবং অপরের মধ্যেও বর্তমান। এই নিখিল বিশ্বের সর্ব্বত্রই প্রাণ বা প্রজ্ঞা” একটি ভিন্ন ছুইটি নহে। অপরের প্রজ্ঞার সহিত আমাদের প্রজ্ঞার তুলন! করিয়া পরস্পরের বৈশিষ্ট্য কেবল বাহা লক্ষণ দ্বারাই অনুমিত হইতে পারে। সর্বপ্রকার জ্ঞানের মূলে 'প্রজ্ঞা' অবস্থিত। কোনও বাক্য উচ্চারিত হইলে এ বাক্যের তাৎপর্য ৯১১ আত্মজ্ঞান প্রজ্ঞা বা 'অহমস্মি-জ্ঞান না থাকিলে বুঝিতে পারা যায় না। এইরপ কর্ণদ্বারা কোনও প্রকার শব্দ শ্রবণ 'প্রঙ্ঞা' ভিন্ন সম্ভবপর নহে। যখন উহ। কোনও বিষয়ে বিশেষ ভাবে নিবিষ্ট থাকে তখন কোনও বস্তু আমাদের চক্ষুর অতি সন্নিকটে থাকিলেও আমরা দেখিতে পাঁই না ।; এইরূপ দেখা যায় যে, যখন কেহ পথের মধ্যে কোনও একটি বন্তবিশেষের উপর একাগ্রতা সহকারে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখে তখন তাহার সম্মুখ দিয়! যাহা-কিছু চলিয়া যাক্‌ না কেন তাহা তাহার দৃষ্টিগোচর হয় না, সেরূপ কোন ব্যক্তি যদি একটি শব্দ বিশেষের উপর মনঃসংযোগ করিয়া থাকে তাহ৷ হইলে অপরাপর শব্দ আর তাহার শ্রুতিগোচর হয় না; এমন কিসেই সময়ে যদ্দি কেহ তাহাকে তাহার নাম উচ্চারণ করিয়াও সন্তাষণ করে তাহা হইলেও সে তাহা শুনিতে পায় না। সেরূপ যদি কাহারও মন বিশেষ কোনও চিন্তায় বা ভাবে নিমগ্ন থাকে তাহ হইলে সেই ব্যক্তির দর্শন, শ্রবণ, আত্রাণ, আম্বাদন বা অন্ত কোনও প্রকার অনুভূতিই তখন হইবে না। অতএব সংক্ষেপে ইহাই বলিতে পার! যায় যে, প্রজ্ঞ। ভিন্ন চিন্তাধারার ক্রমিক নি হি প্রজ্ঞাপেত চ্ছ রূপং কিঞচন গ্রশ্াপরোতত্র মে সনোহভূদিত্যাহ নাহমেতন্দ্রপং প্রজ্ঞা সিষমিতি | --কৌধীতক্যুপনিহৎ ৩।৭ ৯২ প্রাণ ও আত্ম উৎপন্ন হয় না; অর্থাৎ একটি চিন্তা দূর হওয়ার পরই যে অপর একটি চিন্তার উদয় হয় এই প্রকার নিয়ম প্রজ্ঞ! ভিন্ন হইতে পারে না। আবার প্রজ্ঞ। না থাকিলে কোনও বিষয় জানিতে পারা যায় না। সেজন্যই উপনিষদে বল। হইয়াছে £ ৭প্রকৃত দ্রষ্টাকেই আমাদের জানিতে হইবে! বাক্য বুঝিতে চেষ্টা না করিয়া উহা! যাহার দ্বারা কথিত হইয়াছে সেই বক্তা বা পুরুষকেই জানিতে চেষ্টা করিবে ।”, অর্থাৎ “সেই বক্তা কোথায় তাহা অনুসন্ধান কর; দ্রষ্টা কোথায় তাহা অনুসন্ধান কর; বাক্যের অর্থ কি তাহ! জানিতে চেষ্টা না করিয়া প্রকৃত বক্তাকে অনুসন্ধান করিয়া বাহির কর। দৃষ্টির বিষয় কি, তাহা ন1 ভাবিয়। প্রকৃত দ্রষ্টাকে অনুসন্ধান করিয়া বাহির কর। শব্ধ কি, তাহ! জানিতে চেষ্টা না করিয়া প্রকৃত শ্রোতা কে তাহাই জানিতে চেষ্টা কর ।* পাশ্চাত্য বৈজ্ঞানিকগণ «শব কি এবং তাহার উৎপত্তি কি প্রকারে হয় ইত্যার্দি নিদ্ধাণ করিতে চেষ্টা করিতেছেন; কিন্তু শ্রোত। অর্থাৎ যিনি এ শব্দ শ্রবণ ১। *ন বাচং বিজিজ্ঞাসীত ; বক্তারং বিদ্াৎ 1৮.*****"ন রূপং বিজিজ্ঞা- মীত, রূপবিদ্কং বিদ্তাৎ।” “ন শবং বিজিজ্ঞাসীত, শ্রোতারং বিদ্তাৎ 1” স্৮কৌধীতক্যুপনিষৎ ৩৮ ৯৩ আত্জ্ঞান করিতেছেন তাহ জানিতে তাহারা মোটেই উৎসুক নহেন। পক্ষান্তরে বেদাস্তদর্শনাভিজ্ঞ মনীষীগণ সমস্ত বিষয়ের মূল উৎস কোথায় তাহারই অনুসন্ধান করেন। শব্দ বায়ুর কম্পন হইতে জাত কি-না ? তাহা লইয়। তাহার! ব্যস্ত হন না। একটি শব্দ উৎপন্ন হইতে যে-কোনও প্রকার স্পন্দন বা কম্পনেরই প্রয়োজন হউক না কেন, তাহা! আমাদের শ্রবণশক্তির সহিত নিশ্চয়ই সম্বন্ধ থাকিবে । এক্ষণে যদি আমাদের শ্রবণশক্তিটি প্রত্যান্ধত হয় তাহ। হইলে কে এ শব্দটি শ্রধণ করিবে? সুতরাং 'শব্+ এই ব্যাপারটি কি -তাহ! জানিবার জন্য সময় নষ্ট করিবার আবশ্যক কি? প্রথমতঃ ইন্দ্রিয়শক্তিগুলির ধর্ম কি তাহ। বিদিত হওয়া আবশ্ক ; তাহার পরে উহাদের মুল কোথায় তাহ। দেখ! প্রয়োজন ॥ সর্বশেষে ইন্দরিয়গ্রাহা বিষয়সমূহের জ্ঞাতা ব৷ উপলব্ধির কর্ত। কে তাহাই আমাদের জান। আবশ্তক। কোন খাদ্যের কি প্রকার স্বাদ তাহা৷ জানিতে চেষ্টা না করিয়া কে আন্বাদন করিতেছেন তাহাকেই জানিতে চেষ্টা কর। সুখ ও দুখ এই ছুইটি কি তাহা না ভাবিয়া যিনি উহাদের অগ্ুভব করিতেছেন তাহাকেই বিদিত হও।১ এইরূপে চিন্তা-ব্যাপারটি কি তাহা জানিতে চেষ্টা না ১। পনাম্নরসং বিজিজ্ঞাসীত। অন্নরসন্ত বিজ্ঞাতারং বিস্তাৎ।» “ন নুখহঃখে বিজিজ্ঞামীত । ন্থহ্ঃখয়ো। বিজ্ঞীতাঁরং বিস্তাৎ।” ৯৪ প্রাণ ও আত! করিয়া যিনি চিন্তা করিতেছেন তাহাকে বিদিত হও। এই সকল প্রত্যক্ষের বিষয়গুলির অর্থাৎ চিন্তা, সুখ, দুঃখ ইত্যার্দির সহিত প্রজ্ঞার সম্পর্ক আছে এবং ইন্দ্রিয়শক্তি- সমূহের সহিতও ইন্দিয়গ্রাহথ বিষয়গুলির সম্বন্ধ আছে। যদি বিষয়গুলির সহিত বিষয়ী আত্মার এবং ইক্দরিয়গ্রাহ্য শব্দ ইত্যাদি বিষয়ের সম্বন্ধ না থাকিত তাহ। হলে ইন্ত্িয়ের কাধ্য থাকিত না এবং যদি ইক্ছ্রিয়ের কাধ্য না থাকিত তাহা হইলে বিষয়গুলিও থাকিত ন।। কেবল বিষয় অথবা কেবল বিষয়ীর দ্বার। কিছুই সম্পন্ন হয় না।২ দেবরাজ ইন্দ্র প্রজ্জাকে রথচক্রের মধ্যস্থল বলিয়া বর্ণন! করিয়াছেন। এই দেহটি যেন একটি রথ এবং চক্রের পরিধিটি যেন ইন্দ্রিয়গ্রাহয বিষয়সমূহ দ্বারা গঠিত। চক্রের নাভি হইতে নেমি পধ্যন্ত যে দগুগুলি থাকে সেই “অর গুলি যেন বাহ্যবিষয় ; প্রকাশক ইন্জ্রিয়শক্ষিসমূহ এবং চক্রের নাভিটি যেন প্রাণ বা জীবনীশক্তি।২ উপরোক্ত উপমার দ্বারা ইহাই বুঝিতে পারা যাইতেছে যে, ২। “তা! বা এতা। দশৈব ভূতমাত্র। অধিপ্রজ্ঞং, দশ প্রজ্ঞমাত্রা অধি- »ভ্তং। যদ্ধি ভূতমাঁজ| ন ল্য ন প্রজ্ঞামাত্রাঃ সত্য ধা প্রজ্ঞামাত্র ন স্থ্য ন ভূতমাত্রাঃ ছ্যু। ন হন্ততরতো। রূপং কিঞ্চন সিদ্ধেখ। নে। এতগানা ।৮--কৌবধীতক্যুপনিৎ ৮।৩ ৩। প্তদ্‌ যথা রথস্ত|রেু নেমিরপিতো৷ নাভাবর! অপ্সিতা) এবমেবৈতা ৯৫ আত্মজ্ঞান যে, ইন্দরিয়গ্রাহা বিষয়গুলি ইন্ড্রিয়শক্তিরপ দগ্ুগুলির উপরে স্থাপিত এবং ' ইন্দ্রিয়শক্তিগুলি আবার প্রাণকে আশ্রয় করিয়া আছে! এই প্রাণ বা জীবনীশক্তিকে প্রজ্ঞা ও আত্মা হইতে পুথক কর! যায় না। ইহা জরা-মরণরহিত এবং আনন্দন্বরূপ আত্ম।* “সংকাধ্য অথবা অসংকার্যের ছারা আমাদের, প্রকৃত ত্বরূপের কোনও প্রকার বুদ্ধি বা হ্বাস হয় না। সংসারের পাপ এই আত্মাকে কলুবিত করিতে পারে না কিম্বা ইহার কোনও প্রকার পরিবর্তনও হয় না। আমাদের আত্ম ধন্মাধন্মরহিত ; তিনি পাপীও ভূতমাত্রাঃ প্রজ্ঞামাত্রাস্বপিতাঃ, প্রজ্ঞামাত্রাঃ প্রাণোহপিতাঃ, স এষ: প্রাণ এব প্রজ্ঞাত্মানন্দোহজরোমূতঃ ।”--কৌষীতন্যুপনিষৎ ৮৩ যেমন রথচক্রের অরগুলিতে নেমি বা পরিধিম্বরূপ গোলকোর কার্টথণ্ড স্থাপিত হয় এবং নাভি অর্থাৎ চক্রের মধ্যস্থিত ছিত্রযুক্ত গোলাকার কাষ্ঠের অরগুলি স্থাপিত হয় সেইরূপ ( নেমি স্থানীয় নামাদি বিষয়- গুলিরও অরস্থানীয় ইন্দিয়সমূহের গ্রতিষিত হইয়াছে এবং অরম্বরূপ ইন্দ্রিয়গুলিও নাভিম্বরূপ প্রাণে প্রতিষ্ঠিত। এই প্রাণই গ্রন্ঞাত্মা; ইনিই আননাম্বরূপ এবং জরা৷ ও মরণুরহিত ।* গীতায় এবং কঠোপনিষদেও এই উদদাহরণটি লওয়া৷ হইয়াছে । শ্রীক- দার্শনিক প্লেটোও এই উদাহরণটা দিয়াছেন। তিনি ভারতবর্ষ হইতেই এই দৃষটন্তই গ্রহণ করিয়াছেন। ৪| “ন সাধুন। কর্ণ ভূয়ান্নে! এবাসাধুনা কনীয়ান। এয হোবৈনং সাধু কর্ম কারগ্নতি তং বমেভ্যো লোকেভ্য উদ্জিনীয়তে। এষ উ ৯৬ প্রাণ ও আত্ম হন মা অথবা পুণ্যবান্ও হন না। সর্ধবসময়েই তিনি পুর্ণ ও পবিত্র । সং ও অসতকন্মের সহিত আত্মার কোনও সম্পর্ক নাই বটে, কিন্তু এই সমস্ত কম্মের সহিত জীবাত্মার যথেষ্ট সম্পর্ক আছে, কারণ যাহা-কিছু করা যায় তাহার ফল জীবাত্মাই ভোগ করিবেন ; অর্থাৎ “আমি, আমার জ্ঞান লইয়া আমর! যেরূপই কন্ম করি না কেন, এবৈনমসাধু কর্ম কারয়তি তং ষমেভ্যো লোকেভ্যে। নুণুৎসত | এ লোকপাঙ্গ এষ লোকাধিপতিঃ | এষ সর্বেশ্বরঃ সম আত্মেতি বিস্যাৎ সম আত্মেতি বিগ্ভাং।**-_-কৌষীতক্যুপনিষৎ ৩1৯ অর্থাৎ "এই আত্মা পুণ্যকর্ম দ্বারা অধিক হন না, অথব। পাপকর্শের দ্বারাও ন্যুন হন না। যেহেতু এই প্রাণ 'প্রজ্ঞা” উপাধিবিশি্ট আত্মাই ; স্র্গীভিলাধী জীবকে এই প্রত্যক্ষ মর্ভ্যলোক হইতে উর্দধলোকে লইয়। বাইতে ইচ্ছা। করেন ও তাহাকে পুণা কর্ম করান। এই আত্মাই জীবকে এই প্রত্যক্ষ মর্যলোক হইতে অধোলোকে লইয়। যাইতে ইচ্ছা! করেন এবং তাহাকে অসাধু কর্ম অর্থাৎ পাপকন্ম করান। এই আত্মাই লৌকপাল অর্থাৎ সাধু লোককে স্থথখ এবং অসাধু লোককে দুঃখ প্রদান করেন। এই লোকপাল আত্মাই লোকাধি- পতি। এই লোকাধিপতি আত্মাই সর্ববনিযন্তা। এই সর্বেশ্বরত্ব- গুণসম্পন্ন আত্মাই আমার ( ইন্দ্রের ) স্বরূপ, ইহাকেই অবগত হইতে হয়। উক্ত আত্মাকেই আমার স্বরূপ বলিয়া জানিবে।” তবে ইহা সত্য যে, আত্মা শ্বরূপতঃ কাহাকে পাপও প্রদান করেন না, অথব। পাপও দান করেন না। আত্মা নিক্রিয় ও দ্বাক্ষীত্বরূপ | ৯৭ আত্মজ্ঞান তাহার ফল আমাদের ভোগ করিতেই হইবে । তাহ ছাড়া আমাদের উত্তমরূপে ইহা বুঝা উচিত যে, প্রজ্ঞা ও জীবনীশক্তি ব্যতিরেকে কোন প্রকার সদমৎ কম্মই সম্পন্ন হইতে পারে না। জ্ঞান ও বুদ্ধির মূল কারণ ঘিনি-_তিনিই এই বিশ্বজগতের অধিপতি ও সকলের পালনকর্তা! । তিনিই এই পরিদৃশ্ঠমান্‌ বাহজগতের স্্টিকর্তা এবং তিনিই আমার ( ইন্দ্রের) প্রকৃত স্বরূপ । এই আত্মজ্ঞান সকল ব্যক্তিকেই অমরত্বের অধিকারী করে। একমাত্র আত্মজ্ঞানই মনুয্যজাতিকে পূর্ণতার পথে লইয়া যাইতে সমর্থ এবং এই পূর্ণত। লাভ হইলেই যে রাজ্যে চিরশবাস্তি এবং অনাবিল আনন্দ বিরাজিত সেই রাজ্যে মানব গমন করিতে পারে !” ৪) ও আপ্যায়স্ত মমাঙ্গানি বাক্‌প্রাণশক্ষুঃ শ্রোত্রমথো বলমিক্দ্িয়াণি চ সর্ববাণি। সর্বং ব্রহ্মোপনিষদং মাহং ব্রহ্ম নিরাকুর্্যাং মা মা ব্রহ্ম নিরাকরোদনিরাকরণমস্তরনিরাকরণং মে অন্ত। তদাত্মনি নিরতে য উপনিষৎস্থ ধন্মাস্তে ময়ি সন্ত, তে ময়ি সম্ত। ও শাস্তিঃ শাস্তিঃ শাস্তিঃ ॥ __ছান্দোগ্যোপনিষৎ আমার সমন্ড অঙ্গ এবং বাক, প্রাণ, চক্ষুঃ, শ্রোত্র, মন, বল ও ইন্জিয়সমুহ পরিতৃপ্ত হউক। আমি যেন উপনিষদের প্রতিপাস্থ ব্রক্মকে পরিত্যাগ ন। করি এবং ব্রহ্ধও যেন আমাকে পরিত্যাগ ন৷ করেন। ত্তাহার নিকট আমার এবং আমার নিকট তাহার প্রত্যাখান না হউক্‌। উপনিষদে আত্মার যে সমস্ত ধর্ম কথিত আছে তাহ। আত্মনিষ্ঠ আঁমাতে প্রকাশিত হউক ॥ ও শাস্তি; শাস্তিঃ শাস্তিঃ ! চতুর্থ অধ্যায় আত্মানুসন্ধান হিন্দুদিগের প্রাচীন পৌরাণিক উপাখ্যানগুলির সহিত গ্রীস দেশের পৌরাণিক গল্পসমূহের বহু পরিমাণে সাদৃশ্য আছে। এই ছুই বিভিন্ন জাতির পুরাণে আমরা দেখিতে পাই যে, দেবতার! ও অন্গুরেরা নরদেহ ধারণ করিয়া কিরুপে এই পৃথিবীতে মনুষ্যের মত বাস করিয়াছিলেন। দেবতার! এবং অস্থুরের৷ যে এক সঙ্গে বাস করিতেন এবং পরস্পর যুদ্ধ করিতেন তাহার উল্লেখ আমরা প্রাচীন উপনিষদসমূহেও দেখিতে পাই । কথিত আছে যে, এই নিখিল বিশ্বের গ্রথম- অষ্টা প্রজাপতি একদিন দেবগণকে ও অস্থরগণকে বঙ্গিয়া- ছিলেনঃ “তোমরা পরস্পর পরস্পরের উপর প্রভৃত্ব ও ক্ষমত৷ স্থাপন করিবার জন্য কি কারণে যুদ্ধ করিতেছ ? তোমরা আত্মাকে বিদিত হও, কারণ ধাহার আত্মজ্ঞান আছে তিনিই শাস্তি লাভ করেন। আত্মা পাপবর্জিত, বার্ধক্য ও মৃত্যু রহিত। আত্মার শোক নাই, হুঃখ নাই, ক্ষুধা নাই ও তৃষ্ণ। নাই। আত্মা সত্যকাম অর্থাৎ আত্মার কামনা কখনও বিফল, হয় না বা কখনও অপূর্ণ থাকে না। আত্মা, সত্যসন্কল্প ও ১৩৩ আত্মাচসন্ধান সত্যে প্রতিষ্ঠিত; আত্মায় মিথ্যা কিছুই নাই, সুতরাং আত্মার সকল প্রকার চিন্তাও সত্য। সকলেরই এই আত্মাকে অনুসন্ধান করা আবশ্বক। যিনি এই আত্মাকে উপলব্ধি করিতে পারিবেন, তিনি যাহা ইচ্ছা! করিবেন তাহাই প্রান্ত হইবেন ; তাহার অপ্রাপা বলিয়া আর কিছুই থাকিবে না। তাহার সমস্ত কামনাই পরিপূর্ণ হইবে ; তিনি সর্বশক্তিমান পুরুষ হইবেন, সর্বপ্রকার ক্ষমতাই তিনি প্রাপ্ত হইবেন এবং তিনি এই সসাগরা পৃথিবীর ও ব্বর্গাদির অধীম্বর হইবেন ।* দেবতারা এবং অসুরের। এই উভয় পক্ষই অতিশয় ক্ষমতা” প্রিয় ও নিতান্ত অসুখী ছিলেন ; সেজন্য তাহারা প্রজাপতির বাক্য শ্রবণ করিয়। ভাবিলেন যে, তাহা হইলে তো সকল জগতের এবং জীবের উপর কর্তৃত্ব করিবার প্রশস্ত পন্থ! পাওয়৷ গিয়াছে! অতি প্রাচীন ও প্রামাণিক ছান্দোগ্য উপনিষদে উপরি উক্ত উপাখ্যানটি এইস্থান হইতে আরস্ত হইয়াছে। ছান্দোগ্য উপনিষৎ সামবেদের অন্তর্গত %. শ্যআতু। অপহতপাপ্যা। বিজরো বিষৃতুর্বিশোকে। বিজিঘৎসোহপিপাস: সত্যকামঃ সত্যসন্কল্ঃ সোঁহছেষ্টব্যঃ স বিজিজ্ঞাসিতব্যঃ স সর্বাশ্চ লোকানাগ্লোতি সর্বাং্চ কামান্‌ যন্তমাত্সানমন্জবিষ্থ বিজানাতীতি হ প্রজাপতিকুবাচ ॥” --ছান্দোগ্যোপনিষৎ ৮1৭১ ১০১ আত্মজ্ঞান হিন্দুদিগের সর্ধপ্রাচীন ধর্মশান্্রকে “বেদ” আখ্যা দেওয়া হয়। এই প্বেদ” চারিভাগে বিভক্ত যথা, খক্‌, সাম, যজুঃ ও অথর্বব। বৈদিক যুগে সামবেদের মন্ত্রগুলি গান করা হইত। সেই লামগান হইতে সঙ্গীতের বিজ্ঞান ভারতে উদ্ভূত হইয়াছে। হিন্দুরা সর্বপ্রথম সঙ্গীতে সগ্ুন্বর ব্যবহার করিয়াছিলেন। পরে যন্ত্রসঙগীতেও সপ্তন্বর ও তিনটি সপ্তক, উদারা, মুদারা ও তারা ব্যবহার করিত। প্রাচীনকালে হজ্জাদি ক্রিয়াকর্নের সময় সামবেদীয় মন্ত্রলি সপ্তন্বরে গীত হইত ।২ সে যাহা হউক, ছান্দোগ্য উপনিষদে বণিত আছে যে, দেবতার এবং অস্ুরেরা প্রজাপতির নিকট হইতে সর্বময় কর্তা হইবার গুঢ়তত্টি জানিতে পারিয়৷ আত্মজ্ঞান লাভ করিতে উৎসুক হইলেন। কি প্রকারে এই আত্মার জ্ঞান লাভ হইতে পারে এই বিষয় লইয়া তাহারা আপনাদের ভিত্তর আলোচনা করিতে লাগিলেন এবং যাহ! প্রাপ্ত হইলে আর কোন কিছু পাইতেই বাকি থাকে ন৷--সমস্ত বাসনাই পরিপূর্ণ হয় এবং সমস্ত পৃথিবীরই অধীশ্বর হইতে পারা যায় তাহারই অনুসন্ধানে কৃতনিশ্চয় হইলেন। পপ শরপাপপপশপসপাপাজন আশপাশ ২। খক ও অন্যান্য প্রাতিশাখ্য ও শিক্ষাবলীতে এই সম্বন্ধে আলোচন। আছে। ১৪৭ আত্মাসন্ধান এইস্থানে আমাদের মনে রাখিতে হইবে যে, এই অস্ুরগণ ভূত প্রেত জাতীয় জীব নহেন; ইহারা মনুত্যেরই মতন একটি জাতি ছিলেন, কিন্তু ঘোরতর ইন্দিয়াসক্ত ছিলেন। জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য সম্বন্ধে তাহাদের কোন ধারণাই ছিল না। ইহারা জড়বাদী ছিলেন এবং মনে করিতেন যে, এই জড় দেহই সব্বন্য, এই দেহের নাশের সহিত সবই শেষ হইয়া যায় সমস্ত বিশ্বের উপর প্রতুত্ব করিবার অভিলাষ তাহারা! সর্বদা হৃদয়ে পোষণ করিতেন, কিন্তু ইহাদের এই বাসন! কোন কালেই পুর্ণ হয় নাই। যাহাদের বাসনা, অসংখ্য, তাহাদের _অভাবও _অসংখ্য। অসুরগণের অবস্থাও ঠিক সেইরূপই হইয়াছিল। আবার কোন একটি বাসনা পুর্ণ হইলে দেখা যায়, অপর বাসনাগুলি আরও তীব্র বেগে জাগ্রত হইয়া উঠে; সেইজন্য অস্থুররাও সর্বদাই নিজেদের অভাবগ্রস্ত ৰোধ করিত এবং সর্ববাপেক্ষা দেবতাদের অপেক্ষা ক্ষমতাশালী ও শক্তিমান হইবার চেষ্টা করিত। বাস্তবিক ইহসর্বস্ববাদী জড়ভাবাঁপন্ন এই সমস্ত লোকদেরই বেদে “অসুর” বলা হইত। আর ধাহারা ধন্মপরাঁয়ণ, আধ্যাত্মিক গুণসম্পন্ন, স্বার্থত্যাগী, পরহিতকারী ; ধাহার৷ ইন্দ্রিয়ন্ুখ, এশ্বধ্য ও পাধিবভোগকেই জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য না মনে করিয়। আধ্যাত্মিক শক্তি লাভ ও সচ্চিদানন্দন্বরপ ব্রহ্মকে ১০৩ 'আত্মজান সাক্ষাংকার করাই জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য বলিয়া মনে করিতেন, বেদে তাহাদিগকেই “দেবতা” বলিয়া বণিত কর! হইয়াছে ।১ এই সকল দেবতারা এবং অসুরগণ স্থির করিলেন যে, যদি তাহার তাহাদের মধ্যে যিনি প্রধান তাহাকে কোনও সত্যদর্শী খষির নিকট আত্মজ্ঞান লাভের উপায় জাঁনিবার জন্য পাঠাইতে পারেন তাহ! হইলেই তাহাদের নিকট হইতে উহা শিক্ষা করিবার স্ুবিধ। হইবে । এইরূপ মনে করিয়া দেবগণ ইন্দ্রের নিকট এবং অস্থুরগণ বিরোচিনের নিকট গমন করিলেন। উভয়পক্ষই তাহাদের ১। ভগবদ্গীতার ষোড়শ অধ্যায়ে দৈবী ও আম্ুরী প্রর্কৃতি- বিশিষ্ট লোকদিগের বিষয় বণিত আছে; যথা, “অভয়ং সন্্সংগুদ্ধিজ্ঞনযোগব্যবস্থিতিঃ | দানং দমশ্চ যজ্ঞশ্চ স্বাধ্যায়স্তপ আর্জবম্‌ ॥ অহিংসা সত্যমক্রোধন্তাগঃ শাস্তিরপৈশুনম্‌। দয়া ভূতেঘলোলুপ্ত ং মার্দবং হীরচাপলম্‌ ॥ তেজঃ ক্ষম। ধূতিঃ শৌচমদ্রেহে। নাতিমানিতা। ভবস্তি সম্পং দৈবীমভিজাতন্ত ভারত। দভে। দর্পে(হভিমানশ্চ ক্রোধঃ পারুষ্যমেব চ। অজ্ঞানং চাভিজাতন্ত পার্থ সম্পগমাস্রীম্‌ ॥ ১৬ ১৪ রঃ গু ১০৪ আত্মান্ছিসন্ধান অধিপতিকে আত্মুতত্ব অনুসন্ধানে গমন করিবার জন্য অন্থুরোধ করিলেন । বস্তুতঃ উভয়পক্ষেরই সর্ধপ্রকার সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য ছিল; মনুষ্ের যত প্রকার পাখিব ভোগ্য বিষয়ের অভিলাষ থাকিতে পারে, তাহার কোনটিরই তাহাদের অভাব ছিল না । যদিও তাহাদের প্রচুর ধন, সম্পত্তি ও রিলাস সামগ্রী ছিল, যদিও তাহারা অসীম মানসিক শক্তিসম্পন্ন (05501770 10091) ছিলেন এবং যাহা কামনা করিতেন তাহাই প্রাপ্ত হইতেন, তথাপি এই সকল এই্বরধ্যশালী হইয়াও তাহাদের বিষয়ভোগের তৃষ্ণ নিবৃত্ত হয় নাই। তাহারা সর্বদা অতৃপ্ত বাসনাজনিত অসত্যমপ্রতিষ্ঠং তে জগদাহুরনীশ্বরম্। অপরস্পরসন্তু তং কিমন্তৎ কাঁমহৈতুকম্‌ ॥ এতাং দৃষ্টিমবষ্টভ্য নষ্টাানোহযবুদ্ধয়ঃ | প্রবস্থাগ্রকর্মাণঃ ক্ষয়ায় জগতোহহিতাঃ ॥ কামমাশ্রিত্য হম্পুরং দস্তমানমদাদ্বিতাঃ | মোহাদ্‌ গৃহীতাহুসদ্গ্র।হান্‌ প্রবর্স্তেহশুচিত্রতাঃ ॥ চিন্তামপরিমেয়াঞ্ প্রগয়াস্তামুপাশ্রিতাঃ । কামোপভোগপরমা এতাবদিতি নিশ্চিতাঃ ॥ আশাপাশশতৈর্বন্ধাঃ কামক্রোধপরায়ণাঃ। ঈহস্তে কাঁমভো গার্থমন্তায়েনার্ঘসঞ্য়ান্‌ ॥” -গীতা ১৬।১-১২ ১০৫ আত্মজ্ঞান দুঃখই অনুভব করিতেছিলেন। তাহাদের যে সকল শক্তি ও সামর্থ্য ছিল তাহ! অপেক্ষা অধিকতর শক্তি ও ক্ষমতা পাইবার জন্য তাহারা লালায়িত হইয়াছিলেন। সুতরাং তাহারা! যখন প্রজাপতির নিকট শুনিলেন যে, এমন কোন বস্তু আছে যাহ! প্রাপ্ত হইলে নিখিল বিশ্বের অধিপতি হইতে পারা যায়, তখন তাহারা এ শ্রেষ্ঠ বস্তুটি অবিলম্বে লাভ করিবার জন্ত বিশেষ ব্যগ্র হইয়। উঠিলেন। তাহারপর দেবরাজ ইন্দ্র এবং অস্থুরপতি বিরোচন আত্মতত্বজ মহাপুরুষের অনুসন্ধানে পৃথক পৃথক্‌ ভাবে যাত্রা করিলেন । উভয়েই সেই সময়ে সর্বপ্রকার ভোগ-বিলাস বর্জন করিলেন ; তাহাদের সুন্দর পরিচ্ছদাদি,। যাবতীয় এই্বরধ্য ও বিলাসদ্রব্য পরিত্যাগ করিয়া এবং এমন কি পরস্পরের সহিত কোনও সংশ্রব না রাখিয়া জিঙ্ঞাস্থুর হ্যায় দীন ও সরলভাবে সকলের অপেক্ষা বিজ্ঞ ও আত্মতত্বজ্জ মহাপুরুষের অন্বেষণ করিতে লাগিলেন । কিন্ত তাহারা ঠিক এরূপ সর্বজ্ঞ মহাপুরু কোথাও অনুসন্ধান করিতে না পারিয়া অবশেষে প্রজাপতির সমীপে শান্ত্রবিধি অনুসারে সমিৎপাণি হুইয়৷ পুজোপহার নিবেদন- পূর্বক তাহার সম্মুখীন হইলেন। হিন্দুশান্ত্রমতে রিক্তহস্তে গুরু, দেবত৷ ও রাজার নিকট যাওয়া নিষিদ্ধ। এইজন্য তাহারা হব্য, ফল এবং যজ্ঞকাষ্ঠাদি প্রজাপতিকে ভক্তিপূর্ব্বক ১০৬ আত্মানুসন্ধান নিবেদন করিলেন। তৎপরে তাহার সম্মতি পহয়। তাহারা তাহার শিষ্বূপে পবিত্র ব্রন্চর্য্যব্রত অবলম্বন করিলেন এবং বিধিপুর্রবক গুরুর সেবা করিয়া বত্রিশ বংসর গুরুর নিকট বাপ করিলেন। একদিন প্রজাপতি তাহার শিষ্ুদ্ধয়কে তাহার নিকট আসিবার কারণ কি তাহা জিজ্ঞাস! করিলেন। তাহাতে তীহার। ছুইজনেই উত্তর করিলেন £ “ভগবন্* আপনি বিশ্বজগতের বিধাতা প্রজাপতি ; আপনার নিকট শুনিয়াছি যে, যদি কেহ আত্মজ্ঞান লাভ করিতে পারে তাহ৷ হইলে সেই ব্যক্তি পরম সুখী হয়, তাহার সমস্ত প্রকার শক্তিলাভ হয়, কিছুই আর তাহার অপ্রাপ্তব্য বলিয়া বাকি থাকে না। এই আত্মা আবার পাপ ও জরারহিত অজর এবং অমর; এই আত্মার ক্ষুধা ও তৃষ্ণা! কিছুই নাই; ইনিই সত্যকাম অর্থাৎ ইহার যাবতীয় কামন! সর্ব সময়েই পরিপূর্ণ হইয়া থাকে ; ইনিই সত্যসন্কল্প . অর্থাৎ ইহার চিন্তাও কখনও নিষ্ষল হয় না। আমর! এই প্রকার আত্মাকে জানিবার অভিলাষে আপনার শরণাগত হইয়াছি, আপনি উপদেশ দান করুন । ইন্দ্র ও বিরোচনের এইরূপ বাক্য শ্রবণ করিয়া তত্ব প্রজাপতি শিষ্যদ্ধয়ের বুদ্ধি শুদ্ধ কি-না তাহা পরীক্ষা করিবার জন্য একেবারেই তাহাদের ঈশ্সিত আত্মজ্ঞান দান করিলেন না, প্রকারাস্তরে তিনি তাহাদিগকে কয়টি ১৬৭ আত্মজ্ঞান উপদেশ দিলেন যাহ! দ্বার৷ তাহারা অন্তরস্থিত আত্মার অনুসন্ধান করিয়া সেই আত্মার সাক্ষাৎকার লাভ করিতে পারেন। যে আচার্য তাহার শিত্যদিগকে প্ররত্যঙক্ষান্ুভূতির পথে ক্রমে ক্রমে পরিচালিত করেন এবং যাহাতে শিষ্কের নিজ চেষ্টায় সেই একমাত্র সত্যবস্তরকে উপলব্ধি করিতে সক্ষম হন সেরূপ উপায় অবলম্বন করেন সেই আচীর্য্যই শ্রেষ্ঠ। এজন্য প্রজাপতি বলিলেন £ প্বৎসগণ” চক্ষৃতে ,হ্ীহাকে দেখ! যায় তিনিই সেই আত্মী। এই আত্মাই জন্ম, শোক, ছুঃখ ও পাপবর্জিত। ইহার মৃত্যু নাই বা মৃহ্যুর শঙ্কাও নাই। এই পুরুষকে প্রাপ্ত হইয়া লোক সমগ্র পৃথিবী ও ঈপ্দিত বিষয় সকল পাইতে পারে।”, প্রজাপতির এইপ্রকার কথ। শুনিয়া! তাহার৷ সংশয়ে পড়িলেন। প্চক্ষুতে ধাহাকে দেখা যায় তিনিই আত্ম” এই বাক্যের গৃঢ় অর্থ ইন্দ্র ও বিরোচন ঠিক বুঝিতে না পারিয়! ভাবিলেন যে, চক্ষুর তারাতে যে ছায়া দেখ! যায়, এ ছায়াকেই বোধ হয় গুরুদেব “আত্মা” বলিয়াছেন। বস্তুতঃ আমরা! যদি কাহারও চক্ষুর তাঁরকাতে দৃষ্টি নিবন্ধ রাখি তাহ! হলে আমাদেরই প্রতিবিস্বটি ক্ষুদ্র ছায়াকারে এ চক্ষুর ১। পতৌ হু গ্রজজাপতিরুবাচ য এযোহক্ষিণি পুরুষে] দৃশ্তত এব আত্মেতি হোবাচৈতদমূতমভয়মেতদ্‌ ব্রন্মেতি।” --ছান্দোগ্য উপনিষৎ ৮1৭1৪ ১৩৯৮৮ আত্মানুসন্ধান তারকাতে প্রতিফলিত দেখিয়া থাকি। প্রজাপতি অবশ্য এইপ্রকার ছায়াকে আত্মা বলিয়া মনে করিবার উপদেশ দান করেন নাই। তিমি কেবল শুদ্ধচিত্ব যোগিগণ ধাহাকে ্রষ্টারূপে অনুভব করিয়া থাকেন সেই দর্শনকর্তী ও ইন্জ্িয়গণের পরিচালক আত্মরূগী পুরুষকেই উল্লেখ করিয়া উপদেশ দিয়াছেন। সুতরাং প্রকৃত অর্থগ্রহণে অসমর্থ হইয়া ইন্দ্র ও বিরোচন প্রজাপতিকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলেন £ *ভগবন্, ধাহাকে দর্পণে বা সলিলের ভিতর দেখ! যায়_-তিনি কে? চক্ষুর মধ্যে ধাহাঁকে দেখা যায় তিনিও কি সেই একই পুরুষ ?*২ শিষ্েরা ষে প্রকৃত অর্থ গ্রহণ করিতে পারে নাই ইহা বুঝিতে পারিয়া প্রজাপতি উত্তর করিলেন £ “অবস্থা তোমরা যাহা! বলিতেছ সেই সমস্ত পদার্থের ভিতরেও আত্মাকে দেখা যায়, সুতরাং সেই আত্মাকে বিদিত হও এবং উপলব্ধি কর।” প্রজাপতি তাহার শিষ্যদ্য়ের বুদ্ধিশক্তি আরও ভাল করিয়া পরীক্ষা করিবার জন্য. আবার বলিলেন £ «একটি জলপূর্ণ পাত্রে তোমাদের আকৃতি নিরীক্ষণ করিও এবং তাহাতে আত্মাকে দর্শন করিতে 'পাও কি-না তাহা আমাকে বলিও।” ২। “অথ যোহয়ং ভগবোহগ্প, পরিখ্যায়তে বশ্চায়মাদর্শে কতম এষ ইত্যেষ উ এবৈষু সর্বেঘেতেষু পরিথ্যায়ত ইতি হোবাচ।” _-ছান্দোগ্য উপনিষৎ ৮।৭।৪ ১০৯ আত্মন্ঞান অনুগত শিত্যদঘয় গুরুর আদেশান্থ্যায়ী জলের মধ্যে তাহাদের প্রতিবিদ্ব দর্শন করিয়। ফিরিয়৷ আপিয়া বলিলেন : *ভগবন্‌, আপনি যাহা দেখিবার জন্য আমাদের পাঠাইয়াছিলেন তাহ! দেখিয়াছি ।” ইহা! শ্রবণ করিয়া প্রজাপতি বলিলেন ঃ *কিস্ত তোমরা প্রকৃতপক্ষে আত্মা দেখিয়াছ, না আর-কিছু দেখিয়াছ ?” শিষ্যেরা বলিলেন £ *ভগবন্,। আমরা জলের মধ্যে মস্তক হইতে পদ পর্য্যন্ত আমাদের আকৃতি স্পষ্টভাবে দেখিয়াছি, উহার মধ্যে আমাদের শরীরের কোনও অংশের ব্যতিক্রম হয় নাই--এমন কি আমাদের কেশ ও নখর পর্য্যস্ত দেখিয়াছি।” প্রজাপতি তখন তাহাদিগের সংশয় অপনোদনের অন্য আবার ম্বন্সেহে বলিলেন £ *তোমরা তোমাদের কেশ ও নখর সংস্কার করিয়া উত্তম বেশতৃষাদিতে সজ্জিত হইয়। পুনরায় জলপুর্ণ পাত্রের মধ্যে দৃষ্টিপাত কর এবং যাহা দেখিতে পাও তাহা আমাকে বল।” তখন এ শিত্্ধয় প্রজাপতির আদেশ পুঙ্থানুপুঙ্খরূপে পালন করিবার জন্য কেশ ও নখরাদির সংস্কার সাধন করিয়া বিচিত্র বেশভূষায় সজ্জিত হইলেন ও জলের মধ্যে তাহাদের প্রতিবিহ্ব দেখিলেন। তাহার পর প্রজাপতি আবার জিজ্ঞাসা করিলেন £ “বৎসগণ, তোমাদের স্বরূপ বা আত্মাকে কি দেখিতেছ ?” তাহারা উত্তর করিলেন; *ভগবন্ঃ আমরা এখন যেমন পরিষ্কৃত বেশভূষায় সঙ্জিত আছি ঠিক সেইরূপ ১১০ আত্মানুন্ধান অবস্থাতেই আমাদের দেখিতেছি 1” তাহা শুনিয়! প্রজাপতি বলিলেন ; *উহ্াই তোমাদের আত্মার স্বরূপ, উহাই সেই হুঃখ ও ভয়বর্রধিত অবিনশ্বর ব্রহ্ম ; উহাকে ভাল করিয়া বিদিত হও এবং উপলব্ধি কর।৮ ইহা! শুনিয়া শিত্যদ্ধয় শান্তচিত্তে প্রস্থান করিলেন। আচাধ্যরূপী প্রজাপতি তাহাদিগকে বহুদূরে চলিয়া যাইতে দেখিয়া উচ্চৈঃম্বরে পুনরায় আহ্বান করিয়া বলিলেন ঃ “তোমরা! তোমাদের আত্মন্বরূপের যথার্থ জ্ঞান লাভ না করিয়াই চলিয়। যাইতেছ, কিন্তু তোমাদের মধ্যে যে কেহ এই ভ্রান্ত আত্মবিষ্ঠ। অনুসরণ করিবে সেইই বিনাশপ্রাপ্ত হইবে ।” ইন্দ্র এবং বিরোচন উভয়েই প্রজাপতির এইপ্রকার বাক্য শ্রবণ করিয়াও কিন্তু আর প্রত্যাগত হইলেন না। তাহার ভাবিলেন যে, তাহারা ঠাহাদের আত্মম্বরূুপকে সত্যসত্যই উপলব্ধি করিয়াছেন, স্থতরাং কোন সংশয় ন। রাঁখিয়৷ সন্তষ্টচিত্তে তাহারা নিজ নিজ আবাসে প্রস্থান করিলেন, প্রজাপতির কথায় আর প্রত্যাবর্তন করিলেন ন1। £পর বিরোচন স্থুল দেহই আত্মার স্বরূপ এই নিশ্চয় করিয়া! অস্ুরগণের সমীপে প্রত্যাবর্তন করিলেন এবং তাহাদিগের নিকট “দেহাত্মবাদ'১ প্রচার করিতে লাগিলেন । ১ স্কুন ও জড় দেহই আত্মা--এই তত্ব উপদেশ দিতে লাগিলেন ১১১ আত্মজ্ঞান তিনি অন্ুরদিগকে আধুনিক নাস্তিক এবং অজ্ঞেয়বাদীদের২ মতানুযায়ী জড়বাদের উপদেশগুলি শিক্ষা! দিতে লাগিলেন। তিনি বলিলেন £ “স্ুল দেহই আমাদের আত্মা; কেবল এই দেহেরই পরিচ্ধ্যা করিতে হইবে এবং এই দেহকেই পুজা করিতে হইবে। এইরূপে স্থল দেহের পুজা ও সেবার দ্বারা আত্মা মহিমান্বিত হইবেন । যিনি দেহকে আত! জানিয়া ইহার পরিচর্য্যা করিবেন তিনিই সমগ্র পৃথিবীর এবং ন্বর্গাদি লোকের অধীশ্বর হইতে পারিবেন ; সমস্ত বন্তুই তাহার করতলগত হইবে ।৮ অস্ুরেরা বিরোচনের উপদেশা- নুযাঁয়ী সম্পূর্ণভাবে দেহাত্মবাদী হইয়া স্থল শরীরটিকেই নানাবিধ বেশভূষায় সুসজ্জিত করিয়া তাহার পুজা করিতে লাগিল। বাস্তবিক দেখা যায় যে, অসুর প্রকৃতিসম্প্ন লোকেরা আজিও দেহের পরিচর্য্যা করিয়া ত্রিভুবন জয় করিব এইরূপ অভিমান করিয়া থাকে। বর্তমানকালেও পৃথিবীতে এইরূপ অনুর প্রকৃতির লোক অনেক দেখিতে পাওয়া যায়। ধাহারা ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বীস করেন না, ধাহারা অজ্ঞেয়বাদী, জড়বাদী এবং ্বার্থভ্ুখ পাইবার জন্যই সর্বদা লালায়িত তাহাদের মধ্যেই আস্মুরিক প্রবৃত্তিসমূহ পরিলক্ষিত হয়। এই শ্রেণীর ২৷ মুলতত্ব সম্বন্ধে কিছু জানিবার উপায় নাই--এই মত ধাহার! পোষণ করেন তাহাদিগকে ণঅজ্ঞেয়বাদী” বলে। ' ১১২ আত্মানুসন্ধান লোকেরা নিজেদের শরীর ব্যতীত অন্য আর কিছু চিন্ত। করেন না! ইহাদের মধ্যে দয়া” বলিয়া কোন গুণ নাই; দরিদ্রকে ইহারা এক মুষ্টি ভিক্ষা দিতেও কাতর হয়। নিজের ইন্দ্রিয়-মুখ ভিন্ন অন্ত কোন উচ্চতর আধ্যাত্মিক আদর্শ ইহাদের নাই। ইহারা স্থল দেহকেই আত্মা বলিয়া জানে; স্থূল দেহের অতীত আর কোন বস্তুর অস্তিত্ব ইহার! স্বীকার করে না। আধুনিক আস্থুরিক প্রকৃতির মনুষ্েরাও "ভগবানের উদ্দেশ্টে কোন সংকন্ করেন না। ইহার! জীবিত বা মৃত দেহটিকে বিচিত্র বেশভূষায় ও গন্ধ-পুষ্পাদিতে সজ্জিত করেন। ইহাদের ধারণ। যে, দেহের এইরূপ পরিচর্য্যা করিয়াই মাত্র সমস্ত পৃথিবী জয় করিতে পারা যায়। সে যাহা হউক, এদিকে সুরপতি ইন্দ্রের বুদ্ধি বিরোচন অপেক্ষ। কিছু শুক্র ছিল। তিনিও নিজ আবাসে প্রত্যাবর্তন করিলেন, কিন্তু তিনি যে শিক্ষ। লাভ করিয়া আসিয়াছেন তাহা দেবগণের মধ্যে প্রচার করিতে দ্বিধা বোধ করিতে লাগিলেন। প্রজাপতি বলিয়াছিলেন যে, আত্মন্বরূপের কুধা, তৃষ্ণা, জন্ম, মৃত্যু, শোক রিছুই নাই এবং তিনি নিত্য বস্ত। এই অমূল্য বাক্য স্মরণ করিয়। ইন্দ্র মনে মনে আলোচন। করিতে লাগিলেন ; “তাহ! হইলে এই স্থল দেহ তো কখনও আত! হইতে পারে না! কারণ এই দেহ ১১৩ | আত্মজান পরিবর্তনশীল ; ইহার ক্ষুধা, তৃষ। ইত্যাদি সমস্ত বিকারই আছে। যখন এই দেহ জন্ম, জর! ও মৃত্যুর অধীন তখন আচার্ধ্যদেব কি করিয়া এই জড় ও স্ুল দেহের প্রতিবিষ্বকেই আত্মা বলিয়া অভিহিত করিতে পারেন? আমি তো এই উপদেশের কোনই সার্থকতা দেখি না!” এইরপে অমন্তষ্ট হইয়। ইন্দ্র শিষ্ের শ্তায় পুজোপহার হস্তে লইয়া পুনরায় প্রজাপতির নিকট উপস্থিত হইলেন। প্রজাপতিও দেখিয়া তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন £ প্তুমি সত্যা-. স্বরূপ আত্মাকে সাক্ষাৎকার করিয়া এবং আত্মঙ্ঞান লাভ করিয়াছ এইরূপ ধারণ! করিয়৷ সন্তু্টচিত্তে বিরোচনের সহিত চলিয়া গিয়াছিলে, এক্ষণে তোমার প্রত্যাবর্তনের কারণ কি?” ইন্দ্র বিনআ্রভাবে উত্তর করিলেন ঃ “ভগবন্, যখন এই স্ুল দেহের পরিবর্তনের বিরাম নাই তখন এই দেহের প্রতিবিস্বটি কি করিয়া আত্মার প্রকৃত স্বরূপ হইতে পারে ? যদ্দি স্থল দেহকে বেশভূষ! ও পুষ্পমাল্যাদির ঘ্বারা৷ সজ্জিত কর! যায় তাহা হইলে ছায়ারগী স্বরূপের আকৃতিও ভিন্ন হইয়া যায়। চক্ষুদ্ধয় নষ্ট হইলে দেহের প্রতিবিষ্বরূগী আত্মাও তাহ। হইলে অন্ধ বলিয়! প্রতীয়মান হইবে; আবার দেহটি খঞ্জ হইলে প্রতিবিষ্বরূপী আত্মাও খঞ্জ দেখাইবে। দেহটি বিকলাঙ্গ হইলে আত্মাও বিকলাঙ্গ দেখাইবে এবং সর্বশেষে দেখিতেছি যে, দেহের নাশ হইলে আত্মাও নাশ ১১৪ আত্মান্গসন্ধান হইয়। যাইবে; সুতরাং পরিবর্তনশীল দেহের প্রতিবিস্বটি কখনই আত্মা হইতে পারে না। আমিও এই শিক্ষার কোন সার্থকতা দেখিতেছি না। আপনি কৃপা করিয়া আমার সংশয় দূর করিয়া দিন এবং যাহাতে আত্মার প্রকৃত স্বরূপ আমি বুঝিতে পারি সেই প্রকার উপদেশ প্রদান করুন।” এই কথা শ্রবণ করিয়া আচার্ধ্য গ্রজাপতি উত্তর করিলেন £ «ইন্দ্র, তুমি যাহা বলিলে তাহ। যুক্তিসঙ্গত । আত্মার প্রকৃত স্বরূপ কি তাহা আমি ব্যাখ্যা করিব। তুমি আমার নিকট শিষ্যররপে আরও বত্রিশ বংসরকাল বাস কর।” ইন্দ্র গুরুসেবাপরায়ণ হইয়া তথায় আরও বত্রিশ বংসর যাপন করিলেন। ইন্দ্রের পবিত্রতা, ব্রন্মচর্য্য ও ভক্তিতে গ্নীত হইয়া প্রজাপতি একদিন তাহাকে বলিলেন £ পনি নিপ্রাকালে বহুবিধ স্বপ্নবিষয় ভোগ করেন, তিনিই আত্মা, তিনিই অমৃত ও ভয়হীন ব্রদ্ধ। ইহাকে উপলব্ধি কর, ইহার অনুভূতি লাভ কর।”* এই উপদেশ শ্রবণ করিয়া ইন্দ্র শান্ত হৃদয়ে প্রস্থান করিলেন। কিন্তু অন্তান্ত দেবতা গণকে এই সম্বন্ধে কিছু বলিবার পুর্বে তিনি পুনরায় দেখিলেন যে, আত্মজ্ঞান সম্বন্ধে তাহার তখনও সন্দেহ ৯। দ্য এষ শবে মহীয়মানশ্চরত্যেষ আত্মেতি হোবাচৈতদমূতম- উয়মেতদ্‌ বরন্দেতি।”-_ছান্দোগ্য উপনিষৎ ৮৯০1১ ১১৫ আত্মজ্ঞান রহিয়াছে । তিনি চিন্তা করিয়া বুঝিলেন দেহের ছায়! বাঁ প্রতিবিম্ব এবং স্বপ্নবিষয় যিনি ভোগ করেন সেই শুদ্ধ আত্মা ও দেহ এক নয়; কারণ বাহ আকারের পরিবর্তন হইলে তে শুদ্ধ আত্মার কোনও পরিবর্তন হয় না? যদি দেছটি চক্ষুহীন হয়, কই শুদ্ধ আত্ম! তে! অন্ধ হন না? দেহথ্গ হইলে অথবা দেহের কোনও প্রকার অনিষ্ট হইলে শুদ্ধ আত্মা তে। কই খঞ্জ বা ঠাহার কোনও অনিষ্ট হয় না? সুতরাং স্থুল শরীরের দোষে বা বিকারে এই স্বপ্রদ্রষ্টা শুদ্ধ আত্মা কখনই দূষিত বা বিকৃত হন না। তাহার পর দেহস্থিত যে পুরুষ ্প্নজাত বিষয়সমূহ ভোগ করেন, তিনিই বা কিরূপে অপরিবর্তনশীল আত্মা হইতে পারেন, কেননা তাহাকেও তো ছুঃখদায়ক স্বপ্ন প্রভৃতি দর্শন করিয়া যন্ত্রণাদি ভোগ করিতে হয় এবং স্মুল দেহের মতন তাহাকেও তো নানা- প্রকার পরিবর্তন ও ভয়ের অধীন হইয়া থাকিতে হয়? এইক্নপে মনে মনে আলোচন। করিয়া ইন্দ্র বলিলেন ঃ «আমি এই উপদেশে কোনই সুফুগ দেখিতেছি না। আবার আমি গুরুদেবের নিকট যাইব এবং তাহাকে এই সমস্যা সম্বন্ধে প্রশ্ন করিব।” এই বলিয়া পর্বের ন্যায় ইন্দ্র সমিৎ- পাণি হইয়া প্রজাপতির নিকট তৃতীয়বার উপস্থিত হইয়। জিজ্ঞাসা করিলেন £ “ভগ্বন্‌, আপনার মুখে শুনিয়াছিলাম যে, আত্মা অপরিবর্তনশীল, অমর এবং জন্ম, জরা, মৃত্যু, ১১৬ আত্মাস্গসন্ধান শোক, হুঃখ, ক্ষুধা) তৃষ্ণা প্রভৃতি বর্জিত; কিন্তু তাহা হইলে স্বপ্ন্দশী পুরুষ কিরূপে আত্মা হইতে পারেন ?* ইহ! শ্রবণ করিয়া আচার্ধ্য প্রঙ্গাপতি বলিলেন £ “ইন্দ্র তুমি ঠিকই বলিয়াছ। আত্ম! সম্বন্ধে আমি তোমায় পুনরায় উপদেশ প্রদান করিব, তুমি আমার নিকট আরও বত্রিশ বৎসর বাস কর।” পুনরায় এই নির্দিষ্ট বত্রিশ বংসর অতীত হইয়া গেলে প্রজাপতি ইন্দ্রকে বলিলেন £ প্গভীর নিদ্্রাবস্থায় অর্থাৎ সুযুপ্তি অবস্থায় যিনি সাক্ষী ন্বরূপ শাস্ত থাকেন, অর্থাৎ যিনি সেই সময়ে সমস্ত -ইন্ড্রিয়-ব্যাপারশুম্ত আর কোনও স্বপ্রাদদি দর্শন করেন না, তিনিই সেই মৃত্যুহীন অঙ্জর অমর আত্মা ।” ইন্দ্র এইপ্রকার কথ৷ শ্রবণ করিয়া শাস্ত হৃদয়ে চলিয়া গেলেন। কিন্তু দেবতাদ্বিগের নিকট যাইবার পুর্ব তাহার পূর্বেকার হ্যায়ই আবার সন্দেহ উপস্থিত হইল এবং তিনি বলিলেন £ *ঘখম 'আমি ও আমার- রূপ অহংজ্ঞানই ন্ুযুপ্তিতে থাকে না তখন এই শাস্ত অবস্থাই কিরূপে আত্ম। হইতে পারেন? স্থযুপ্তি অবস্থায় কোনও প্রকার বাহাজ্ঞান না থাকিলে আচাধ্যদেব কি সর্বপ্রকার চিন্তা, অনুভূতি এবং জ্ঞানের শুন্তাঁবস্থাকেই “আত্মা বলিয়াছেন ? বাস্তবিক সুষুপ্তির অবস্থায় আমাদের কোনও প্রকার বাহাজ্ঞান থাকে না। তখন আমরা ন্বপ্রাদিও দর্শন ১১৭ আতুজান করি না, তখন মনের মধ্যে সুখ-ছুঃখাঁদি ভাবের অনুভ্ভূতি ও কেবল অহং-জ্ঞান থাকে, কোন ইন্দ্রিয়ের কার্যযও থাকে না। এইপ্রকার শুন্তাবস্থা কিরূপে আত্মা হইতে পারেন তাহা ধারণা করিতে না পারিয়া সমিংপাণি হইয়া! ইন্দ্র পুনরায় প্রজাপতির নিকট উপস্থিত হইলেন। প্রজাপতি ইন্দ্রকে দেখিয়া! জিজ্ঞাসা করিলেন, পুনরায় আমিবার কারণ কি? ইন্দ্র বলিলেন; পঅহং-জ্ঠানশৃন্ত, বাহাজ্ঞান এবং বিষয়ানুভূতি-রহিত অবস্থাকেই কি আপনি “আত্মা” বলিয়াছেন ?” প্রজীপতি উত্তর করিলেন £ “না, তাহ! নহে।” এইস্থানে আমরা বুঝিতে পারি যে, বিচক্ষণ আচার্য্যগণ কিরূপে তাহাদের শিষ্যবর্গকে স্ুল হইতে আরম্ভ করিয়া সুচ্জ ও সুক্ষতর রাজ্যে ক্রমশঃ লইয়া যাইয়! সর্বশেষে সেই নিবিবিশেষ ব্রন্মের উপদেশ প্রদান করেন । আমরা যদি চিন্তা, অনুভূতি ও ভাবরাজ্যের উপরে সুযুস্তির অবস্থা! হইতে আরম্ভ করিয়া আরও উপরে অগ্রসর হইতে পারি তাহা হইলেই আত্মসাক্ষাংকার হইতে পারে। প্রজাপতি ইন্দ্রের পুনরাগমনে অত্যন্ত গ্রীত হইয়া বলিলেন £ “তুমি বুদ্ধিমান, আমি তোমাকে আত্মতত্ব বিষয়ে আরও কিছু বলিব। তুমি আমার নিকট আরও পাঁচ বৎসর ্রচ্মচর্য্য পালন করিয়! বাস কর ।” ইন্্র তাহাই করিলেন এবং সেই পাঁচ. বংসর অতীত হইলে ১১৮ আসত্মানসন্ধান প্রজাপতি ইন্দ্রকে উচ্চতম জ্ঞান প্রদান করিলেন। ইন্্রও চিন্তা করিলেন যে, এই দৃশ্টমান স্থল শরীর 'আত্মা” হইতে পারেনা; ইহা মরণশীল, বন্ততঃ ইহা! সর্বদা মৃত্যুগ্রস্ত ।১ এই দেহ যতদিন থাকে ততদিন ইহা প্রতিমুহূর্তেই পরিবস্তিত হয়। দেহের প্রত্যেক পরমাণুর অবিরাম পরিবর্তন হইতেছে এবং এই পরিবর্তনক্রিয়া যদি অল্প সময়ের জন্য বন্ধ হয় তাহা হইলে দেহের বিনাশ হইবে। এই শরীরের সর্বদাই মৃত্যু হইতেছে ; সর্বদাই ইহার মধ্যে মৃত্যুর ক্রিয়া চলিতেছে । এইস্থলে শরীর শবে ইন্ত্িয় ও মনসংযুক্ত শরীর বুঝিতে হইবে। এই শরীরই আত্মার আবাসস্থান বা যগ্্ন্ধরপ; কিন্ত আত্ম। দেহ রহিত ও অমর। এই দেহরূপ যন্ত্রের সাহায্যেই আত্মা বাহজগতের সংস্পর্শে আসেন মাত্র। যদি আত্ম এই স্ুুল শরীর নিন্দনাণ না করিতেন তাহা হইলে তিনি ইন্দ্িয়গ্রাহা বিষয়াদির সংস্পর্শে আসিয়া ইহাদের ভোগ করিতে পারিতেন না। স্বুতরাং দেখা যাইতেছে ষে, আত্মার ভোগের জন্যই এই শরীরের শ্ষ্টি এবং স্থায়িত্ব । ১। “্মঘবন্-মত্যং বা ইদং শরীরমাতং মৃত্যুন। ত্দস্তামৃতস্াশরীরস্তা- অআনোহধিষ্ঠানমান্তো বৈ সশরীরঃ প্রিয়াপ্রিয়াভ্যাং ন বৈ স শরীরস্ত সতঃ প্রিয়াপ্রিয়য়োরপহতিরন্ডি অশরীরং বাঁব সম্তং ন প্রিয়াপ্রিয়ে স্পৃশতঃ |” --ছান্দোগা উপনিষৎ ৮1৯২১ ১১৯ আত্মজ্ন আত্ম! দেহেতে অধিষ্ঠিত আছেন বলিয়াই জীব দেহাভিমানী হইয়া থাকে এবং “আমার এই শরীর, ইত্যাকার ধারণা করিয়া সুখ, দুঃখ, শীত, উষ্ণ প্রভৃতি অনুভব করে। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে শরীর কিছুই অনুভব করে না। আত্মাই দেহের কর্তা ও অধিপতি; শরীরটি তাহার বাসগৃহ মাত্র। যিনি ইন্দ্িয়সকলকে যন্ত্রূপে ব্যবহার করিয়া বাহ বিষয়সমূহ গ্রহণ করেন তিনিই আমাদের অন্তরস্থ আত্ম । ইন্দ্িয়যন্্রগুলির সহিত বাহ্াবস্তর সংস্পর্শ হইলেই ইন্দিয়-বিষয়ের অনুভূতি হইয়া থাকে। যতক্ষণ আত্ম! দেহরূপ স্থল আকারের মধ্য দিয়া প্রকাশিত না হন ততক্ষণ স্থল বাহাবস্তগুলি আকারবিশিষ্ট বলিয়া সাক্ষাংভাবে আত্মার সংস্পর্শে আসিতে পারে না। কিন্তু এই দেহের জ্ঞাতা, সর্ধপ্রকার ইন্দ্রিয়-বিষয়ানুভূতির ভোগকর্তা এবং যাবতীয় কার্যের কর্তা সেই আত্মা ন্বভাবতঃই অব্বপ অর্থাৎ তাহার কোনও আকার নাই। প্রজাপতি ইন্দ্রকে সেজন্য বলিলেন £ “আত্মার বিশেষ কোনও প্রকার আকার নাই। আত্মা দেহের মধ্যে কোনও প্রকার আকারবিশিষ্ট না হইয়া বিরাজ করেন।” এক্ষণে মনে রাখিতে হইবে যে, আমাদের দেহের আকার থাকিলেও আত্মার কোনই আকার নাই এবং ইহা অনুভব করিলেই ১২০ আত্মাঙ্গুসন্ধান দেহের পরিবর্তনের সঙ্গে আত্মার যে কোনও পরিবর্তন হয় না-এই কথা আমরা বুঝিতে পারিব। স্বৃতরাং আত্মা যদি অরূপ হন তাহ! হইলে দেহের ছায়া বা প্রতিবিষ্ব কিরপে আত্মা হইতে পারে? অস্থররাজ বিরোচনের বুদ্ধি তমোগুণে আবৃত ও তাহার মন অপবিত্র ছিল এবং সেইজগ্তই তিনি আত্মার প্রকৃত তত্ব উপলব্ধি করিতে সক্ষম হন নাই। তিনি যদি পরে এ বিষয়ে আর কোনও প্রশ্ন করিতেন তাহা হইলে অবশ্যই প্রজাপতি সেই প্রশ্নগুলির যথাধথ উত্তর প্রদান করিতেন এবং সেজন্যই তিনি অপেক্ষা করিতেছিলেন। কিন্ত বিরোচন আত্মতত্ব সম্বন্ধে সমস্তই অবগত হইয়াছেন এই মনে করিয়া চলিয়া গিয়াছিলেন, ম্মুতরাং তিনি জ্ঞান- লাভের যোগ্য পাত্র নহেন এই বিবেচনা করিয়া প্রজাপতি প্রবৃত্ত হইয়া ও স্বীয় শক্তি সঞ্চার করিয়া! বিরোচনকে জ্ঞান দান করিতে উৎস্থক হন নাই। আর এই কারণেই বিরোচনও সেই অরূপ ও অমর আত্মার সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করিতে সক্ষম হন নাই । যাবতীয় ইন্ডিয়, সর্বপ্রকার একন্ট্িয়িক বিষয়ের অনুভূতি এবং দেহ সম্বন্ধীয় সমস্ত বিষয়ই ক্ষণস্থায়ী। আমর! এই সত্য উপলব্ধি করিলে অবিনশ্বর আত্ম ও বিনশ্বর দেহ যে এক নহে তাহ। বুঝিতে পারিব। কিছুকালের জন্ত এই নাম- - ১২১ আত্মজঞান রূপহীন আত্মা দেহের মধ্যে বাস করেন এবং ইহা পরিত্যাগ করিবার পরেও দেহরূপ আকারের অতীত হইয়াই থাকেন । যতক্ষণ এই আত্ম! কাহারও দেহের মধ্যে অধিষ্ঠিত থাকেন ও সেই দেহধর্মযুন্ত হন ততক্ষণই আত্ম সখ ও ছুখ-ভোগ হইতে মুক্ত হইতে পারেন না। কিন্তু যিনি এই নিলিপ্ত আত্মাকে দেহ হইতে পৃথকভাবে অবস্থিত দেখেন, তাহার আর সুখ ও দুঃখ বোধ থাকে না। এখানে ইহা৷ জিজ্ঞান্ত হইতে পারে যে, নাম-রূপহীন আত্ম! কিরপে আকারবিশিষ্ট দেহের মধ্য দিয়া প্রকাশ হইতে পারেন? ইন্দ্রেও এই সংশয় উপস্থিত হইয়াছিল এবং তাহা দূর করিবার জস্তই প্রজাপতি ইন্দ্রকে বলিলেনঃ £ “কিন্ত আমরা জানি যে, বায়ুর কোনও রূপ বা আকার নাই, বাম্পেরও কোন আকার নাই, তড়িতশক্তিরও কোনও ১ (ক) “অশরীরো। বাযুরভ্রং বিছ্যুতস্তনয়িতুরশরীরাণোতানি, তদ্‌ যখৈতান্তমুক্সাদাকাশাৎ সমূখায় পরং জ্যোতিরুপসম্পস্ত শ্থেন রূপেণাভিনিম্পদ্তন্তে॥ -ছান্দোগ্য উপনিষৎ ৮1১২।২ (খ) "এবমেবৈষ সম্প্রসাদো হম্মাচ্ছরীরাৎ সমুখায় পরং জ্যোতিরুপ- সম্পন্ত স্বেন রুপেণাতিনিষ্পগ্ভতে, স উত্তমঃ পুরুষঃ। স তত্র পধ্যেতি জক্ষৎ ক্রীড়ন্‌ রমমাণ; স্্ীভির্ব। যানৈর্ব। জ্ঞাতিভির্ব। নোপঞ্জনং শ্মরনিদং শরীরং স যথা প্রয়োগ্য আচরণে ঘুক্তঃ , এবমেবায়মন্সিরীরে প্রাণো যুক্তঃ |? _-ছুন্দোগ্য উপনিষৎ ৮১২৩ | ১২২ আত্মান্থসন্ধান আকার নাই, কিন্ত ইহারা অন্য কোন আকারের মধ্য দিয়াই প্রকাশমান হয়। যদিও বায়ুর কোনও আকার নাই তথাপি বায়ু যখন বহিতে থাকে তখন ইহ! আকারবিশিষ্ট বস্তুগুলির সংস্পর্শে” আসিয়া উহাদের সঞ্চালন করে এবং তাহার দ্বারাই বায়ুর আকার ও ক্ষমতা প্রকাশিত হয়। এইরূপ বাস্পও আকারশুন্ত, কিন্তু বাস্পীয় যানের দ্বারা আমর! ইহার বিশাল শক্তির প্রকাশ দেখিয়। থাকি । আমাদের উপরিস্থিত বায়ুমণ্ডল (8270870)7916) তড়িৎ-শক্তিতে পরিপূর্ণ হইলেও আমর! উহা! দেখিতে পাই না, কিন্তু বিদ্যুতের দীপ্তি ব৷ বজপাত ইত্যাদিতে উহার অস্তিত্বের পরিচয় আমর! পাইয়া থাকি। আমরা বাস্তবিক এই বায়ুমগ্লস্থিত তড়িৎ-শক্তির অস্তিত্ব অনুভব করি না। মার্কনি (191:9021 ) নামক বিখ্যাত বৈজ্ঞানিকের আবিষ্ারের জন্তাই তড়িং-প্রবাহের উপকারিতা আমরা উপলব্ধি করিয়াছি । বেতারবার্তাতেও এইপ্রকাঁর তড়িং-শক্তির আমরা পরিচয় পাইয়া থাকি। বাস্তবিক কেহ কখনও কোন অরূপ শক্তিকে চক্ষুদ্বারা দর্শন ব৷ হস্তদ্বার৷ স্পর্শ করেন নাই, তবে ইহাদের অস্তিত্ব কোনও আকারের (পদার্থের ) উপর প্রকাশিত হইলেই তাহা বুঝিতে পারা যায়। যেমন অবস্থাবিশেষে সাধারণতঃ; ইন্জ্িয়ের অগোচর অরূপ শক্তিসমূহকে ইন্দ্রিয়ের দ্বারা উপলব্ধি করিতে পারা যায় সেইরূপ এই আত্মা স্বভাবতঃ অতীন্দ্রিয় হইলেও ১২৩ আত্মজ্ঞান স্থল দেহের মধ্য দিয়াই ইহার ক্ষমতা ও প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। আমাদের অন্তরে চিস্তারপে প্রকাশিত না হইলে আত্মার যে চিন্তাশক্তি আছে তাহা! কিরূপে জান! যাইবে? এইপ্রকারে আত্মার দর্শনশক্তি ও অনুভবশক্তির অস্তিত্ব উহার্দের বহিঃপ্রকাশের দ্বারাই বুঝিতে পার! যায়। যদি কোনও ব্যক্তির দর্শনশক্তির প্রকাশ না থাকে তাহা হইলে আমরা তাহাকে “অন্ধ” বলিয়া থাকি। যাহার মানসিকশক্তি ও বোধশক্তি সুগ্তভাবে থাকে তাহাকে আমর! গ্মূঢ বলিয়া থাকি; কিন্তু যখনই এই সমস্ত শক্তি ব্যক্ত বা প্রকাশমান হয় তখনই আমরা ইহাদের কার্য্য দেখিতে পাই। যদি দেহের মধ্য দিয়া দৃষ্টিশক্তি, ভ্রাণশক্তি, আন্বাদনশক্তি, স্পর্শশক্তি, চিস্তাশক্তি ইত্যাদির প্রকাশ দেখা না যাইত তাহ। হইলে জীবাআর অন্তরে নিহিত এ সকল শক্তিসম্বন্ধে আমরা কিছুই অনুমান করিতে পারিতাম না। এ শক্তিগুলি আমাদের অস্তরস্থ চৈতন্তম্বরপ আত্মা হইতেই উৎপন্ন হয়। অবিগ্ভাবশতঃ এবং দেহাত্বভ্রমের জন্ত আমরা মনে করি যে, এ সমস্ত শক্তি দেহ হইতে উৎপক্ন হয়; কিন্তু যখন আত্মজ্ঞানরূপ স্ধ্যের উদয় হয় তখন অজ্ঞানের সমস্ত অদ্ধকার দুরে চলিয়া যায় এবং সর্ধশক্তিসম্পন্ন চৈতন্যময় আত্মা দেহ হইতে পৃথকৃভাবে প্রকাশিত হন। যেমন কোন মূঢ ব্যক্তি আকাশ ১২৪ আত্মাঙসঙ্ধান হইতে বায়ু, মেঘ এবং তড়িংশক্তির পার্থক্য দেখিতে পায় না, সেইরূপ আত্মজ্ঞানরহিত মূঢ় ব্যক্তিও আত্মাকে স্থূল ইন্দিয়যন্ত্রগুলি হইতে সম্পূর্ণ পৃথক্রূপে দেখিতে পায় না। যিনি আত্মজ্ঞান লাভ করিয়াছেন কেবল তিনিই ইহা উপলব্ধি করেন যে, আত্মাই একমাত্র শ্রেষ্ঠ পুরুষ। আত্মজ্ঞানী ব্যক্তি সর্বদাই স্থুখী এবং সেজন্য তিনি স্থুল- দেহের নুখ-হঃখাদি চিন্তা না করিয়া খেলাধূলার মতনই পার্থিব জীবনের সকল অবস্থাকে উপভোগ করেন। তিনি তাহার স্থল দেহকে চৈতন্তন্বরূপ আত্মার আবাস স্থান বলিয়াই জানেন, স্থল দেহে কখনও আসক্ত হন না। আমরা পুর্ধধবেই বিচার করিয়া বুঝিতে পারিয়াছি যে, আত্মাতে প্রজ্ঞ! আছে এবং প্রাণশক্তি আছে। এই প্রজ্ঞ ও প্রাণশক্তি পরিদৃশ্যমান বাহ্জগতের অধিষ্ঠানরূপে বর্তমান। যখন এই প্রজ্ঞা, ও (প্রাণ ন্ুপ্তভাবে থাকে তখন বাহাজগতের কোনও প্রকার ক্রমবিকাশ হয় না। -ব্যাপকভাবেই হউক বা আণবিকই হউক, জগতে যতপ্রকার কম্পন আছে এবং যতপ্রকার গতি আমর! অবগত আছি তাহা প্রাণশক্তির ক্রিয়া বা! বিকাশ ভিন্ন অন্ত কিছুই নহে। প্রজ্ঞার প্রকাশ মনুষ্যজাতির মধ্যে-_ এমন কি ইতরপ্রাণীর মধ্যেও দেখা যায়। স্বরূপতঃ এই প্রজ্ঞার আবার কোনও ভেদ নাই, তবে প্রভেদ কেবল ১২৫ আত্মন্জঞান আধার অনুযায়ী বিকাশের মাত্রাতেই । যেখানেই প্রজ্ঞার বিকাশ, জীবনীশক্তির ক্রিয়া অথব! অন্ত কোনও প্রকার শক্তির ক্রিয়া দেখিতে পাওয়া যাঁয় সেখানেই আত্মার প্রকাশ আছে ইহা বুঝিতে হইবে । প্রজ্ঞ। ব্যতিরেকে কোনপ্রকার জ্ঞান হওয়া অসস্ভব। প্রথমে আমি আছি” এইপ্রকার অস্তিত্বের জ্ঞান না থাকিলে কাহারও অন্য কোন বিষয়ের জ্ঞান হইতে পারে না। বুদ্ধির মলিনতাবশতঃ আমরা! আমাদের আত্মার বধার্থ হ্বরূপকে জানিতে না পারিলেও প্রজ্ঞার বিকাশ কিন্তু আমাদের ভিতর থাকিবেই। বেদান্তদর্শন বলে যে, যদি আমরা এই পরিদৃশ্যমান স্থুল জগৎকে অনবরত বিশ্লেষণ করিয়! ইহার কারণকে অনুসন্ধান করি, তাহা হইলে আমরা পরিশেষে ছুইটি মূলতত্বে উপস্থিত হইতে পারিব £ তাহাদের একটি প্রজ্ঞা" এবং অপরটি ধ্প্রাণ । এই প্রাণ ও প্রজ্ঞ| বিশুদ্ধ সর্ধব্যাগী ব্রহ্ম হইতে উদ্ভুত হইয়াছে । ম্ুতরাং সেই বিরাটপুরুষ ব্রহ্ষই সর্বপ্রকার ইন্দ্রিয় মন ও বুদ্ধি প্রভৃতির ক্রিয়ার আধার ও উৎপত্তি স্থান।» ১। প্রকৃতপক্ষে এই ব্রহ্ম কিন্ত নিগুণ ব্রহ্ম নন, কেননা নিগুপ ব্র্দে কোনরূপ মায়া, স্ট্টি বা দ্বিতীয়ের কল্পনা হইতে পারে ন।। ১২৬ আত্মানসন্ধান প্রজাপতি সেজন্য ইন্দ্রকে বলিলেন; ”আত্মাই নিখিল বিশ্বের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সত্যবস্ত |» ঠিক ঠিক উপলব্ধি বা জ্ঞান না হইলে আমরা আমাদের ব্য্রিম্বরূপ জীবাত্বাকে পরমাত্ম৷ বা ব্রহ্ম হইতে পৃথক্‌ করিতে পারি না, কারণ এই নিখিল বিশ্বে এক আত্মাই সচ্চিদানন্দ সমুদ্ররূপে বিরাজমান এবং ইহাকেই ঈশ্বর, ব্রহ্ম, পরমাত্মা। ইত্যাদি বিচিত্র নামে অভিহিত করা হয়। এই নির্ব্বিশেষ ্রক্ম যখন আমাদের পাঞ্চভৌতিক শরীরের মধ্য দিয়া প্রকাশিত হন তখন ব্যষ্টিভাবে উহা আমাদের ব্যক্তিগত আত্মা বা 'জীবাত্বা বলিয়া অভিহিত হন এবং এই আত্মাই আমাদের প্রজ্ঞা, বুদ্ধি এবং যাবতীয় দৈহিক ও মানসিক ক্রিয়ারমূলে বর্তমান। বাসনাসমূহ আমাদের মানসিক ক্রিয়ার ভিন্ন ভিন্ন আকার ব্যতীত অন্ত কিছুই নহে। যদি সর্ববিধ ক্রিয়ার মূলে যেখানেই দ্বিতীয়ের বা উৎপত্তির কল্পন। হইবে সেখানেই বুঝিতে হইবে তিনি গুণযুক্ত-_মায়াকে অবলম্বন করিয়৷ বিশিষ্ট হইয়াছেন। প্রাণ হিরণ্যগর্ভ এবং প্রজ্ঞ। ঈশ্বর বা অব্যক্ত । সুতরাং প্রাণ ও প্রজ্ঞার অধিষ্ঠানরূপে শুনধবন্ষ কল্পিত হইলেও যেখানে উৎপত্তি বা স্যষ্টির কথ! বুঝিতে হুইবে সেখানে শবল মায়াবিশিষ্ট (মায়োপহিত ত্রন্ধই হইবেন"-গুদ্ধ তুরীয় ত্রদ্ধ নন, তবে শুদ্ধ ব্রহ্ম উপলক্ষিত হুইবেন মাত্র । | ১২৭ আত্মজ্ঞান প্রজ্ঞা অর্থাৎ “অহংজ্ঞান না থাকিত তাহা হইলে বাসনাগুলি আমাদের অন্তরে উদিত হইতে পারিত না। এমন কি তাহাদের অস্তিত্ও থাকিত না। ধাহার আত্মঙ্ঞান লাভ হইয়াছে তিনি এই জীবদ্দশায়ই সর্ধপ্রকার কাধ্য করিয়াও কেবল আনন্দ সততায় অবস্থিত থাকিতে পারেন এবং অগ্্রীতিকর অবস্থার মধ্যে পতিত হইলে কখনও উত্তেজিত বা বিচলিত হন না। পরিদৃশ্যমান জাগতিক অবস্থার পরিবর্তনে জীবনুক্ত আত্মজ্ঞানী পুরুষ কখনও বিক্ষুব্ধ হন না। যেমন শকটে অশ্ব সংযোজিত হইলে উহ! চলিতে থাকে সেইরূপ প্রজ্ঞাযুক্ত জীবও দেহরপ রথে সংযোজিত হইয়া প্রাণ ও গ্রজ্ঞারপ "শক্তি দ্বারা যাবতীয় কার্ধ্য করিতেছেন। অথব! এই দেছটিকে যদি আমরা একটি মোটর গাড়ীর সহিত তুলনা করি তাহা! হইলে বুঝিতে পারিব মোটর গাড়িটা যেমন বিছ্যুতাধার যন্ত্র (0108100) হইতে উদ্ভুত তড়িংশক্তির বলে চলিয়া থাকে সেইরূপ আত্মা হইতে প্রেরিত প্রাণশক্তির দ্বারা এই দেহ সমস্ত কার্য করিয়! থাকে। যদি আত্মা এই ইন্দ্রিয়গুলিতে যুক্ত না থাকেন তাহা হইলে চক্ষু কিছুই দর্শন করিবে না, কর্ণ কিছুই শ্রবণ করিবে না, নাসিক! কিছুই আত্রাণ করিবে না, জিহব। কিছুই আস্বাদন করিবে না এবং হস্তপদাদিও কোনই কাধ্য করিবে না। ১২৮ | আত্মান্ুন্ধান এজন্য ইন্দ্রকে প্রজাপতি আরও বলিলেন £ শ্চক্ষু- রূপ ইন্ড্রিয়টি কেবল একটি যন্ত্র মাত্র প্রকৃত দ্রষ্ট চক্ষুর তারকার পশ্চাতে অবস্থান করেন। এই দ্রষ্টা ও যিনি দৃষ্ট-বস্তর জ্ঞাতা একমাত্র তিনিই আত্ম । নাসিকাদ্য়ও এরূপ যন্ত্র মাত্র; আত্াণকর্তাও আত্মা ও জীবের প্রকৃত স্বরূপ। জিহবা! শুধু আন্বাদন ও বাক্শক্কির যন্ত্র কিন্তু যাহা বল! যায় তাহ! যিনি উচ্চারণ করাইতেছেন এবং তাহার বিষয় যিনি জানিতেছেন তিনিই অস্তরস্থিত চৈতম্যময় পুরুষ বা আত্ম।। কর্ণেক্দিয় শ্রবণশক্তির যন্ত্র মাত্র, কিন্তু শ্রবণকর্তী হইতেছেন আত্ম ।৮, “যিনি চিন্তা করিয়া থাকেন ঘিনিই আত্মা এবং মন তাহার আধ্যাত্বিক চক্ষুত্ববপ। এই মনশ্চক্ষু দ্বারাই আত্ম! যাবতীয় প্রিয় বন্ত্রকে দেখেন এবং আনন্দ উপভোগ করেন । জীবের প্রকৃত স্বরূপ আত্মা মানসিক ক্রিয়া- ১। “অথ যত্রৈতদাকাঁশমন্্ুবিষ্নং চক্ষু স চাক্ষুষঃ পুরুষে। দর্শনায় চক্ষুর্থ যে! বেদেদং জিন্তাণীতি স আতা! গন্ধায় প্রাণমথ বে! বেদেদমভিব্যাহরাঁণীতি স আত্মাহভিব্যাহারায় বাগথ যো বেদেদং শৃণবানীতি স আত্ম। শ্রবণায় শ্রোত্রম্‌॥*--ছান্দোগ্য উপনিষৎ ৮1৯২৪ ১২৯ 'আাতুজ্ঞান সমৃহেরও জ্ঞাতা এবং মন, বুদ্ধি ও চিত্ত তাহার যন্ত্র মাত্র ।”২ স্বর্গে বা ব্রহ্মলোকে যে সমস্ত দেবতাগণ বাস করেন তাহারা এই আত্মার উপাসনা ও ধ্যান করিয়া থাকেন। সেজন্য সমস্ত পৃথিবী ও ব্বর্গাদি লোক দেবতাদের হস্তগত এবং সমস্ত কার্য তাহাদের আয়ন্তাধীন। যিনি এন আত্মজ্ঞান লাভ করিয়াছেন -তাহার কোন বিষয়ই সেই অুরলোকবাসী দেবতাদের স্তায় করায়ত্ত হইতে বাকী থাকে না। তিনিও দেবতাদিগের ন্যায় ত্রিজগতের অধিপতি হন । তাহার কোন বাসনাই অপূর্ণ থাকে না এবং এমন কোনও বাসন! নাই যাহা৷ স্তাহার অপরিপূর্ণ থাকিতে পারে । তিনি বাহা জগৎ ও সংসার হইতে কোনপ্রকার স্থখলাভের আকাজ্ষ। রাখেন নাঃ সর্বপ্রকার ক্ষমতাই তাহার মধ্যে থাকে। এক কথায় তিনি সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ ও আনন্দময় সততায় বিরাজ করেন।২ এইরূপে প্রজাপতি ২। ০অথ যে বেদেদং মণ্থানীতি স আত্মা, মনোহ্ত দৈবং চক্ষুঃ, স ব। এষ এতেন দৈবেন চক্ষুষ! মনসৈতান্‌ কামান্‌ পশ্তন্‌ রমতে ॥” --ছান্দোগ্য উপনিষৎ ৮১২৫ ও। “ধ এতে ক্রহ্মলোকে তং বা এতং দেব। আত্মানমুপাসতে তন্ম(ৎ তেধাং সর্ষে চ লোক। আত্মাঃ সর্ষে চ কামাঃ স স্বাংশ্চ ১৩৩ আত্মাছপন্ধান জীবের প্রকৃত স্বরূপ এবং আত্মার গুঢ়তত্ব ইন্দ্রের নিকট ব্যাখ্যা করিয়াছিলেন এবং পবিভ্রচেতো, আগ্রহবান ও উপযুক্ত শিষ্য ইন্দ্রও গুরুর আশীব্ধাদে প্রকৃত আত্মঞ্ঞান লাভ করিয়। ধন্য হইয়াছিলেন। এইরূপ কথিত আছে যে, ইন্দ্র একশত এক বংসর ব্র্ষচর্য্য পালন করিয়া তাহার আচার্ধ্য প্রজাপতির সেবা করিয়াছিলেন। ইহাতে বুঝিতে পারা যায় যে, আত্মজ্ঞান লাভ কর! সহজ ব্যাপার নহে। অসাধারণ ধৈর্য্য, অধ্যবসায়, আগ্রহ এবং অপ্রতিহত ইচ্ছাই আত্মজ্ঞান লাভের সোপানন্বরূপ। ইন্দ্র পরমানন্দ লাভ করিয়া অবশেষে কৃতজ্ঞ হৃদয়ে গুরুদেবের চরণ বন্দনা করিলেন এবং নিজ আবাসে প্রত্যাবর্তন করিয়৷ তাহার কঠোর পরিশ্রমের ফলম্বরূপ আত্মজ্ঞান দেবতাগণকেও দান করিলেন। দেবতারাও ইন্দ্রের উপদেশ পালন করিয়। তাহাদের প্রকৃত স্বরূপ আত্মাকে উপলব্ধি করিয়া সমস্ত জগতের অধীশ্বর হইয়াছিলেন। এইরূপেই আত্মজ্ঞানের শক্তি ও মহিম! ছান্দোগ্য উপনিষদে বণিত আছে। লোকানাপ্লোতি সর্বাংস্চ কামান্‌ বস্তমাত্মানমন্বিদ্ক জানাতীতি ,₹ প্রজাপতিরুবাঁচ প্রজাপতিরুবাচ ॥*--ছান্দোগ্য উপনিষৎ ৮১২1৬ ১৩১ ও সহ নাববতু। সহ নৌ ভূক্তু। সহ বীর্যং করবাঁবছৈ। তেজন্ষিনাবধীতমন্তর মা বিদ্বিষাবহৈ ॥ ও শাস্তি; শাস্তি শান্তিঃ গুরু ও শিষ্য আমাদের উভয়কে পরমাতা। রক্ষা ও পালন বরুন। আত্মতত্রের জ্ঞানরূপ অমুতের দ্বাগা৷ আনার্দের পরিপুষ্টি সাধিত হউক | গুরু যেন আমাদিগকে আধ্যাত্মিক শক্তি প্রদান করেন। আমাদের শান্্-অধ্যয়ন যেন পরমতত্বের সাক্গাৎকারে পরিণতি লাভ করে। গুরু ও শিষ্বের মধ্যে যেন কোনও বিদ্বেষ নাথাকে। ও শান্তি শান্তি; শান্তি; | পঞ্চম অধ্যায় আত্মসাক্ষাৎকার বৈদিকযুগে কোন আত্মজ্ঞান অন্বেষণকারী ব্যক্তি জীবনের সমুদয় কর্তব্য কন্ম সম্পন্ন করিয়াও দেখিলেন যে, তাহার মনে শাস্তি আসিতেছে না। তিনি সমস্ত দেবতার পুজা ও সেবাতে জীবন অতিবাহিত করিয়াছেন ; কিন্তু কী আশ্র্যা, তথাপি তাহার তো আত্মজ্ঞান লাভ হইল না! জীবনের অধিকাংশ সময় ঈশ্বরের আরাধন করিয়াও তিনি পরিতৃপ্ত হইতে পারিলেন না। সুতরাং যখন তিনি দেখিলেন যে, ইন্দ্রিয়গ্রাহা বস্তনকল ও পার্থিব সম্বন্ধের দ্বার! শাস্তি ও জ্ঞান লাঁভ কর! অসম্ভব এবং এই পরিদৃশ্যমান্‌ বাহা জগতের সমস্ত বস্তুই অনিত্য তখন তিনি পার্থিব ভোগনুখাদিতে বীতস্পুহ হইলেন এবং জাগতিক সমস্ত পদার্থের উপর আসক্তি ত্যাগ করিলেন । তাহার পর তিনি শান্ত্র-অধ্যয়নের কাধ্যও ত্যাগ করিলেন, কারণ তিনি বুঝিয়া দেখিলেন যে, শান্্রপাঠে আত্মজ্ঞান কিন্বা অবিচ্ছিন্ন সুখ লাভ করা যায় না। ধর্মপুস্তক ও র্‌ ১৩৩ আত্মজ্ঞান শান্্রসমূহ উচ্চ হইতে উচ্চতর ব্যবহারিক সত্যসমূহের কথা স্মরণ করাইয়। দেয় মাত্র। কিন্তু উহাদের দ্বারা মানুষ সর্ধ্বোচ্চ সত্যন্বরূপ আত্মজ্ঞান লাভ করিতে পারে না। ধাহারা মনে করেন শুধু ধর্মগ্রন্থ ও শান্ত্র-অধ্যয়নের দ্বারাই আধ্যাত্মিক তত্ব সাক্ষাৎকার করা যায় তাহারা ভ্রান্ত । ঈশ্বরের অস্তিত্, ভগবংপ্রেম, মুক্তির অবস্থা ইত্যাদি সম্বন্ধে শাস্ত্রে বণিত আছে মাত্র; কিন্ত যেমন পঞ্জিকার মধ্যে সমস্ত বৎসরের বারিবর্ধণের পরিমাণ লিখিত থাকিলেও উহাকে নিংড়াইলে একবিন্দুও জল পাওয়া যায় না সেইরূপ সমস্ত শাক্গ্রন্থকে মন্থন করিলেও আধ্যাত্মিক সত্যসকলের বিন্দুমাত্রও উপলব্ধি হয় না। সমস্ত শাস্তরগ্রন্থে বণিত তত্বের অর্থ জানিতে হইলে প্রথমে উহাতে বণিত সত্যের উপলব্ধি করিতে হইবে। এই কারণেই পূর্বকথিত সেই ব্যক্তি শাস্ত্র-অধ্যয়ন প্রভৃতি অনুষ্ঠান ত্যাগ করিয়া আত্মজ্ঞান লাভের উদ্দেশ্তে কোন এক আত্মজ্ঞানবান্‌ গুরুর নিকট শ্রন্ধাবনত চিত্তে গমন করিলেন। এক্ষণে তাহার আর অন্ত কোনও প্রকার বাসন। ছিল না, এমন কি তিনি ন্র্গে যাইতেও চাহেন না, আত্মজ্ঞান লাভ করাই তাহার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য। ইহা ভিন্ন তিনি অন্ত কিছুতেই সন্তুষ্ট বা সখী ১৩৪ আত্মপাক্ষাৎকার হইবেন না। যে দিব্যজ্ঞানরূপ অমৃতধারা আত্মততৃজ পুরুষের মধ্যে অবিশ্রান্ত প্রবাহিত হয় সেই অমৃতধারা আন্বাদন. করিতে এখন তিনি উৎস্থুক। এই স্থুল নশ্বর দেহটিই জীবের সমগ্র সত্তা নয় এবং ইন্দ্রিয়ের নিয়ন্ত্রনকারী মনও প্রতি মুহুর্তে পরিবর্তনশীল, সুতরাং তাহারা কেহই অবিকারী ও অপরিণামী আত্মা হইতে পারে না। শীস্তাদি অধ্যয়নের দ্বারা ইহা অবগত হইলেও তবুও তাহার আত্মজ্ঞান পিপাসার নিবৃত্তি হয় নাই। এক্ষণে সেই অপরিবর্তনশীল ও নির্র্ধিশেষ পরমসত্যের --আত্মার আত্মা এবং সমগ্র বিশ্বচরাচরের একমাত্র শাস্তা ও নিয়ন্তার অনুসন্ধানে তিনি ব্যগ্র হইয়াছিলেন। এজন্য একান্ত ভক্তির সহিত ব্রহ্মবিদ্‌ সব্গুরুর পদপ্রান্তে প্রণত হইয়া তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন £ “ভগবন্‌, কে এই মনকে শাসন করিতেছে? কোন্‌ শক্তির প্রেরণায় মন আপনার যাবতীয় কন্দধ সম্পাদন করিতেছে? কাহার শক্তি আমাদের দেহের মধ্যে অবস্থিত প্রাণ এবং ইন্দ্রিয়শক্তিগুলিকে নিয়মিতভাবে চালাইতেছে ? কি কারণে আমরা এইরূপ কার্যে প্রবৃত্ত হই এবং এই কর্ম্প্রবুত্তির কারণই বা কি? কাহার ইচ্ছায় সমস্ত মানব বাক্য উচ্চারণে সমর্থ হইতেছে? এই দৃশ্যলমূছের ভ্রষ্টাই বা কে? কোন্‌ শক্তি চক্ষু, কর্ণ ১৩৫ আত্মজ্ঞান এবং অন্তান্য ইন্দ্রিয়গুলিকে নিজ নিজ কর্মে নিয়োজিত করিতেছে ?” ১ | এই প্রশ্রগুলি অবলম্বন করিয়া কেনোপনিষৎ আরম্ত হইয়াছে। লিখিবার কলাকৌশল উদ্ভাবিত ও প্রচলিত হইবার বছুশতাববী পুর্বে ভারতবাসীদের মধ্যে বহ্ছ পুরুষ ধরিয় মুখে মুখে এই উপনিষদের শিক্ষ। প্রচলিত হইয়া আমসিতেছিল। ইহা হইতে বুঝিতে পারা যায় যে, এই উপনিষং কত ম্ুপ্রাচীন এবং ইহার উপদেশাবলীও কত মহান্‌! সেই প্রাচীন যুগের প্রশ্নগুলির ভিতরে ভাবের গাভভীধ্য ও গভীরতা একবার ভাবিয়া দেখুন। আমরা জানি যে, আমাদের মন সর্বদা চঞ্চল; এই মুহুর্তে নৃতন ভাব নূতন চিন্তা মনে উদিত হইতেছে, আবার ঠিক তাহার পরমুহূর্তেই উহা! কোথায় লীন হইতেছে । মন অবিরত একস্থান হইতে অন্যস্থানে ছুটিয়া বেড়াইতেছে। ইহা কখনও ভারতবর্ষে, কখনও ইংলাণ্ডে, আবার কখনও চন্দ্র, সৃধ্য, নক্ষত্র এবং অন্থান্ত গ্রহমগ্ডলে ১1 পকেনেফিতং পততি প্রেষিতং মনঃ, কেন প্রাণঃ প্রথমঃ টপ্রতি যুক্তঃ। কেনেষিতাং বাঁচমিমাং বস্তি, চক্ষুঃ শ্রোত্রং ক উ দেবো যুনক্তি ॥” --কেনোপনিষৎ' ১১ ১৩৩৬ আত্মসাক্ষাৎকার যা চলিতেছে । এইজন্যই শিষ্যুটি গুরুর নিকট প্রশ্ন করিয়াছিলেন ঃ “কাহার দ্বার! নিয়োজিত হইয়৷ মন অবিরাম চঞ্চলভাবে ছুটিয়া বেড়ায় ? ইহার উত্তরে আচার্যযদেব বলিলেন £ “যিনি শ্রোত্রের শ্রোত্র, মনের মন, বাক্যের বাক্য, ইন্দ্রিয়ন্ত্রের সমস্ত কার্যের নিয়ন্তা এবং যাবতীয় দৃশ্যমান বস্তুর দর্শনকর্তী, তিনিই উহা করিয়া থাকেন।২* এই উত্তরটির অর্থ কি তীহা এখানে বিশদভাবে দ্রেখা যাকৃ। "শ্রবণ করা'--এই বাক্যের দ্বারা আমর! কি বুঝিয়া থাকি? যে শক্তির দ্বারা এই ভাঁবটি আমাদের অন্তরে জাগরিত হয় তাহাকেই শব্দের দ্বারা বাহিত শ্রবণকার্ধ্য বুঝায়, অথবা ইন্ত্রিয়ের যে শক্তি শব্দকম্পনকে পরিচিত করায়, অর্থাৎ কম্পনটির অস্তিত্ব জ্ঞাপন করায় তাহাকেই শ্রবণ-ব্যাপার বলে। স্থতরাং ধাঁহার সাহাযা ব্যতীত কোনও শব্দই শ্রবণ করা যায় না! সেই শ্রবণশক্তির উন্মেষকারী ও উদ্ভাসককে শ্োত্রের শ্রোত্র বুঝায়। আচাধ্যের উত্তরের তাৎপর্য বা ভাবার্থ এই যে, যিনি মনের প্রেরণ! ও কাধোর ২। "শ্রোত্রন্ত শ্রোত্রং মনসে। মনে! যদ্‌ বাচো। হ বাচং স উ প্রাপ্ত প্রাণশচকষষষ্চ্ুঃ |” -কেনোপনিষৎ ১৯ ১৩৭ আত্মজ্ঞান নিয়নত্ররকারী তিনিই শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশকি, চিস্তাশক্তি ও বাক্শক্তির উন্ভাসক ব৷ প্রকাশক এবং তিনিই আমাদের ইন্দ্রিয়যন্ত্রাদির সমস্ত কার্্যের জ্ঞাত! । চক্ষুর চক্ষুন্যরূপ--ইহার অর্থও এ প্রকার। ইন্দ্িয়ের যে কার্যের দ্বার! দ্রষ্টব্য বস্তু প্রতিভাত হয়, অর্থাৎ আমাদের নিকট বস্তুটি পরিচিতরূপে প্রকাশিত হয় তাহাকেই দর্শন-ক্রিয়ার ব্াাপার বলে। জ্ঞান বা বুদ্ধি উৎপাদন করিতে দর্শনেন্দ্রিয়ের কোনও ক্ষমতা নাই৷ দর্শনকারী ব্যক্তি যতক্ষণ গ্রজ্ঞাচক্ষুসম্পন্ন থাকেন, অর্থাৎ যতক্ষণ তাহার “অহং পশ্যামি' বা “আমি দর্শন করিতেছি এইরূপ জ্ঞানটি থাকে ততক্ষণই দর্শনশক্তিটি তাহাতে জাগ্রত থাকে । দর্শনেন্দ্িয়ের যন্ত্রগুলি যথা চক্ষু, অক্ষিগোলকের বিল্লি (9008), চক্ষুর সমস্ত স্সাযু, মস্তিফধের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোষ (0:810-06119) ইত্যাদি ষ্টব্য বস্তু বা কোনও ব্ণসম্বন্ধে জ্ঞান উৎপাদন করিতে একেবারেই সক্ষম নয়। কোনও মানবের মৃত দেহে পূর্বোক্ত দৈহিক সংস্থানগুলি অবিকৃত থাকিতে পারে, কিন্তু তাহ! সত্বেও এ দেহ কোনও বর্ণ বা কোনও দৃশ্ঠ অনুভব করিতে সক্ষম হইবে না। কেবলমাত্র জড় দেহটি স্বাধীনভাবে কোনও বাহাবস্ত দেখিতে বা তাহা অনুভব করিতে পারে না। এইবূপে ১৩৮ আ'ত্মনাক্ষাৎকার আমাদের অনুভূতিগুলির বিশ্লেষণ ও বিচারের দ্বার! আমর! বুঝিতে পারি যে, সমস্ত ইন্দ্রিযযস্ত্রেরে জ্ঞান শক্তিবিহীন বা অচেতন । চৈতন্তময় আত্মা সমস্ত ইন্দ্রিয়ের যাবতীয় ক্রিয়ার প্রকাশক ; তিনিই দর্শনবর্তা, শ্রবণ- কর্তা ও অনুভবের কর্তা । আত্মাই আমাদের অন্তরের মধ্যে চিন্তারাজির উৎপাদক ও কর্তারূপে বর্তমান। সেই জ্ঞান ও চৈতন্যের ঘনীভূত প্রকাশরূপ আত্মাই সর্বপ্রকার জ্ঞান, ও অনুভূতির মূলম্বরপ এবং মন ও ইন্দ্রিয়গণের কার্য্যনিয়ামক। যখনই আমরা প্রজ্ঞ। অথব! আত্মচৈতন্তের কারণকে উপলব্ধি করিতে পারিব তখনই মনের নিয়ন্ত্রণকারী শক্তিকে আমরা বুঝিতে সক্ষম হইব । স্পন্দন অথবা কম্পনের ফলে শ্ুক্মতর অবস্থায় পরিণত পরমাণুকেই বেদান্তে “মন; বলিয়া অভিহিত কর! হয়। মনের এই উপাদানের কম্পন (ড1078000) হইতেই সর্বব- প্রকার বোধশক্তি ও অনুভব করার ক্রিয় উদ্ভব হইয়। থাকে এবং যে সকল বস্তু স্ুল জড়-পরমাথুর কম্পনের দ্বার! প্রকাশিত হইতে পারে ন! ইহা তাহাদিগকে প্রকটিত করে। সত্বগুণসম্পনন অতিনুক্ম পরমাণুরাশির কম্পনই মনের যাবতীয় বৃত্তি ( £0100100 )। কিন্তু মনের এঁ উপাদানের কম্পনের দ্বারাও জ্ঞান বা প্রজ্ঞা ( চৈতন্য ) উৎপন্ন হয় না। বৃত্তি স্বভাবতঃই জ্ঞানশক্তিবিহীন বা অচেতন। ১৩৪৯ আত্মজ্ঞান একখণ্ড লৌহকে অগ্নিকৃণ্ডের মধ্যে রাখিলে উহা! যেরূপ এ অগ্নির মতই জ্বলস্ত লোহিতবর্ণ ও তাহার দাহিকা- শক্তিবিশিষ্ট হয় সেরূপ মন পদার্থটিও চৈতন্যময় আত্মার স্পর্শে আমিলে তাহা চেতনধম্মী বলিয়া আমাদের নিকট প্রতীয়মান হয়। প্রজ্ঞানঘন আত্মা যেন চুম্বকের মত মনরূপী লৌহখগুকে আকর্ষণ করিয়া থাকেন যখন একখগড লৌহকে চুম্বকের নিকট রাখা যায় তখন লৌহখগুটি তাহার দ্বারা আকৃষ্ট হইয়া নড়িতে থাকে; কিন্তু বাস্তবিক লৌহের নিজের উক্ত প্রকারে নড়িবার ক্ষমতা নাই; লৌহখণ্ড চুম্বকের নিকট অবস্থান করিলে অথব। উহার সংস্পর্শে আসিলে তাহার দ্বারা আকৃষ্ট হইয়াই লৌহের গতিশীলতা দেখাইয়! থাকে। চুম্বকের সান্লিধাই যেমন লৌহখগুটির মধ্যে গতিশীলতা আনয়ন করে, আত্মার সান্নিধ্ই সেইপ্রকারে মনরূপ বস্তুটিকে ক্রিয়াশীল করিয়া থাকে। কিন্তু ইহা মনে রাখিতে হইবে যে, আত্মা মনোরাজ্যের সীমার মধ্যে আবদ্ধ নহে । কারণ, তিনি দেশ ও কালের সর্বপ্রকার সম্বন্ধের অতীত । আচাধ্যদেব বলিতে লাগিলেন £ এই আত্মাকে বিদিত হইয়। তত্বদর্শী জ্ঞানীবাক্তিরা পার্থিব বাসনাদি হইতে মুক্তি লাভ করিয়া অমৃতত্ব প্রাপ্ত হইয়া থাকেন। ধাহারা সর্বপ্রকার জ্ঞানের অধিষ্ঠান সেই আত্মাকে ১৪০ আত্মসাক্ষাৎকার জ্ঞাত হইয়াছেন তাহারাই অমৃতত্ব লাভ করেন। কিন্তু ধাহারা আত্মাকে জানিতে পারেন নাই, তাহারা স্থূল দেহে এবং ইন্দ্রিয়াদিতেই আসক্ত হইয়া থাকেন এবং তাহার জন্য তাহাদিগকে বারবার জন্ম-মৃত্যুর বশবর্তী হইতে হয়। আমাদের যথার্থ স্বরূপ বা আত্মাকে জানিতে পারিলে আমরা অমৃতত্ব লাভ করি- ইহা আত্মজ্ঞানের বিভিন্ন ফলের মধ্যে অন্যতম একটি ফল। যদিও বেদাস্তদর্শনের মতে আত্মার মৃত্যু নাই এবং অমরত্বই আমাদের জন্মগত অধিকার তথাপি যতদ্দিন না আত্মাকে অবিনাণী বলিয়া আমরা উপলব্ধি করিতে পারি ততদিন আমাদের এ অমৃতত্ব লাভ হয় না। "আমরা বিনাশশীল”-যে পধ্যন্ত এই সংস্কার আমাদের মধ্যে আছে সে পধ্যস্ত আমাদের সৃতা-ভয় থাকিবে। আত্মার অমরত্ব উপলব্ধি করিলেই সমস্ত ভয় চলিয়া যাঁয়। অজ্ঞানতার জন্যই আমাদের মৃত্যু-ভয় উপস্থিত হয় এবং সেজন্যই আমরা যে অধৃতের সন্তান ও মৃত্যুর অতীত--এই কথা তুলিয়া যাই, আর সঙ্গে সঙ্গে আমরা দেহ ছাড়া আর কিছু নহি' এই সংস্কারের বশবর্তী হইয়! মৃত্যুর অধীন হইয়া পড়ি। এইরূপ বিনাশশীল ও নশ্বর স্থুল দেহটির সহিত একীভূত হইয়! অথবা! দেহের সহিত নিজেকে এক ১৪১ : আত্মঙ্জান ভাবিয়া আমরা মৃত্যুকে ভয় করিতে থাকি এবং ছুঃখে ও নৈরাশ্থটে কাতর হইয়া পড়ি। দেহ নশ্বর ও তাহার ধ্বংস অনিবাধ্য । অতএব আত্মাকে সেই নশ্বর দেহের সহিত এক বলিয়া বৌধ করিলে কিরূপে মৃত্যু-ভয় হইতে আমরা যুক্ত হইতে পারি? এই জড় দেহটি আত্মার ক্ষণিক আবাসস্থল বা আধার--এই ভাবটি যিনি উপলব্ধি করিতে পারিয়াছেন তাহাকে আর মৃত্যু-ভয়ে কাতর হইতে হয় না। যিনি এই মহান্‌ সত্যটি যথাযথভাবে জানিয়াছেন যে, আত্মাই কতকগুলি বাসনা ও উদ্দেশ্ঠ চরিতার্থের জন্য এই দেহযন্ত্রটি নিশ্মাণ করিয়া থাকেন তিনিই ভয়কে অতিক্রম করিতে পারিয়াছেন। এই কারণে শ্রুতিতে উক্ত হইয়াছে £ পাহারা আপনাদের যথার্থ স্বরপের বা আত্মার জ্ঞান লাভ করিয়াছেন তাহাদিগকেই জ্ঞানী বল! যায় এবং দেহটি ংস হইলে তাহারা জন্ম-মৃত্যুর রাজ্য অতিক্রম করিয়া চলিয়া যান.।৮৩ এই আপেক্ষিক জগতে ইহাই একমাত্র অভীষ্ট বস্তু । একটি বিশেষ উদ্দেশ্ট সাধন করিবার জন্যই আমরা পৃথিবীতে আসিয়াছি। এখন আমরা মনে করিতেছি যে, বিষয়-সম্পত্তির ভোগ, ব্যবসায়ে উন্নতিঙগাভ,. বাসনা. ৩| “--অভিমৃ্য ধীরাঃ, প্রেতাশ্মল্লে।কাদমৃতা। তবস্তি ॥--কেনোপনিষৎ ১২ ১৪২ আত্মসাক্ষাৎকার চরিতার্থ ও ইন্দ্রিয়-বিলাসই এই জীবনের চরমলক্ষ্য। কিন্তু এমন একদিন আসিবে যখন আমর! বুঝিতে পারিব যে, এই বিষয়-এশ্বর্ধ্য প্রভৃতি সমস্তই ক্ষণস্থায়ী; জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্ট ইহ1 অপেক্ষা আরও উচ্চতর। অধিকতর স্থায়ী জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্ঠ বুঝিয়া উঠা বড়ই কঠিন; কারণ মানব-জীবনের উদ্দেশ্য যথার্থভাবে পরিপূর্ণ হইয়াছে কিনা তাহা বুবিবার সঠিক আদর্শ এই পৃথিবীতে অতি অল্প লোকেই প্রাপ্ত হয়। আমাদের প্রত্যেককেই জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্টটি কি তাহা আবিষ্কার করিতে হইবে। সেই আদর্শ আত্মজ্ঞান লাভ ব্যতীত আর কিছুই নহে । আত্মজ্ঞান হইতেই শাশ্বতী মুক্তি লাভ হয়? এই আত্মজ্ঞানের দ্বারাই আমর সমস্ত কাম্য বস্ত্র বা বিষয়কে প্রীপ্ত হইতে পারি। মানবের প্রকৃত স্বরূপ বা আত্মার জ্ঞানলাভ অপেক্ষা এই জগতে শ্রেষ্ঠতর বস্তু আর নাই। বর্তমানে আমাদের অধিকারে যে পরিমাণ জ্ঞান আছে তাহা অসম্পূর্ণ এবং ইহা সেই সর্বজ্ঞ শুদ্ধ্ঘভাব আত্মার আংশিক প্রকাশমাত্র। আমাদের বুদ্ধিতে আত্ম! দর্পণের ছায়ার শ্ায় প্রতিবিদ্বিত হয়। এই বুদ্ধি সীমাবদ্ধ ও অসম্পূর্ণ এবং সেইজন্য ইহাতে আত্মার প্রতিফলনও অসম্পূর্ণতার দোবযুক্ত । কিন্তু যখনই সর্বপ্রকার মলিনত। ও অসম্পুর্ণত। চলিয়৷ যাওয়ার ফলে বুদ্ধি নির্মাল হয় ১৪৩ আত্মজ্ঞান তখনই যথার্থ জ্ঞান আমাদের অন্তরের মধ্যে সমুদিত হয়। একটি দর্পণ ধুলিসমাচ্ছন্ন হইলে তাহাতে যেরূপ নৃর্যের আলোক প্রতিফলিত হয় না, বুদ্ধিরপ দর্পণও সেইরূপ সংসার-বাসনারূপ ধুলিজালে মলিন ও সমাবৃত হইলে দিব্যজ্ঞানের সুর্ধ্যরূপ আত্মার আলোকরশ্মি তাহাতে প্রতিভাসিত হয় না। চিত্তকে শুদ্ধ, বুদ্ধিকে নিম্মল এবং মেই পরমসত্য সম্বন্ধে শিক্ষা করিতে হইলে আমাদের একজন তত্জ্ঞ ও সিদ্ধগুরুর সাহায্য প্রয়োজন । প্রকৃতপক্ষে জ্ঞান ব৷ প্রজ্ঞা এক ভিন্ন বনু নহে এবং ষেজ্ঞান আমাদের আছে যখন তাহার দ্বারা আমরা জন্ম- মৃত্যুর অতীত আত্মাকে উপলব্ধি করিব তখনই আমাদের এই ক্ষুদ্র জাগতিক জ্ঞানও দিব্যজ্ঞানের অসীমত! লাভ করিবে । অতএব ধাহারা আত্মজ্ঞান লাভ করিয়াছেন তীহারা এই জীবনেই মৃত্যুকে অতিক্রম. করিয়। অমৃততে প্রতিষ্টিত হইয়াছেন । যিনি মনের নিয়ন্তাঃ দৃশ্ঠের দ্রষ্টা এবং ধাহাকে জানিয়া লোকে অমৃতত্ব লাভ করে এ শিশ্যটি সেই আত্মার দর্শন লাভ : করিতে .অভিলাষী হইলেন। তাহাতে তাহার গুরুদেব বলিলেন £ দপ্রর্শনশক্তি'র তো আত্মাকে প্রকাশ করিবার কোনও ক্ষমতা নাই ।”ঃ ৪। পন তত্র চ্ষুরগচ্ছিতি * 1”--কেন ১1৩ ১৪৪ আত্মসাক্ষাৎকার তখন শিষ্তটি চিন্তা করিয়া বলিলেন £ “আচ্ছা, যদি চক্ষুর আত্মদর্শন করাইবার ক্ষমতা ন৷ থাকে, অন্ততঃ আত্মা কিরূপ, তাহার বর্ণনা তো করা যাইতে পারে ?” আচাধ্যদেব উত্তর করিলেন £ প্বাক্য তাহার বিষয় বর্ণন। করিতে অক্ষম; মনও সেখানে অর্থাৎ আত্মার রাজ্যে যাইতে পারে না। যখন আমরা তাহাকে মন ও বুদ্ধির সহযোগে জানিতে পারি না তখন কী প্রকারে তাহার বিষয় বাক্যের দ্বারা শিক্ষা দেওয়া সম্ভবপর হইতে পারে ?* আত্মাই যাবতীয় চিন্তার কর্তা । চিন্তা- রাজ্যের অতীত যে আত্ম তাহারই দ্বারা পরিচালিত হইলে মন চিন্তা করিতে পারে। চিন্তা করার কার্য্যটি হইতেই প্রজ্ঞার অস্তিত্ব সম্বন্ধে আভাস পাওয়া যায় এবং প্রজ্ঞা না থাকিলে কাহারও অন্তরে কোন প্রকার চিস্তারই উদয় হইতে পারে না। সুতরাং যাহ! সর্বপ্রকার চিন্তার বহিঃপীমায় ও অতীত প্রদেশে আছে তাহাকে মন ও বুদ্ধি কিছুতেই ধরিতে পারে না।* যখন মনই এই আত্মার বিষয় চিন্তা করিতে পারে না তখন চক্ষু কী প্রকারে এই আত্মাকে দেখিতে পাইবে? ৫ | প্যন্সনস। ন মনুতে ক্ষ ।--কেন ১৬ ৬। প্ন বাগ্‌ গচ্ছতি নে মনঃ1”স্কেন ১৩ ১৪৫ ১৩ ধাহার সংস্পর্শে আসিবার পরে দৃষ্টিশক্তির দর্শন করাইবার ক্ষমতা প্রকাশ পায় তাহাকে দৃষ্টিশক্তি কিরূপে দেখাইতে পারিবে? ইন্দরিয়ানুভূতির ছ্বারা আত্মাকে জানিতে পারা যায় না। আচাধ্যদেব বলিলেন ঃ “আত্মা জ্ঞাত বস্তু হইতে বহু দূরে এবং অজ্ঞাত বন্তুরও বহু উর্ঘে-_-এই উপদেশ আমর! সেই প্রাচীন আচাধ্যবৃন্দের নিকট শ্রবণ করিয়াছি ।”* অতি প্রাচীনকাল হইতে সত্যত্রষ্ট। খধিগণ বলিয়া আসিতেছেন যে, আমাদের যথার্থ স্বরূপ বা আত্ম যেমন জ্ঞাত বা জ্ঞেয় নহেন সেইরূপ আত্মা আবার অজ্ঞাত বা অজ্ঞেয়েও নহেন। সাধারণত আমরা ব্যবহারিক জগতে “এই বস্তটি জানি অথবা 'এই পুস্তক সম্বন্ধে আমার জ্ঞান আছে এইরূপ ভাষা প্রয়োগ করিয়া থাকি; কিন্তু এইপ্রকার জ্ঞানের মতন আত্ম৷ সম্বন্ধে কোনও জ্ঞান হইতে পারে না। অর্থাৎ আত্মা এইরূপে জ্ঞাত হন না অথব৷ আত্মা উক্ত পুস্তকটির মতন জ্ঞাতব্য বিষয়ও হইতে পারেন না। এক্ষণে এই বিষয়টি অপেক্ষাকৃত পরিস্ফুটভাবে বুঝিতে চেষ্টা করা যাঁউক। যখন আমর বলি যে “অমুক ৭। পঅগ্যদেব তদ্বিদিতাদথে। অবিদিতাদধি। ইতি শুশ্রম পূর্বেষাং ষে নস্তদ্ব্যাচচক্ষিরে |%--কেন ১৪ ১৪৬ আত্মসাক্ষাৎকার বস্তটি আমি জানি তখন এ বস্তর সম্বন্ধে জ্ঞান আমাদের বুদ্ধি দ্বার প্রকাশিত আপেক্ষিক জ্ঞান ভিন্ন আর কিছুই নহে, অর্থাৎ আমার এ বুদ্ধির সাহায্যে আমি এ বস্তরটিকে জানিতে পারিলাম। আবার ইহাও হইতে পারে যে, যে-বুদ্ধি দিয়া আমি পুর্বে এ প্রকার বস্ত জানিতে পারিয়াছিলাম উহা সেই একই প্রকার বস্তু বলিয়াই এখনও সেই বুদ্ধি দিয়া উহাকে আবার জানিতে পারিলাম । এইরূপ জ্ঞানকেই “আপেক্ষিক জ্ঞান বলে। আবার যখন বলি যে অমুক বস্তুটি জানি না তখনও এ না-জানিতে পারা-রূপ জ্ঞানটিও বুদ্ধির আপেক্ষিক জ্ঞান। তাহার পর আবার যে সমস্ত বস্তুর ইন্দ্রিয়ের সহিত সম্বন্ধ আছে বা যাহার! ইন্জ্িয়গ্রাহ তাহাদেরই আমর! বুদ্ধির দ্বারা জানিতে পারি। এই বুদ্ধি কোন-নাঁকোনও প্রকারে ইন্দ্রিয়ের শক্তিগুলির অধীন; সুতরাং ইহার ক্ষেত্রও অত্যন্ত সীমাবদ্ধ । কারণ ইন্দ্িয়গুলিকে যদি একটি বৃত্তের মধ্যে অধিষিত বলিয়া মনে করি, উহাদের শক্তিগুলি ষদি এ বৃত্তের পরিধি মনে করি এবং উহাদের শক্তি- গুলি বদি এ বৃত্তের পরিধি অতিক্রম করিয়া না যাইতে পারে তাহা! হইলে একটু চিন্তা করিলেই বুঝিতে পারা যাইবে যে, বৃত্তটি অতি ক্ষুদ্র; কারণ ১৪৭ আত্মজ্ঞান ইন্দ্িয়শক্তির সীমা অতিশয় ক্ষুদ্র। দৃষ্টাস্তদ্ারা ইহা! বুঝিয়া দেখা যাউক। আমরা কর্ণের ছারা শব্দ শ্রবণ করি। যদি বায়ুর কম্পনটি কোন একটি নির্দিষ্ট মাত্রার অন্তর্গত থাকে তবে শব্দ শুনিতে পাওয়া যাইবে। আর যদি এঁ কম্পন নিদ্দিষ্ট মাত্রার বেশী বা কম হয় তাহা হইলে কোন শব্দই শুনিতে পাওয়া যাইবে না। এমন কি যদি ভীষণ একটি শব্ধ হয় তাহা হইলেও মাত্র ছুইটির মধ্যে উক্ত শবের কম্পনের সংখ্যা না থাকিলে আমাদের ক্ণ এ শব শ্রবণ করিবে না। চক্ষু সম্বন্ধে এইরূপ হইয়া থাকে । কোনও বস্তু বিশেষ দুইটি সীমার মধ্যে অবস্থান করিলেই উহাকে দর্শন করিতে পারা যায়। তাহা হইলে এক্ষণে আমরা বুঝিতে পারিতেছি যে, আমাদের বুদ্ধিটি ইন্ড্িয়শক্তিগুলির অধীন হইয়া কিভাবে সীমাবদ্ধ ; সুতরাং ইহা! বলিতে হইবে যে, ইন্দ্রিয়ানু- ভূতির ছারা যে জ্ঞান লাভ হয় তাহা গৌণ জ্ঞান। ইহা আত্মাকে প্রকাশ করিতে পারে না। এইজন্যাই শাস্ত্রে বলা হইয়াছে আত্মা জ্ঞাত বস্তু হইতে বহুদূরে অবস্থান করেন।” আবার যখন আমরা বলি যে, “এই বস্তুটি জানি না তখন এ কথার দ্বার! আমরা এই বুঝিতে পারি আমাদের এ বস্তু ১৪৮ আত্মসাক্ষাৎকার সম্বন্ধে অজ্ঞতার জ্ঞানটিই আছে, অর্থাৎ আমরা এ বস্তটিকে বুঝিতে পারি না অথবা বুদ্ধির দ্বারা উহাকে জানিতে পারি না--এই জ্ঞানটিই আমাদের আছে। বুদ্ধির দ্বারা কোন বস্তুর সম্বন্ধে জ্ঞানের অভাবকেই অচ্ঞত। বলে এবং ইহাঁকেই আমরা গৌণ জ্ঞান বলিয়াছি। ইহা ছাড়া আর এক প্রকার জ্ঞান আছে যে জ্ঞান বুদ্ধি অথবা ইন্দরিয়ামুভূতি সাপেক্ষ নহে এবং এই জ্ঞানই যথার্থ আত্মাকে প্রকাশিত করিয়া দেয়। যে অনুভূতির দ্বার আমাদের এরপ জ্ঞান হয় যে, “এই বস্তুটি আমি জানি' সেই জ্ঞানটি যে আত্মা হইতেই আসিয়া থাকে ইহা আমাদের অজ্ঞাত। সুতরাং ইহ! বলা যাইতে পারে যে, আত্ম! জ্ঞাতও নহেন বা অন্ঞাতও নহেন। কিন্তু এই আত্মা অজ্ঞতা এবং যাবতীয় আপেক্ষিক জ্ঞানের অতীত। “আমাদের পূর্বতন আচার্য্যদিগের নিকট ইহাই শুনিয়াছি।৮১ যদিও এই কেনোপনিষৎ সামবেদের অন্তর্গত এবং অতি প্রাচীন তথাপি যে সমস্ত পুর্ববন্তাঁ সত্যদর্শী খষির নিকট হইতে পুরুযানুক্রমে এ সত্যের শিক্ষা চলিয়া আসিতেছে সেই পূর্বতন দিব্যত্রষ্্টা ঝষিদিগকে উল্লেখ ৯। “ইতি শুশ্রম পূর্বেব্ষাং যে নম্তব্ব্যাচচক্ষিরে ॥ _কেনোপনিষৎ ১৩ ১৪৯ আত্মজ্ঞান করিয়াই আচার্ধাদেব পূর্ববোন্ত কথাটি বলিয়াছিলেন। তাহার পর আচাধ্যদ্দেব আবার বলিলেন £ “বাক্যের ছারা ধাহাকে প্রকাশ করা যায় না, বরং যাহার সাহাষ্যেই সমস্ত বাক্য উচ্চারিত হয় তিনিই পরমাত্মা অথবা ব্রহ্ম সাধারণ লোকে বাহার উপাসন। করে তিনি ব্রহ্ম নহেন।%২ বস্তুতঃ ঈশ্বরে আমরা যে সমস্ত গুণ আরোপ করি, তাহা তাহার যথাযথ গুণ নহে। যেমন আমরা বলি ঈশ্বর সদ্‌গুণসম্পন, কিন্তু বাস্তবিক তিনি তো৷ কেবল সদ্গুণসম্পন্ন নহেন--তিনি ভাল ও মন্দ, শুভাশুভ, দোষ ও গুণ সব্ববিধ প্রবৃত্তি ও দ্বন্দের অতীত। আমরা গুণ ও দোষ উভয়েরই পার্থক্য মনে মনে বিচার করিয়া সদৃগুণকে দৌষ হইতে পৃথক্‌ করি এবং তাহার পর এ সদ্গুণের আকারটিকে মনের মধ্যেই বন্ধিত ও বিকশিত করিয়া উহা! অনস্তের উপর আরোপ করি এবং বলিয়া থাকি যে, তিনি যাবতীয় সদ্গুণের নিদান। আমরা ভুলিয়া যাই যে, ধাহাকে আমরা উৎকৃষ্ট বলিতেছি তাহাপেক্ষা উৎকৃষ্টতর কোন কিছু আছে, আবার সেই উৎকুষ্টতর অপেক্ষা এমন উচ্চতর অবস্থা হইতে পারে যাহা সর্বশ্রেষ্ঠ । এইরূপে দেখ! যাইতেছে যে, আমরা এত ২। “্যদ্বাানাত্যু্দিতং যেন বাগত্যুগ্ততে । তদেব ব্রচ্গ ত্বং নিদ্ধি নেদং যদিদমুপাঁসতে ॥” --কেনোপনিষৎ ১৪ ১৫০ আত্মপাক্ষাৎকার ভ্রান্ত যে, ঈশ্বরকে উত্তম” বা উৎকৃষ্ট আখ্যা দিয়াই আমরা সন্তষ্ট হইয়া থাকি। ভাল ও মন্দ এই কথাগুলি আপেক্ষিক এবং সীমাবদ্ধ এবং ঈশ্বরও আপেক্ষিক রাজ্যের অতীত; সুতরাং তিনি আমাদের প্রদত্ত “উৎকৃষ্ট আখ্যারও অতীত। এইপ্রকারে ইহা দেখান যাইতে পারে যে, যে সমস্ত গুণ বা বিশেষণ আমরা ঈশ্বরে আরোপ করি, শুধু তাহাই বা কেন-যে কোন বাক্যই যাহ! আমরা উচ্চারণ করি, তাহাদের প্রত্যেকেরই ভাব ও অর্থ সীমাবদ্ধ । যর্দি আমর! আরও গভীরভাবে অনুধাবন করি তাহ! হইলে বুঝিতে পারিব যে, প্রজ্ঞাযুক্ত চিন্তার কর্তা ও বক্তা পশ্চাতে না থাকিলে কোন প্রকার চিন্তাও করা যায় না, অথবা কোন বাক্যও উচ্চারণ করা যায় না। এই প্রজ্ঞা সেই জ্ঞানন্ববূপ আত্মার আলোক হ্টতে প্রকাশিত হয়। সুতরাং আত্মাই একমাত্র চিরন্তন সত্য-বস্তু এবং ইহাকে বাক্যদ্ারা প্রকাশ কর! যায় না। এই আত্মাই বাক্যের উৎপাদক অথচ বাক্যের দ্বারা এই আত্মাকে প্রকাশ কর! যায় না। ভক্তিমার্গের সাধকগণ যে জগুণ ঈশ্বরকে উপাসনা করিয়া থাকেন, প্রকৃতপক্ষে তিনিই কি আত্ম(? অনেকে বলেন এক মহান্‌ পুরুব আমাদের জগতের বহিঃপ্রদেশে স্বর্গে অবস্থান করিতেছেন এবং তাহারই ইচ্ছা ও আদেশক্রমে আমাদের মন ও ইন্দ্রিয়াদি পরিচালিত হইতেছে ; সেই ১৫১ আত্মজ্ঞান বিরাট পুরুষই কি আত্মা? অথবা ধাহাকে আমরা 'জগংপিতা” বা! আল্লা” ইত্যাদি নামে ভক্তি-নিবেদনের ছ্বারা আরাধনা করিয়া থাকি তিনিই কি আত্মা? ধাহাকে আমরা শ্ঘর্সস্থিত পিতা? বলিয়া থাকি তিনিই কি আত্মা ? তাহা হইলে আত্মা কোন্‌ বস্তু ? শিষ্যের মনে উত্থিত উক্ত প্রকার প্রশ্নরাশি বুঝিতে পারিয়৷ তাহার গুরুদেব বলিলেন: “লোকে ধাহার আরাধনা করে, তিনি বর্গ বা আত্মা নহেন।” নাম-রূপধারী সাকার দেবদেবীর অথব! নিরাকার সগুণ ঈশ্বরের যিনি আরাধনা করেন তিনি সেই নির্ববিশেষ সত্যের বা পরব্রন্মের উপাসনা করেন না, কারণ তিনি সগুণ ও সাকার ঈশ্বরকেই পুজা করিতেছেন । নাম ও রূপ এই ছুইটি প্রাকৃতিক রাজ্যের অন্তর্গত সুতরাং এই ছুইটির বিশেষত্ব ঈশ্বরে আরোপ করিয়া তাহাকে আমরা নাম- রূপধারীরূপে কল্পনা করি। এইরূপ কল্পনা মানব-মনের থষ্টি। সেইজন্য উহ! দোষধুক্ত, অর্থাৎ আমরা! আমাদের কল্পনার সাহায্যে ঈশ্বরের একটি সাকার মৃত্তি নির্মাণ করি এবং তাহাতে আমাদের আদর্শ ভাবানুযায়ী বিভিন্ন গুণ আরোপ করিয়। প্রার্থনাদির দ্বারা তাহার আরাধনা করিয়া থাকি। প্রার্থনাগুলি মনোগত্ত ভাববিশিষ্ট বাক্যসমষ্টি মাত্র। আমর! সেই সঞ্চণ ঈশ্বরের উদ্দেন্টে এ বাক্যগুলি (প্রার্থনাসমূহ ) বিশেষ কোনও ফললাভের জন্য উচ্চারণ ১৫৭ আত্মসাক্ষাৎকার করিয়। থাকি। কিন্তু ধাহার নিকট আমরা এই সমস্ত প্রার্থনা করি তিনি আমাদের বাকৃশক্তির নিয়ামক নহেন। ধাঁহার সাহায্যে আমাদের বাকৃশক্তি নিয়ন্ত্রিত হয় তিনি চেতন্ন্বরপ আত্মা। সেই “আত্মা এই উপাসিত সঞুণ ঈশ্বর হইতে সম্পূর্ণ অতীত। বস্তুতঃ নাম- রূপধারী সগুণ ঈশ্বর নির্ব্বিশেষ ব্রহ্ম নহেন। এই উত্ভি আমাদের নিকট আশ্চর্যজনক বোঁধ হইতে পারে। তথাপি আমানের উহা অস্বীকার করিবার উপায় নাই। যে ঈশ্বরের নাম এবং রূপ আছে এবং ধাহাকে বাকোর দ্বারা বর্ণনা করা যাইতে পারে এবং মনের দ্বারা ধাহাকে চিন্তা করা যাইতে পারে তিনি কখনই বাক্য ও মনের অগোচর সেই ব্রহ্ম হইতে পারেন না । শ্রুতিতে এইরূপ উক্ত হইয়াছে ঃ “যখন ঈশ্বরকে জ্ঞাত হইয়াছি বল। যায় তখন তিনি আর ব্রহ্ম নহেন ; ধাহাকে জ্ঞাত হইয়া থাকি তিনি আমাদের কল্পন! ছাড়া আর কিছুই নহেন।৮১ ধাহাকে পুজা! করা যায় সেই সগুণ দেবতা হইতে নির্ববিশেষ ব্রহ্ম সম্পূর্ণ পৃথকৃ। যাহাকে আবার মনের দ্বারা চিন্তা করিতে পারা যায় তিনিও ব্রহ্ম নহেন। সেজন্ত আচাধ্য বলিলেন £ ১। *চিন্তয়স্তা প্রমেয়্য নিফলন্তাশরীরিনঃ | সাধকানাং হিতার্থায় ব্রক্ষণো রূপকল্পন! ১৫৩ আত্মজ্ঞান “যিনি মনের অগোচর এবং মনের দ্রষ্টা তাহাকেই তোমার আত্ম! বা! ব্রহ্ম বলিয়া জানিবে। কিন্তু লোকে যাহার আরাধনা করে তিনি ব্রহ্ম নহেন।৮২ শ্চক্ষুর দ্বার ধাহাকে দর্শন করিতে পার! যায় না, কিন্তু ধাহার সাহায্যে চক্ষু দর্শন করিয়৷ থাকে, তাহাকেই তুমি ব্রহ্ম বলিয়। জানিবে ঃ কিন্তু লোকে ধাহার উপাসন। করে তিনি ব্রহ্ম নহেন।৮”* পকর্ণ ছ্বার। যাহাকে শ্রবণ করিতে পারা যায় না, বরং কর্ণ ই ধাহার দ্বারা শবাদি শ্রবণ করে, তাহাকেই তুমি ব্রহ্ম বলিয়! জানিবে ; কিন্ত ধাহাকে লোকে পুজা করে তিনি ব্রহ্ম নহেন।”২ “লোকে ভ্রাণেন্দ্রিয় দ্বারা ধাহাকে গ্রহণ করিতে সমর্থ হয় না, বরং ধাহার সাহায্যে ভ্রাণেন্দিয় আত্রাণ করিতে সমর্থ হয়, তাহাকেই তুমি ব্রহ্ম বলিয়া জানিবে; কিন্ত জনসাধারণের দ্বারা যিনি উপাসিত হন তিনি ব্রহ্ধ ২। “্যন্মনস। ন মন্ুতে ধেনাহুর্মনো মতম্‌। তদেব ব্রন্ধ ত্বং বিদ্ধি নেদং ধদিদমুপাঁলতে ॥--কেনোপনিষৎ ১৫ ১ ্বচ্চঙ্ষুষা ন পশ্ঠতি যেন চক্ষ,ংষি পশ্ততি। তদের ব্রহ্ধ ত্বং বিদ্ধি নেদং যদিদমুপাসতে॥৮--কেনোপনিষ্ৎ ১৬ ২। প্যচ্ডোত্রেণ ন শৃণোতি যেন শ্রোত্রমিদং শ্রুতম্‌। তদের ব্রঙ্গ ত্বং বিদ্ধি নেদং যদিদমুপাসতে ॥' -কেনোপনিষৎ ১৭ ১৫৪ আত্মসাক্ষাতকার নহেন।”* এই গ্লোকগুলির অর্থ হইতে বুঝিতে পারা যায় যে, মন এবং ইন্ড্রিয়গণের পরিচালক আত্মা ও সগ্ুণ ঈশ্বর এক নহেন; কিন্তু আত্মা ও নির্ব্বিশেষ সত্যস্বরূপ ব্রহ্ম এক । গুরুদেবের নিকট আত্মা সম্বন্ধে এইরূপ উপদেশ শ্রবণ করিয়া শিষ্যটি সেই বাক্য, মন ও ইন্দ্িয়াতীত আত্মা অথবা ব্রদ্মকে ধ্যান করিবার জন্য নির্জন স্থানে চলিয়া গেলেন। তিনি কিছুকাল ধ্যানমগ্ন অবস্থায় অতিবাহিত করিলেন। এবং আত্মাকে উপলব্ধি করিতে পারিয়াছেন এই ধারণার বশবত্রী হইয়া সাধারণ জ্ঞানরাজ্যে আবার মনকে ফিরাইয়া আনিলেন এবং তাহার গুরুদেবের নিকট গমন করিয়! বলিলেন £ “আমি ব্রহ্মকে জানিয়াছি ও সেই পরম সত্য উপলদ্ধি করিয়াছি।” ইহা শুনিয়া তাহার গুরুদেব বলিলেন £ “তুমি যদি মনে কর যে, তুমি আত্মাকে জানিয়াছ তাহা হইলে স্থির জানিও যে, তুমি আত্মার ্বরূপ অতি অল্পই জ্ঞাত হইয়াছ।”১ যদি তোমার ৩। পবৎপ্রাণেন ন প্রাণিতি যেন প্রাণঃ প্রণীয়তে। তদেব বর্গ ত্বং বিদ্ধি নেদং যদ্দিদমুপাঁসতে ॥” _-কেনৌপনিষৎ ১৮ ১। ণ্যদি অনসে স্ুবেদেতি দত্রমেবাপি, নূনং ত্বং বেখ ব্রহ্নে রূপম্‌ ।৮--কেনোপনিষৎ ২1৯1১ ১৫৫ আত্মজ্ঞান বিশ্বাস হইয়া থাকে যে, তুমি নির্বর্বশেষ ব্রহ্গকে সম্ক্রূপে জ্ঞাত হইয়াছ তাহা হইলে ইহাই বুঝিতে হইবে যে, তোমাতে ও নিখিল বিশ্বে ওতঃপ্রোতঃ সেই সত্যন্বরপের অতি সামান্তই তুমি অবগত হইয়াছ। সত্য এক, উহা একের অধিক নহে। এই সত্যকে জানিয়াছ এইরূপ যদি তোমার মনে হয় তাহা হইলে বুঝিতে হইবে যে, তুমি বুদ্ধির দ্বারা তোমার গৌণ জ্ঞান অবলম্বন করিয়াই এইরূপ বলিয়াছ। ইহা নিশ্চয় জানিও যে, গৌণ জ্ঞানের দ্বারা সেই নিগুন ব্রহ্ষের স্বরূপ কখনই প্রকাশ হইতে পারে না। তুমি ব্রহ্মকে বা আত্মাকে জানিয়াছ এই বিশ্বাসকে যদি অন্তরে স্থান দাও তাহা হইলে মনের পরিচালক সেই আত্মাকে তুমি অল্পই জানিয়াছ। আর তুমি বদি এরূপ মনে কর যে, তিনি তোমার দেহের মধ্যে বাম করিতেছেন তাহা হইলে তীহার নিগুণত্ব সম্বন্ধে তুমি কিছুই বুঝিতে পার নাই। আবার তিনি তোমার দেহের বাহিরে অবস্থান করিতেছেন এইরূপ ভাবেই যদি তুমি তাহাকে জানিয় থাক তাহা হইলে তোমার সেই পরমসত্যের কিছুই উপলব্ধি হয় নাই। আবার তুমি যদি সেই আত্ম! বা ব্রহ্মকে ঈশ্বর বা জগতের স্থষ্টিকর্তারপেই মাত্র জানিয়৷ থাক তাহা হইলেও তুমি তাহার সম্বন্ধে অতি অন্পই বুঝিতে পারিয়াছ । ১৫৬ আত্মসাক্ষাৎকার এখানে প্রন্ন হইতে পারে যে, যদি আমাদের দেহের মধ্যেই আত্মা বাস করিতেছেন এইরূপ উপলব্ধি হয় তাহ হইলে কি করিয়া তাহার বিষয় অতিঅন্পই জান৷ হইবে? বাস্তবিকই এ অবস্থায় আত্মাকে অতি অল্পই জান! হইল, কারণ যিনি মনের পরিচালক তিনি তো! আর একটিমাত্র স্থানেই আবদ্ধ থাকিতে পারেন না। আত্মার পরিব্যাপ্তি কোন দেশের মধ্যে লীমাবদ্ধ নহে; ইনি দেশ- সীমার অতীত, সুতরাং আত্মা কেবল একটি স্থানেই আছেন আর অপর স্থানে নাই এইরূপ জ্ঞানের দ্বারা সেই পরম অসীম সত্যের সম্যক উপলব্ধি কখনই হইতে পারে না। আবার যদি আমরা মনে করি যে, তিনি আমাদের অন্তরে নাই, কিন্তু আমাদের বহিঃপ্রদেশে আছেন তাহা! হইলে তাহার সর্ব্বব্যাঁপিত্ব এবং দেশ ও কালের অতীত ভাবটির উপলব্ধি হয় না। যাহা দেশ ও কালের এবং উহাদের সম্বন্ধের মধ্যে সীমাবদ্ধ তাহার অসীমতাকে আমর! অতি সামান্য মাত্রই জানিয়াছি। এইপ্রকার উপদেশাবলী শ্রবণ করিয়া সেই আত্মজিজ্ঞা্থু শিষ্য পুনরায় উপযুক্ত স্থানে ষোগাসনে সমাসীন হইয়া ধ্যান করিতে আরম্ভ করিলেন। ক্রমশঃ তিনি চিন্তার রাজ্য অতিক্রম করিয়া সমাধির অবস্থায় উপনীত হইলেন। ১৫৭ আত্মজ্ঞান নির্ব্িকল্প সমাধির অবস্থায় কিছুকাল থাকিবার পরে তিনি আবার মন ও ইন্দ্রিয়ের রাজ্যে ফিরিয়া আসিয়া বলিলেন £$ “আমি আত্ম! বা ব্রন্মকে সম্যক্রূপে বিদিত হইয়াছি বলিয়া মনে করি না; আবার তাহাকে যে একেবারেই জানি নাই এই কথাও বলিতে পারি না। আত্ম! জ্ঞাত হইবার নহে বলিয়াই মনে করিতে হইবে যে, আত্মা একেবারেই অজ্ঞাত-_এমন নহে; যিনি এইভাবে সত্যকে জানিয়াছেন তিনি সেই ব্রহ্মকে উপলব্ধি করিয়াছেন।৮”১ তাহার উক্তপ্রকার উক্তির তাঁংপধ্য এই যে, আত্মজ্ঞান অজ্ঞান ও আপেক্ষিক জ্ঞানের অন্তর্গত নহে, ইহা উহাদের অতীত জ্ঞান। আমরা বিচার-বুদ্ধির দ্বারা যাহা-কিছু জানিয়। থাকি তাহা সেই আত্মা হইতে উদ্ভাসিত জ্ঞানালোকের সাহাষ্য ভিন্ন জানিতে পারি ন1। আত্মার জ্বাতা আর কেহ নাই যিনি মন ও চিন্তাসমূহকে আলোক দান করিতে সমর্থ হইবেন। বস্তুতঃ আত্মাই একমাত্র নিত্য ও জ্ঞাতা। এই বিশ্বজগতে এমন কিছু নাই যাহা আত্মার জ্ঞাতা; কিন্তু এই আত্মাই আমাদের সমস্ত জ্ঞানের আকর; অর্থাৎ যত প্রকার ১। স্নাহং মন্তে সুবেদেতি নে। ন বেদেতি বেদ চ। যো নম্তদ্বেদ তদবেদ নে! ন বেদেতি বেদ চ॥” _-কেনোপনিবৎ ২৯০।২। ১৫৮ আত্মসাক্ষাৎকার জ্তান আছে তাহা আত্ম। হইতেই উদ্ভৃত।১, এই আত্মা সর্বদাই জ্ঞাতা, অর্থাৎ বিষয়ীভাবে অবস্থিত; ইনি কখনও জ্ঞে় বা জ্ঞানের বিষয় হন না। আত্মজিজ্ঞান্তু সাধক আরও বলিলেনঃ “যিনি মনে করেন যে, আত্৷ বা ব্রহ্ম জ্ঞানের বিষয় হইতে পারে না, তিনিই যথার্থ তাহাকে বুঝিতে পারিয়াছেন ; কিন্তু যিনি মনে করেন 'আমি ব্রহ্মকে জানিয়াছি' তিনি ব্রহ্মকে বথার্থ বুঝিতে পারেন নাই। ধীাহারা মনে করেন ত্রহ্গকে জ্ঞাত হইয়াছেন তাহারা ব্রন্মকে জানেন নাই। কিন্তু ধাহারা মনে করেন যে, ব্রহ্ম কখনই জ্ঞাত হইতে পারেন না, তাহারাই ব্রঙ্মাকে উপলব্ধি করিয়াছেন ।৮ উপরে লিখিত উক্তি যেন একটি প্রহেলিকার ন্যায় মনে হয়; বাস্তবিক উহার অর্থ কি হইতে পারে? যদি আমরা আমাদের অনুভূতিগুলি বিপ্লেবণ করি, তাহা হইলে আমর! কি দেখিতে পাই? মনে কর৷ যা"ক যে, আমরা কোনও একটি রূপ দর্শন করিতেছি । বিজ্ঞানের সাহায্যে ১। তত্র নিরতিশয় সর্বন্ঞত্ববীজম্--পাতগ্রনদর্শন ২। 'ঘস্তামতং তন্ত মতং মতং যস্ত ন বেদ সঃ। অবিজ্ঞাতং বিজানতাং বিজ্ঞাতমবিজানতাম্‌ ॥ -'কোনোপনিষৎ্ ২।১১।৩ ১৫৯ আত্মজ্ঞান আমরা এই জানি যে, আকাশের অর্থাৎ “ইথার” (9079) নামক পদার্থের বিশেষ একপ্রকার কম্পনের দ্বার আলোঁকরশ্মি উৎপন্ন হয় এবং রূপের অনুভূতিটি এ আলোকের সাহায্যেই হইয়া থাকে । আমাদের চক্ষুর মধ্যে অবস্থিত বিল্লীতে আলোকরশ্মি পতিত হইলে উহার মধ্যে একপ্রকার আণবিক কম্পন ও পরিবর্তন হয় এবং উহা আক্ষিক স্নায়ুমণ্ডলীর সাহায্যে মস্তিষ্কের অন্তুর্ঘতি ক্ষুদ্র কোবগুলিতে প্রেরিত হইলে উহা! হইতেও একরূপ আণবিক কম্পন উখিত হয়। তাহার পর এ কম্পনগুলিকে অনুভূতিতে পরিণত করিতে অর্থাৎ উহা ষে একপ্রকার অনুভূতি তাহার পরিচয় দিতে একজন চৈতন্য সংযুক্ত 'অহং, বা “আমি” থাকা প্রয়োজন এবং এই পরিচয় দেওয়ার ব্যাপার শেষ হইলে বুঝিতে পারি যে, আমরা! একটি রূপ দেখিতেছি। যদি উক্ত “অহং, না থাকে তাহ। হইলে কম্পনগুলি মস্তিষ্কের অন্তর্গত বিভিন্ন কেন্দ্রসমূহে যাইয়া অন্তান্ত প্রকার পরিবর্তন সংসাধিত করিতে পারে, কিন্তু তখন আর আমাদের এঁ “রূপ'সম্বন্ধে কোন প্রকার অনুভূতি হয় না। যেমন একটি দৃশ্ঠের উপর আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকিলেও যদি হঠাৎ আমাদের মন অন্য একটি বস্তুর বা বিষয়ের উপর আকৃষ্ট হয় তাহা হইলে উক্ত দৃশ্যটি চক্ষুর সম্মুখে ১৬৩ আত্মসাক্ষাৎকার থাকিলেও আমর! আর উহা দেখিতে পাইব না। এখানে আলোকের কম্পন মস্তিষ্কের অন্তর্গত বিভিন্ন কেন্দ্রসমূহে চলিয়া! গিয়াছে এবং যথাযথভাবে আণবিক পরিবর্তন হইয়াছে ও অনুভূতির নিমিত্ত শারীরিক অন্যান্ত পরিণতি- গুলি ঘটিয়াছে, তথাপি “অহণ্ড বা জ্ঞাতা বিদ্ভধমান না থাকায় দৃশ্যের অনুভূতি হইল ন৷। কম্পনগুলির অর্থ বুঝাইবার জন্য সেই চৈতম্য-সংযুক্ত “আমি” বা অহ, তখন অন্ত কোনও বিষয়ের উপর মনঃসংযোগ করিয়া আছে। কিন্তু যখনই এ “অহ উপরি উত্ত পরিবর্তনগুলি বুঝাইয়া দেয় তখনই আমাদের অনুভূতি হয়। এই ব্যাপারটি আরও গভীরভাবে অনুধাবন করা যাউক্‌। আমাদের নিশ্চয়াত্মিক। বুদ্ধির পশ্চাতে “অহং বা আমি, প্রজ্ঞাযুক্ত হইয়া অবস্থান করে। এই “অহং যদি প্রজ্ঞাবিহীন হয়, অর্থাৎ আমি” “আমার এই জ্ঞান না থাকে তাহা হইলে আলোকের কম্পনরাশি ইন্দ্রিয়দঘার দিয়! প্রবেশ করিবে এবং আমাদের মনের মধ্যে কোনরূপ অনুভূতি উৎপাদন না৷ করিয়াই বাহির হইয়। যাইবে । আবার ষদি মন অনুসভতি ও বুদ্ধির মূল হইতে পুথক্‌ অবস্থায় থাকে তাহা হইলে চৈতন্য সংযুক্ত “আমি'-র সহিত কোনরূপ সংস্পর্শে না আসিয়া অনুভূতিগুলি মনের অবচেতন স্তরে থাকিয়৷ যাইবে । যিনি ১৬১ ১৯ আত্মঙ্ঞান এই অনুভূতিরূপ জ্ঞানের মূল অধিষ্ঠানরূপে অবস্থিত তিনিই আমাদের প্রকৃত আত্মা । যখন আমর। বসিয়া থাকি তখন আমরা জানি যে আমরা বসিয়া আছি; যখন আমরা ভমণ করি তখন আমরা বুঝিতে পারি যে আমরা ভ্রমণ করিতেছি; যখন আমরা কোনও কাধ্য করি তখন আমাদের জ্ঞান থাকে যে আমর। এ কাধ্য করিতেছি । যিনি এইপ্রকার সকল কার্য্যের বা চিন্তার জ্ঞাত! তিনিই আমাদের দেহ ও মনের যন্ত্রী বা সর্ধবিষয়ের পরিচালক । উক্তপ্রকার জ্ঞান কি আমাদের আত্মা হইতে বিভিন্ন অন্য কোনও প্রকার জ্ঞান বিশেষ ? না, তাহা! নহে । উহা! সম্পূর্ণরূপে আত্মার সহিত অভিন্ন। আমাদের আত্মা যেন একটি জ্ঞান-সমুদ্র বিশেষ । কেহ কেহ বলেন যে, আম্মা হইতে জ্ঞান উদ্ভৃত হয়, অর্থাৎ যাহ। হইতে জ্ঞানরাশি প্রবাহিত হয় তাহাই আত্ম ; উহার দ্বরা এই শপ বোধ হয় যে, আত্ম! জ্ঞান হইতে পৃথক এবং ইহার সহিত এই প্রশ্ন ও আমে যে, তাহা হইলে আত্মার ব্বভাব বা ধন্ম কি? অদ্বৈত বেদান্তের মতে “আত্মা একমাত্র নির্ব্বিশেষ জ্ঞানম্বর্ূপ ব৷ একমাত্র অথণ্ড চৈতন্য স্বরূপ ( %090109 1069111091109 ) এবং উহা! অপরিবর্তন- শীল। মন ও বুদ্ধির বৃত্তিগুলির অবিরাম পরিবর্তন চলিতেছে, কিন্তু আত্মজ্ঞান অপরিবর্তনশীল। আমাদের ১৬২ আত্মসাক্ষাৎকার হৃদয়ে যখন একটি ভাবের উদয় হয় তখন আমরা উহা বুঝিতে পারি এবং অনুভব করি যে, এ ভাবটি উঠিয়াছে ; আবার যখন এঁ ভাবটি অস্তহিত হয় এবং সেইস্থানে অপর একটি ভাবের উদয় হয় তখনও আমরা জানিতে পারি যে, পুর্ব স্থানটিতে একটি নূতন ভাব অধিকার করিয়াছে । যে জ্ঞানবিশেষের দ্বারা আমরা প্রত্যেক . ঘৃতন ভাবকে ধরিতে পারি তাহা অন্ত কোনপ্রকার জ্ঞানের দ্বারা সম্পন্ন হয় না, কারণ এই জগতে জ্ঞান কেবল একটিই আছে; স্বতরাং এ জ্ঞানের জ্ঞাতাকেও অন্য কোন জ্ঞান দিয়া জানিতে পারা যায় না। যাহার দ্বারা আমরা একটি ভাবের বা একটি অনুভূতির অস্তিত্ব জানিতে পারি তাহাকে বুদ্ধি, বিচার বা অন্ত কোনও মনোবুত্তির দ্বার! প্রকাশ করিতে পারা যায় না। বিচারের দ্বারা বুঝিতে পারা-রূপ ব্যাপারটি ইহারই উপর নির্ভর করে। যখনই আমরা ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে কোন বিষয় বুঝিতে পারি তখনই বুঝিতে হইবে যে, উহ! মন ও বুদ্ধির পরিচালক একমাত্র নির্ব্বিশেষ জ্ঞানম্বরূপ আত্মারই আংশিক প্রকাশমাত্র । সর্ধ্বজ্ঞতাই আত্মার স্বভাবিক ধণ্ন। এই ধর্ম জ্ঞাত এবং জ্রেয়ের আপেক্ষিক সম্বন্ধের উপর আদৌ নির্ভর করে ন]। বস্ততঃ সমস্ত জ্রেয় বিষয়ের অস্তিত্ব লোপ পাইলেও এই ১৬৩ আত্মঙজ্ঞান নিত্য জ্ঞানম্বরূপের কোনও, প্রকার পরিবর্তন হয় না। সর্বজ্ঞ আত্মাকে শ্বয়ংপ্রকাশ স্ধ্যের সহিত তুলন! করিলে ব্যাপারটি সহজবোধা হয় । সূর্য্য যেমন নিজের আলোকে আলোকিত হন এবং অন্য পদার্কেও আলোকিত করেন সেইরূপ আত্মাও নিজের জ্যোতিতে নিজে উদ্ভাসিত এবং সেই সঙ্গে তিনি সমস্ত বাহাজগৎকেও উদ্ভাসিত করেন। সূর্য্য সমস্ত পদার্কে আলোক দান করেন এবং সেই সঙ্গে স্বয়ংও আলোকিত হন, সূর্যকে দেখিবার জন্য কোনও প্রদীপ প্রজ্বলিত করিবার প্রয়োজন হয় না, আর এজন্ত সূর্য্যকে স্বয়ংপ্রকাশ বলা হয়। যাহা স্বয়ংপ্রকাশ তাহাকে প্রকাশিত করিবার জন্য অপর আলোকের সাহায্যের কি আবশ্থক ? এই কারণেই আত্মাকে জ্ঞাননূর্ধ্য বলা হইয়৷ থাকে। যে জ্ঞান দ্বারা আমরা সর্বপ্রকার অনুভূতি এবং ভাব বুঝিতে পারি, যে জ্ঞান দ্বারা আমরা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তির পরিচয় পাইয়া থাঁকি, যে জ্ঞান দ্বারা আমরা মনোবৃত্তির ও চন্দ্র ন্ূর্য্যার্দির সমস্ত কাধ্যকে জানিতে পারি, যে জ্ঞান দ্বার! আমর! আমাদের শরীরের সমস্ত অঙজ-প্রত্যঙ্গের ক্রিয়াসমূহ বুঝিতে পারি তাহা সেই প্রজ্ঞা বা সংবিদের আকর স্বয়ংপ্রকাশ আত্মার আলোক ভিন্ন আর কিছুই নহে। এই স্বয়ংপ্রকাশ আত্মাই সর্ব বিষয়ের জ্বাতা এবং ইনিই মন ও ইন্দ্রিয়াদির একমাত্র পরিচালক ও নিয়ামক । ১৬৪ আত্মসাক্ষাৎকার এই আত্মা হইতে বিচ্ছিন্ন থাকিলে মন ও ইন্দ্রিয়সমূহ কোন কার্যযই করিতে পারে না। আমরা পূর্ব্বেই বলিয়াছি যে, “তর জড়তম্মাত্রার কম্পনবিশেষকে মন বলে? (70100 19 117097 0090091 10 110180100 )। বেদাস্ত- দর্শনের সিদ্ধান্ত অনুসারে আত্ম! এবং মন এক নহে । মনের উপাদানরূপ তন্মাত্রার কম্পনরাশির মধ্যে চৈতন্তের প্রকাশ নাই; এই মন সংবিদের বা চৈতনের উংস নহে, অর্থাং জ্ঞান মনঃপ্রশ্ত নহে। মন যাবতীয় ক্রিয়ারহিত হইয়া গেলেও আমাদের 'অহং-জ্ঞানটি থাকিয়া যায়। সমাধির অবস্থায় কাহারও ভয়, ক্রোধ বা মনের অন্যান্য বৃত্তিসমূহ যথ! প্রবৃত্তি, বাসনা, উচ্ছ্বাস, ইচ্ছা, সঙ্কল্প, বিকল্প, নিশ্চয়, অনুভব ইত্যাদি না থাকিলেও প্রকাশরূপ প্রজ্ঞা চলিয়া যায় না, বা সেই সমাধিবান ব্যক্তি সম্পূর্ণ সংজ্ঞাহীন হন ন1। ইহা হইতেই প্রমাণ হয় যে, শুদ্ধজ্ঞান ও শুদ্ধ বোধস্বরূপ আত্মা মনোরাজ্যের কাধ্যা্দি হইতে সম্পুর্ণ পৃথক্‌ ও ন্বতন্ত্। সমাধির অবস্থায় উপনীত হইয়া সর্বপ্রকার অনুভূতি, মন এবং ইন্দ্রিয়ের কাধ্যকে নিরোধ করা যাইতে পারে, অর্থাং এই সময়ে দেহ ও মনের সম্পর্ক না রাখিয়। সমাধিবান্‌ পুরুষ মন ও ইন্দ্রিয়ের রাজা অতিক্রম . করিয়া উহা অপেক্ষা আরও উচ্চতর ভূমিতে বিচরণ করিতে পারেন। ধাহাদের কখনও সমাধি হয় নাই তাহাদের ১৬৫ আত্মজ্ঞান পক্ষে এই সত্য উপলব্ধি করা অসম্ভব। বুদ্ধিপ্রস্ৃত আপেক্ষিক জ্ঞান দ্বারা আত্ম প্রকাশিত হন না। এই আত্মাকে উপলব্ধি করিতে হইলে চিন্তার রাজ্য ছাড়াইয়৷ অতীন্দ্রিয় রাজ্যে যাইবার উপায় শিক্ষা করিতে হইবে । বুদ্ধির দ্বার আমরা যাহা! বুঝিয়৷ থাকি তাহ! আপেক্ষিক এবং অসম্পূর্ণ ; সুতরাং আমাদের বিচার-বুদ্ধি পরিদৃশ্ামান এই বাহা জগতের সীমা অতিক্রম করিয়া সেই অনীমের রাজ্যে পৌছাইয়। দ্রিতে সক্ষম নহে। সেইজন্যাই উপনিষদে বল হইয়াছে ই *্ষিনি মনে করেন যে তিনি আত্মীকে জানিয়াছেন, তিনি আত্মাকে একেবারেই জানেন নাই ।” ঈশ্বর সম্বন্ধে আমর! যে কল্পনা করিয়! থাকি সেই সমস্ত কল্পনা হইতে আত্মজ্ঞান বহু উদ্ধে অবস্থিত; কারণ ঈশ্বরসম্থদ্ধে সমস্ত ধারণাই আমাদের মনের মধ্যে উৎপন্ন হইয়া থাকে; কিন্ত যদি মন প্রজ্ঞা হইতে পৃথক্‌ বা বিচ্ছিন্ন থাকে তাহা হইলে এ ধারণা বা কল্পনা লুপ্ত হইয়া যায় এবং তাহার কোন অস্তিত্ই থাকে না। আমাদের ভিতর প্রজ্ঞা আছে বলিয়াই ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্বন্ধে জ্ঞান হইয়া থাকে, অর্থাৎ জ্ঞানম্বরূপ আত্মার আলোক ঈশ্বরের অস্তিত্বের পরিচয় করাইয়। দেয়। যদি তাহাই হয়, তাহ! হইলে আমর! জিজ্ঞাসা করিতে পারি যে, ১৬৬ আত্মসাক্ষাৎকার সগুণ ঈশ্বর ও আতআা-_ইহাদের মধ্যে প্রকৃতপক্ষে কোন্টি মহত্তর? আঁত্বাই মহত্তর; কারণ ইহা ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রকাশ করে। সর্বপ্রকার জ্ঞানের অধিষ্ঠান সত্যন্বরূপ এই আত! সগ্ডণ ঈশ্বর অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ; কারণ সগুণ ঈশ্বরকে বাক্যের দ্বারা বর্ণনা করা! যাইতে পারে এবং মনের দ্বারা চিন্তা করা যাইতে পারে, আর এইজন্য তিনি বাক্য ও মনের দ্বারা সীমাবদ্ধ, আুতরাং তিনি বাক্য ও মনের পরিচালক সেই আত্বারও অধীন। আমরা ইহাও জানি যে, যিনি যাহার অধীন তিনি আত্মা অপেক্ষা ক্ষুদ্র ও নিকৃষ্ট। আবার ইহাও সত্য যে, যখন আমরা আমাদের আত্মাকে জানিতে চেষ্টা করি তখন আমরা একটি পুস্তক বা একটি বৃক্ষের স্তায় আত্মীকে জ্ঞেয়ভাবে জানিতে চেষ্টা করি না; আত্মা কখনই জ্ঞেয় হইতে পারে না। আত্ম সর্বদাই জ্ঞাতা। আত্মার কোনও প্রকার আকার দেখিতে চেষ্টা করা বৃথা; কারণ আত্মার কোন আকার নাই। শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস, গন্ধ ইত্যাদির মধ্যে আমাদের আত্মার অনুসন্ধান আরম্ভ করাও বৃথা, কারণ উক্ত পদার্থগুলি আপেক্ষিক রাজ্যের বস্তব বা বিষয়। কিন্তু আত্ম! অতীল্দিয় ও নির্বধিশেষ এবং “একমেবাদিতীয়ম্” | এইরূপে আপেক্ষিক ও নির্ধ্বিশেষ রাজ্যের মধ্যে কি প্রভেদ তাহা আমরা বুঝিতে পারি। যতক্ষণ আমরা ১৬৭ আত্মজ্ঞান আপেক্ষিক রাঁজ্যে অবস্থান করিব ততক্ষণ আমরা নির্ব্িশেষকে পাইব না, কারণ এক নির্বিবশেষ জ্ঞান দ্বারাই পরস্পর সম্বদ্ধে আবদ্ধ বস্তুসকলের অস্তিত্ব আমরা জানিয়া৷ থাকি এবং সেইজন্যই সম্বন্ধভাবযুক্ত সসীম রাজ্যের বহিঃপ্রদেশে এই নির্ববশেষতত্ব অবস্থান করে এবং সর্বদা অসীম পরিদৃশ্ঠমান বাহা বিষয়সকল সেই অনীমের অন্তনিহিত এবং তাহারই সত্বায় সত্বাবান্‌॥ কিন্তু সেই নির্বিশেষ আত্মা স্বাধীন এবং ন্বয়স্তু। যদি আমরা বিচার-বুদ্ধিহীন হইতাম এবং যদি এ অবস্থায় আমাদের মধ্যে আত্মজ্ঞান না থাকিত তাহা হইলে আমাদের সহিত ইন্দ্িয়জ্ঞান এবং মনোবৃত্তির কোনও সম্বন্ধ থাঁকিত না, অর্থাৎ অনুভূতিসাঁপেক্ষ কোনপ্রকার জ্ঞানই আমাদের হইত ন1। মুক্তার মালা যেমন একই সুত্রে গ্রথিত থাকে সেইরূপ এক নির্বিশেষ আত্মরূগী সুত্রে আমাদের বিভিন্ন চিন্তারাশি, বিভিন্ন ভাঁব এবং চিত্তবৃত্তিরূপ মুক্তাগুলি গ্রথিত হইয়। একটি সুন্দর মালার ন্যায় প্রতীয়মান হইতেছে । নির্বিশেষ আত্ম আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতাবপ মুক্তাগুলিকে যথাযথস্থানে গ্রথিত করিয়া সম্পূর্ণ ও অবিচ্ছিন্ন অথগ্ড মালার আকারে পরিণত করিতেছে, অর্থাৎ এই নির্বিশেষ জ্ঞানের মধ্যেই আপেক্ষিক জ্ঞানরাশি মুক্তাকারে যেন ১৬৮ আত্মসাক্ষাৎকার শোভিত হইতেছে । কিন্তু কেহ যেন এরূপ ভ্রম ন! করেন যে, এই বিশুদ্ধ আত্মজ্ঞজান এবং সাধারণ আপেক্ষিক জ্ঞান একই শ্রেণীভুক্ত ; কারণ প্রথমটি অসীম এবং দ্বিতীয়টি সসীম ও অজ্ঞানের বিপরীত জ্ঞানমাত্র। সুতরাং জ্ঞানম্বরূপ আত্মা অজ্ঞানতাকে জানাইয়। দেয় বলিয়া সকল প্রকার আপেক্ষিক জ্ঞান অপেক্ষা উহা উচ্চতর ও শ্রেষ্ঠ। এই আত্মজ্ঞানের আলোকেই আমরা শ্হহা জানি ব! ইহা! জানি না” এইপ্রকাঁর উপলদ্ধি করিতে পারি । বেদান্ত অথবা উপনিষৎ বলেঃ “যিনি দর্শন করেন, যিনি শ্রবণ করেন, যিনি চিন্তা করেন এবং যিনি মনোগত ভাবরাশিকে উপলব্ধি করেন তাহার সাক্ষীন্বরূপ জ্ঞাতা যিনি তিনিই আত্মা। কিন্তু দেহ, ইন্দ্রিয়, মন, বুদ্ধি ও চিত্ত এই সকলগুলিকে আমরা আত্মা বলিয়া ভ্রম করিয়া থাকি ; প্রকৃতপক্ষে ইহারা আত্ম! নহে । ইহাদিগকে যিনি জানেন, তিনিই আত্ম। ।৮ উক্তপ্রকার দেহাত্ববোধে ক্রমে আবদ্ধ হইয়া আমর! বলিয়া থাকি যে, 'আমি দেহ ও ইক্দ্রিয়যুক্ত' “আমিই ্ষ্টাঃ, “আমিই শ্রোতা» 'আমিই মন-বুদ্ধিযুক্ত”, "আমিই চিন্তা করিতেছি'। এই “অহং বা! “আমি'-রূপ আত্মার উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে বলিয়াই আমরা উক্তপ্রকার 'অহং-ভাবাপন্ন হই। বস্তুতঃ এই “অহং জ্ঞানম্বরূপ ১৬৯ আত্মজ্ঞান আত্মা হইতে বিচ্ছিন্ন থাকিতে পারে না! আত্মজ্ঞান এবং আমাদের অস্তিত্ব ( সত্তা) অভিন্ন ও এক। দ্এইস্থানে আমরা আছি” এই প্রকার যে জ্ঞান তাহ! আমাদের স্বতঃই বিদ্ধমান। যদি মুহুর্তের জন্য আমাদের এই জ্ঞান চলিয়। যায়, অথবা যদি মুহূর্তের জন্য আমাদের পারিপার্থিক জ্ঞান তিরোহিত হয়, তাহা হইলে আমর! এ সময়ের জন্য আমাদের চারিদিকের বিষয়গুলির সহিত সমস্ত সম্বন্ধই হারাইব এবং এ কালের জন্য আমাদের অস্তিত্বও থাকিবে না। এইরূপে বুঝিতে পারা! যায় যে, আমরা আমাদের অস্তিত্ব বা সত্তা হইতে আত্মজ্ঞানকে প্রথক করিতে চেষ্ট। করিলেও উহাতে কখনই কৃতকার্ধ্য হইব না। মায়ামুক্ত আত্মজ্ঞান ও সন্ত অবিচ্ছেগ্চ । যখন আমরা আত্মজ্ঞান উপলদ্ধি করিব তখন আমরা আমাদের অস্তিত্বও বুঝিতে পারিব এবং দেখিতে পাইব যে, মনের পরিচালক আতআাই অনন্ত জ্ঞানম্বরূপ এবং অসীম সত্তান্বরূপ | “নূর্য্য আছেন” এই কথ। আমরা বলি কেন ? কারণ সুর্যের অস্তিত্ব সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান আছে বলিয়াই আমরা ইহা! বলিয়। থাকি। যখন তাহার অস্তিত্ব সম্বন্ধে আমাদের কোন জ্ঞান; থাকে না, যেমন ভাবমগ্ন সমাধিতে আপেক্ষিক সম্বন্ধের দিক দিয়া কোন জ্ঞানই আমাদের থাকে না; সুতরাং সত্য যে, আমাদের আপেক্ষিক জ্ঞান ও আপেক্ষিক সত্তার ১৭৩ আত্মসাক্ষাৎকার মাপকাঠি প্রজ্ঞা বা “অহং-জ্ঞান, অর্থাৎ "আমি আছি, এই বোধ না থাকিলে অপর কোন বস্তু বা বিষয় সম্বন্ধে কিছুই আমি জানিতে পারিব না, বা "অপর কিছু আছে: এইপ্রকার জ্ঞানও আমার হইবে না। যে মুহূর্তে আমাদের দেহের জ্ঞান এবং পারিপার্থ্িক বিষয়ের জ্ঞান থাকে না, সেই মুহুর্তেই আমাদের নিকট উহাদের অস্তিত্ব সম্বন্ধে সর্বপ্রকার জ্ঞান লুপ্ত হইয়া যায়। এইরূপ ব্যাপার আমাদের সুুপ্তি বা গভীর নিদ্রার সময় ঘটিয়৷ থাকে। সেজন্য সেই সময়ে আমরা ইহা আমার “উহা আমার এইপ্রকার ধারণা করিতে পারি না; কিন্তু আবার দেহে যখন সংজ্ঞা ফিরিয়া আসিতে থাকে তখনই সঙ্গে সঙ্গে দেহটিকে এবং তাহার সংস্পর্শে সমস্ত বন্তুকেই “আমার বলিয়া অনুমিত হয়ঃ অতএব দেখা যাইতেছে যে, শুদ্ধ্ঞীন এবং নির্বিশেষ অত্বা এই ছুইটিই এক ও অভিন্ন । বেদাস্তদর্শনে মনের পরিচালক আত্মার স্বভাব ছুই প্রকার বলা হইয়াছে £ একটির নাম “সৎ বা অস্তিত্ব, অর্থাৎ যাহা নিত্য বর্তমান এবং অপরটির নাম “চিৎ, অর্থাৎ যাহা নিত্যপ্রকাশ বা জ্ঞান। আমরা পূর্বেই দেখিয়াছি যে» এই “সৎ এবং “চিৎ, অবিচ্ছেগ্ভ ; একটি থাকিলেই অপরটিও থাকিবে । বেদান্ত- দর্শনে আবার আর একটি ধর্মের উল্লেখ পাওয়া যায়, উহার ১৭১ আত্মজ্ঞান নাম “আনন্দ । যেখানে “সৎ, ও “চিৎ, বর্তমান থাকে সেখানে “আনন্দ*ও বর্তমান থাকিবে । এই নিত্য আনন্দের সহিত পরিবর্তনশীল ইন্দ্রিয়স্খের এবং অনিত্য বিষয়জনিত বিষয়ানন্দের যথেষ্ট প্রভেদ আছে । যেখানে “নতা আনন্দ বর্তমান সেখানে চিরশান্তিও বিরাজমান থাকিবে, এবং সেই অবস্থায় মন অন্য কিছুই না চাহিয়া এ আনন্দই উপভোগ করিবে ও যাহাতে উহার বিচ্ছেদ না আসে সেইরূপ ভাবকে ধরিয়া রাখিতে চেষ্টা করিবে । কখনও কখনও আমরা সাধারণ আনন্দকে অর্থাৎ বিষয়ানন্দকে আত্মানন্দ ব। ব্রহ্মানন্দ বলিয়া ভ্রমে পতিত হই । বিষয়ানন্দ যখন ভোগ করা যায় তখন উহা সেই সময়ের জন্য মধুর মনে হয়, কিন্ত ক্ষণকাল পরেই উহাতে বিতৃষ্জা আসিয়া উপস্থিত হয় এবং তখন এ বিষয় ধরিয়! রাখিতে চেষ্টা ন। করিয়া! উহা ত্যাগ করিতে ইচ্ছ। হয়। একবার ভাবিয়া দেখুন যে, ইন্দ্রিয়ভোগজনিত সুখ কিরূপ ক্ষণস্থায়ী । উহা অতি অন্ন সময়ই থাকে এবং উহার প্রতিফলও অত্যন্ত দুঃখদায়ক হইয়া থাকে । কিন্তু যাহ! অবিনাশী “আনন্' তাহাকেই 'ব্রহ্মানন্দ' বলে । ইহ! অপরিবর্তনশীল, চিরস্থায়ী এবং তাহার কোনপ্রকার প্রতিক্রিয়া নাই। যখন দেহাত্ব- বোধ চলিয়া যায় এবং আত্মজ্ঞান। প্রতিভাত হয় তখনই ব্রহ্মানন্দ ও নির্মল শাস্তি বিরাজ করে। আত্মার রাজ্য ১৭২ আত্মসাক্ষাৎকাঁর স্বভাবতই এইপ্রকার; ইহা আপেক্ষিক জগতের এবং পার্থিব নিয়মাদির সম্পূর্ণ বাহিরে অবস্থিত। পুরে বণিত সেই সত্যান্বেধী সাধক পরিশেষে জগতের সমস্ত বস্তুর মূল- কারণ ও মনের পরিচালক আত্মাকেই সৎ-চিৎ-আনন্দরূপে সমাধির অবস্থায় উপলব্ধি করিয়াছিলেন । তাহার পরে তিনি বলিলেন ঃ যে ব্যক্তি এই সচ্চিদানন্দন্বরূপ আত্মাকে উপলব্ধি করেন, তিনি অমরত্ব লাভ করেন। দেহের পরিবর্তনের নামই ম্ৃত্যু। এই দেহের মৃত্যু হইতে পারে, মনের মৃত্যু হইতে পারে, ইন্দ্রিয়াদির মৃত্যু হইতে পারে, কিন্তু সচ্চিদানন্দন্বরপ আত্মার কখনও মৃত্যু নাই। যখন আমরা জানিতে পারি যে, দেহের মরণাপন্ন অবস্থা ঘটিতেছে তখন যদি আমরা তাহার সহিত আমাদিগকে একাত্মবোধ দ্বারা একীভূত না করি এবং তখন যদ্দি আমরা আমাদের নির্বিবশেষ আত্মাকে দেহ হইতে পুথক্রূপে উপলব্ধি করি তাহ! হইলে আমরা নিশ্চয়ই অমরত্ব লাভ করিতে পারিব। একবার যদি আমাদের মধ্যে “সাহহং আত্মা” অর্থাৎ “আমি সেই আত্মা এই অনুভূতি হয় তাহা হইলে মৃত্যুও কি উহ! আর পরিবর্তন করাইয়া দিতে পারে ? যাহা অসৎ, অর্থাৎ যাহা নাই তাহা হইতে 'সং-এর উৎপত্তি হইতে পারে না; সেইরূপ “সৎ কখনও অসৎ-এ পধ্যবসিত হয় না। ১৭৩ আত্মজান যাহা “নিত্য তাহ! অনিত্য হইতে পারে ন1১ এবং ইহাই অমরত্ব বা অমৃতত্বের প্রমাণ । নির্ব্বিশেষ জন্ম-ৃত্যুহীন আত্মাই সেই নিখিল বিশ্বের আদি ও অন্তব্বরূপ ব্রহ্ম । এ নিত্য আত্মা বা ব্রহ্মকে বিভিন্ন নামে ও বিভিন্ন আকারে সাধারণ লোক ঈশ্বর বলিয়! পুজ। করিয়া থাকে । এ ব্রহ্মই অন্তরাত্ারূপে আমাদের অন্তরে বাস করেন এবং আমাদের আত্মা হইতে এ '্রন্গ' অভিন্ন। তাহাকেই উপনিষদে “একমেবাদ্বিতীয়ম্ঠ আখ্য! দেওয়। হইয়াছে, কারণ উহা এক ভিন্ন বহু নহে। যদি নির্ব্বিশেষ ব্রহ্ম বহু হইত তাহা হইলে একটি অপরটির দ্বারা সীমাবদ্ধ হইয়। যাইত, সুতরাং তাহারা অসীম ব্রহ্ম হইতে পারিত না। এক ব্রহ্মই অবিনশ্বর ও মৃত্যুরহিত। একমাত্র ব্রহ্মকে বিদিত হঈয়াই আমরাও অমুত হইতে পারি। যদি ম্বভাবতঃই আমাদের আত্মাতে অমরত্ব নিহিত না থাকে তাহা হইলে কোনও অবতার-পুরুষই উহ! আমাদিগকে দান করিতে সক্ষম হইবেন না। খুষ্টান্ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস যে, একমাত্র ঈশ্বরাবতার খীশুখৃষ্টের কৃপাতেই মরণশীল জীব অমর হইতে পারে। কিন্তু তাহাদের ওই বিশ্বাস আমাদের ১1. “নাসতো বিগ্বাতে ভাবে। নাঁভাঁবো বিগ্ততে স্তঃ। উভয়োরপি দৃষ্টান্তংস্তনয়োস্তত্বদ শিভিঃ ॥” - গীত ২১৬ ১৭৪ আত্মসাক্ষাৎকার আত্মার অমরত্বরূপ জ্ঞানের উপর প্রতিষ্ঠিত নহে। খুষ্টানদের এইরূপ বিশ্বাসে এবং উপদেশে বেদাস্তমতা- বলম্বীরা প্রতারিত হন ন1। তাহারা প্রথমে তাহাদের প্রকৃত শ্বরূপ বা আত্মাকে উপলব্ধি করিতে চেষ্টা করেন, তাহার পর তাহারা জানিতে পারেন যে, অমরত্বে তাহাদের জন্মগত অধিকার । আত্মা সব্বপ্রকার শক্তির মূল এবং এইজন্য শিষ্য বলিলেন £ “আত্মঙ্ঞানের দ্বারা আধ্যাত্মিক শক্তি ও অমরত্ব লাভ কর! যায়।” অপরিবর্তনশীল অবিনশ্বর আত্মাকে জানিতে পারিলেই আমাদের মধ্যে প্রকৃত আত্মিক শক্তি উদ্দ্ধ হইবে। আত্মজ্ঞানের দ্বারা যে আধ্যাত্মিক শক্তি লাভ করা যায় তাহা ভৌতিক, দৈহিক, মানসিক ও নৈতিক শক্তিসমূহের সমষ্টি অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ। আধ্যাত্মিক শক্তি ভিন্ন আর সকলপ্রকার শক্তিই পরিবর্তনশীল ও মৃত্যুর অধীন। অতিঅল্প লোকেই কিন্তু আধ্যাত্মিক শক্তির অর্থ ঠিক ঠিক বুঝিতে পারেন। “আত্ম” শব্দদ্বারা 'প্রেতাত্বা'কে বুঝায় না; ইহার দ্বারা “পরমাতঁ বা ব্রহ্ষকে বুঝিতে হইবে। চঢেতন্যন্বরূপ আমাদের আত্ম সেই ব্রহ্ম ভিন্ন অপর কোন বস্ত নহে। ব্রহ্ম বা আস্মার সাক্ষাৎকার লাভ করিলেই দৈহিক ও মানসিক শক্তি অপেক্ষা মহত্বর আধ্যাত্মিক শক্তি লাভ ১৭৫ আত্মজ্ঞান করা যায়। এই শক্তি সেই অনন্ত ব্রদ্ষের বা আত্মারই শক্তি। দৈহিক শক্তির সাহায্যে হয়তো! একজন একটি ব্যাত্র বধ করিতে পারেন বা সহত্র সহত্র প্রাণী বধ করিতে পারেন, কিন্তু এ শক্তি তাহাকে মৃত্যুর হস্ত হইতে রক্ষা) করিতে পারিবে না। যদি কাহারও প্রভূত আধি- ভৌতিক ক্ষমতা থাকে তাহা হইলেও উহা তাহাকে মৃত্যুর কবল হইতে রক্ষা করিতে পারিবে না । কাহারও হয়তো অদ্ভুত মানসিক শক্তি ও যোগের বিভূতি থাকিতে পারে এবং এ শক্তির সাহায্যে তিনি অনেক আশ্চর্য্য- জনক কাধ্যার্দী করিতে পারেন, কিন্তু তাহার দেহ ও মনের মধ্যে যে সমস্ত পরিবর্তন ম্বতঃই হইয়া থাকে, তিনি এঁ শক্তির দ্বারা তাহ। স্থগিত রাখিতে পারেন না । অপরপক্ষে আত্মজ্ঞান লাভ দ্বারা আধ্যাত্মিক শক্তি প্রাপ্ত হইলেই জন্ম-মৃত্যুর হস্ত হইতে মুক্ত হওয়া যায়। যিনি কেবল দৈহিক ও মানসিক শক্তি সঞ্চয় করিয়াছেন, তিনি জন্ম ও মৃত্যুর অধীনই থাকিবেন, কিন্ত তিনি যদি সেই অবিনাশী ব্রহ্ম বা আত্মাকে বিদ্িত হইতে পারেন তাহ। হইলে তিনি এই বিশ্বের প্রভূ বা নিয়ন্তাও হইতে পারেন। যাহার আত্মজ্ঞান লাভ হইয়াছে, প্রাকৃতিক বিরাট শক্তিসমূহ তাহার সেবা করে এবং আদেশ পালন করে। শ্ষদি কেহ এই জীবদ্দশায় আত্মাকে উপলব্ধি ১৭৬ আত্মসাক্ষাৎকার করিতে পারেন তাহা হইলে তিনি সত্যন্বরূপ ব্রহ্গকে জানিতে পারেন। এই মায়াময় জগতে যিনি আত্মাকে জানিয়াছেন তিনিই জীবনের মুখ্য উদ্দেশ সাধনে সিদ্ধ হইয়াছেন » তিনিই মোক্ষ, পরাশান্তি এবং প্রকৃত আনন্দ এই জীবনে প্রাপ্ত হইতে সমর্থ হইয়াছেন। কিন্ত যদি কেহ তাহাকে এই জীবদ্দশায় জানিতে না পারেন তাহা হইলে তীহার অদৃষ্টে অনেক ছঃখভোগ আছে 1১ যিনি আত্মাকে উপলন্ধি করিতে ন। পারেন, তিনি এই জগতে পুনঃ পুনঃ জন্মগ্রহণ করেন এবং অজ্ঞানান্ধকারে পতিত হইয়া ইন্দ্িয়-স্ুখের অনুসন্ধানে ব্যাপৃত থাকেন ও অনেক ছৃঃখ-যন্ত্রণ। ভোগ করিয়া তিনি কম্মফল ও পুনজন্মের হস্ত হইতে পরিত্রাণ লাভ করিতে পারেন না । তত্দশী! জ্ঞানীগণ চেতন ও অচেতন বস্তুতে ব্যাপ্ত সেই সর্ধবব্যাগী ব্রহ্মকে উপলব্ধি করিয়। দেহত্যাগ করিবার পরে অমরত্ব লাভ করিয়া থাকেন 1৮২ যিনি সেই একমাত্র অবিনাশী আত্ম ব৷ ত্রহ্মকে বিদ্বিত হইয়াছেন, তিনি তাহার সহিত ্বরূপতঃ এক ও অভিন্ন হইয়া যান এবং অনস্ত কাল ধরিয়৷ ব্রহ্মান্বরূপতায় অবস্থান করেন। ৭০ ১। এইহ চেদবেদীদথ সত্যমন্তি, ন চেদিহাবেদীন্মহতী বিনগ্িঃ।+ --কেন উপনিষ্ৎ ২১৩ ২। “ভৃতেষু ভূতেষু বিচিত্য ধীরাঃ, প্রেত্যাম্মল্লোকাদমৃতা ভবন্তি ॥* --কেন উপনিষৎ ২১৩ ১৭৭ ৯২ “যো বৈ ভূমা তৎ সুখং, নাল্লে সুখমস্তি। ভূমৈব সুখং, ভূম! ত্বেধ বিজিজ্ঞাসিতব্য ইতি ॥স্ছান্দোগ্য ৭২৩।১। “আতমমৈবাধস্তাদাক্বোপরিষ্টাদাা| পশ্চাদাতা! পুরস্তাদাত্ব! নক্ষিণত; আত্মোত্তরতঃ আত্মৈবেদং সর্বমিতি। স বা এষ এবং পশ্যন্নেং মন্বান এবং বিজানন্নাত্বরতিরাত্মক্রীড় আত্মমিথুন আত্মানন্দঃ স স্বরাড়, ভবতি তস্য সর্বেষু লোকেষু কামচারো ভবতি।”-_ছান্দোগ্য ৭২৫২ । যাহা ভূমা অর্থাৎ সর্বাপেক্ষা মহৎ তাহাই সুখ; যাহা অল্প ব1 পরিচ্ছিন্ন তাহাতে সুখ নাই। ভূমাই নুখস্বরূপঃ; অতএব এই ভূমীসম্বন্ধে জিজ্ঞাসা কর উচিত।” "আত্মাহ অধোভাগে, আত্মাই উর্ধভাগে, আত্মাই পশ্চাতে, আস্মাই সম্মুখে, আত্মাই দক্ষিণে, আত্মাই উত্তরে, আত্মাই এই সমুদয় জগৎ -ধিনি এই প্রকার দর্শন করেন, এই প্রকার মনন করেন, এই প্রকার বিজ্ঞান ( অনুভূতি ) লাভ করেন তিনি আত্মরতি, আত্মন্রীড়, আত্মমিথুন এবং আত্মানন্দ হন, তিনিই স্বরাঁটু হন অর্থাৎ ন্বারাজ্য লাভ করেন এবং সমস্ত লোকে স্বাধীনভাবে বিচরণ করেন। বষ্ঠ অধ্যায় আত্ম। ও অমরত্ব যজুব্বেদের অন্তর্গত বৃহদারণ্যক উপনিষদে বর্ণিত আছে যে, পুরাকালে ভারতবধে যাঁজ্ঞবন্ক্য নামে একজন পুণ্যাত্ম৷ ধর্শপরায়ণ সত্যদর্শী খষি বাস করিতেন। মৈত্রেয়ী নামে তাহার এক সাধবী পতিগতপ্রাণা পত্বী ছিলেন। গৃহস্থাশ্রমের যে সমস্ত নিত্য নৈমিত্তিক কর্ম কেবল তাহ! সম্পন্ন করিয়াই যাজ্ঞবন্ধ্য নিশ্চিন্ত থাকিতেন না, পরন্থ দেশের ও জনসাধারণের মঙ্গলের জন্যও তিনি যথেষ্ট সংকর্ম সাধন করিয়া মহাশাস্তিতে কালাতিপাত করিতেন । এইরূপে নিঃন্বার্থ সৎকন্মাদির দ্বারা ক্রমে ক্রমে চিত্তশুদ্ধি হইলে তাহার অস্তদৃ্টি সত্যন্বরূপ আত্মার দিকে আকৃষ্ট হইয়াছিল। তপস্তার ফলে নির্মল বুদ্ধি দ্বার তিনি বুবিয়াছিলেন যে, এই পরিদৃশ্যমান্‌ বাহজগৎ ক্ষণস্থায়ী ও অনিত্য, গাহস্থ্য জীবন মনুষ্যের ভ্রমোননতির পক্ষে একটি সোপান বা স্তর মাত্র; সেজন্য তিনি মনস্থ করিলেন যে, গৃহস্থাশ্রম হইতে অধিকতর উন্নত সন্যাসাশ্রম গ্রহণ করিয়া তিনি জীবন যাপন করিবেন । ১৭৯ আত্মজ্ঞান তিনি বুঝিতে পারিলেন যে, সংসারী লোকেরা মোহে অভিভূত হইয়৷ পার্থিব বাসন! চরিতার্থ করিতে চেষ্ট করিয়া থাকে । সেই কারণে তিনি নির্জনে বাস করিয়। নিত্য বস্ত্র ধ্যানে তাহার জীবনের অবশিষ্ট সময় অতিবাহিত করিবার জন্ত দৃঢ়সন্কল্প হইলেন । বিশ্ব-ব্রহ্মাপ্ডের মধ্যে একমাত্র সত্যন্বরূপ পরমেশ্বরের শরণাপন্ন হইয়া! সংসারের বিষয়-কোলাহলের বহুদূরে অরণ্যে বাঁস করিয়া আত্মজ্ঞান লাভের জন্য সাধনায় প্রবৃত্ত হইতে তিনি ইচ্ছা! করিলেন ; পরমাত্মার ধ্যানে দিবানিশি নিমগ্ন থাকিয়া এবং চিত্ত- (নরোধরূপ সমাধি লাভ করাই যাঁজ্ঞবন্ক্য খধষির জীবনের প্রধান উদ্দেশ্ট হইল। একদিন এই খষি তাহার পত্বীর নিকট আসিয়া বলিলেন £ «মৈত্রেয়ি, প্রিয়তমে ! আমার একান্ত ইচ্ছা! যে, সমস্ত বিষয়-সম্পত্তি তোমাকে দান করিয়া আমি বানপ্রস্থ আশ্রম অবলম্বন করি। তুমি এই সমস্ত ভোগ কর এবং সন্তুষ্টচিত্তে আমাকে এই বিষয়ে অনুমতি প্রদান কর।৮১ ম্বামীর এই প্রকার বাক্য শ্রবণ করিয়া ধর্ম্ম- পরায়ণ। মৈত্রেয়ী সম্তপ্ত চিত্তে জিজ্ঞাসা করিলেন ঃ *ভগবন্‌, ১। এমেত্রেয়ীতি হোবাচ বাজ্ঞবন্ধ্যঃ প্রব্রজিষ্যন বা অরেহহমস্মাৎ স্থানাদস্মি হস্ত তেহনয়া কাত্যায়ন্তাইস্তং করবাণীতি |” --উঃ» বুহদারণ্যক 91৫1২ ১৮০ আত্মা ও অমরত্ব অনুগ্রহ করিয়া বলুন, যদি আমি সসাগরা পৃথিবী এবং সর্বপ্রকার পার্থব এম্বর্ষের অধিকারিণী হই তাহা হইলে আমি কি তাহার দ্বারা অমরত্ব লাভ করিতে পারিব 1%২ বর্তমান কালে আমরা যে সমস্ত নারী দেখিতে পাই তাহাদের অধিকাংশই ধন-সম্পত্তির অধিকারিণী হইবার জন্য লালায়িতা ; আবার বদি কোনও স্থৃত্রে সামান্য সম্পত্তিরও উত্তরাধিকারিণী হইবার কাহারও আশা থাকে, তাহা হইলে তাহাতেই তিনি অত্যন্ত আহ্লাদিতা হইয়া থাকেন। মেত্রেয়ী কিন্ত এই প্রকার নারী ছিলেন না ; তিনি বুঝিয়াছিলেন যে, অমরত্্র স্তায় অপুর্ব সম্পদ আর কিছুই নাই । এই ধারণার বশবর্তী হইয়াই তিনি তাহার স্বামীকে জিজ্ঞাস করিয়াছিলেন ঃ “আপনি যে পমস্ত ধন-সম্পত্তি আমাকে দান করিতে অভিলাষী হইয়াছেন তাহা প্রাপ্ত হইলে কি আমি অমরত্ব লাভ করিতে পারিব?” এই প্রশ্নের উত্তরে খষি যাজ্জবন্ধ্য বলিলেন ঃ “না, এইরূপ এশ্বধ্যের দ্বারা অমরত্ব লাভের কোনও আশ! নাই ; কেহ কখনও পার্থিব সম্পত্তির দ্বারা অমর হইতে পারে না। তবে যি তুমি প্রথিবীর সমস্ত ধন-সম্পত্তি প্রাপ্ত হও তাহ হইলে তুমি ধনবান্‌ লোকের মতন যখন যাহা ইচ্ছা ২। “সা হোঁবাচ মৈত্রেরী, যন্ন,ম ইয়ং ভগ্গোঃ সর্ব! পৃথিবী বিত্বেন পূর্ণ। স্যাৎ, স্তাঁং ছ্ুহং তেনীমৃতাহো 1”বৃহদারণ্যক ৪1৫1৩ ১৮১ আত্মজ্ঞান হইবে তাহা লাভ করিয়া পার্থিব স্ুখ-স্থাচ্ছন্ব্য ভোগ করিতে পারিবে ৮৩ এই কথ! শুনিয়া মৈত্রেয়ী বলিলেন £ "ম্বামিন্‌, যে বস্তদ্বারা আমি অমরত্ব লাভ করিতে পারিব না, সে বন্ত লইয়া! আমি কি করিব? যদি আপনার নিকট এমন কোন বস্তু থাকে যাহার দ্বারা আমি অমরত্ব লাভ করিতে পারি, অনুগ্রহ করিয়া আমাকে সেই বস্ত দান করুন্ত আমি আপনার অন্য এশ্বর্ষের জন্য লালায়িতা নহি ।৮ৎ মৈত্রেয়ীর কথা শুনিয়। মহষি যাঁজ্ঞবন্ধ্য বলিলেন £ “মৈত্রে যি, বাস্তবিকই তুমি আমার প্রিয়তম! । তুমি তোমারই উপযুক্ত কথা বলিয়াছ। যাহার দ্বারা অমরত্ব লাভ হয় তাহাই আমি বলিতেছি, তুমি মনোযোগপুর্বক শ্রবণ কর।”ৎ তাহার পরে মহষি যাঁজ্ঞবন্ক্য পরম প্রেমাস্পদ বস্তুর যথার্থ শ্প্পপীসখা | পিপিপি ৩ পিপিপি ৩। প্নেতি;ঃ নেভি হোঁবাঁচ যাজ্ঞবক্ধ্যো)৷ যখৈবোপকরণবতাং জীবিতং, ততৈব তে জীবিতং স্তামমৃতত্বস্ত তু নাঁশাহন্তি বিত্তেনেতি ॥” স্প্বৃহাদারণ্যক ৪1৫1৩ ৪। “পা! হোবাচ মেত্রেরী যেনাহং নামৃতা। স্তাং কিমহচ তেন কুর্ধ্যাং, যদেব ভগবান বেদ তদেব মে ব্রুহীতি ॥৮-_বৃহদাঁরণযক ৪1৫18 ৫ | “স্‌ হোবাঁচ যাজ্ঞবন্ধ্যঃ, প্রিয়। বৈ খদু নো। ভবতী সতী প্রিন্নং অবৃধত হস্ত তহি ভবত্যেতদ্ধ্যাথ্যান্তামি তে, ব্যাচক্ষাণন্ত তু মে নিদিধ্যাসন্েতি |৮-স্বৃহদারণ্যক ৪1৫1৫ ১৮২ আত্মা ও অমরত্ত স্বরূপ কি তাহ! প্রথমে ব্যাখ্যা করিলেন। লোকে তাহাদের পিতামাতাকে, সম্তানাদিকে, স্বামীকে, স্ত্রীকে এবং ধনসম্পত্তি ও অন্যান্য যাহা কিছু আপনার বলিতে আছে মে সকলকেই মাত্র ভালবাসে ; কিন্তু তাহার! কাহাকে বস্তুতঃ ভালবাসে তাহা কিন্তু তাহারা বুঝিতে পারে না'। তাহাদের, প্রকৃত ভালবাসার পাত্র কখনও কোন পাঞ্চভৌতিক পদার্থ হইতে পারে না। কিন্ত পারঞ্চভৌতিক আকৃতির পশ্চাতে যে আত্মা অবস্থান করিতেছেন তাহাই প্রকৃত ভালবাসার পাত্র হইয়া থাকে। এই কারণে মহধি মৈত্রেয়ীকে বলিলেন ঃ পরিয়ে, তোমাকে সত্যই বলিতেছি যে, পত্রী তাহার স্বামীর পাঞ্চভৌতিক দেহকে স্বামী বলিয়৷ ভালবাসে না, তাহার স্বামীর মধ্যে যে আত্মা অবস্থান করিতেছেন তিনিই যথার্থ স্বামীরূপে স্ত্রীর নিকট প্রিয় হইয়া থাকেন 1%৬ স্বামীর পাঞ্চভৌতিক শরীর যে সমস্ত জড় পরমাণুপুঞ্জ দ্বার! গঠিত সেই সমস্ত উপাদ্ধানকে পত্রী ভালবাসে না, সে তাহার স্বামীর আকৃতির পশ্চাতে অবস্থিত সেই আত্মাকেই ভালবাঁসিয়া থাকে । আবার “স্বামী তাহার পত্বীর স্থল শরীরকে পত্বী বলিয়া ভালবাসে না, কিন্তু এ পত্বীর দেহের স্পপপপিকা শাপাপপাতপপপপাসীাক পিপিপি পলাশ পাপ ৬1 পপ ছোঁবাচ ন বা অরে প্তুঃ কামার পতি; প্রিয়! ভবত্যাজুনস্ত কামায় পতিঃ প্রিয়ো ভবতি ॥”--বৃহদারণ্যক 81৫1৬ ১৮৩ আত্মজ্ঞান মধ্যে যে আআ আছেন তাহাই স্বামীর প্রেমাম্পদ।** প্রকৃতপক্ষে পত্বীর স্থূল দেহটি স্বামীর প্রিয় নহে, কিন্তু তাহার আত্মাই স্বামীর নিকট প্রিয় বস্তু । যখন পত্বীর দেহ হইতে আত্ম চলিয়। যায় তখন সেই মৃতরেহটির প্রতি স্বামীর ভালবাস! থাকে না, এমন কি স্বামী তখন উহা আর স্পর্শ করিবে না। পগলোকে তাহাদের সম্ভানগণের জড় দেহকে সম্তান বলিয়া ভালবাসে না, কিন্তু তাহাদের মধ্যে আত্মা বিরাজ করিতেছেন বলিয়া তাহারা এত ভালবাসার পাত্র হইয়া থাকে ।”৮ যখন মাত তাহার সন্তানকে ভালবাসেন তখন আপনার! কি মনে করেন যে, যে সমস্ত পাঞ্চভৌতিক জড় উপাদানের দ্বারা সন্তানের মুখমণ্ডল গঠিত সেই সমস্ত অচেতন জড পদার্থকেই মাতা ভালবাসিতেছেন ? না, তাহা নহে ; জড় পরমাণুপুঞ্জের অন্তরালে অবস্থিত আত্মাই সন্তানের আকৃতি সৃষ্টি করিয়া মাতার আত্মাকে আকর্ষণ করিয়া থাকে। ভৌতিক জড় পদার্থের মধ্যে ভালবাসার অস্তিত্ব দেখা যায় না। অধ্যাত্ম রাজ্যে ছুইটি আত্মার পরস্পরের আকর্ষণের নামই | প্নবা অরে জারায়ৈ কামায় জায়া প্রিয় ভবত্যাত্মনস্ত কামায় জায় প্রিয়া ভবতি ॥*--বৃহদারণ্যক ৪1৫1৬ ৮1 প্ন বা অরে পুত্রাপাং কামায় পুত্রাঃ প্রি ভবস্তযাত্বনস্ত কামার পুত্রাঃ প্রিয়! ভবস্তি ॥৮--বৃহদারণ্যক 81৫1৬ । ১৮৪ আত্ম! ও অমরত্ব প্রেম অথব! ভালবাসা । যখন লোকে তাহাদের বন্ধু বা! আত্মীয়বর্গকে ভালবাসে তখন সেই আকর্ষণটিই উহাদের ভালবাসার বাহ্যিক প্রকাশের মূলে আছে ইহাই বুঝিতে হইবে । পপ্রিয়ে, বাস্তবিকই ধনসম্পদ ভালবাসার পাত্র নহে, কিন্তু ইহা নিশ্চয় যে, আত্মার প্রতি ভালবাসা আছে বলিয়াই সম্পদ ব! এশ্বর্যয প্রিয়বস্ত বলিয়া বোধ হয় 1৮৯ ভালবাসার কেন্দ্র হইতেছেন আত্মা । যখন আমর! এশ্বধ্য বা বিষয়-সম্পত্তিকে প্রিয়বস্ত বলিয়া মনে করি তখন ইহাই বুঝিতে হইবে যে, অর্থ অথবা! সম্পত্তির উপর যে আকর্ষণ বা ভালবাসা! দেখা যায় তাহ! জ্ঞানতঃ বা অজ্ঞানতঃ স্বভূতে অধিষ্ঠিত আত্মার অথবা স্বীয় আত্মার প্রতি ভালবাস। হইতেই উদ্ভূত হইয়াছে । আমরা যে পশু, পক্ষী, অশ্ব, কুকুর প্রভৃতিকে ভালবাসিয়া থাকি তাহা উহাদের স্কুল দেহের জন্য নহে, কিন্তু উহাদের মধ্যে আত্মা বিরাজ করেন বলিয়াই উহাদিগকে আমরা এইরূপ ভালবাসিয়! থাকি। যাজ্বন্ধ্য মৈত্রেয়ীকে এইরূপ বুঝাইয়াছিলেন যে, যেখানেই প্রকৃত ভালবাসা আছে সেখানেই আত্মার প্রকাশ বি্ধমান। তিনি বলিলেন £ পপ্রয়ে, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ৯। পন বা অরে বিত্তম্ত কামায় বিতৃং প্রিয়ং ভবত্যাত্ন্ত কামায় বিভ্তং প্রিয্ং ভবতি ॥”--বৃহদারণ্যক ৪1৫1৬ ১৮৫ আত্মজ্ঞান প্রভৃতি মনুষ্যগণের মধ্যে আত্ম! আছেন বলিয়াই লোকে তাহাদিগকে ভালবানিয়। থাকে ।” কাহারও মুত দেহটি আমাদের অন্তঃকরণে ভালবাসা উদ্দীপিত করে না। “লোকে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দিগকে, ্বর্গাদি লোককে, দেবতাদিগকে, চারি বেদকে এবং অন্যান্য চেতন ও অচেতন বস্তৃগুলিকে তাহাদের বৈশিষ্ট্যের জন্য ভালবাসে না, পরন্ত উহাদের মধ্যে আত্মার প্রকাশ, আছে বলিয়াই লোকে উহাদিগকে ভালবাসিয়া থাকে 1৮১০ যখন কেহ নিজের “অহং”*-এর তৃপ্তির জন্য অপরকে ভালবাসে তখন বুঝিতে হইবে যে, এঁ ভালবাসা অত্যন্ত স্বার্থজড়িত, কিন্তু যখন এ ভালবাসার নির্ঝর ধারা অপরের অন্তরস্থ আত্মার দিকে প্রবাহিত হয় তখন স্বার্থপরতার ভাবটি আর থাকে না। উহা! ক্রমে ক্রমে পবিত্র এশ্বরিক প্রেমে শশা পাশ? ১০1 পন বা অরে ব্রহ্গণঃ কানায় ব্রহ্ম প্রিয়ং ভবত্যাত্মনস্ত কামান ্রন্ধ প্রিয়ং ভবতি। ন বা অরে জত্রন্ত কামায় ক্ষত্রং প্রিরং ভবত্যাত্মনস্ত কামায় ক্ষত্রং প্রিয্ং ভবতি। ন বা অরে লোঁকানাং কামার লোকাঃ প্রিয়। ভবন্তাত্বনস্ত কামার লোকাঃ প্রিষ্বা ভবস্তি। ন বা অরে দেবাণাং কামীয় দেবাঃ প্রিয়া ভবন্তযাত্বনস্ব কামায় দেবাঃ প্রিয় ভবন্তি। ন বা অবে ভূতানাঁং কামায় ভূতানি প্রিয়াণি ভবস্ত্যাত্মনত্ত কামায় ভূতানি প্রিয়াণি ভবস্তি। ন বা অরে সর্বস্ত কামায় সর্বং প্রিয়ং ভবত্যাতুনস্ত কামায় সর্বং প্রিয়ং ভখতি ॥”--বৃহদারপ্যক ৪1৫1৬ ১৮৬ আত্ম! ও অমরত্ব পরিণত হয়। জগতের প্রত্যেক বস্তুতেই অপরিবর্তনীয় চৈতন্যময় আত্মা বিরাজ করিয়া অপরের আত্মাকে আকর্ষণ করে। আমরা সেই আত্মার স্বরূপ অবগত নহি যাহার অভিমুখে আমাদের স্বার্থপর অথবা নিঃম্বার্থ ভালবাসার জআ্োত প্রবাহিত হইতেছে এবং যাহ! হইতে উক্ত জ্রোত নিঃস্থত হইয়া মনুষ্য, পশু, দেবতা অথব। পার্থিব ধন, সম্পত্তি ও এশ্ব্যের প্রতি ধাবিত হইতেছে । একজন কৃপণ মোহবশত; তাহার বিষর-এশ্বর্্যকে ভালবাসে, কিন্তু সে ভালরূপে জানে যে, সেই এশ্বর্য্য কেবল বিনিময়ের একটি উপায়মাত্র এবং এ এশ্বর্্ের দ্বার 'কিছু দৈহিক সুখ-স্থাচ্ছন্দ্য মাত্রই লাভ করিতে পার! যায়। সে নিজের দেহাতবুদ্ধির বশবত্তী হইয়া! দেহটিতেই অত্যন্ত আসক্ত হয় এবং সেই দেহটিকে পরিপাটী রাখিবার উপায়-রূপে এ অর্থকেই ভাল- বাসিয়৷ থাকে । এই শ্রেণীর লোকের স্থুল দেহটিই হইতেছে আকর্ষণের কেন্দ্রব্বরূপ, অর্থাৎ যাহ! কিছু সে করে তাহা এ দেহের তৃপ্তির জন্যই করে এবং সেই কারণবশতঃ যাহা কিছু তাহাকে স্থুখী করে তাহ। তাহার অতীব প্রিয়বন্ত । “মৈত্রেয়ি, সেইন্যই আত্মাকে উপলব্ধি করিতে হইবে, এই আত্মার বিষয় শ্রবণ করিতে হইবে, চিন্তা করিতে হইবে এবং ধ্যান করিতে হইবে। প্ররিয়ে, যখনই এইরূপ শ্রবণ, মনন ও নিদিধ্যাসনের দ্বারা আত্মাকে উপলব্ধি করিতে পার! ১৮৭ আত্মজ্ঞান যায় তখনই সমস্ত জ্ঞাত হওয়া যায়।৮১১ যাহা হইতে অবিরাম প্রেমধারা নিঃস্ছত হইতেছে এবং যাহার অভিমুখে তাহা প্রবাহিত হইতেছে সব্বপ্রকার আকর্ষণের সেই কেন্দ্র্ঘরূপ আত্মার প্রকৃত ধর্মসসমূকে জানিতে হইবে ; আত্মার বিষয় সর্বদা শ্রবণ করিতে হইবে এবং তাহাকে ধ্যান করিতে হইবে। যখন এই আত্মাতে মন নিবিষ্ট হইবে তখনই ইহার স্বরূপ প্রকাশিত হইবে। শ্রবণ, মনন ও নিদিধ্যাসন দ্বারা আত্মাকে উপলব্ধি করিতে পারিলেই আত্মজ্ঞান ও অমরত্ব লাভ হইবে । যাজ্ঞবন্ধ্য বলিতে লাগিলেন ঃ প্যদি কেহ কোন ব্যক্তিকে তাহার স্ুলদেহ অথবা তাহার ধন-সম্পত্তির জন্য ভালবাসে তাহা হইলে সে এ প্রেমাম্পদ ব্যক্তি কর্তৃক নিশ্চয়ই কোন-না-কোন সময়ে পরিত্যক্ত হইবে । বদি আমর! কাহারও আত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাস না রাখিয়। অচেতন পরমাণুরাশির সমষ্টিরূপ তাহার জড় দেহটিকেই ভালবাসি, অর্থাৎ তাহার *আত্ম% বলিয়। কোন বস্তু নাই এই ধারণ! করিয়া জড় দেহটিই সেই ব্যক্তি এই বিবেচনা করি এবং তাহার পাঞ্চভৌতিক দেহটির প্রতি ভালবাসা কালার ১১। “আত্মা ব। অরে দ্রষ্টব্যঃ শ্রোতব্যো। মন্তব্যে নিদিধ্যাসিবো। মৈত্রেয়যাত্মানি খবরে দৃষ্টে শ্রুতে মতে বিজ্ঞাত ইং সর্বং বিশিতম্‌ ॥” -্বুহদারণ্যক ২।৪।৫ ১৮৮ আত্ম। ও অমরত্ব দেখাই তাহা হইলে সেই ব্যক্তি কি সন্তষ্ট হইতে পারে? কখনই না। বরং সেই ব্যক্তি বিরক্ত হইয়৷ তৎক্ষণাৎ আমাদিগের সংসর্গ ত্যাগ করিবে । যদি আমরা কোনও ব্রক্মবিদূকে আত্মারহিত জড় পদার্থ-রপে ধারণা করিয়া ভক্তি ও শ্রদ্ধা করি এবং যদি তিনি আ'গাঁদের মনের ভাব বুঝিতে পারেন তাহা হইলে অবিলম্বে তিনি আমাদের সঙ্গ অবশ্ঠই ত্যাগ করিবেন ।৮১২ যর্দি আমরা রাজার সন্গিধানে উপস্থিত হইয়া আমাদের মনের ভাব প্রকাশ করি যে, তিনি আত্মাহীন জড় পদার্থের পিগ্ড তাহ! হইলে রাজ! আমাদিগকে কখনই ভালবাসিবেন না, বরং তিনি আমাদিগকে দূর করিয়া দিবেন। এই কারণবশতঃ যিনি মনে করেন ্বর্গাদি যাবতীয় লোকের মধ্যে আত্মা নাই, দেবতাগণের মধ্যে আত্মা নাই, বেদসমূহের মধ্যে আত্মা নাই, বা চেতনীধম্্ জীব ও অচেতন পদার্থ ১২। ব্রহ্ম তং পরাদাগ্চোহন্ত্রাত্মনে! ব্রহ্গ বেদ, ক্ষত্রং তং পরাদা- গ্োহন্কব্রাতুনঃ ক্ষত্রং বেদ। লোকান্তং পরাহ্ধহস্ুত্রাত্মনো৷ লোকান্‌ বেদে। দেবাস্তং পরাদুধোহগ্ত্রাত্মনো। লোকান্‌ বেদ । বে্দাশ্তং পরা- ছুধ্যোহগ্তত্রাত্মনো। দ্েবান্‌ বেদ। ভূতানি তং পরাহরধোহন্তত্রাত্মনে। ভূতানি বে্দে। সর্বং তং পরাদাষ্চোহন্থত্রাত্বনঃ সর্বং বেদ। ইং ব্রন্দেদং ক্ষত্রমিমে লোৌক। ইমে দেব। হমানি ভূতানীঘ্ং সর্বং বদয়মাতব] ॥” -বুহদারণ্যক ২৪1৬ ১৮৯ আত্মজ্ঞান সকলের মধ্যে আত্মা নাই, তিনি উপরোক্ত প্রত্যেকটির দ্বারা পরিত্যন্ত হইবেন” যদি আমরা পরলোকগত আত্মীয়ন্জনের ও বন্ধুবান্ধবের মধ্যে “আত্মা নাই, এইরূপ বিশ্বাস পোষণ করি, অথবা আত্মার অস্তিত্ব অস্বীকার করি তাহ! হইলে তাহারা নিশ্চয়ই আমাদিগকে পরিত্যাগ করিবেন। যদি আমরা ঈশ্বরকে অচেতন জড় পদার্থ বলিয়া ধারণা করি এবং তাহার যড়েশ্ব্ধাপূর্ণ অবিনশ্বর ও জর্ধবব্যাপী সত্তাকে ভালবামিতে না পারি তাহা হইলে তিনি কখনই আমাদিগের মধ্যে প্রকাশিত হইবেন না; বরং আমাদিগের অগোচর হইয়া থাকিবেন। এইরূপে আমরা বুঝিতে পারি যে, সর্ব অস্তিত্বের-স্বূপ আত্মাকে বাদ দিলে কোনও বস্তুরই অস্তিত্ব থাকিতে পারে ন। আত্মার সহিত সম্বন্ধকে বাদ দিয়া আমরা যে কোন বস্তুর চিন্তা করিব সেই বস্তু আমাদিগের ধারণার নধ্যে আসিবে না, অর্থাৎ তাহারা আমাদিগকে পরিত্যাগ করিবে, কারণ বিশ্বের যাবতীয় পদার্থ সব্বব্যাগী আত্মার সহিত কোন-না-কোন প্রকার সম্বন্ধে যুক্ত থাকিয়া! অবস্থান করিতেছে । আত্মা সর্বভূতে পরিব্যাপ্ত এবং সর্ববভূত আত্মাতে বিদ্তমান। যাহা-কিছু আমরা দর্শন করি অথবা যাহা আমাদের ইহ্দ্রিয়গ্রাহ; যাহা-কিছু আমরা জানি এবং চিন্তা করি সে সমস্তই আত্মার ১৯৩ আত্মা! ও অমরত্ব সহিত অবিচ্ছিন্ন সম্বন্ধে সংযুক্ত ; বস্ত্রতঃ সকল পদার্থই আত্মার সহিত অভিননভাবে বর্তমান । প্রকৃতপক্ষে যাবতীয় পার্থ স্বরূপতঃ সেই আত্ম ভিন্ন আর কিছুই নহে। এক্ষণে জিজ্ঞান্ত হইতে পারে যে, প্রত্যেক বস্তই আত্মা হইতে অভিন্ন ইহা আমাদিগের উপলব্ধি হওয়া কি প্রকারে সম্ভবপর হইতে পারে? মহষি যাজ্ঞবন্থ্য নিম্নলিখিত ৃষটান্তের সাহায্যে এই প্রশ্নের সমাধান করিতেছেন £ “ঢাকের কাঠির ছারা আঘাত করিলে ঢাক হইতে যে শব্ধ নির্গত হয়» সেই শব্দ যে অন্তান্ত শব্দ হইতে পৃথক এই তথ্য বুঝিতে হইলে যেমন এ শব্দের মূল ভিত্িন্বরূপ ঢাক বা ঢাকের কাঠির উল্লেখ করিলে বুঝা! যায়, অন্য কোন উপায়ে উহার পার্থকা বুঝা যায় না, সেইরূপ কোনও বস্তর অস্তিত্ববোধের মূলে যে জ্ঞানন্বরূপ আত্মা বিদ্কমান এবং যাহা ভিন্ন কিছুই জ্ঞাত হওয়া যায় না সেই আত্মার অস্তিত্বকে আশ্রয় করিয়া উহার বৈশিষ্ট্যের জ্ঞান হইয়া থাকে, নতুবা এ বস্তুর পৃথক্‌ অস্তিত্ব বোধ হয় না।* ৩ প্শাঙ্খ, বীণা অথবা কোনপ্রকার বাগ্ধযন্ত্র বাদিত হইলে যে ধ্বনি শ্রবণ কর! যায়, সেই ধ্বনিগুলির বৈশিষ্ট্য বুঝিতে ১৩ পল যথা দুন্দুভেরনযমানস্ত ন বাহাজবাঞশর,য়াদ্‌ গ্রহণার, দুন্দুতেন্ত গ্রহণেন দুন্দুভ্যাঘাতন্ত বা শবে গৃহীতঃ ॥৮ -বৃহ্দারণযক ২1৪1৭ ১৯১ আত্মঙ্ঞান হইলে যাহা! হইতে এ ধ্বনি উদ্ভূত হইতেছে তাহার আস্তিত স্বীকার করিতে হয়; আবার এই যে বিভিন্ন প্রকার ধ্বনি, উহ! বন্ততঃ একই মূল শব্দের ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রকাশমান্র । সেইরূপ এই বিশ্বরাজ্যের মুলে যে একমাত্র সত্য বস্তু সর্বব্যাপী আত্ম! বিদ্যমান আছেন তিনিই নাম-রূপের মধ্যে প্রকাশিত হইয়। আনাদিগের নিকট ইন্দরিয়গ্রাহা বস্তরূপে প্রতীয়মান হইয়া! থাকেন 1১ যেমন সিক্ত কাষ্ঠে অগ্নি ২যোগ করিলে আপাত্ঃপ্রতীয়মান ধুম ও আগ্নিবিহীন এ কাষ্টরাশি হইতে প্রথমে ধূমরাশি ও পরে অগ্নিশিখা নির্গত হয়, হে প্রিয়তমে ! সেইরূপ স্মস্ত জ্ঞান ও বিজ্ঞানের আকর সেই এক পরমাত্মা (ব্রহ্ম) হইতে স্বতঃই খকু, সাম, যজু ও অথর্ব এই চতুবেরদ, ইতিহাস, পুরাণ, দর্শনশান্ত্রসমুহ এবং উপনিষত, বিজ্ঞান, সুত্র, ভাষ্য ইত্যাদি যাহ। কিছু এই জগতে বা অন্যান্ত সমস্ত লোকে জ্ঞাতব্য আছে সে সমস্তই উৎপন্ন হইয়াছে ।৮১ ১৪। পদ ধথা। শঙম্ত খ্ায়মানন্ত ন বাহাঞশবাঞশরুয়াদ্‌ গ্রহণায়, শঙ্খন্ত তু গ্রহণেন শঙখখ্ন্ত বা শব্দে। গৃহীতঃ ॥”-_বৃহদারণ্যকঃ ২৪1৮ ১৫। "স যথাব্রৈধাগ্নেরভ্যাহিতাৎ পৃথগ্ধুম। বিনিশ্চরস্ত্েবং বা অরেহস্ত মহতো। ভূতগ্ত নিঃস্বসিতমেতদ্‌ যদৃথেদো যজূর্বেদঃ সামবেগোহ্থবাঙিরস ইতিহাঁসঃ পুরাণং বিস্া উপনিষদঃ গ্লোকাঃ ১৯২ 'আত্বা। ও আমবুত্ সাধারণতঃ আমরা বলিয়া থাকি যে, অমুক অমুক ব্যক্তির নিকট হইতে আমরা এই এই জ্ঞান বা বিজ্ঞান লাভ করিয়াছি ;ঃ কিন্তু বাস্তবিকপঙক্ষে সকল প্রকার জ্তান ও বিজ্ঞান যাহা পদার্থবিং দার্শনিক, যোগী, বৈজ্ঞানিক ও পগ্ডিতগণের মধ্যে দেখিতে পাওয়। যায় সে সমস্তই অনন্ত জ্ঞানের আধারম্বরূপ এক পরমাত্মা বা ব্রহ্ম হইতে উদ্ভুত বা নিঃস্থত হইয়াছে। যেমন এক প্রজ্ঞলিত বহি হইতেই ধুম, অগ্নিক্ফুলিঙ্গ ও অগ্নিশিখা- সমুহ নির্গত হয় সেইরূপ এক অনন্ত ব্রহ্ম হইতে বিজ্ঞান, দর্শনশান্ত্র ও ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম্শশাস্রসমৃহে বণিত আধ্যাত্মিক সত্য এবং কলাশান্ত্র ও ইতিহাসের অন্তত তথ্যসমূহ উদ্ভূত হইয়াছে । আমাদের যে স্বাভাবিক জ্ঞান (002017)01) 997796) আছে এবং যাহা আমরা আমাদের দৈনিক জীবনে ব্যবহার করিয়া থাকি তাহা সেই নিত্য এক অবিনাশী অপরিবর্তনশীল ও অনন্ত জ্ঞানসমষ্টির স্বরূপ আত্মারই বিকাশমাত্র এবং এই জ্ঞান- ঘনকে যিনি উপলব্ধি করিয়াছেন তিনি অমরত্ব লাভ, করিয়াছেন । স্থগ্টির প্রারস্তে বিশ্ব্রহ্মাণ্ডের যাবতীয় স্থল ও সক্ষম বস্তু হুত্রাণ্যচব্যান্তানানি * * অন্োবৈতানি সর্বাণি নিঃশ্বসিতানি ॥” -বৃহদারণ্যক ২৪1১০ ১৯৩ ১৩ আত্মজ্জান এবং প্রকৃতির শক্তিসমূহ অব্যক্তরূপে এক অনন্ত ব্রন্ধে লীন ছিল এবং ব্রমবিকাশের নিয়মানুযায়ী সেই সুপ্তা প্রকৃতি ত্বতঃই নানারপে অভিব্যক্ত হইয়াছে । শ্রুতি বলিতেছেন £ পতন্র্যেদমব্যাকৃতমাসীৎ।৮ যেমন ব্যক্তিমাত্রই ফুসফুসের মধ্যে যে বায়ুরাশি নিঃশ্বাসরূপে প্রবিষ্ট হইয়াছে তাহাকে অনায়াসে প্রশ্বাসরূপে বহির্গত করিয়া দেন সেইরূপ এই নিখিল বিশ্বজগতের অভিব্যক্তির পৃর্ধ্বে ষে সমস্ত স্থুল বাহ্য ও সুক্ষ্মভূত, শক্তিসমূহ এবং সকল প্রকার জ্ঞান ও বিজ্ঞান ব্রহ্ের প্রস্থুপ্তা প্রকৃতির মধ্যে অব্যক্ত কারণরূপে অবস্থিত ছিল তাহা বিশ্বহ্ষ্টির বা অভিব্যক্তির সময় ব্বতঃই বহির্গত হয়। আবার যেমন ক্ষুদ্র ও বুহৎ সব্বপ্রকার নদীর জল এক সমুদ্রেই প্রবাহিত হয় তেমন প্রলয়কালে বিশ্বত্রহ্মাণ্ডের যাবতীয় সুল ও সুক্ষ বস্তু এবং জ্ঞানরাশি সেই অনন্ত ব্রদ্ষের প্রকৃতিতে লীন হয় ও তহাতেই স্বপ্তরূপে অবস্থান করে; এই ব্রহ্ষরূপ অনন্ত সমুদ্রই সমস্ত জ্ঞানরাশি ও বাহ্য বস্তনিচয়ের আধার এবং অন্তে এই সমস্তই আবার এ সমুদ্রেই মিশিয়া যায়।১১ “যেরূপ জিহ্ব! ছ্বারাই ১৬। “স যথা সর্বাসামপাং সমুদ্র একায়নমেবং সর্বেধাং স্পর্শানাং ত্বগেকায়নমেবং সর্বেষাং গন্ধানাং নাসিকে একায়নমেবং সর্বেষাং রসানাং জিহ্বৈকা়ুনমেবং সর্বেষাং রূপাণাং চক্ষুরেকায়নমেবং সর্বেষাং ১৯৪ আত্মা ও অমরত্ব সর্বপ্রকার স্বাদ গ্রহণ কর! যায়, সর্বপ্রকার স্পর্শ কেবল ত্বকৃদ্ধার অনুভব করা যায়, সর্বপ্রকার গন্ধমাত্র নাসিক দ্বারাই অনুভূত হয়, বিভিন্ন প্রকার বর্ণ কেবল চক্ষু দ্বারাই দৃষ্ট হয়, সর্বপ্রকার শব্দ মাত্র কর্ণদ্বার শ্রুত হয় ; যেমন মনই একমাত্র মানসিক ভাব রাশির আকর এবং সর্বপ্রকার বিবেক বা বিচার জ্ঞানের একমাত্র আকর বুদ্ধি; যেমন সকল বিদ্যার আকর হৃদয়, সকল কন্ম হস্তদ্বারা কর! হয়, সকল সখের আধার উপস্থ ;ঃ যেমন পায়ু কেবল বিসর্গের মূলে থাকে, পদঘ্য় গমনাগমনের একমাত্র যন্ত্র, বাগযস্ত্র যেমন বেদোচ্চারণের মূলে আছে সেইরূপ সর্বপ্রকার অনুভূতি ও জ্ঞান সেই এক চেতন্ন্বরূপ ব্রহ্ম বা আতা হইতেই উত্তাসিত হয়।” মহধি যাত্ঞবন্থ্য মৈত্রেয়ীকে বুঝাইতেছেন যে, ব্রহ্মই সকল বস্তুর আদি ও অন্ত; অর্থাৎ প্রত্যেক বস্তুর অভিব্যক্তি পরমাতআ ব৷ ব্রহ্ম হইতেই হইতেছে এবং প্রলয়কালে শব্ধানাং শ্রোত্রমেকায়নমেবং সর্বেধাং সঙ্কল্লানাং মন একাস্নমেবং সার্বাসাং বিদ্যানাং হৃদয়মেকায়নমেবং সর্বেষাং কর্মমণাং হস্তাবেকায়ন- মেবং সর্বেষাং আনন্দানামুপস্থ একাম়নমেবং সর্বেষাং 'বিসর্গানাং পায়ুঝেকীয়নমেবং সর্বেষামধ্বনাং পাদীবেকায়নমেবং সর্বেষাং বেদানাং বাগেকায়নম্‌।”-_বৃহদারণ্যক ৪1৫১২ ১৯৫ আত্মজ্ঞান সমস্তই আবার সেই পরমাত্মাতেই লীন হইতেছে । এই ব্রহ্ম যেন এক অদ্ভিতীয় চৈতন্যঘনের মূর্ত রূপ, ইহাতে অপর কোন পদার্থের অস্তিত্ব নাই। ইহাকে বহু বস্তুর সমষ্টি বলা যায় না। একটি দৃষ্টান্ত দ্বারা দেখান হইয়াছে £ “যেমন এক তাল লবণের ভিতরের মধ্যভাগের ও বহির্ভাগের মধ্যে কোনও তারতম্য নাই, কিন্তু উহার সর্বত্রই লবণের স্বাদ বর্তমান থাকে তেমন ব্রদ্মেরও মধ্যপ্রদেশ বা বহিঃগ্রদেশের মধ্যে কোনও পার্থক্য মাই; উহা জ্ঞানের ঘনীভূত অসীম পদার্থের স্বরূপ। তাহার আদিও নাই, অন্তও নাই ; এবং তাহা অসীম ৮১৭ এই অসীম ও অনন্ত বস্তুর দুইটি ভাব আছে ঃ একটি সমষ্টি, ভাব যাহাকে বর্ষ” বলা হয় এবং অপরটির ব্যষ্টিভাব যাহাঁকে “জীবাত্মা বলা হয়। "অহং*জ্ঞানের উৎসরূপে, অর্থাৎ “আমি আছি এই জ্ঞানের মূলম্বরূপ ইনি ব্যষ্টিভাবে আমাদের দেহেক্দ্িয়াদির সংযোগে বিভিন্ন আকারে প্রকাশিত হন। আবার যখন এই আত্ম! মৃত্যুর সময় স্থুল দেহ হইতে বিচ্ছিন্ন হন তখন ১৭1 «লন যথা সৈম্ধবঘনোহনস্তরোহবাহঃ কৃতঙ্নো৷ রসথন এবৈবং বা অরেহযমাত্মানম্তরোহ্বাহিঃ কতন্নঃ প্রজ্ঞানঘন এবৈতেভ্যে। ভূতেভ্যঃ সমুখায় তান্যেবাস্থবিনগ্ততি, ন প্রেত্য সংজ্ঞাইস্তীত্যরে ব্রবীমীতি হোঁবাচ বাজ্জবন্ধ্যঃ ॥--বুহদারণ্যক 81৫1১৩ ১৯৬ আত্ম। ও অমরত্ব ইন্দ্রিয় তাহাদের বিষয়গুলিকে গ্রহণ করিতে বিরত হয় এবং মাত্রাগুলি যে স্থান হইতে উদ্ভূত হইয়াছিল সেই কারণ অবস্থায় প্রকৃতিতে বিলীন হইয়। যায়। মৃত্যুর পরে কেহ ইন্দ্িয়গ্রাহ্হ বিষয়াদিকে আর গ্রহণ করিতে সক্ষম হয় না। মহধি যাজ্ঞবক্ষ্য মেত্রেয়ীকে বলিলেন £ “পরিয়ে, যদিও আমি তোমার নিকট বলিয়াছি যে, আত্ম! অখণ্ড শ্বরূপ তথাপি ইহা মনে রাখিও যে, যখন আত্ম! এই দেহ হইতে চলিয়া যান তখন তাহার মর্ত্যলোকের ন্তায় জ্ঞান থাকে না। তখন আত্মার ইন্দ্রিয়রাজ্যের জ্ঞান বিলুপ্ত হয়।” এই কথ! শ্রবণ করিয়া মৈত্রেয়ী বলিলেন ঃ প্প্রভু, আপনি যে বলিলেন মৃত্যুর পরে এ অখগু জ্ঞানম্বরূপ আত্মার মত্ত্যলোকের ন্ায় জ্ঞান থাকে না” এই কথা শ্রবণ করিয়া আমি হতবুদ্ধি হইয়াছি। ইহা কিরূপে হইতে পারে ?১৮ যাজ্ঞবন্ধ্য বলিলেন £ প্প্রয়ে, আমি তোমাকে হতবুদ্ধি হইবার কথা তো কিছুই বলি নাই ; অবিনাশিত্বই আত্মার স্বাভাবিক ধর্ম 1১৯ শপ ১৮। পসা হোবাচ মৈত্রেয্যত্রৈৰ মা ভগবান্‌ মৌহীস্তমাপীপিপন্ন ব অহমিমং বিজানামীতি ॥৮-_বৃহদারণ্যক 81৫১৪ ১৯| পপ হোবাচ ন বা অরেহহং মোৌহং ব্রবীম্যবিনাশী ব। খঅরেহয়মাত্মাহনুচ্ছিতিধর্ম। ॥”--বৃহদারণযক ৪1৫1১৪ ১৯৭ আত্মজ্ঞান তোমার সমস্তা সমাধান করিবার জন্য আমি উহা পুনরাঁয়। বিশদভাবে ব্যাখ্যা করিতেছি । আত্ম স্বতঃই মৃত্যুরহিত ও অমর। “যতক্ষণ বিষয়ী জ্ঞাত ও বিষয় জ্ঞেয়রূপে দ্বেতভাবে বর্তমান থাকে, অর্থাৎ যতক্ষণ অন্ুভবযোগ্য জ্ঞেয় বিষয় ও অন্ুভবকর্ত1 জ্ঞাতা পৃথক থাকেন ততক্ষণ সেই জ্ঞাতা দর্শন করেন, ইন্ড্রিয়গ্রাহ্য বিষয়গুলি অনুভব করেন, ভ্রাণ আস্বাদ, স্পর্শ ও চিন্তা ইত্যাদি করিয়া থাকেন এবং সেই সকল বিষয়কে জানিতে পারেন 1৮২ দেহ ও আমি-জ্ঞানযুক্ত আত্মা যতক্ষণ উক্ত প্রকার ছ্বেত ভূমিতে বা আপেক্ষিক রাজ্যে থাকেন ততক্ষণই তাহার ঈন্দিয়গ্রাহ বিষয়সমূহের অনুভূতি হয়। যখন দ্রষ্টার দৃশ্ঠবস্তর সহিত সম্বন্ধ থাকে তখনই তাহার দর্শনের অনুভূতি সম্ভব হইতে পারে। যে গন্ধ-দ্রব্যের সহিত আমাদের কোনও সম্বন্ধ নাই তাহার আত্রাণ আমরা কিরূপে পাইতে পারি? আস্বাদনীয় বা শ্রোতব্য বিষয়ের সহিত জ্ঞাতার ( আত্মার ). কোনও সম্বন্ধ ন৷ থাকিলে এ বিষয়ের অনুভূতিই হইবে না। এইরূপে দেখিতে পাওয়া যায় যে, অনুভবষোগ্য বিষয়ের হ৯। প্ত্র হি দ্বৈতমিব ভবতিতদ্িতর ইতরং পণ্ততি, তদিতর ইতরং জিদ্রতি, তদ্দিতর ইতরং রসয়তে, তদ্দিতর ইতরমভিবদ্দতি, তদ্দিতর ইতরং শৃণোতি, তদিতর ইতরং মন্ুতে, তদিতর ইত্তরং, ম্পৃশতি, তদিতর ইতরং বিজানাতি ॥”_বৃহ্দারণ্যক 816১৫ ১৪৯৮ আত্ম। ও অমরত্ব সহিত অনুভব-কর্তার আপেক্ষিক সম্বন্ধ না থাকিলে কোনও প্রকার অনুভূতির উদয় হওয়া সম্ভবপর হয় না । আবার যখন আমর! গভীর নিদ্রায় সুযুপ্তিতে অভিভূত থাকি তখন আমর! দর্শন করি না, শ্রবণ করি না, আম্বাদন করি না, আত্ত্রাণও করি না, বা! কিছু বুঝিতেও সক্ষম হই না। জ্ঞেয় বিষয়গুলি ইন্দ্িয়রাজ্যেই অবস্থান করে, সুতরাং যখন আমরা অতীন্দ্িয় ভূমিতে অবস্থান করি অর্থাৎ যে ভূমিতে দর্শন, শ্রবণ, ভ্রাণ উত্যাি ব্যাপার নাই সেই স্থানে কিরূপে দর্শনাদি ইক্জিয়সমূহের ক্রিয়া সম্ভবপর হইতে পারে ? স্বপ্রশুন্য নিদ্রায়, অর্থাৎ সুষণ্তি অবস্থায় গ্রত্যেকের একই প্রকার উপলদ্ধি হয়; এই অবস্থায় স্ত্রীজাতি বা পুরুষ- জাতির মধ্যে উপলব্ধির কোনও ভেদ দেখা যায় না। *্গ্র অবস্থায় পিতা অপিত। হন, অর্থাৎ পিতার পিতৃত্ব থাকে না € মাতার মাতৃত্ব থাকে ন11৮২» আবার সমাধি অবস্থায় অর্থাৎ “যেখানে দ্ৈতভাব বা বহুত্ব ভাবের সম্পূর্ণ অভাব এবং যেখানে কেবল এক অনন্ত জ্ঞানসমুদ্র বিদ্যমান সেখানে দর্শনই বা! কি হইবে, আত্রাণ করিবার বিষয় বা কি থাকিবে এবং আম্বাদনই বা কিসের হইবে ২২ ২১। পত্র পিতাহপিত| ভবতি, মাতাইমাতা” ইত্যাদি শ্রুতিতে 'আছে।-বুহদারণ্যক ৪1৩২২ ২২। ্যত্র ত্বস্ত সর্ববমাতৈবাভৃৎ তৎ কেন কং পন্তেৎ, তৎ কেন ১৯৯ আত্মজান যেখানে আপেক্ষিকতার অস্তিত্ব নাই বা যেখানে ইন্রিয়- গ্রাহ্হ বিষয় কিছুই নাই সেখানে দর্শন-স্পর্শনাদি ইন্ড্িয়ের ক্রিয়া কিরূপে সম্ভবপর হইতে পারে? যাহার সাহায্য ব্যতীত কিছুই জানা যায় না তাহাকে কিরূপে জানিতে পার! সম্ভব? যে আত্মা সকল বস্তু বাঁ বিষয়ের একমাত্র জ্ঞাতা, অর্থাৎ যিনি সকল বস্তু বা বিষয়ের সম্বন্ধে জ্ঞান দান করেন সেই আত্মাকে আবার কোন্‌ জ্ঞান্শক্তি অবগত করাইতে পারে? না, তাহ! জানিবার জন্য আর কোন দ্বিতীয় জ্ঞান নাই, কারণ আত্মাই এই নিখিল বিশ্বজগতের একমাত্র জ্ঞাত|। এখন দেখিতে হইবে যে, আত্মাকে বিদিত হইবার প্রশস্ত উপায় কি? যথাযথ বিশ্লেষণ ও বিচারের দ্বার! আমরা জ্ঞানের বিষয়ীভূত ব্স্্ হইতে প্রকৃত জ্ঞাতা পুরুষকে পৃথকৃভাবে বুঝিতে পারি; প্রত্যেক বস্তুকেই বিচার করিয়া দেখিতে হইবে এবং মনে মনে নেতি নেতি'২৩ অর্থাৎ “ইহা আত্ম। নহে, ব। আত্মা ইহাও, কং জিদ্বেখ তৎ কেন কং রসয়েখ। তৎ কেন কমভিবদেত্। তৎ কেন কং শুণুয়াৎ। তৎ কেন কং মন্বীত, তৎ কেন কং স্পৃশেৎ, তৎ কেন কং বিজানীয়াদ, যেনেদং সর্বং বিজীনাঁতি তং কেন বিজানীয়াৎ।” --বুহদাণ্যক ৪৫1১৫ ২৩। গল এষ নেতি নেত্যাযাহগৃহো। ন হি গৃহৃতেতশীর্যে। ন হি আত্মা ও অমরত্ব নহে” এইরূপ স্থির করিয়া যাহা আত্মা নহে তাহাকে ত্যাগ করিতে হইবে। এইরূপে সর্বপ্রকার জ্ঞেয় পদার্থগুলি, সর্বপ্রকার ইন্দ্িয়ানুভূতি, সর্বপ্রকার চিন্তা এবং মনের ভাব ও বুদ্ধির যাবতীয় ক্রিয়া শুদ্ধ- বিচারের দ্বারা চিত্ত হইতে একে একে অপসারিত হইলে সমাধি অবস্থায় আত্মাকে উপলব্ধি কর! যায়। বুদ্ধি ষতই সুক্ষ হউক না কেন তাহার দ্বার আত্মাকে জান যায় না, “আত্ম” বুদ্ধির অগোচর। আত্মাকে কেহ নাশ করিতে পারে না, ইহা অমর; কেহ কোন উপায়ে আত্মার পরিবর্তন সাধিত করিতে পারে না, ইহা অপরিবর্তনশীল; আত্মাকে কিছুর দ্বার স্পর্শ করিতে পারা যায় না, ইহা! অস্পন্্য ; আত্মার কোনও প্রকার বন্ধন নাই, ইহ। নিত্য মুক্ত। আত্মার সুখ নাই, শোক নাই, ছুঃখ নাই, ইহা সুখছুঃখের অতীত। আত্মা সর্বদাই সমভাবে একরূপ বর্তমান আছেন। পপ্রয়ের। যে আত্মার ধর্ম এই প্রকার সেই আত্মাকে কি উপায়ে এবং কাহার দ্বারাই ব৷ জ্ঞাত হইতে পারা মীরধ্যতেৎসঙ্গে। ন হি সজ্যতেইসিতে। ন ব্যথতে ন রিষাতি, বিজ্ঞাতার- ময়ে কেন বিজানীয়ামিত্যুক্তানুপাসনাসি মৈত্রেয্যেতাবদরে খনমৃতত্বমিতি হোল যাজ্জবন্ধ্যো। বিজহার ॥”-বৃহদধারণ্যক ৪181১৫ | ২০১ আত্মজ্ঞান যায়? মেত্রেয়ী, আত্মার স্বরূপ যাহ বলিলাম বাক্যের দ্বারা তাহা এই পর্যন্তই বর্ণনা! করা যায়; ইহার অতীত যাহ! কিছু আছে এবং যে জ্ঞানের দ্বারা অমরত্ব প্রাপ্ত হওয়া যায় তাহ! এক মাত্র সেই সমাধি অবস্থায় উপলব্ি হইয়৷ থাকে । প্রেমের, জ্ঞানের, আনন্দের এবং সত্যের আধার বা মূল সেই আত্মাকে বিদিত হইলেই অমরত্ব লাভ হইয়া থাঁকে।” এই উপদেশ প্রদান করিয়া মহর্ষি যাজ্ঞবন্ধ্য অরণ্যে প্রস্থান করিলেন এবং সেখানে তিনি সেই নিত্যবস্তর ধ্যানে কালযাপন করিতে লাগিলেন £ অবশেষে সমাধি অবস্থায় তিনি আত্মাকে উপলব্ধি করিয়া অমরত্ব লাভ করিলেন। মানব জীবনের একমাত্র চরম উদ্দেশ্ট আতজ্ঞান লাভ, যাহার দ্বারা আমরা এই বিশ্বকে সর্বতোভাবে বুঝিতে পারিঃ একমাত্র আত্মজ্ঞানের সাহায্যেই এই বিশ্বের উৎপত্তি, স্থিতি ও লয় সম্বন্ধে সমস্ত রহস্তাই ভেদ করা যাঁয়। যিনি আত্মদর্শন করিয়াছেন তিনি প্রলয়কালে জাগতিক বস্তসমৃহের কি হইবে তাহ সম্যকভাবে বুবিতে পারেন। অমরত্ব লাভ করিতে অভিলাষী হইলে এই “আত্মাকে জানিতে হইবে; ইহা ব্যতীত আর অন্ত কোনও উপায় নাই। আত্মজ্ঞান লাভ করিয়া বৈদ্দিক খবি ঘোষণ। করিয়াছেন ঃ ২০২ আত্মা ও অমরত্ত সমস্ত অজ্ঞান-অন্ধকারের পরপারে অবস্থিত স্বয়ংপ্রকাশ কুর্ধ্যের ন্যায় দীপ্তিমান্‌ মহান্‌ আত্মাকে আমি জানিয়াছি ; একমাত্র তাহাকে জানিলেই মৃত্যুকে অতিক্রম করিতে পারা যায়। ইহাছাড়া আর অন্ত কোন্র্রস্থা নাই; অন্ত কোন পস্থা নাই ।৮২ ২৪। “বেদাহমেতং পুরুষং মহান্তং, আদিত্যবর্ণং তমসঃ প্রস্তাঁৎ। তমেব বিদ্দিত্বাইতিমৃত্যুমেতি, নাঃ পন্থা! বিছ্যাতেহয়নায় ॥৮ স্"শ্রেতাশ্বেতর উপনিষৎ ৩৮ ২৩৩